www.facebook.com/mahamudul.hasan.9619 ভ্রমন করা, লেখালেখি করা, বিজ্ঞান ওয়েবসাইট দেখা, অনেক বই ও ম্যাগাজিন পড়ি এবং ওয়েবসাইট প্রোগ্রামিং করতে খুব পছন্দ করি।
ওসামা বিন লাদেন, ২০০৭
কমান্ডোরা এই অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণের সময় জেনেছিলেন, অভিযান শেষ করে ফেরার পথে ১০ মিনিটের মধ্যে হেলিকপ্টার পৌঁছে যাবে মাঝপথে জ্বালানি ভরানোর জায়গা বা ফরোয়ার্ড এরিয়া রিফুয়েলিং পয়েন্টে। ম্যাট বিসোনেটের উদ্বেগ দূর হলো, যখন তিনি দেখতে পেলেন যথা সময়ে তাঁদের হেলিকপ্টারটি রিফুয়েলিং পয়েন্টের মাটি ছুঁয়েছে। সেখানে নতুন করে জ্বালানি ভরার পর ব্ল্যাক হক ও সিএইচ-৪৭ একসঙ্গে আবার যাত্রা করে জালালাবাদের উদ্দেশে।
নো ইজি ডে-লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-১ (মার্ক ওয়েন)
নো ইজি ডে - লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-২
নো ইজি ডে-লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-৩
নো ইজি ডে-লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-৪ (মার্ক ওয়েন)
নো ইজি ডে - লাদের হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-৫ (মার্ক ওয়েন)
নো ইজি ডে - লাদেন হত্যার প্রত্যক্ষ বয়ান-৬
হেলিকপ্টারে জায়গা কম।
ম্যাট লিখছেন, ‘ঠাসাঠাসি করে বসেছি আমরা। আমার পাশে টম। জায়গা নেই বলে ওয়াল্টকে বসতে হয়েছে লাদেনের লাশের ওপর। ’ জ্বালানি নিতে সময় লেগেছে ২০ মিনিট। জায়গাটা পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরেই।
এখন যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়া দরকার। ম্যাট ‘মনের চোখে’ দেখতে পাচ্ছেন তাঁদের হেলিকপ্টারের পেছনে ধেয়ে আসছে পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান। প্রশিক্ষণের সময় তাঁরা পাকিস্তানি বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার যেসব মানচিত্র দেখেছিলেন, সেগুলোর ছবি ভেসে উঠল তাঁর মনে। তাঁর ধারণা, তাঁরা যে পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে এসে অ্যাবোটাবাদে অভিযান চালিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এটা জানতে না পারার কোনো কারণ নেই। এখন দরকার দ্রুত ছুটে যাওয়া, যেন পেছন থেকে ওরা ধাওয়া করে নাগাল না পায়।
ম্যাট লিখছেন, এই উদ্বেগ থেকে তিনি রক্ষা পেলেন যখন সহযোদ্ধা টম প্রস্তাব করলেন, লাদেনের লাশটি আবার তল্লাশি করে দেখা হোক। ‘ওয়াল্ট লাদেনের বুকের ওপর থেকে নেমে এসে এক জোড়া রাবারের গ্লাভস পরে নিল হাতে। আমি বডি ব্যাগের জিপার টেনে নিচে নামালাম। আমরা ব্যাগটি খুললাম, লাশটা উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। ওয়াল্ট থাবড়াতে শুরু করল, প্রথমে সামনের দিকটায়, তারপর হাত ঢুকিয়ে দিল পাঁজর ও পিঠের দিকে।
আমরা তাঁর পাজামার পকেটগুলো হাতড়ে দেখলাম, যদি কোনো কাগজের টুকরো, একটা চিরকুট, ফোন নাম্বার বা অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়।
‘ওয়াল্ট যখন লাদেনের দেহ তল্লাশী করছিল, তখন আমি লক্ষ করলাম, হেলিকপ্টারের দুই প্রধান ক্রু অন্যদের কাঁধের ওপর দিয়ে গলা বাড়িয়ে চোরা চোখে লাশটি দেখার চেষ্টা করছেন। আমরা তাঁদের দিকে হাত নাড়লাম; তারপর একটা লাল লেন্সের ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেললাম লাদেনের মুখমণ্ডলে। তাঁদের চোখগুলো জ্বলে উঠল; হাসি ফুটে উঠল মুখে। আমি দেখতে পেলাম, এই অভিযানের অংশ হতে পেরে তাঁরা গর্বিত বোধ করছেন।
নর্থ ক্যারোলাইনায় এই অভিযানের প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ শুরুর প্রথম দিন থেকে আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাঁদের ছাড়া এই অভিযান সম্ভব ছিল না। ...
