আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যাডাম ও ইভ এর ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’: বাইবেলের প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ ‘The urge to worship sparked civilization.’ Charles C. Mann স্বর্গীয় উদ্যানে অ্যাডাম ও ইভ । আমরা জানি অ্যাডাম ও ইভ কে স্বর্গ হতে বিদায় নিতে হয়েছিল; এবং তার কারণও হিব্রু বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে। জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস এই উপাখ্যানটির একটি বাস্তসসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন- যা রীতিমতো বিস্ময়কর।

লোকসংস্কৃতির গবেষকদের ধারণা বাইবেলের ওই আকষর্ণীয় গল্পটি আসলে মধ্যপ্রাচ্যের সুপ্রাচীন লোকস্মৃতিরই প্রতিচ্ছবি। ওই অঞ্চলে অ্যাডাম ও ইভ কে ঘিরে নানারকম ব্যাখ্যা প্রচলিত। তবে একালের মানুষ গল্প শোনার পাশাপাশি সে গল্পের ব্যাখ্যা চায়। সম্প্রতি তুরস্কের দক্ষিণে এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিস্কার হওয়ার পর হিব্রু বাইবেল-বর্ণিত আদম ও ইভ-এর স্বর্গচ্যূতির বিষয়টি নিয়ে গবেষকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে, সেই হল- পৃথিবীর প্রথম উপাসনালয় কোনটি? ১৯৯৪ সালে আবিস্কৃত তুরস্কের গোবেকলি টেপেই সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম উপাসনালয়।

কারণ, গোবেকলি টেপে-র পাথরগুলোর আকার, বিন্যাস ও পাথরের ওপর খোদাই করা ছবি বলে দেয় যে গোবেকলি টেপে পৃথিবীর প্রথম উপাসনালয়। জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস গোবেকলি টেপের উপসনালয়টি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে ব্যাখ্যা করেছেন ... কেন হিব্রু বাইবেল বর্ণিত আদম ও ইভ কে স্বর্গ হতে বিদায় নিতে হয়েছিল ... গোবেকলি টেপে-র মানচিত্র। গোবেকলি টেপে তুরস্কের দক্ষিণে অবস্থিত ছোট একটি পাহাড় । যার উত্তরে রয়েছে বনভূমি; পূর্বে বাইবেলকথিত হারান প্রদেশ; দক্ষিণে, ২০ মাইল দূরে, সিরিয়ার সীমান্ত। তুরস্কের এই দক্ষিণাঞ্চলটি কুর্দি জাতি অধ্যূষিত।

বিদ্রোহী কুর্দিদের সমস্যা ছাড়াও ইদানীং ওই অঞ্চলে সিরিয় উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছে। কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে জানা গেছে যে আজ থেকে ১২০০০ বছর আগে গোবেকলি টেপে-র উপাসনালয়টি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ করেছিল পুরনো প্রস্তরযুগের বুনো আদিম শিকারীরা। এই তথ্যটি অত্যন্ত বিস্ময়কর। কেননা, ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ নির্মিত হয়েছিল ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বে আর মিশরের গিজার পিরামিড ২,৫০০ খ্রিস্টপূর্ব।

তাছাড়া ১২০০০ বছর আগে তো বিশ্বে কোনও নগর তৈরি হয়নি। যে কারণে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর কলামিষ্ট চালর্স সি মান লিখেছেন: ‘ উই ইউজড টু থিঙ্ক এগ্রিকালচার গেভ রাইজ টু সিটিজ অ্যান্ড লেটার টু রাইটিং, আর্ট, আন্ড রিলিজিয়ন। নাউ দ্যা ওয়ালর্ন্ডস ওল্ডডেস্ট টেম্পল সাজজেস্ট দ্য আর্জ টু ওরশিপ স্পার্কলড সিভিলাইজেশন। ’ চমকে ওঠার মতোই মন্তব্য । কেননা, চালর্স সি মান বলছেন যে- এতদিন আমরা ভেবেছিলাম যে ... কৃষিকাজ আবিস্কারের পরই প্রথমে গড়ে উঠেছিল নগর; তারপরে লিখনপদ্ধতি, শিল্পকলা, ধর্ম ইত্যাদি।

