ভাল কিছু লিখার প্রত্যাশায় লিখি.. পড়ন্ত বিকেলের শেষ সময়টায় ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বিছানায়। তোর মনে আছে কি না জানি না হঠাৎ তুই কানের কাছে মুখ এনে আনন্দিত কন্ঠে বললি ভাইয়া আমার ভিসা হয়ে গেছে। এই কথা শুনার পর তোকে দিয়েছিলাম এক ধমক। হয়ত তুই মনে করেছিলি ঘুমের ডিস্ট্রাবের কারণে তোকে ধমক দিয়েছি। এর পর তুই সরে গিয়ে বেলকনিতে দাড়ালি।
আর আমি তৎক্ষণাত বিছানা ছেড়ে বাথরুমে গেলাম। নিজেকে সামলাতে পারি নি কিছুতেই, দীর্ঘক্ষণ বাথরুমেই দাড়িয়ে কেদেঁছি। তারপর ওযু করে যখন মাগরিবের নামাজে দাড়িয়েছি তখনো সর্ববার পঠিত সুরা ফাতিহা বলতে পারছিলাম না। যখন ই আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল.......বলছি তখন গলা থেকে কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সুরাটা আস্তে আস্তে বলে নামাজটা শেষ করেছিলাম।
তারপর তোর কেনাকাটা সহ সব যায়গায় ছিলাম আমি।
আর থাকবই না কেন তু্ই তো আমায় ছাড়া চলতেও পারিস না। বয়সের পার্থক্য দুই বছর হওয়ায় যখন আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম তখন তুই আমার সাথেই স্কুলে যাতায়াত শুরু করলি, তারপর যখন ক্লাস টু তে উঠলাম তখনও তুই আমার সাথেই ক্লাস করতি আর বলতি ক্লাস ওয়ানের ছেলেরা তোকে মারে তাই তুই আমার সাথেই ক্লাস করবি। তারপর ক্লাস থ্রীতে উঠার পর বহু কষ্টে তোকে ক্লাসটুতে পাঠানো হয়েছিল। এর পর স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে ইউনির্ভাসিটি সব যায়গায় তুই থাকলি আমার পাশে পাশে আমার পেছন পেছনে।
উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে যেদিন বিমান বন্দরে তোকে বিদায় জানতে গেলাম বাবা আর আমি।
আমরা বাবাকে খুব কঠিন অবস্থায়ও কাদঁতে দেখতাম না । সেই বাবাই কিনা তোকে বিদায় দিয়ে এতটাই ভেঙে পরলেন যা আমি কখনো দেখিনি। প্রথম সপ্তাহে তোর নাম পর্যন্ত কেউ উচ্চারণ করতে পারে নি। তোর নাম নিলেই বাবা বাচ্চা ছেলেদের মত জোরে কেদেঁ উঠতেন।
তুই চলে যাওয়ার পর আমার বিছানার ঘুমানোর পার্টনার এর জায়গাটা যখন বহুদিন পর ফাঁকা হয়ে গেল।
সেদিন তোর অভাব আমি হারে হারে টের পেয়েছিলাম। হয়তো তোর মনে আছে দেশ ছেড়ে যাবার তৃতীয় দিন বাংলাদেশে সময় তখন রাত চারটা কিছুতেই ঘুম আসছে না চোখে, তোকে ফোন দিয়ে বসলাম কিন্তু কি দুর্ভাগ্য প্রায় ১০ মিনিটের মত কেউ কোন কথাই বলতে পারলাম না শুধু দুইপাশ থেকে কান্নার আওয়াজই হল শেষমেশ অবস্থা বেগতিক দেখে আমিই ফোনটা কেটে দিলাম।
তুই চলে যাবার পর চারটা ঈদে কখনো বাবার সামনে দাড়িয়ে পায়ে ছালাম দিয়ে ঈদের মাঠে যেতে পারি নি। কারণ টা তো তোর জানাই আমরা দুইজন একসাথে বাবার পা ছালাম করতাম ঈদের দিনে। সেই তোকে ছাড়া বাবার সামনে দাড়াই কি ভাবে।
সামনে আবারো ঈদ আসছে আবার সেই কঠিন সময় পার করতে হবে আমাকে তাই মনটা খুব খারাপ যাচ্ছে ইদানিং। অফিসে ও তোর কথা মনে করে কেদেঁ উঠি নিজের অজান্তেই। এই লিখা লেখতে ও কাদঁছি এখন। কিবোর্ডটা চোখের পানিতে কিছুটা ভিজে ও গেছে। তারপর ও সবার সাথে শেয়ার করে আমার কষ্টটা যদি একটু ও হালকা হয় সেই আশায় এই পোষ্ট লিখা।
পরিশেষে সকলের কাছে লন্ডনে উচ্চ শিক্ষার জন্য অবস্থানরত আমার ছোট ভাইয়ের জন্য দুয়া চাইছি। সবাই সুস্থ থাকবেন এই দুয়া রইল।
উৎসর্গঃ লন্ডনে অবস্থানরত ছোটভাই মিজানুর রহমান মিনুকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।