‘ওয়াল্ট লাদেনের দেহ তল্লাশি করে কিছুই পেল না। ও জিপারটি টেনে লাশের ব্যাগটি বন্ধ করে আবার উঠে বসল লাদেনের বুকের ওপর। আমি চোখ বন্ধ করে পেছনের কথা ভাবতে লাগলাম।
’
কিছু সময় পর টম বললেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের আকাশসীমায় ফিরে এলাম। ’ তার মিনিট পনেরো পর ম্যাট দেখতে পেলেন জালালাবাদ শহরের উজ্জ্বল আলোর বলয়। আকাশযান পার্ক করে রাখার হ্যাঙারের বাইরের চত্বরে নেমে পড়ল হেলিকপ্টার। কমান্ডোদের জন্য টারম্যাকে অপেক্ষা করছে একটি সাদা হাইলাক্স পিকআপ। তাঁরা হেলিকপ্টার থেকে নামার সময় দেখতে পেলেন, একটু দূরে অপেক্ষমাণ একটি ট্রাক থেকে লাদেনের লাশ নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছেন সেনাবাহিনীর তিনজন রেঞ্জার।
তাঁদের কাজ লাদেনের লাশ জালালাবাদ থেকে বাগরাম বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া। তাঁরা লাশটি নামিয়ে নেওয়ার জন্য হেলিকপ্টারের কেবিনের কাছে এগিয়ে এলে কমান্ডোরা হাত নেড়ে তাঁদের সরিয়ে দিলেন। ওয়াল্ট চিৎকার করে বললেন, ‘যাও যাও! এটা আমাদের!’ ম্যাট বলছেন, ‘একে পাওয়ার জন্যই আমরা এত পথ পাড়ি দিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পুরোটা পথ একে সযত্নে নিয়ে এসেছি আমরাই। ...আমি লাশের ব্যাগের একটা হাত চেপে ধরলাম, হাত লাগাল অন্যরাও।
লাশটি আমরা ট্রাকের ওপর তুললাম। ’
কমান্ডো দল পাকিস্তানের আকাশসীমা পেরিয়ে আফগানিস্তানের আকাশে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বেতারে খবর পৌঁছে যায় আফগানযুদ্ধে মার্কিন জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ডের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ম্যাকর্যাভেনের কাছে। তিনি ছুটে এসেছেন অপারেশন সেন্টার থেকে, ম্যাট বিসোনেট ট্রাকের ওপর থেকে দেখতে পেলেন, অ্যাডমিরাল দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন হ্যাঙারের দরজার কাছে। ট্রাকটি দরজার বাইরে এসে দাঁড়াতেই তিনি বেরিয়ে এলেন। ম্যাট লিখছেন, ‘লাশ দেখার জন্য তাঁকে বেশ উদ্গ্রীব মনে হলো।
তিনি বললেন, “তাঁকে দেখা যাক। ” আমি ট্রাকের পেছনের ঢাকনাটি নামিয়ে দিয়ে বললাম, “ওকে, স্যার। ” আমি বডি ব্যাগের তলার দিকটা ধরে ট্রাক থেকে টেনে নামালাম। সিমেন্টের মেঝের ওপর সেটি পড়ল একটা মরা মাছের মতো। হাঁটু গেড়ে বসে আমি ব্যাগের জিপার টেনে খুললাম।
মুখমণ্ডলের প্রায় সব রং মুছে গেছে। ত্বক হয়ে গেছে ফ্যাকাশে, যেন ছাই। নরম হয়ে গেছে দেহটি, জমাটবাঁধা সব রক্ত জড়ো হয়েছে ব্যাগের তলদেশে। ’
লাদেনের লাশ অ্যাডমিরাল ম্যাকর্যাভেনের চোখের সামনে উন্মুক্ত করে ম্যাট বললেন, ‘এই যে আপনার বয়। ’ পাশে দাঁড়িয়ে ওপর থেকে দেখতে লাগলেন অ্যাডমিরাল।