তুরস্কের গোবেকলি টেপে-র উপাসনালটি আবিস্কারের পর এখন মনে হচ্ছে যে উপাসনার তাড়নাই নগরসভ্যতার জন্ম দিয়েছে। ’ চালর্স সি মান- এর এই মন্তব্যটি আমাদের চিন্তাকে অসম্ভব ঝাঁকুনি দেয়। কেবল তাই না, গোবেকলি টেপে হিব্রু বাইবেল বর্ণিত আদম ও ইভ কে কেন স্বর্গ হতে বিদায় নিতে হয়েছিল- সে সর্ম্পকেও এক নতুন ব্যাখ্যাও উপস্থিত করে। গোবেকলি টেপে-র কাছে তুরস্কের সানলিউরফা শহর। শহরটি গোবেকলি টেপে-র ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।

গোবেকলি টেপে-র সবচে কাছের শহরটির নাম সানলিউরফা । সেই সানলিউরফা শহর ছাড়ালে ধূসর রুক্ষ প্রান্তর, একটি কি দুটি মালবেরি গাছ; ধূ ধূ প্রান্তরে ভেড়ার পাল এবং কুর্দি মেষপালক চোখে পড়ে। দৃশ্যপট অনেকটা এমনই ছিল যখন ১৯৬৪ সালে ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল গোবেকলি টেপে তে প্রাথমিক অনুসন্ধানের কাজ চালায়। সেই দলটির মনে হয়েছিল যে পাহাড়ের নীচে বাইজানটাইন আমলের স্থাপনা রয়েছে। একজন কুর্দি মেষপালক সে ধারণা পরবর্তীতে অসত্য প্রমানিত করেছে।

গোবেকলি টেপে সময়টা ১৯৯৪ সাল। একজন কুর্দি মেষপালক গোবেকলি টেপে-র পাহাড়ে যায়। তার পায়ের তলায় উষ্ণ বালি। সে বালি ডেবে আছে অদ্ভূতদর্শন একটি বড় অবলং পাথর। সে বিমূঢ় ভাব কাটিয়ে পাথরটি টেনে তোলার চেস্টা করে।

পারে না। সে সানলিউরফা শহরে যায়। প্রাচীন এই তুর্কি শহরে রয়েছে মিউজিয়াম। কুর্দি মেষপালকটি তার আবিস্কারের কথা সানলিউরফা শহরের মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে জানায়। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ সে সংবাদ জানিয়ে দেয় ইস্তানবুলের জার্মান আর্কিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউট কে।

সংবাদ পেয়ে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস গোবেকলি টেপে এলেন। ১৯৯৪ সালেই তাঁর নেতৃত্বে পাহাড়টি খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়। গোবেকলি টেপে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস তখনও জানতেন না যে তিনি এক যুগান্তকারী আবিস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন। স্টাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ান হোডডার যে আবিস্কার সর্ম্পকে বলেছেন, ‘চেঞ্জেস এভরিথিং। ’ আর রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ মিটহেন বলেছেন; ‘ গোবেকলি টেপে ইজ টু এক্সট্রাঅর্ডিনারি ফর মাই মাইন্ড টু আন্ডারস্ট্যান্ড।

’ পন্ডিতদের এই ধরণের চমকে ওঠার মতো মন্তব্যের কি কারণ? কারণ গোবেকলি টেপে-র পাহাড়ের বালি খুঁড়ে তোলা ৪৫ টি অবলং পাথর এবং সেই পাথরের ওপর খোদাই করা ছবি। (এখানেই বলে রাখি যে গোবেকলি টেপে-র পাহাড়ে জিওম্যাগনেটিক সার্ভে করার পর জানা গেছে যে পাহাড়ের তলায় ওই রকম আরও কয়েক শ পাথর রয়েছে। ) টি-শেপড মেগালিথ। প্রত্নতত্ত্বের পরিভাষায় অবলং পাথর কে টি-শেপড মেগালিথ বলা হয়। গোবেকলি টেপে-র টি-শেপড মেগালিথ-এ খোদাই করে আঁকা রয়েছে হরেক রকম জীবজন্তুর ছবি।

