মরণ আমার ভালো লাগে
খাঁ সাহিব উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ (১৯০৯ - ১৯৯৩), হলেন হিন্দুস্থানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত শিক্ষক। তিনি ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের 'শেষ ঘরানাদার উস্তাদ'দের একজন (ঘরানা পদ্ধতিতে, যেসব ত্যাগী শিল্পী বাল্যকাল থেকে তালিম, কঠোর অনুশীলন ও সাধনা শেষে উস্তাদ/পণ্ডিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হওয়ার পর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন, তাঁদেরকেই ঘরানাদার বলা হয়)।
ভারতের উত্তর প্রদেশের বাদাঁয়ু শহরে (উর্দু কবি শাকিল বাদায়ুনি'র নামে এই শহরের নামকরন হয়েছে) এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে খাঁ সাহিবের জন্ম। তাঁর বাবা উস্তাদ ফিদা হুসেন খাঁ ছিলেন রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার প্রাণপুরুষ। মাত্র ৫ বছর বয়সে খাঁ সাহিবের তালিম শুরু হয় তাঁর বিখ্যাত দাদা, উস্তাদ হায়দার খাঁ'র কাছে।
পরবর্তীকালে তিনি বাবার কাছেও তালিম নেন। সমগ্র উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান পুরুষ, উস্তাদ ইনায়েত হুসেন খাঁ ছিলেন খাঁ সাহিবের চাচাতো-দাদা। উস্তাদ ইনায়েত হুসেন খাঁ ছিলেন তারানা'র একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী, ফলে তাঁর প্রভাবে এবং উস্তাদ ইমদাদ খাঁ'র সিতার বাদনে উজ্জিবিত হয়ে খাঁ সাহিব অতি দ্রুতই একজন তারানা বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। রামপুর-সহসওয়ান ঘরানা, অদ্যাবধি, কঠোর তালিমের জন্য বিখ্যাত। খাঁ সাহিবের কণ্ঠ ছিল ভরাট, সুমিষ্ট।
কঠোর অনুশীলনের ফলশ্রুতিতে, তাঁর কণ্ঠে রাগ, গমক, বোল, তান, সারগাম অতি অনায়াসে খেলা করত। ফলে, মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি বরদা'র মহারাজা (সায়াজিরাও গায়কোয়াড় ৩) প্রদত্ত সঙ্গীতের স্কলারশিপ পেয়ে যান। বরদায় উপনীত হলে মুগ্ধ মহারাজা, খাঁ সাহিবকে (অধ্যায়নের পাশাপাশি) একজন 'সভা-শিল্পী' হিসাবে নিয়োগ করেন। এখানেই খাঁ সাহিব, বরদা রাজসভার প্রধান সভা-শিল্পী, তৎকালীন জীবন্ত কিংবদন্তি, উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ'র সংস্পর্শ ও ছায়া পান। কালজয়ী কথাশিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলী, সেসময় বরদা রাজকীয় এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন।
তাঁর বর্ণনামতে, উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ একবার প্রচণ্ড গ্রীষ্মে ও অনাবৃষ্টিতে, মহারাজার অনুরোধে, গান গেয়ে বৃষ্টি নামিয়েছিলেন।
বরদা রাজসভায় সঙ্গীত পরিবেশন করে খাঁ সাহিবের তারানা ও খেয়াল আরও সমৃদ্ধ হয়। অল-ইন্ডিয়া রেডিও তাঁকে চুক্তিবদ্ধ করে ও বিভিন্ন সঙ্গীত সম্মেলনে তিনি নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন। ১৯৪০ এ তাঁর নাম উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জগতে সুবিখ্যাত হয়ে যায়। কিন্তু, খাঁ সাহিবের পরিকল্পনা ছিল ব্যাতিক্রমি।
উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ'র দূতিয়ালিতে তিনি বিয়ে করেন তাঁর চাচাতো-দাদা উস্তাদ ইনায়েত হুসেন খাঁ'র কন্যাকে ও তার পরপরই বরদা মহারাজার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে জন্মস্থান বাদাঁয়ু শহরে ফিরে একজন সঙ্গীত শিক্ষকের পেশা গ্রহন করেন।
কিছুকাল পরে খাঁ সাহিব বাদাঁয়ু ছেড়ে কোলকাতায় চলে যান ও আমৃত্যু কোলকাতার আই টি সি সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমিতে অধ্যাপনা করেন। তিনি ছিলেন রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার সবচেয়ে কঠোর সঙ্গীত শিক্ষক। তাঁর তালিমে গড়া বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞরা হলেন উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ ও তাঁর নিজের দুই পুত্র, উস্তাদ সরফরাজ হুসেন খাঁ ও উস্তাদ জুলফিকার হুসেন খাঁ। তবে খাঁ সাহিবের সেরা শিষ্য হচ্ছেন, তাঁর নাতি ও বর্তমান কালের জীবন্ত সঙ্গীত কিংবদন্তী, উস্তাদ রশিদ খাঁ।
খাঁ সাহিবের তালিমের কঠোরতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে, ছেলেবেলায়, উস্তাদ রশিদ খাঁ সঙ্গীত বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন (রশিদ খাঁ'র বর্ণনামতে, ছেলেবেলায় একবার তিনি জ্বরের অজুহাত দেখিয়ে একটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করতে চাচ্ছিলেন না। তাঁর গুরু, খাঁ সাহিব, তখন ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে এমনই প্রচণ্ড প্রহার করেছিলেন যে, জ্বর ছেড়ে সেদিন রাতেই রশিদ খাঁ ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন)। কালক্রমে, ভুল বুঝতে পেরে রশিদ খাঁ আবার তালিমে ফিরে যান এবং ফলশ্রুতিতে আজকের উস্তাদ রশিদ খাঁ'য়ে পরিনত হন।
১৯৯৩ সালের ১৬ জুলাই, কোলকাতায়, খাঁ সাহিব উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ ইন্তেকাল করেন। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর প্রধান শিষ্য, উস্তাদ রশিদ খাঁ'র সঙ্গীতে আর অমর হয়ে থাকবেন তাঁর কালজয়ী তারানায়।
আবুল হোসেন ভাইয়ের তাগাদায় উত্তোলিত ও তাঁর উদ্দেশ্যে নিবেদিত
খাঁ সাহিব উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ - রাগ ছায়ানট, দেশী টোড়ি ও ভৈরবী
১। রাগ ছায়ানট - খেয়াল - সাগারি রাম-কিরপা
২। রাগ দেশী টোড়ি - খেয়াল - সাঁচি কাহাত হ্যায় আধা-রাং ইয়ে
৩। রাগ ভৈরবী - তারানা
কোয়ালিটি - ৩২০ কেবিপিএস এমপি৩
ফাইল সাইজ - ৯৭ মেগাবাইটস
ডাউনলোড - খাঁ সাহিব উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ - রাগ ছায়ানট, দেশী টোড়ি ও ভৈরবী ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।