ম্যাট বিসোনেট মৃত লাদেনের দাড়িটা মুঠি করে ধরে তাঁর মুখমণ্ডলটি ডাইনে ও বাঁয়ে ঘুরিয়ে অ্যাডমিরালকে সুযোগ করে দিলেন আরও ভালো করে দেখার। অ্যাডমিরাল ম্যাকর্যাভেন লাদেনের মুখটি আরও ভালো করে দেখার জন্য হাঁটু ভাঁজ করে নিচু হয়ে এলেন। এর মধ্যে তাঁকে ও লাশটিকে ঘিরে বেশ ভিড় জমে উঠল। অন্য কমান্ডোরা লাদেনের লাশ দেখেননি, এখন সবাই দেখতে চান। অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেন সৈন্যদের ভিড়ের মধ্যে লম্বা-চওড়াদের খুজতে খুঁজতে বললেন, লাদেনের উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি।
তিনি এক সিল সদস্যকে জিগ্যেস করলেন, ‘তোমার উচ্চতা কত?’ উত্তরে সিল সদস্যটি বললেন, ছয় ফুট চার ইঞ্চি। অ্যাডমিরাল তখন তাঁকে শুয়ে পড়তে বললেন লাদেনের লাশের পাশে। সিল সদস্যটি বিভ্রান্ত, অ্যাডমিরাল ঠাট্টা শুরু করলেন নাকি! না, ঠাট্টা নয়—এটা বুঝে তিনি শুয়ে পড়লেন মৃত লাদেনের পাশে। আর অ্যাডমিরাল ম্যাকর্যাভেনের চোখের তারা দুটি চক্কর খেয়ে যেন মেপে দেখল, লাশের উচ্চতা ঠিক আছে কি না। তারপর সৈন্যটিকে বললেন, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।
এখন উঠে দাঁড়াও। ’
সৈন্যদের ওই ভিড়ের এক কিনারায় ম্যাট বিসোনেট দেখতে পেলেন সেই নারীকে, যিনি পাঁচ বছর ধরে ওসামা বিন লাদেনের পেছনে লেগে ছিলেন, যাঁর একমাত্র কাজ ছিল আল-কায়েদার প্রধান নেতা, আমেরিকার এক নম্বর শত্রুর গুপ্তঘাঁটির সন্ধান বের করা। অভিযান চলাকালে ম্যাট বিসোনেট লক্ষ করেছেন, সিআইএর এই নারী কর্মীটি তাঁদের যেসব তথ্য জানিয়েছিলেন, সেগুলো সব ছিল অভ্রান্ত। প্রতিটি অনুমান বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেছে। ম্যাট তাঁর বইতে এই নারীর নাম লিখেছেন জেন।
ওখানে, লাদেনের লাশের চারপাশে সৈন্যদের ভিড়ের কিনারায় জেনকে দেখতে পেয়ে ম্যাট বিসোনেটের মনে পড়ে গেল অভিযানের কয়েক দিন আগের কথা। সেদিন জেন কথা প্রসঙ্গে ম্যাটকে বলেছিলেন, লাদেনকে পাওয়া গেলে এবং হত্যা করা সম্ভব হলে তিনি তাঁর লাশ দেখবেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘ওটা দেখার কোনো আগ্রহ নেই আমার। মৃতদেহ দেখা আমার চাকরির দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ এখন ম্যাট টেবিলের ওপাশ থেকে জেনকে লাদেনের লাশের ব্যাগটি দেখিয়ে বললেন, ‘আমরা যদি এটা খুলে ফেলি, তাহলে কিন্তু তোমাকে লাশটা দেখতে হবে!’ জেন ম্যাটের কথার উত্তরে তখন কিছুই বলেননি।
কিন্তু একটু পরে, মৃত লাদেনকে যখন হ্যাঙারের মেঝেতে রাখা হয়েছে, তখন ম্যাট দেখতে পেলেন, জেনের চোখ ফেটে দরদর করে অশ্রু নেমে যাচ্ছে। ম্যাট লিখছেন, ‘এই লোকের পেছনে ছুটতে ছুটতে জেন কাটিয়ে দিয়েছে পাঁচটি বছর। আর এখন সে ওর পায়ের কাছে পড়ে আছে...। ’
ম্যাট বিসোনেট কি বোঝাতে চাইছেন, সিআইএর কর্মকর্তা জেনের চোখে অশ্রু ঝরছে যুদ্ধজয়ের আনন্দে?
