স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা আগামী ১৪ জুন ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে সময় অন্তর জাতীয় নির্বাচন হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার সেটা হোক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বা পার্লামেন্ট নির্বাচন। সেদিক দিয়ে ইরানও ব্যতিক্রম নয় যদিও ইরান পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক কোন দেশ নয় । তারপরেও বিশ্বরাজনীতিতে এই দেশের নির্বাচনের গুরুত্ব আছে । কারণ ইরান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি অন্যতম রাস্ট্র ।
তাছাড়া ইরানের নির্বাচন ও সরকার পদ্ধতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় একদমই আলাদা ও বলা যায় ব্যতিক্রম ধরনের এক সরকার ব্যবস্থা যা সাধারণত আমাদের মিডিয়াগুলোতে এ সরকার ব্যবস্থা অনালোচিত।
ইরানের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট হল ইরানে সাংবিধানিকভাবে ইসলামি সরকার ব্যবস্থা থাকার পরেও এদেশটি বরাবরই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যা সাধারণত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য রাস্ট্রগলি থেকে ভিন্ন । কারণ ঐতিহাসিকভাবেই ইসলামি ভাবাপন্ন সরকারগণ বরাবরই মার্কিন মদতপুষ্ট ও মার্কিনিদের তল্পীবাহক যেমন তুরস্ক, মিশর, লিবিয়া ইত্যাদি । আর ইরানের বর্তমান ধাঁচের সরকার ব্যবস্থা মূলত সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন-ইসরায়েলী তাবেদার রেজাশাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়ে যার ফলে এই সরকার ব্যবস্থায় বরাবরই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশগুলির মধ্যে একটা বিশেষ জায়গা দখল করেছে। এই সুবাদে আজকে ইরানের সাথে ল্যাটিন আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়ারমত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাথে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান ।
ইরানের গণতন্ত্রের মাত্রা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে । আসলে আমাদের একটা স্বভাব হল আমরা অন্যদের সরকার ব্যবস্থাকে দেখি পশ্চিমা দৃষ্টি ভঙ্গিতে । পশ্চিমা গণতন্ত্রকেই আমরা একমাত্র সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছি সেইজন্য আমাদের নিজেদের গণতন্ত্রের অবস্থা যাই থাক অন্যদের দিকে তাকিয়ে নাক কুচকানোতে কোন লজ্জাবোধ করি না । প্রত্যেক দেশের অধিকার আছে নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থে সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার । চীনে যেমন আছে কম্যুনিস্ট শাসিত একমাত্র রাজনৈতিক দল।
কোন দেশের গণতন্ত্র উত্তম এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীর কোন দেশের গণতন্ত্রই উত্তম নয় । সবার ত্রুটি বিচ্যুতি আছে । সেই দিক আলোচনায় না যেয়ে আমি এখানে শুধু ইরানের গণতন্ত্র ও সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করব।
কোন দেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই সেই দেশের ইতিহাস ও সেই দেশের সংস্কৃতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাসকে আমলে নিতে হবে । পৃথিবীর সবদেশেই একই ধরণের সরকার ব্যবস্থা থাকবে এটা কখনোই আশা করা যায় না আর গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা হওয়ারও কারো প্রয়োজন নেই যদিও আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বের কতিপয় দেশ স্বেচ্ছায় গণতন্ত্র রপ্তানি করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন ।
অথচ সেই আমেরিকাতে গণতন্ত্র তো নেই বরং বলা যায় ধনতন্ত্র (Plutocracy) বিদ্যমান ।
ইরানে ১৯৭৯ সালের আগে ক্ষমতায় ছিল রেজা শাহ পাহলভী। বিভিন্ন রাজবংশ ইরান শাসন করেছে প্রায় দু’হাজার বছর । আজকে সৌদি আরব যেমন মার্কিন-ইসরায়েলের দালাল ঠিক তেমনি ইরানের রেজা শাহ পাহলভী ছিল তাই । একটা ছোট্ট উদাহরন দেই ।
১৯৭৩ সালে যখন আরব রাস্ট্রগুলি পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে তেল অবরোধ করে সেই সময় পশ্চিমাদের তেল সরবরাহ করেছে একমাত্র রেজা শাহপাহলভীর ইরান। ১৯৫৩ সালে ইরানের জনগণ গণতন্ত্র কায়েম করে ক্ষমতায় আনে জাতীয়তাবাদী নেতা ড: মোসাদ্দেককে। কিন্তু যুক্তরাস্ট্র, ব্রিটেন ও ইসরায়েলের চক্রান্তে মোসাদ্দেককে উৎখাত করে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয় আবার রেজা শাহ পাহলভীকে।
এরপরেই ইরানের জনগণ পশ্চিমাদের উপর প্রতিশোধ নেয় ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে রেজা শাহ পাহলভীকে বিতাড়িত করে এবং সঙ্গে যুক্তরাস্ট্র ও ইসরায়েলকেও বিতাড়ন করে তাদের দেশ থেকে। যুক্তরাস্ট্র যাতে আর দাদাগিরী করতে না পারে সেই জন্য ইরানের ছাত্ররা ১৯৭৯ সালে জিম্মি করে যুক্তরাস্ট্রর দুতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
৪৪৪ দিন আটক থাকার পর অবশেষ মার্কিনিরা ইরানের সকল দাবী মেনে নিয়ে ইরান ত্যাগ করে । মার্কিনরা আজ পর্যন্ত সেই অপমানের কথা ভূলতে পারেনি !