বন্য শূকর, হাঁস। মূলত শিকারের জীবজন্তু। টি-শেপড মেগালিথ-এ আরও আঁকা রয়েছে সাপ; যে সাপ অ্যাডাম ও ইভ এর উপাখ্যানের অন্যতম চরিত্র। অবশ্য টি-শেপড মেগালিথ-এ বৃশ্চিক, মাছ এবং সিংহ ছবিও রয়েছে। বোঝাই যায় ১২০০০ বছর আগে ওই অঞ্চলটি ছিল প্রাচুর্যময় অরণ্যভূমি।

গোবেকলি টেপে-র পাথর গুলি দেখে মানবাকৃতি বলে মনে হয়। দুপাশে হাত আছে যেন। আর পাথর গুলো অবস্থান বৃত্তাকার। এতে বোঝা যায় এটি ছিল আদিম উপাসনালয়। ১২০০০ বছর আগেকার বুনো শিকারীরা এখানে ধর্মীয় কৃত্য পালন করত।

গোবেকলি টেপে-র মেগালিথগুলো অবস্থান বৃত্তাকার। এটি অবশ্য পুননির্মিত ছবি। এ কারণে একে বলায় হয়-‘টার্কিশ স্টোনহেঞ্জ’। গোবেকলি টেপে-র উপাসনালয়টি ১২০০০ বছরের পুরনো হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছে। তার কারণও আছে।

মানুষ কি ১২০০০ বছর আগে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল যে উপাসনালয় নির্মাণ করবে? মানুষ তো তখনও যাযাবর; নৃতত্ত্বের ভাষায় : ‘হান্টার- গেদারার’। তার মানে, মানুষ তখনও বনেজঙ্গলে শিকার করে বেড়াত; গাছ থেকে ফলমূল পেড়ে কি কুড়িয়ে খেত, নদীতে মাছ ধরত। তার মানে আদিম মানুষ তখনও নগর গড়ে তোলেনি, মৃৎপাত্র তৈরি করতে শেখেনি এবং লিখনপদ্ধতি আবিস্কার করেনি। তার মানে গোবেকলি টেপে-র উপাসনালয়টি মৃৎপাত্র তৈরিরও আগের; লিখনপদ্ধতি আবিস্কারেরও আগেকার । একথায় নগরসভ্যতাও আগের।

যে কারণে নৃতাত্ত্বিকরা বলছেন: Gobekli hails from a part of human history that is unimaginably distant, right back in our hunter-gatherer past. এ জন্যেই কি রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ মিটহেন বলেছেন; ‘ গোবেকলি টেপে ইজ টু এক্সট্রাঅর্ডিনারি ফর মাই মাইন্ড টু আন্ডারস্ট্যান্ড। ’ গবেষকদের বিস্ময়ক্ষুব্দ প্রশ্ন- আদিম যাযাবর বন্য গুহামানব কী ভাবে অমন সুচারু স্থাপত্য নির্মাণ করল? মানুষ কি ১২০০০ বছর আগে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল যে উপাসনালয় নির্মাণ করবে? গোবেকলি টেপে মূলত ১২০০০ বছরের পুরনো আদিম মানুষের ধর্মীকেন্দ্র। আধুনিক মানুষের অর্থাৎ হোমো সাপিয়ান্সের মনে ধর্মীয় এবং শৈল্পিক চেতনার উদ্ভব হয়েছে আরও অনেক আগে । আধুনিক মানুষ আজ থেকে ৯০ হাজার বছর আগে পূর্ব আফ্রিকা থেকে বেড়িয়ে ইউরোপ, এশিয়া আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা ৪০০০০ বছর আগে হোমো সাপিয়ান্স তুরস্ক অতিক্রমন করে বসফরাস প্রণালী পার হয়ে দানিউব নদীর তীর ঘেঁষে ইউরোপে পৌঁছেছিল।

