আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
তুই একবার চিন্তা করতো পাহাড়ঘেরা সবুজের পরিপাটি পরিবেশ, নির্মল বাতাস সাথে যদি একজন নারী না থাকে তবে সে নির্মল বাতাস নিয়ে কি লাভ বল? তার উপর নারী-পুরুষের সমান অধিকার। তাদেরও আছে পাহাড়ে চড়ার অধিকার। টোকনের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই পটকা ভাই বান্দরবানের পাহাড় জয় করার আনন্দে চোখ পিটপিট করে চারিদিকে তাকালেন। টোকনও ঘায়েল বলা চলে।
কথা হচ্ছিল বান্দরবান যাওয়া নিয়ে। পটকা ভাই চান সাথে মেয়ে যাক। সবাই চুপ। পটকা ভাই আবার শুরু করলেন “ সো গেট রেডি ফর ট্যুর এন্ড কালেক্টি ইউর ওন গার্লফ্রেন্ড”
টোকনের চিন্তাটা একটু বেশী। তার গার্লফ্রেন্ড আবার বাবা-মায়ের খুব বাধ্য।
তিনদিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। রিফাতও বিমর্ষ হয়ে বসে আছে। “কিরে ব্যাটা আমার না হয় গার্লফ্রেন্ডের যাওয়া নিয়ে সমস্যা কিন্তু তোরতো সমস্যা নাই,মুখ বাঁকাইয়া বইসা আছিস কেন”
-নাহ মামা! আসলে ভাবতেছি কারে নিয়া যামু?
-মানে?
-ধর গিয়ে মিলির বান্দরবান দেখার খুব শখ, শিপা কখনও পাহাড় দেখেনি,সুভার আবার ঝর্না খুব পছন্দ। কি যে করি?
-এক কাজ কর তুই টস কর?
-ভালো বুদ্ধি।
সবশেষে পটকা ভাইয়ের নেতৃত্বে এই মাসের ২২ তারিখে বান্দরবান যাবার তারিখ ধার্য্য হল।
কথা থাকলো ২২ তারিখ রাতেও রওনা দেয়া হবে ঢাকা থেকে।
সবাইকে তার গার্লফ্রেন্ড কালেকশন করতে উপদেশ দিয়ে আসলেও পটকা ভাইয়ের নিজেরটাই কালেকশনতো দূরে থাক এখনও নির্বাচনই হয়নি। পটকা ভাইয়ের ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। হাতে অবশ্য বেশী সময় নাই। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে একটা মেয়ে নির্বাচন করতে হবে।
তার আগে মনোনয়নের ব্যাপার থাকে। তারপর তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে হবে এবং সবশেষে তাকে নিয়ে বান্দরবান পাহাড় জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। উফ কি থ্রিলিং একটা ব্যাপার হবে। সবকিছুর আগে ভাবতে হবে। ভাবতে ভাবতেই মনে মনে একটা লিষ্ট করে ফেলা যাক।
নীলা মেয়ে হিসাবে অসাধরণ, দারুন রোমান্টিকও। তবে গলা ভালো না। শৈলপ্রপাতে ঝর্ণার পাশে বসে নীলার ফ্যাসফ্যাসে গলায় আই লাভ ইউ শব্দটা মোটেও মানাবে না। অতএব নীলা বাদ। কলিও দেখতে সুন্দর, তবে সে ভাবনা থেকেই বাদ।
হিন্দী সিরিয়াল দেখা মেয়ে পাহাড়ের কিছু বুঝবে না।
গত এক ঘন্টার হিসাব থেকে পটকা ভাইয়ের শর্ট লিষ্টে যে তিনজন স্থান পেয়েছেন তারা হলেন নিশি,সুইটি এবং ঝিনুক। তিনজনই তিনজনের প্রতিদন্ধী। সবদিকেই তিনজন সেরা। সুইটি দুজন থেকে একটু এগিয়ে আছে অবশ্য কারন সে এবার লাক্স ফটোজনিকে রেজিষ্ট্রেশন করেছিল।
বাছাই পর্বে বাদ পড়ার পরও এলাকায় সে এখন ষ্টার। সুইটির জন্য পটকা ভাইয়ের বুকের বাম পাশে একটি গোপন ব্যথা যে আছে তা এতদিন জানতেন না। আজ তার কথা মাথায় আসার পরই কেমন জানি বুকটা দুলে উঠল। সুইটি যখন গলি দিয়ে হেঁটে যায় তখন এলাকার ছোকরারা বলে “এ্যাই দেখ দেখ সুইটি, ওইযে লাক্সে গেল যাইতাছে” আহা শুনে গর্বে বুকটা ভরে যায়।
শুভক্ষন দেখে পটকা ভাই সুইটিকে দিয়েই শুরু করলেন।
বহু কষ্ট অর্জিত সুইটির ফোনে ফোন করলেন “হ্যালো সুইটি কেমন আছ?