একটু পরে অবশ্য ম্যাট বলছেন, জেনের মতো কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে রক্তপাতের কোনো সম্পর্ক নেই। রক্ত, লাশ এসব তাঁদের কখনো দেখতে হয় না।
তাই, পায়ের কাছে লাদেনের লাশ দেখে তাঁর ভীষণ খারাপ লেগেছে। কান্না হয়তো সে কারণেই। কিন্তু তারও বেশ কিছু সময় পরে, জালালাবাদ থেকে বাগরাম বিমানঘাঁটিতে যাওয়ার উদ্দেশে একটি সি-১৩০ বিমানে উঠেও ম্যাট দেখতে পেলেন, বিমানের মেঝেতে বসে দুই হাঁটু বুকের সঙ্গে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে চলেছেন জেন। ‘কেবিনের ভেতরে লাল আলোয় আমি দেখতে পেলাম, জেনের চোখ দুটি ফুলে উঠেছে। মনে হলো, সে তাকিয়ে আছে অনেক দূরের দিকে।
’ লিখছেন ম্যাট বিসোনেট, ‘আমি উঠে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে টোকা দিলাম। তারপর ওর কাছাকাছি হয়ে বললাম, “তুমি যা যা বলেছিলে, সব মিলে গেছে, একদম হান্ড্রেড পারসেন্ট!” জেন বিহ্বল চোখে তাকাল আমার দিকে। আমি বললাম, “সত্যি! ঠাট্টা করছি না! ওয়ান হানড্রেট পারসেন্ট মিলেছে সবকিছু। ” এবার সে মাথা নাড়ল, তারপর আবার কাঁদতে শুরু করল...। ’
জালালাবাদে মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের একজন বিশেষজ্ঞ লাদেনের মৃতদেহ থেকে (এফবিআই) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর সেনাবাহিনীরা রেঞ্জাররা সেটি সমাধিস্থ করার জন্য নিয়ে যান আরব সাগরে মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কার্ল ভিনসনে।
ম্যাট বিসোনেট (মার্ক ওয়েন) নো ইজি ডে বইতে এ পর্যন্ত বর্ণনা দিয়ে ফিরে গেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনী, সরকার ইত্যাদি প্রসঙ্গে। লাদেনের শেষকৃত্যের বিবরণ তিনি দেননি। অবশ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ৩ মে খবর বেরোয় যে, ইউএসএস কার্ল ভিনসনের ডেক থেকে লাদেনকে উত্তর আরব সাগরে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযানে অংশগ্রহণকারী মার্কিন নেভি সিলের সদস্য ম্যাট বিসোনেটের প্রত্যক্ষ বয়ান থেকে কিছু অংশ "প্রথম আলো" পএিকাতে প্রকাশিত। হুবুহু তুলে দেয়া হলো।
লেখক-মশিউল আলম: সাংবাদিক। মার্ক ওয়েন ছদ্মনামে তাঁর লেখা বই “নো ইজি ডে” ৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসেছে এবং বিক্রি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।