আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটা একটা অমানবিক গল্প!

মানুষ হতে চাই। আমি আজ সকালে পত্রিকায় এই ঘটনাটা পড়ে খুবই মর্মাহত হয়ে আপনাদের জন্য লেখাটা পোষ্ট করলাম। মূল ঃ মানবজমিন http://www.mzamin.com/news_image/24857_f3.jpg বিস্তারিত এইখানে দেখুন। ঝিনাইদহের ছেলে। চেন্নাইর মেয়ে।

পরিচয় থেকে ভাল লাগা, ভালবাসা, প্রেম। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ু। পরিণয় চেন্নাইর আদালতে মুসলিম কাজীর দপ্তরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। বিয়ে হয় ২০০৫ সালে। সাত বছরের সংসার জীবনের ছেদ ঘটে ২০১২ সালে।

দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদে কাতর ভারতীয় মেয়ে জান্নাত ঘুরছে স্বামীকে ফেরত পেতে, নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে। এক বুক আশা নিয়ে শ’ শ’ মাইল পেরিয়ে স্বামীকে খুঁজতে এসে লাঞ্ছিত হয়ে বুকভরা বেদনা নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছে ভারতীয় মেয়ে জান্নাতকে। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার উল্লা গ্রামের ইসহাক আলী জোয়ারদারের ছেলে জোয়ারদার আতিকুর রহমান ২০০৩ সালে পড়াশোনা করতে যান ভারতের চেন্নাইয়ে। সেখানে থাকতেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইর মোহাম্মদ আলী খানের মেয়ে খান জিন্নাত বি’র সঙ্গে। জিন্নাতের সঙ্গে আতিকুর রহমানের পরিচয় জিন্নাতের ভাই সম্পর্কের রবিউল ইসলাম নামের এক যুবকের মাধ্যমে।

ভারতীয় নাগরিক রবিউল ও আতিকুর রহমান পড়াশোনা করতো একই কলেজে। সেটা ২০০৪ সালের কথা। একদিন রবিউল তার বন্ধু আতিকুরের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে জান্নাতকে। ওই দিনের পর থেকে আতিকুর মাঝে মধ্যে ফোন করতো জান্নাতকে। সেই ফোন থেকেই এক সময়ে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে জান্নাত-আতিকুর।

চেন্নাইতেই দেখা হয় দু’জনের। এক সময় আতিকুর পাগলের মতো ভালবাসতো জান্নাতকে। সে কথা জানিয়েছে ভারতে সে সময় পড়াশোনা করতো এমন বাংলাদেশী আতিকুরের বন্ধুরা। আতিকুরের বাড়ি বাংলাদেশে শুনে আরেক টানে ব্যাকুল হয়ে পড়ে জান্নাত। সে টান মায়ের টান, রক্তের টান।

খান জান্নাত বি ভারতীয় নাগরিক হলেও তার শেকড় প্রোথিত বাংলাদেশে। জান্নাতের মা আকবরী বেগম বাংলাদেশের মেয়ে। তার মায়ের আদি বাড়ি বর্তমান শরীয়তপুর জেলার নবগঠিত সখীপুর থানার মাদবরকান্দি গ্রামে। কলকাতায় থাকতে জান্নাতের মায়ের বিয়ে হয় চেন্নাইবাসী খান মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। জান্নাত ও আতিকুরের বেপরোয়া প্রেম এক সময় বিয়েতে গড়ায়।

কিন্তু বিয়ের বিষয় প্রথমে মেনে নিতে পারেনি জান্নাতের পরিবার। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিজের বাবা-মাকে কোন কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে আতিকুর। দু’ পরিবারের অমতেই বিয়ে হয় চেন্নাইর মুসলিম কাজী অফিসে। জান্নাত ও আতিকুরের ম্যারেজ সার্টিফিকেটে দেখা যায়, তাদের বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি। বিয়ে পড়ান তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রধান কাজী মুফতি ড. সালাউদ্দিন মোহাম্মদ আইয়ুব।

