”সব রাজাকারদের বিচার চাই” উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলা আমের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও তা সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের আজো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। কেবল আম নয়, কোনো ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এতে জুস কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হলেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে বেসরকারিভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে কোম্পানিগুলো তাদের চাহিদামতো আম রাখে।
সরকারের পক্ষ থেকে আজো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো ধরনের প্রকল্প করারও কোনো চিন্তাভাবনা সরকারের নেই। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আম রাখতে পারলে অফ সিজনে বাগান মালিক বা ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। সেই সঙ্গে আম এ অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক ফসলে রূপান্তরিত হবে। আমের বাগান এক সময় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০০৪ সালের পর থেকে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি এলাকায়ই মানুষ আমের বাগান করতে থাকে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।
ফলে দেশের অন্যান্য ফসলের মতো আম ক্রমেই এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠছে। কারণ কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বছর হেক্টরে আমের গড় ফলন হয় ১৩ মেট্রিক টন। যার পুরোটাই বিক্রি করতে হয়। এ অঞ্চলের বাজারগুলোতে মে মাসের শেষ দিক থেকে আম উঠতে শুরু করে। প্রথমে আসে গোপালভোগ ও রানীপছন্দ জাতের আম।
এরপর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে লকনা, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, দুধসর, মোহনভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম উঠতে শুরু করে। এরপর আসতে শুরু করে মৌসুমের আকর্ষণীয় ফজলি এবং সর্বশেষ বাজারে আসে আশ্বিনী আম। এভাবে প্রায় সাড়ে ৩ মাস বাজারে আমের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়।
আম গাছগুলোতে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা বাগান কিনতে শুরু করেন। ২-৩ বার হাতবদল হতে হতে বাগানের ধরন অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত হয়।
কিন্তু আমে পাক ধরার প্রাক্কালেই গাছ থেকে তা পাড়া শুরু হয়। অন্যান্য ফসলের মতো তা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কোনো কোনো বছর ব্যবসায়ীদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ আম পচনশীল ফল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তা ধরে রাখতে পারেন না। তা ছাড়া গাছে মুকুল আসার পর থেকেই পরিচর্যাসহ বিভিন্ন খরচও বেড়ে গেছে। এতে দেখা যায় বাগান মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বাগান নেওয়ার পর তাদের শেষ পর্যন্ত আম টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ জোগাড় করতে হয়।
এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জুস কোম্পানিগুলো বাজারে আম আসার আগেই বাগান মালিক বা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের চাহিদামতো আম কিনে নেয়। ফলে অনেকে ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় অথচ সরকারিভাবে আম সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকলে তারা অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারতেন।
ভোলাহাটের আম বাগান মালিক খায়রুল ইসলাম বলেন, তার ১০টি গাছের একটি ছোট্ট বাগান রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১০০ মণ আম পান। বাড়িতে খাবারের জন্য রেখে বাকি সব আড়তদারের কাছে বিক্রি করে দেন।
তবে ব্যবসায়ীরা যে দাম পান তাদের লাভ হলেও প্রকৃত বাগান মালিকরা ন্যায্যমূল্য পান না। তা ছাড়া দেশের অন্যান্য ফসলের মতো আম সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অধিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সরকারের এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, মূলত ফ্রেস আম সংরক্ষণ করা যায় না। কারণ আম পচনশীল ফসল।
তবে আমের খোসা তুলে তা ৭ থেকে ৮ মাস রাখা যায়। সরকারিভাবে এখনো আম চাষিদের জন্য এমন কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি বা এ ধরনের কোনো প্রকল্পও পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। তবে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ও ভোলাহাটে বেসরকারি উদ্যোগে জুস করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশেষ করে আকিজ গ্রুপ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কারণ বিদেশে বাংলাদেশি আমের জুসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কোম্পানিগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আম রাখার জন্য অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে বাগান মালিক বা ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।