-কে বলছেন?
-আমি পটকা চিনেছো? ওইযে পটকা আরকি
-ওহো ওই যে গলির মোড়ে বৃষ্টির দিনেও সানগ্লাস পরে দাড়িয়ে থাকেন,চিনবো না কেন। কেমন আছেন?
-আচ্ছা শোন বাংলাদেশতো অনেক ছোট দেশ,ছোট দেশ হলেও কিন্তু বাংলাদেশ সুন্দর। বান্দরবান বাংলাদেশের একটি অতি সুন্দর জায়গা। এখানে মেঘেরা রাস্তায় নেমে আসে
এ পর্যায়ে পটকা ভাইকে থামিয়ে দিয়ে সুইটি জিজ্ঞেস করে “ভাইয়্যা কি বাংলা রচনা পড়ছেন?
-আরে নাহ, কথা হচ্ছে কি বাংলাদেশতো ছোট দেশ,তবে বান্দরবান কিন্তু বেশ বড়। তো ব্যাপারটা হল কি সেখানে অনেক পাহাড় আছে।
আচ্ছা তোমার পাহাড় কেমন লাগে?
-ইয়াম্মি পাহাড় আমার অনেক সুইট লাগে। কি সুন্দর সবুজ। তবে পাহাড়ে সাপ থাকে,সাপ আমি অনেক ভয় পাই। ডিসকোভারীতে অনেক সাপ দেখায়।
সেদিনের মত পটকা ভাই সুইটিকে সাপ ভয় পাওয়ার চেয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার ব্যাপারে তালিম দিলেন।
সুইটি বুঝলো কিনা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে একজনের আশায় বসে থাকলেতো হবে না। জ্ঞানীরা কখনও একটা কিছুর উপর নির্ভর করে থাকে না,আরও অনেক কিছু খোজে। নিশির সাথে পটকা ভাইয়ের আগেই পরিচয় ছিল। তাই নিশির ব্যাপারে পটকা ভাই বেশ পজেটিভ।
-হ্যালোওও নিশি
-পটকা ভাই কেমন আছেন?
-হুমম ভালো আছি। আচ্ছা বান্দারবান যাবা? ওখানে অনেক পাহাড় আছে,নদী আছে,ঝর্ণা আছে। আমি আর তুমি ঝর্নার পাশে বসে বসে গান গাইবো। যাবা?
-মানে কি? বান্দরবানে পাহাড় আছে এইটা আপনাকে বলতে হবে? আমি জানি না? কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ বান্দরবানের কথাই বা আসতেছে কেন? আর আপনি ভাবলেন কি করে আমি যাবো?
-নাহ মানে আমিতো তোমাকে ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি,শাকিব খান থেকেও বেশী ভালোবাসি। তাই ভাবলাম তুমি আমার সাথে বান্দরবান কেন জাহান্নামও যাবে?