আয়াতুল্লাহ খোমেনী কর্তৃক রেজা শাহ পাহলভির বিতাড়নের পর খোমেনী গণভোটের মাধ্যমে ইরানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করে এক ব্যতিক্রমধর্মী সরকার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সরকার ব্যবস্থায় তিনি ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ইসলামি খেলাফত ( ইমামত), গণতন্ত্র , ইরানি সংস্কৃতি ও আধুনিকতাকে সমন্বয় করেন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকার ব্যবস্থার ধরণ হচ্ছে ইসলামি উম্মাহ ও নেতৃত্বের মধ্যকার সম্পর্ক ভিত্তিক। এ ব্যবস্থায় দুটি ভিত্তি রয়েছে, জনগণের ভোট এবং ইসলামিক আইন ও ঐশী বিধান।
ইসলামী বিধান ও ঐশী আদেশসমূহ বলবৎকরণ,তত্বাবধানের জন্য ও বিপ্লবকে রক্ষার জন্য একজন নেতার প্রয়োজন রয়েছে আর তিনি হলেন রাহবার যিনি একজন ইসলামিক মুজতাহিদ । ইরানের রাহবারকে বিপ্লবী নেতাও বলা হয়।
আসলে এই রাহবারের ধারণার উত্তপত্তি হল ইসলামিক খেলাফতের ধারণা থেকে । শিয়া মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে মুসলমানদের নেতা হবেন মোহাম্মদ (স) এর বংশ থেকে জন্ম নেওয়া একজন ইমাম । আর মুসলমানদের শেষ ইমাম হলেন ইমাম মাহদী ।
তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত রাহবারই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিবেন। রাহবারের পদমর্যাদাকে ইরানিরা সাংবিধানিক নাম দিয়েছেন বেলায়তে ফকিহ । বেলায়াতে ফকিহ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি ঐশী আদেশ ও ইসলামি বিধানসমূহের সাথে সরকারী নীতিমালার সমন্বয় সাধন ও তত্বাবধান করবেন। এ ব্যবস্থায় ইরানের বিপ্লবী ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হলেন রাহবার। তবে রাহবার অনির্বাচিত নন ।
রাহবারের নির্বাচনের জন্য রয়েছে বিশেষজ্ঞ পরিষদ । এই বিশেষজ্ঞ পরিষদ জনগণের সরাসরি ভোটেই নির্বাচিত এবং রাহবার তা দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ও দায়িত্ব অবহেলা করলে তাকে পদচ্যুত করতে পারেন এই বিশেষজ্ঞ পরিষদ। ইরানের প্রথম রাহবার হলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী যিনি ইসলামিক ইরানের প্রতিষ্ঠাতা, ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের নেতা ও বর্তমান রাহবার হলেন আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনী ।
ইরানের বিচার বিভাগ, শাসন তথা নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ ( পার্লামেন্ট) পরষ্পর থেকে স্বাধীন। বিচার বিভাগের প্রধান পাঁচ বছরের জন্য নিযুক্ত করেন রাহবার ।
পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রতি চার বছর পর হয় ও পার্লামেন্টের প্রার্থীদের মাষ্টার্স পাশ অথবা এর সমমানের ডিগ্রিী থাকা বাধ্যতামূলক। পার্লামেন্টের স্পীকার সরাসরি সংসদ সদস্যগণের ভোটেই নির্বাচিত হন ও শাসন বিভাগের প্রধান প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু পরপর দুবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করলে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার কোন সুযোগ রাখা হয়নি ইরানের সংবিধানে। আবার এই তিন বিভাগের সমন্বয়ের জন্য রয়েছে Expediency Council. আর আছে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ( SNSC).
