পথে ঘাটে অনেকেই টাকা পয়সা কুড়িয়ে পায়।কেউ রাখে।আবার কেউ দিয়ে দেয় কোনো ফকিরকে অথবা কোনো মসজিদে।আবার কেউ কেউ থানাতেও জমা দেয় প্রকৃত মালিকের খোঁজে।কেউ আবার রেখেও দেয় নিজের কাছে নিজের মনে করে।আমিও কাউকে বা কোথাও না দিয়ে নিজের মনে করে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলাম।একবার ভেবেওছিলাম কাউকে বা কোথাও দিয়ে দেই।আরেকজনের সম্পদ নিজের মনে করা ঠিকনা।আবার ভাবলাম থাক।মাত্র তো বারোশত টাকা!এ আর এমন কি!যার হারিয়েছে সে এতো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা।বারোশত টাকা এ যুগে এমন কিছু নয়।আসলে এগুলো ছিল আমার লোভের যুক্তি।আসল যুক্তিটা ছিল আমি তখন অভাবী ছিলাম।খুবই অভাবী।দশটা টাকাও আমার পকেটে থাকার মতো অবস্থা তখন আমার ছিল না।সেই সময় পথে কুড়িয়ে পাওয়া বারোশত টাকা আমার কাছে বারো লাখেরও বেশী মনে হয়েছিল।যেহেতু আমি মানুষ তাই আমার বিবেকও বলেছিল টাকাটা কাউকে বা কোথাও দিয়ে দিতে।কিন্তু অভাব আমার বিবেককে আকড়ে ধরেছিল।আমি টাকাটা কাউকে বা কোথাও না দিয়ে নিজের মতো করে খরচ করেছিলাম।
বেশ কিছুদিন পর।বেশ কিছুদিন বলতে প্রায় তিন বছরতো হবেই। আমার ছোট্ট মেয়েটা হঠাৎ এক রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ল।ভয়াবহ ডায়রিয়া।মাত্র তিন বছরের বাচ্চা।পাতলা পায়খানা আর প্রচন্ড বমির সাথে সাথে বাচ্চাটা নিস্তেজ হয়ে গেল।রাত তখন তিনটা।তাঁকে কোলে নিয়ে আমি এক দৌড়ে হাসপাতালে গেলাম।পুরো রাস্তাটা ছিল ফাঁকা।জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার ডাকা হলো।স্যালাইন পুশ করা হলো।ডাক্তার আমাকে আশ্বস্ত করল ' ভয়ের কিছু নেই,ঠিক হয়ে যাবে'।আমার বাচ্চাটা সে যাত্রায় ঠিক হয়েও গেল।বাচ্চাটার মুখের হাসি দেখতে পেয়ে আমি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম।
তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলো।হাসপাতালের বিলের অঙ্কটা দেখে আমি চমকে উঠলাম।মূহুর্তেই আমার মনে পড়ে গেল কুড়িয়ে পাওয়া সেই বারোশত টাকার কথা।কারন হাসপাতালের বিলের অঙ্কটাও ছিল বারোশত টাকা!