আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই দিনগুলো

আমি ছোট বেলা থেকেই খুবই চঞ্চল একটা মেয়ে, আমার বাবা বলে আমি নাকি আগে কখনো এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না, আমি এখন যদিও কথাটা বিশ্বাস করি না। কিন্তু বাবা বলে আমি খুব বেশী কথা বলি, আগে নাকি আমি সারাদিন নিজে নিজেও কথা বলতাম এমনকি ঘুমের মাঝেও কথা বলতাম, সারাদিন কি করেছি আমাকে জিজ্ঞাসা করার দরকার হতো না আমি ঘুমালেই নাকি সেগুলা বলা শুরু করতাম। আমার মনে আছে আমি একবার কি নিয়ে যেন বাবার সাথে গল্প করছিলাম আর বাবা এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আমাকে বলল আমি যদি বেশী কথা বলি তাহলে নাকি আমার বুদ্ধি কমে যাবে। ছোট বেলা থেকে আমার বুদ্ধিমতী কথাটা শুনতে খুব ভাল লাগতো, কিন্তু যেহেতু সে টা ছিলাম না, তাই যতই বুদ্ধির কাজ করতাম না কেন আমার সব সময় হিতে বিপরীতটা হতো বাবা যখন থেকে আমাকে এটা বলতো কম কথা বলতে তখন থেকে আমি কম কথা বলব ঠিক করলাম। সন্ধ্যার সময় যখন পড়তে বসতাম তখন আম্মু বলতো যেন প্রতিটা অক্ষর ঠিক ঠিক উচ্চারণ করে উচ্চ স্বরে পড়ি, কিন্তু যেহেতু বাবা বেশী কথা বলতে নিষেধ করেছে তাই আমি মনে মনে পরতাম আমাদের বাড়ির মধ্যে একটা পেয়ারা গাছ ছিল যেটা পরবর্তীতে কেটে ফেলা হয়েছে, কিন্তু সেইটা ছিল আমার চির দিনের সঙ্গী।

আমি সারাটা দিন ওই গাছের সাথেই ঝুলতাম, এমন কি আমার সকাল এবং বিকেলের খাবার ওই গাছে বসেই সারতাম। রাতে সবার সাথে খেতাম কারণ রাতে গাছেরা ঘুমায় আমরা আট বান্ধবী ছিলাম এক এক জনার জান প্রান। তবে এই আট বান্ধবী এক দিনে হই নি। প্রথম স্কুল এ যাওয়ার কিছুদিন পরে আমার দুইটা বান্ধবী হল একটা লিজা আর একটা তন্নি। লিজার আবার দুইটা বান্ধবী ছিল ওদের বাসা এক জায়গায় ছিল ওরা একসাথে স্কুল এ আসতো।

শারমিন আর জান্নাতুন। তন্নির বাসার কাছে খুশির বাসা ছিল আর ওরাও একসাথে স্কুল এ আসতো। আর দুইজন হল দিতি আর যূথী, দিতি আমার ভাইয়ের বন্ধুর প্রেমিকা ছিল আর যূথী সবসময় আমাদের জন্য স্কুল এর বেঞ্চে জায়গা রেখে দিতে দিতে বান্ধবী হয়ে গেছে আমরা আট জন যে এক আত্মা আট প্রান এটা বুঝলাম পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পরে। আমরা মোট চার জোড়া ছিলাম তাই দুইজন করে বসতাম। লিজা আমার সর্ব কালের বেস্ট বান্ধবী।