রুমানিয়ায় প্রথম হোমো সাপিয়ান্স- এর ফসিল পাওয়া গেছে। ইউরোপে হোমো সাপিয়ান্সরা শেষ বরফ যুগের কবলে পড়েছিল। আত্মরক্ষার জন্য তারা দক্ষিণে সরে আসে। ইউরোপে তীব্র শৈত্য ছাড়াও হোমো সাপিয়ান্স কে আরেক প্রতিদ্বন্দীর মুখোমুখি হয়েছিল। নিয়ানডার্থাল ... জার্মানিতে পাওয়া ৩৫ হাজার বছরের পুরনো পাথরের বাঁশি।

হোমো সাপিয়ান্সরা অবসর মুহূর্তে শিল্পচর্চা করত না। কারণ শিল্প ছিল হোমো সাপিয়ান্সের বেঁচে থাকবার প্রতি মুহূর্তে অবলম্বন। শিল্প হল নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করা। এই মনোরম অনুভূতি তাকে বৈরী পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল। সে গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকত।

নিজের কিংবা পরিবেশের ... সে স্বর্গীয় পুলক লাভ করত ... নৃতাত্ত্বিকদের ধারণা ইউরোপ এবং এশিয়া থেকে নিয়ানডার্থালরা বিলুপ্ত হয় আজ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে। অর্থাৎ যে সময়টায় হোমো সাপিয়ান্স ইউরোপে পৌঁছোয় । আগে নিয়ানডার্থালদের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে মনে করা হত যে হোমো সাপিয়ান্স এর হাতিয়ার ছিল উন্নত। ভুল। নিয়ানডার্থালদের যুদ্ধাস্ত্র ছিল হোমো সাপিয়ান্সদের চেয়ে ক্ষুরধার।

এবং নিয়ানডার্থালদের শারীরিক গড়ন ছিল হোমো সাপিয়ান্স এর চেয়ে বলিষ্ট। তাহলে নিয়ানডার্থালদের নিশ্চিহ্ন হওয়ার কী কারণ? কারণ হোমো সাপিয়ান্সসদের উন্নত সংস্কৃতি। তাদের ভাষা, শিল্প ধর্মবোধ ছিল নিয়ানডার্থালদের চেয়ে উন্নত। এই উন্নত চেতনার অধিকারী হোমো সাপিয়ান্সদের বংশধররাই ১২০০০ বছর আগে তুরস্কের গোবেকলি টেপে তে উপাসনালয় নির্মান করেছিল। তারা তখনও আদিম শিকারী জীবন যাপন করছিল।

আদিম মানুষের জীবনে ধর্মীয় চেতনার গুরুত্ব উপলব্দি করতে এই বিষয়ে উল্লেখ করা হল। ইউরোপে ৩৫ হাজার বছরের পুরনো ভেনাস মূর্তি। এটি আদি ধর্মের ধারণা, যৌন চেতনা এবং আদি মাতৃদেবীর প্রতি ইঙ্গিত করে । এই দেবীমূর্তি গোবেকলি টেপের উপাসনা নির্মাণের প্রায় ২৫/৩০ বছর আগেকার । এই ধরনের নারীমূর্তি সমগ্র ইউরোপ জুড়েই পাওয়া গিয়েছে।

সে যাই হোক। প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস বলেন (বা বলা ভালো অনুমান করেন) ... শেষ বরফযুগের পর গোবেকলি টেপে তে ১২০০ হাজার বছর আগে একদল শিকারী বসবাস করত। যারা ধর্মীয় তাড়নায় একটি উপসনালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। উপাসনালয়টি নির্মাণকালে এরা সম্ভবত থাকত পশুর চামড়ার তৈরি তাঁবুতে । ৩০০০০ বছরের প্রাচীন পাথরনির্মিত লিঙ্গ।