যাইহোক, ইরানের প্রেসিডেন্ট পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সর্বোচ্চ এই পদটি জনগণের সরাসরি ভোটেই নির্বাচিত হয় । রাহবার সাধারণত প্রেসিডেন্ট বা সরকারের কোন কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করেন না যদিও রাহবারের ফতোয়া( Decree ) প্রেসিডেন্টকেও পালন করতে হয়।
যেমন ইরানের রাহবার ফতোয়া দিয়েছেন যে কোন ধরণের পারমানবিক বোমা , মজুদ ও প্রয়োগ ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ । এ সংক্রান্ত ফতোয়াগুলি শুধুমাত্রই রাহবারই দিতে পারেন।
এছাড়াও আমাদের নির্বাচন কমিশনের মত ইরানের রয়েছে শক্তিশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল যাকে বলা হয় অভিভাবক পরিষদ। এই অভিভাবক পরিষদ ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীসহ সকল প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনা করেন ও যাচাই বাছাই করেন। অভিভাবক পরিষদ ইরানের পার্লামেন্টে পাশ করা আইনগুলো পর্যালোচনা করে ও পার্লামেন্টে পাশ করা বিলে ভোটে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করতে হলে পার্লামেন্টে তা অনুমোদন অত:পর গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন ও সবশেষে রাহবার যদি তা অনুমোদন করেন তাহলেই প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট সম্ভব।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইরানে ৬৮৬ জন প্রাথী নিবন্ধন করেছিল । এর মধ্যে গার্ডিয়ান কাউন্সিল মাত্র ৮ জনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিয়েছে তার মধ্যে অবশ্য দুজন ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। । প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অবশ্য গার্ডিয়ান কাউন্সিল প্রাথীদের রাস্ট্র, ইসলামিক, বিপ্লবের প্রতি আনুগত্যসহ প্রাথীদের প্রশাসন চালনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনা করেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের অন্যতম দিক হল তাদের সবাই পিএইচডি ডিগ্রীধারী ও সহজ সরল জীপন যাপনে অভ্যস্থ। পশ্চিমা মিডিয়া গুলোতেও ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে প্রতিবেদন প্রকাশ করতেছে যদিও তাদের উদ্দেশ্য ইরানে কিভাবে আর একটা গন্ডোগোল বাধানো যায়।
ইরানের নির্বাচনগুলিতে টাকার খেলা নেই বললেই চলে। সেখানে একজন গরীব ব্যক্তিও প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হতে পারেন ও তার নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারেন। আহমাদিনেজাদ তার অন্যতম উদাহরণ ।
প্রার্থীদের রাস্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করতে কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়না ।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীগণ সংস্কারপন্থী ও কট্টরপন্থী নামে দুই গ্রুপে বিভক্ত যদিও ইরান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। সংস্কার পন্থী প্রাথী মোহাম্মদ রেজা আরেফ অন্য সংস্কারপন্থী প্রার্থী হাসান রোহানীর সমর্থনে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন । অন্যদিকে কট্টরপন্থী হাদ্দাদ আদেল অন্য কট্টরপন্থী প্রার্থীদের সমর্থনে তার নিজ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন।
তবে সম্ভবত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবার দ্বিতীয় দফায় গড়াবে কারণ কোন প্রার্থী ৫০% এর বেশি ভোট না পেলে প্রথম দুইজনের মধ্যে আবার দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা কট্টরপন্থী কিন্তু মডারেট তেহরান মেয়র বাকের কালিবাফ ও সংস্কারপন্থী হাসান রোহানীর মধ্যে হয়তো দ্বিতীয় দফা নির্বাচন গড়াবে । তবে অনেক বিশ্লেষক আল্ট্রা কট্টরপন্থী সাইদ জালিলির কথাও বলেছেন।
যাইহোক পশ্চিমারা গণতন্ত্র আর উদারতন্ত্র বলে কিছুতে বিশ্বাস করে বলে আমার জানা নেই । যদি তাই হত তাহলে ইরান নয় তাদের মাথা ব্যাথা বেশি হত সৌদি ও রাজা বাদশাহ শাসিত কতিপয় আরব দেশগুলি নিয়ে ।
ইরানে যা গণতন্ত্র ও উদারতন্ত্র আছে সৌদিতে তার ১% ও নেই অথচ সেই সৌদি ওহাবী শাসক গোষ্ঠী নিয়ে কোন নেগেটিভ রিপোর্ট এই গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের কাছে কোনদিন পেলাম না ! কারণ সৌদি যাই হোক পশ্চিমাদের পা চাটা দালাল । এই পশ্চিমা দেশগুলিই রাজা বাদশাহ শাসিত আরব দেশগুলিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতেছে দেদারছে !
