আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিট-দখলের অভিঘাত (ঝালমুড়ি)

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল প্রতিদিনের চেয়ে একটু আগেই ঘুমে থেকে উঠে হয়ত একটি সোনালী নির্জলা সকালে আপনার কষ্টার্জিত টিকেট’টি পকেটে পুরে, মা বা স্ত্রী কিংবা দুজনেরই যাত্রাপথের খাদ্যগ্রহণ ও মালপত্র নিজ দায়িত্বে রাখুন সংক্রান্ত উপদেশগুলো ভিন্ন সর্বনামে কান ভারী করে চললেন ট্রেনে চড়ে বসে ঢাকার উদ্দেশ্যে। ট্রেনে উঠে সিটের খোজ করতেই দেখেন পাঁচশত টাকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্তে কাটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত শীত-সিটে বসে আছেন অন্য এক ভদ্রলোক; নির্বিকার ভঙ্গীতে, কিংবা কোন ভদ্রমহিলা ইতস্তত করছেন, অথবা এক যুবতি যার নড়াচড়ায় স্পষ্ট অস্বস্তি। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ব্যক্তি যা করবেন, তা হল চট করে টিকেট বের করে পুনরায় দেখে নেবেন সিট নম্বর ঠিক আছে কিনা! আপনার সিট দখলকারী যদি মধ্য বয়স্ক পুরুষ বা যুবক হন, "এটা আমার সিট" বলে খেঁকিয়ে উঠতে পারেন সাতসকালের উৎপাতে নিজেকে সামলাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে। তবে মনে রাখবেন প্রায় সাথে সাথেই আপনার আশেপাশের সহযাত্রীদের মনে খাটাশ হিসেবে স্থান করে নিলেন। যদি দখলকারী ব্যক্তি যুবতী, মধ্য বয়স্ক ভদ্রমহিলা, কিংবা বৃদ্ধ হন কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুখভঙ্গিতে বির বির করে হয়ত বলবেন, "এটা'তো আমার সিট"! ইতিমধ্যেই অপ্রত্যাশিত এই সঙ্কট আপনাকে ভাবতে পরিচালিত করবে: এ কে? এর সিট নেই? টিকেট না কেটেই আমার সিটে বসে আছে কেন? এ কেমন কথা? এমন আরও অনেক কিছু কিন্তু দাঁড়ান! শান্ত হন।

ওনার সিট আছে। দেখে নিন ওনার পাশের সিটে বসে থাকা ব্যক্তিকে। আপনার সিটের পাশে তার আপনজন বসেছে শুধু সেই জন্যেই আপনার আসন অধিগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর অনত্র অবস্থিত আসনটি আপনার হয়েছে। ধীর-স্থির ভঙ্গিমায় ওনার কথা শুনুন এবং জেনে নিন আসনটি কোথায়।

যদি কয়েক বগি পরে হয়, কিংবা এই বগিতে হওয়া সত্ত্বেও সেই সিট-সংলগ্ন জানালার কাঁচ ভেঙে এমন চৌচির যে তা ভেদ করে বাইরে শরতের চলমান সবুজ মাঠ, শান্ত নিথর পুকুরগুলো দেখা অসম্ভব হবে বলে মনে হয়, অতি-ভদ্রভাবে যাত্রীর ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টির করুন অনুরোধ পাষাণের মত প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। তিনি উঠবেন, আশ্বস্ত হন। কিংবা চমৎকার একজন নিপাট ভদ্রলোকের স্বভাবসুলভ হাসি হেঁসে কোন ব্যাপার না বলে দখলকারী’কে অনিশ্চয়তার অস্বস্তিকর অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারেন। অবশ্যই তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত, বরং একজন বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের দর্শনের, উপর। তবে এই ঘটনা একেবারেই অন্য রকম হতে পারে।

যাত্রীর চেহারা, আচরণ, নড়াচড়ার ভঙ্গির নির্ভুল পাঠ আপনাকে বলবে আদৌ উনি টিকেট কেটেছেন কিনা। যদি যাত্রার অভিমুখ হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং ট্রেন সেবা মহানগর জাতীয় কিংবা যাত্রার সময় যদি হয় সাপ্তাহিক বন্ধের আগের দিন বিকেল; সমূহ সম্ভাবনা আছে যে দখলকারী যাত্রী আসলে টিকেট না কেটেই বসে আছেন আপনার টিকেট কাটা সিটে। ভদ্রভাবে উঠতে বলুন, নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেয় উঠবে। সমস্যা হবে যদি কোন ভদ্রমহিলা হন। (হতেই পারেন।

হয়ত নেমে যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিংবা ভৈরব তাই স্ট্যান্ডিং টিকেট। ) আপনার সামনেই মুখে কপট কী অকপট, কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে কীইবা করতে পারেন? হাই তুলে মহিলাকে হতাশায় ডুবিয়ে ফাঁটিয়ে ঘুম দিতে পারেন। তবে অবশ্যই, অধিকাংশ একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাংলাদেশী শহুরে যুবক এই পরিস্থিতিতে কি করবেন তার অনুমান কষ্টসাধ্য নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।