কাজী অফিসের ঠিকানা দেয়ানশিপ গার্ডেন নম্বর ৩২৩, টিটিকে রোড চেন্নাই। বিয়ে সম্পন্ন হয় ভারতীয় আইনের ১৮৮০ সালের কাজী অ্যাক্ট অনুসারে। ম্যারিজ সার্টিফিকেটে পাত্রপাত্রীর নাম-ঠিকানা লেখা আছে পাত্র জোয়ারদার আতিকুর রহমান জুয়েল। পিতা জোয়ারদার ইসহাক আলী, কনে খান জান্নাত বি, পিতা মোহাম্মদ খান। ঠিকানা প্লট ২৯২।

মেইন রোড চেন্নাই। বিয়ের উকিল পিতা হিসেবে নাম লেখান জব্বার খান নামের এক ব্যক্তি। বিয়ের পর জান্নাতের পরিবার শেষ পর্যন্ত তাদের বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে আতিকুর রহমান বিয়ের খবর দেশে তার পরিবারকে জানাতে গড়িমসি করে, বারবার জান্নাত তাকে অনুরোধ করে বিয়ের খবর বাড়িতে বলতে। কিন্তু এড়িয়ে যায় আতিকুর।

বিয়ের এক বছর পর চেন্নাইতে অধ্যয়নরত অন্য বাংলাদেশী ছাত্রদের মাধ্যমে আতিকুরের বিয়ের খবর জানতে পারে তার পরিবারের লোকেরা। তাদের মাধ্যমে জান্নাতের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আতিকুরের মা-বাবা। জান্নাতের সঙ্গে কথা হতো আতিকুরের বাবা-মায়ের। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে স্বামীর কাছে বাংলা বলা রপ্ত করে জান্নাত। জান্নাত পড়াশোনা করেছে প্রকৌশল বিভাগে।

আতিকুর বিবিএ’র ছাত্র। পড়াশোনা শেষে দু’জনেই চলে যান আবু ধাবিতে। সেখানে চাকরি নিয়ে বসবাস শুরু করেন দুবাইতে। জান্নাতের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন বিয়ের পর থেকে জোয়ারদার আতিকুর রহমানের পড়াশোনা সহ ভারতে থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করেছে জান্নাতের পরিবার। এমনকি আতিকুরের দুবাই যাওয়ার খরচও দিয়েছে তারা।

জান্নাত জানান, তাদের সাত বছরের বিবাহিত জীবনের বিপদ এসে দাঁড়ায় ২০১২ সালে। ওই বছর দুবাইতে চাকরিরত জান্নাতের বোনকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে আতিকুর, ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়, ওই ঘটনার পর জান্নাতের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিরোধ মিটিয়ে স্বাভাবিক হয় আতিকুর। জান্নাত জানায় তার প্রতি গভীর ভালবাসার কারণে তাকে কিছু বলতে পারিনি, ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। ওই ঘটনার কিছু দিন পর জান্নাত জানতে পারে বাংলাদেশে বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছে আতিকুর রহমান। ঘটনা জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে আতিকুর।

আতিকুরের বন্ধুদের মাধ্যমে তার বিয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় জান্নাত, আতিকুরের বাবা-মা ছেলের বিয়ে ঠিক করে খুলনায়। অস্থির হয়ে ওঠে জান্নাত। ফোন করে আতিকুরের বাবা-মাকে। তারাও অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত আতিকুরের নতুন বউয়ের ফোন নম্বর যোগাড় করে তাকেও ফোন করে।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দুবাই থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে জোয়ারদার আতিকুর রহমান। বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে। বিয়ের খবর জেনে ২০১২ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ভাই ও ভগ্নিপতিকে নিয়ে বাংলাদেশে আসে জান্নাত। জান্নাত বাংলাদেশে আসার সময় ৫ই সেপ্টেম্বর আবু ধাবির বাংলাদেশ কনস্যুলার শাহাদত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি লিখিত পত্র দেন। ওই চিঠিতে জোয়ারদার আতিকুর রহমান ও খান জান্নাত বি কে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয় জান্নাতকে যাবতীয় সহযোগিতা করার জন্য।