ইরান নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথার মুল কারণ ইরানের পরমানু কর্মসূচি, ইরানের বৈজ্ঞানিক উন্নতি ও ইরানের স্বাধীনচেতা পররাস্ট্রনীতি । পশ্চিমাদের শত অবরোধ ইরান থোরাই কেয়ার করে যেভাবে উন্নতি করতেছে অন্যকোন উন্নয়নশীল দেশে ঐ রকম একটা অবরোধ আরোপ করলে ঐ দেশের মেরুদ্ন্ড এতদিনে ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যেত !যদি মনে করেন ইরানের তেল সম্পদ আছে সেটা তো সাদ্দামেরও ছিল । তাছাড়া পশ্চিমারা ইরানের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নিষ্ঠুর অবরোধ আরোপ করেনি । তারপরেও মহাকাশ,পরমানুসহ মহাকাশে স্যাটেলাইট ও বানর পাঠানো, সামরিকসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ঈর্ষনীয় ! ইরানের প্রতি যুক্তরাস্ট্র ও তাদের মিত্র ইউ (EU) শত শত অবরোধ আরোপ করেও ইরানকে দমাতে পারেনি ।
পারেনি সাদ্দা্মকেও লেলিয়ে দিয়েও। আসলে একটা বিপ্লবী জাতিকে দমানো সম্ভব নয় যদি তারা দৃড় পদে দাড়িয়ে থাকে তা আবার যদি হয় ইরানের মত কোন ঐশ্বর্যশীল ও উচু সভ্যতার অধিকারী দেশ।
যাইহোক, লিখতে শুরু করলে অনেক কথা এসে যায়। বাড়ে কলেবর। পশ্চিমাদের অভিযোগ ইরান পরমানু বোমা বানাচ্ছে যদিও এর স্বপক্ষে তারা বছরের পর বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়েও একটা প্রমানও হাজির করতে পারেনি তারপরেও ধরে নিলাম ইরান বোমা বানাচ্ছে ।
যুক্তরাস্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্থান ও জারজ ইসরায়েলের যদি পারমানবিক অস্ত্র থাকতে পারে ইরানের কেন থাকতে পারবে না ? বা ইরান কেন বানাতে পারবে না ?
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হল অর্থনীতি, পরমানু কর্মসূচি ও আমেরিকা - ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক। তবে ইরানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীগণের মধ্যে একধরণের প্রতিযোগীতা লক্ষ করা যায় যে কে কতটা আমেরিকা ও ইসরায়েল বিরোধী। ইসরায়েল বিরোধী বাস্তবসম্মত হলেও আমেরিকার সাথে সম্পর্ক বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মন্তব্য করতেছে তবে কোন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীই নিজ জাতীয় স্বার্থ জলান্জলী দিয়ে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিরোধী। পরমানু কর্মসূচি নিয়ে পাশ্চাত্যের সাথে ইরানের বিরোধ কারো অজানা নয় আর এজন্য ইরানকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে পাশ্চাত্যের ও জাতিসংঘের আরোপ করা কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ। তবে কোন প্রার্থী এপর্যন্ত পরমানু কর্মসূচি বন্ধ করার কথা বলেননি ।
নতুন প্রেসিডেন্ট কিভাবে পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেওয়া অবরোধ মোকাবেলা করে পরমানু কর্মসূচি চালিয়ে যায় তা দেখার বিষয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।