সাভারে ভবনধসে শত শত লাশে ভরে গেছে দেশ। হাজার হাজার আহত শ্রমিকের রক্তে সয়লাব দেশ। ১০ দিনেও খণ্ডিত ও গলিত লাশের সৎকার শেষ হয়নি। নিহত ব্যক্তিদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন সাহায্য ও সান্ত্বনা। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনই এখন অবশ্যকর্তব্য।
আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনো ছুটে আসছেন ঘটনাস্থলে। তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার শেষ নেই। ওই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধান বিরোধী দল তাদের ২ মের হরতাল প্রত্যাহার করেছে। সে জন্য বিএনপির নেতাকে সরকার ও সাধারণ মানুষ ধন্যবাদ জানিয়েছে। এ মুহূর্তে যেকোনো দাবিতেই অবরোধ ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি প্রত্যাশিত নয়।
তাতে ওই পরিবারগুলোর মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে।
বিভিন্ন ইস্যুতে ও দাবিদাওয়া আদায়ে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। জনস্বার্থে কোনো কোনো আন্দোলন ছিল অপরিহার্য, যা না করলে জাতির ক্ষতি হতো। কিন্তু সব আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিল না। যার ফলে তাতে অংশগ্রহণকারীদের ত্যাগ সত্ত্বেও কারও কোনো লাভ হয়নি।
সাময়িক ক্ষোভ থেকে অথবা ভাবাবেগের উত্তেজনায় যেসব আন্দোলন হয়েছে, সেসব আন্দোলনের নেতাদের ইতিহাসে কোনো স্থান হয়নি।
অতীতে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধর্মীয় শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অসন্তোষ উগ্রতার জন্ম দেয়। তবে সেসব উত্তেজনা স্থায়ী হয়নি। তাতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সমাজের শান্তি বিঘ্নিত ও স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছে।
কিছুদিন ধরে প্রগতিশীল শিবিরের কারও কারও মুখ থেকেও দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি শোনা যাচ্ছে। সেটাও একেবারেই অনভিপ্রেত। যেকোনো উগ্র উচ্চারণের প্রতিক্রিয়াও উগ্র হওয়া স্বাভাবিক। আর যেখানেই উগ্রতা, সেখানেই যুক্তির বালাই থাকে না।
শত শত বছর ধরে আলেম সমাজ ও মোল্লা-মৌলভিসহ মুসলমান ধর্মীয় নেতারা অমুসলমানদের কাছেও শ্রদ্ধার পাত্র।
পশ্চিমের খ্রিষ্টানবিশ্বের নেতারা বাংলাদেশকে একটি ‘মডারেটর মুসলিম দেশ’ বলে আখ্যায়িত করেন। সেই সুনামটি যদি নষ্ট হয়ে যায়, অতি অশুভ উল্টো ফল হতে পারে।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো বাংলাদেশের আলেম-ওলামারাও বহু তরিকা ও উপদলে বিভক্ত। রাজনীতিতে যেমন, তেমনি সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলনেও অভিন্ন ধ্রুব লক্ষ্য নেই। প্রত্যেকেই নিজেদের দাবিকে সঠিক মনে করেন।
ফলে কেউই কিছু অর্জন করতে পারেন না। বরং ব্যাহত হয় সামাজিক ও জাতীয় অগ্রগতি।
ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই সমাজ আজ এই জায়গায় এসেছে। এখান থেকে শত চেষ্টা করেও তাকে আর শত শত বছর আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। সে কথা যদি কেউ সাময়িক ক্ষোভবশত ভাবেন, তা হবে আত্মঘাতী।
আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইলেও অস্তিত্বের স্বার্থেই তা পারব না।
অবিবেচনাপ্রসূত কর্মসূচি ও হঠকারিতা দ্বারা কোনো দিন কোনো কিছু অর্জিত হয়নি। বরং একটি সহিষ্ণু বহুত্ববাদী সমাজে তা হিংসার জন্ম দেয়। পারস্পরিক ঘৃণার জন্ম দেয়। নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে।
সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম-ওলামা ও পাশ্চাত্য আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়েই আমাদের সমাজ। সবারই সমাজে প্রয়োজন রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। সমঝোতারও বিকল্প নেই।
আমরা আশা করব, ৫ মের অবরোধ কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটবে না। তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। জাতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এই সময় সরকার ও সরকারবিরোধী সব পক্ষ থেকেই সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।