-আপনি গত তিন বছরে আমারে সতেরবার প্রপোজ করেছেন।
আবার করতেছেন। আপনার লজ্জা নাই?
-আমি একাই করেছি? আমি সতেরবার প্রপোজ করার পর তুমিওতো সতেরবার বলেছে “আমাকে দিয়ে স্বম্ভব না”। এত বড় মেয়ে সম্ভব না বলতে লজ্জা করে না?
নিশি লাইন কেটে দেয়ার পর পটকা ভাইয়ের মনে হল এতটা রেগে যাওয়া উচিত হল না। তারই বা দোষ কি তিন বছরে সতেরবার প্রপোজ করার পর রাজি হয় নাই তা মানা যায় কিন্তু তিন বছরে নিশি বয়ফ্রেন্ড পাল্টিয়েছে ২০জন। এর মধ্যে দুইজন আবার পটকা ভাইয়ের ফ্রেন্ড একজন এলাকার ছোট ভাই।
এটা মানা কষ্টকর।
ঝিনুক মেয়েটা অবশ্যই ভালো মেয়ে। পটকা ভাইয়ের অবস্থা দেখে নিশ্চয় রাজি হবে। ঝিনুককে ফোন দিয়ে ইন্টারমেডিয়েটে মুখস্ত করা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সোন্দর্য্য রচনাটা প্রথম এক ঘন্টা ঝাড়া বলে গিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশের জায়গা বান্দরবান লাগিয়েছেন।
“শোন ঝিনুক তুমিতো জান বান্দরবানা প্রাকৃতিক সোন্দয্যের লীলাভুমি। এখানে রয়েছে ম্যানগ্রোব বন সুন্দরবন এবং পৃথিবীর সবচে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। আছে ঝার্না,পাহাড়,গভীর নলকুপ,সুন্দরী পাহাড়ী,ইত্যাদি”
ঝিনুক চুপচাপ শুনে বলল “পটকা ভাই আপনি যাচ্ছেন যান, আমাকে কেন যেতে বলছেন?
পটকা ভাই বিপদে পড়ে সবই বলে দিলেন। “দ্যাখো ঝিনুক এতদূরের পথ আমি এক আলাভোলা,পাশে একটা খালি সিট রেখে কিভাবে যাবো? চল না আমাকে দেখে রাখবে
-ভাই একটা কাজ করেন। বিজ্ঞপ্তি দেন “ঢাকা টু বান্দরবান বাসের একটা সিট বিক্রয় হইবে।
ক্রেতাকে অবশ্যই নারী হইতে হইবে”
-না না কি বল এসব? আমার একটা মান ইজ্জত আছে না। আর এভাবে দিলেই কেউ আসবে নাকি?
কোন ভাবেই কাউকে ম্যানেজ করতে পারলেন না পটকা ভাই। লাক্স সুন্দরীকে পটানোর শেষ পর্যায়ে প্রায় চলে গিয়েছিলেন। একসাথে বসুন্ধরায় ঘুরেছেন,আফতাব নগরের কাশবনে গিয়েছেন,চাইনিজ খেয়েছেন। কেবল প্রপোজ করার সাথে সাথে লাক্স সুন্দরী নাখোশ করে দিয়েছেন।
পটকা ভাই অবশ্য কাম বাসনার সঙ্গী না কেবল বান্দরবানের সঙ্গী বানাতে চেয়েছেন। তাতেই চটে গিয়েছে। যাবার আগে স্যান্ডেল না মেরে দুটি উপদেশ মেরে গিয়েছে অবশ্য-
১.পটকা ভাই কখনও যেন চিড়িখানায় না যায়। আয়না দাড়ায় যাতে সবসময়। এতে আত্ন উপলদ্ধি হবে
২.কখনও কোন মেয়ের সাথে কথা বলার আগে আয়না দেখতে।
লাক্স সুন্দরীর উপদেশে পটকা ভাই বুঝলেন এদেশের মেয়েরা এখনও বড্ড আয়না কেন্দ্রেক। আয়নার ঘোরটোপ থেকে এখনও বেরুতে পারেনি কোন মেয়েই। নিজের উপর নিজের সামান্য রাগ হচ্ছে। সবচে বেশী রাগ হচ্ছে এ জন্য যে মাত্র ক’দিন আগেই বাংলাদেশের দুজন মেয়ে মাত্র এভারেষ্ট জয় করে আসলো আর তারা আয়নার সামনে দাড়িয়েই খালাস। বান্দরবানের মত জায়গায় যাবে না।
তারা যাবে কোথায়? গাউছিয়া,নিউমার্কেট,চাঁদনী চকে। তারা পাহাড়ের সবুজ না দেখে ছেলেদের স্পাইক দেখবে,বাইক দেখবে। ভাবতেই অবাক হন পটকা ভাই। যে দেশে সাকিব আল হাসানের মত অলরাউন্ডার জন্ম নেয় সেখানে কিভাবে এমন মেয়ের জন্ম হয়। হায় কি বৈষম্য!