আমাদের একটা স্বভাব ছিল ভূতের গল্প পড়া আর সবাইকে শুনানো। আমরা যখন একসাথে টিফিন খেতে বসতাম তখন লিজা আর আমি গল্প শুরু করতাম আমাদের গল্পে সবার খাওয়া হয়ে যেত আর আমাদের প্রতি দিন টিফিনের পরের ক্লাস টাতে বকা খেতে হতো। একবার তো গল্প শেষ করে খাওয়া শুরু করতে যাব আর দেখি টিফিন শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজে, তো আর সেদিন টিফিন খাওয়া হয় নি আমরা সবাই সবাইকে খুব ভালবাসতাম কিন্তু পড়ালেখার সময় কেউ কাউকে চিনতাম না। পরীক্ষার সময় কখনোই কেউ কাউকে বলতাম না আমি সব পারছি, আর সব সময় পরীক্ষার পরে বলতাম আমার পরীক্ষা একদম ভালো হয় নি। আমাদের সাথে আমাদের হেড স্যার এর ছেলেও পড়তো আর সেই সব সময় প্রথম হতো তাই আমরা দ্বিতীয় কেই প্রথম ধরে নিতাম আর দ্বিতীয় স্থান অধিকারের জন্য যে যতো পারি মিথ্যা বলতাম।

আমাদের পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা দিবো আমরা সবাই কিন্তু কে কি গাইড বই কিনেছিল সেই পরীক্ষা দেয়ার জন্য আজ পর্যন্ত আমরা কেউ জানি না ক্লাস সিক্স এ উঠার পর খুশির বাবা খুশিদের নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল আর যূথীরাও কোথায় যেন চলে গেল, যেহেতু ছোট ছিলাম বুঝতাম না, যূথী ক্লাস এ না আসার কারনে একদিন সবাই মিলে ওর বাসায় যেয়ে শুনি ওরা চলে গেছে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সবাই কিন্তু অভিমানে আর ওর খোঁজ আমরা কেউ করি নি। আজ পর্যন্ত ওর কোন খবর জানি না তন্নি আমাদের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দরী ছিল তাই নাচের ক্লাস এ ও সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য পেত। আমি যেদিন প্রথম আমাদের স্কুল এর নাচের ক্লাস এ যাই আমাকে ওই দিন ওই ক্লাস থেকে বের করে দেয় কারণ আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না, কি যে কষ্ট পাইছি রে সেইদিন, পরে অবশ্য আমাকে নিয়েছে। তারপর যেদিন প্রথম নাচের মঞ্চে নাচতে উঠলাম, কি যে হল উঠার সময় মঞ্চের কার্পেটে আমার শাড়ি প্যাঁজ লেগে গেল আর সবার সামনে আমি পরে গেলাম, আমি তাকিয়ে আছি আর সবাই আমাকে দেখে হাসছে।

সে এক অদ্ভুদ অনুভূতি তারপর নাচলাম প্রান খুলে আর ফাস্ট হয়ে গেলাম বান্ধবীরা সবাই এক জন আরেক জনকে হিংসা করতাম ঠিক কিন্তু এক জনার জন্য আর এক জন নিবেদিত প্রান ছিলাম। একবার ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষায় একটা প্রশ্নের উত্তর লিজা লিখতে পারছিল না সে আমাকে বলল দেখাতে, পরীক্ষা শেষ হতে আর ১৫ মিনিট বাঁকি ছিল, আমি ওই প্রশ্নের উত্তর আলাদা একটা পেজ এ লিখেছিলাম তাই আমি ওকে ওই পেজ টা দিলাম কিন্তু পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে গেলো স্যার খাতা জমা নেয়ার সময় খাতা স্টাপ্লারিং করে ফেলল লিজা আমার পেজটা ওর খাতার সাথেই জমা দিয়ে দিল। আমি শুধু হা করে চেয়ে দেখলাম যাই হোক ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। দেখতে দেখতে দিনগুলো কেটে গেছে এখন সবাই নিজ নিজ জীবনে ব্যাস্ত, ছোট বেলার কথা মনে পরলেই ওদের খুব বেশী মিস করি, হয়তবা খুব মজা করে আমি লিখতে পারি না কিন্তু চেষ্টা করি, আপনারা যারা আমার লেখা পরছেন হয়তো বা ভাববেন কি আজে বাজে লিখি, কিন্তু সেই দিনগুলো যে কেমন ছিল তা আসলে লিখে প্রকাশ করা খুব কঠিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।