জান্নাত তার ভাই ও ভগ্নিপতিকে নিয়ে যান ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে গিয়ে আতিকুরের দেয়া ঠিকানায় তাদের বাড়ি নলডাঙ্গা গ্রামে আতিকুরকে খুঁজে পায়নি জান্নাত। আসলে আতিকুরদের বাড়ি নলডাঙ্গা গ্রামে নয়, তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী উল্লা গ্রামে। সেখানে গিয়ে হাজির হয় জান্নাত। তখন তাকে অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।

আতিকুর নিজে জান্নাতকে বলে, আমি তোমাকে চিনি না, সারারাত বাড়ির গেটে বসে থাকে জান্নাত। সে রাতে ওই গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, একটি বিদেশী মেয়ের প্রতি এমন অপমান আমাদের এলাকার মানে পুরো দেশের বদনাম হয়েছে। একজন মুরব্বি বলেন, ওই মেয়েটার কান্না দেখে মনে হয়েছিল ওই ব্যাটাকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত, মানুষ মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে পারে, এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। কোন সহযোগিতা না পেয়ে অপমান অপদস্ত হয়ে ভগ্ন ব্যথিত মনে বাংলাদেশ ছেড়ে দুবাই চলে যায় জান্নাত। খান জান্নাত বি আমাদের কাছে জোয়ারদার আতিকুর রহমান জুয়েলের সঙ্গে তার প্রেম ও বিবাহিত জীবনের প্রায় অর্ধশত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, বিয়ের প্রমাণপত্র, দুবাইতে স্ত্রী জান্নাতের জন্য মেডিকেল কার্ড পাওয়ার জন্য আতিকুর রহমানের করা দরখাস্ত সহ আরও কিছু প্রমাণপত্র পাঠিয়েছেন।

বর্তমানে দুবাইতে বসবাসরত জান্নাতের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জান্নাত তার স্বামীকে ফেরত চান, স্ত্রীর মর্যাদা চান। দুবাই থেকে পালিয়ে আসার কয়েকদিন আগে আতিকুর রহমান জুয়েল সেখানে ব্যবসা করার মিথ্যা কথা বলে হাতিয়ে নেন জান্নাতের চাকরি জীবনের জমানো সব অর্থ। জান্নাত বলেন, আমার ব্যথিত মনের কথা কাউকে বোঝাতে পারবো না কি পরিমাণ ভালবাসতাম জুয়েলকে। তার একটাই কথা আমি আমার ভালবাসার স্বামীকে ফেরত পেতে বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতা চাই, আইনের আশ্রয় পেতে চাই।

এব্যাপারে জোয়ারদার আতিকুর রহমানের পিতা ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা ভূষণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসহাক জোয়ারদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ভারতীয় ওই মেয়েটা এসেছিল, আমরা তার কাছে বিয়ের প্রমাণপত্র চেয়েছিলাম কিন্তু সে দেখাতে পারেনি বলে আমরা তাকে ঢাকায় ফিরে যেতে বলেছি। তিনি বলেন, জান্নাতের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা আমরা আগেই শুনেছি কিন্তু বিয়ের কথা জানতাম না। জোয়ারদার আতিকুর রহমান জুয়েলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বিয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, না আমি তাকে বিয়ে করিনি, এসব কথা মিথ্যা। বিয়ের ডকুমেন্ট তার বানানো।

আমি তার কাছে টাকা পাবো, সে এখন আমার টাকাগুলো না দেয়ার জন্য ফন্দি আঁটছে। সে কারণে বিয়ের মিথ্যা ডকুমেন্ট বানিয়েছে। তার যদি সাহস থাকে তো বাংলাদেশে এসে আদালতে যাক। আতিকুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, জান্নাতের সঙ্গে আপনার প্রায় অর্ধশত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবির কথা কি বলবেন? তিনি জবাব দেন, এটা হতেই পারে। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিলো এটা ঠিক, ছবিগুলো সেই সময়ের।

জুয়েল বলে, আই ডোন্ট কেয়ার এনিথিং। যার যা ইচ্ছা করুক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।