বান্দরবান যেতে আর মাত্র দুদিন বাকি।
অথচ এসব মেয়েদের দেয়া ব্যাথায় পটকা ভাই মনে মনে স্বরচিত কবিতা আউড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ টোকন এসে হাজির “আরেহ ভাই আপনি এখানে, শোনেন ভাই বহুত কষ্টে রাজি করাইছি। পরশু তাহলে যাচ্ছি আমরা”
-নো লেডিস
-মানে কি?
ততক্ষনে বাকিরাও হাজির। সবাইর চোখ কপালে। যে লোক নারী অধিকারের কারনে বান্দরবান নিয়ে যেত চাইছিলেন সে নাকি আজ মানা করছে।
পটকা ভাই আবার মুখ খুললেন “আদিকাল থেকে নারীরা একটা সমস্যা ব্যাতিত কিছুই না। ওই চান্দে প্রথম কে গ্যাছে? নীল আর্মষ্ট্রং না? হে কি হের গার্লফ্রেন্ড অথবা বৌ লইয়া গেছিলো? নাহ যায় নাই। কেন যায় নাই তোরা ভাব।
অনিক আমতা আমতা করে বলা শুরু করল “কিন্তু ভাই……
-থাম তুই আমাদের মুসা ঈব্রাহিমের কথায় আয়। সে এভারেষ্ট জয় করছে তার বৌ নিয়ে গেছিলো? যায় নাই।
কেন বলতো
-কেন
-কারন বৌ নিয়ে গেলে নেপাল থেকে নানা রকম প্রসাধনী এবং হাতপাখা নিয়েই দেশে ফিরতে হত। বৌ বলতো বাজার করতে ঘুম থেকে উঠতে পার না, তুমি উঠবা এভারেষ্টে?
এমন অকাট্য যুক্তি না মেনে কোন উপায় নেই। তবুও এক একজন এক এক রকম প্রশ্ন করছে। একজন বলল “ভাই নীল আর্মস্ট্রং যদি চাঁদে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে যাইতো কি হইতো”
-কি হইতো মানে? চাঁদ জয় করা ছাড়া বাকি সব হইতো। আর্মষ্ট্রং এর গার্লফ্রেন্ড চাঁদে নামতে অস্বীকৃতি জানাইতো।
কারন চাঁদে কোন শপিং মল এবং বিউটি পার্লার নাই।
-তাহলে আমাদের যাওয়া হচ্ছে না বান্দরবান?
এবার পটকা ভাইও সামান্য চুপ খেয়ে গেলেন। আসলে দেখ পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর এবং চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী বাকি অর্ধেক নর। নারী ছাড়া যে দেশে বিয়ে হয় না,হানিমুন হয় না, সে দেশে বান্দরবান গিয়ে লাভ কি বল?
পটকা ভাই সিরিজের আগের সবগুলো লেখা এখানে পাবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।