অর্থাৎ আজ থেকে ২৫/৩০ হাজার বছর আগে ইউরোপের আদিম মানুষ ধর্মীয় চেতনার অঙ্গ হিসেবে লিঙ্গপূজা করত। ভারতীয় উপমহাদেশে শিবলিঙ্গ পূজা আজও প্রচলিত। উপসনালয়টি নির্মাণের সময় আদিম শিকারীরা খাবারের জন্য তীরধনুক দিয়ে বন্য শূকর, হাঁস, সাপ, বৃশ্চিক, মাছ ও সিংহসহ আরও অনেক বন্যপ্রাণি পশুপাখি শিকার করত। । গোবেকলি টেপে তে প্রাপ্ত পাথরের তৈরি যে তীরের ফলা পাওয়া গেছে তা ক্লাউস স্মিডস এর এই অনুমানকে সমর্থন করে।

কার্বন ডেটিং অনুযায়ী গোবেকলি টেপে তে প্রাপ্ত পাথরের তৈরি তীরের ফলা ১২০০০ বছরের পুরনো। তখন অবশ্য শেষ বরফ যুগ শেষ হয়ে গেছে। প্রস্তরর যুগের বুনো শিকারীরা পাথরের বুকে এ ধরণের ছবি আঁকতে পারে এই তথ্যটি আগেকার সব ধারণা আমূল বদলে দিয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস মনে করেন: গোবেকলি টেপে বাইবেলকথিত ‘ইডেন উদ্যান’ নয় ‘উডেন উপাসনালয়’। তাঁর মতে বাইবেলকথিত ইডেন গল্পটি আসলে স্থানীয় জনসমাজের লোকস্মৃতি।

যে লোককাহিনী বলে ... সুপ্রাচীনকালের শিকারীদের অলস জীবনের কথা, যে মানুষ ছিল সহজ সরল জীবন যাপন করত । যে জীবনে তারা গাছ থেকে ফল পেড়ে খেত; মাছ ধরত নদীতে। দিনের বাকি সময় কাটাত গোত্রের লোকদের সঙ্গে আনন্দ উল্লাসে । এই শিকারীরাই পরবর্তীতে বিশেষ কিছু কারণে কৃষিকাজের মতন শ্রমসাধ্য কাজে জড়িয়ে পড়ল। ফসলের মাঠে তারা দিনভর অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়।

প্রতœতাত্ত্বিক প্রমাণ রয়েছে যে আদিম যুগে শিকারের তুলনায় কৃষিকাজ ছিল অত্যাধিক কঠোর । বুনো মানুষের ধর্মচেতনার প্রতিফলন ঘটেছিল পাথরের বুকে ... প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস মনে করেন ... মানুষ যাযাবর শিকারজীবন ছেড়ে স্থায়ী কৃষি বসতি গড়ে তোলার পর তার জীবনে নানা রকম পরিবর্তন আসে। প্রথমত: তার দৈনিন্দিন খাবারে আগের তুলনায় আমিষ কমে যায়। ফলে তাদের শরীরের হাড়ের গড়নও বদলে যেতে লাগল। যার ফলে শরীরের গড়নও হয়ে উঠল নমনীয়।

তা ছাড়া ছিল কৃষিজীবনের নানান দুশ্চিন্তা। পোষা জীবজন্তুগুলি হয়ে উঠছিল শুকনো, চিমসে। ১২০০০ বছর আগে গোবেকলি টেপের উপাসনালয়টি ওই অঞ্চলের তীর্থযাত্রী বুনো শিকারীরা এসে সমবেত হত। কিন্তু, ওই অঞ্চলের শিকারী মানুষের অত্যধিক শ্রমসাধ্য কৃষিকাজ বেছে নেওয়ার মূল কারণ কি ছিল? বুনো পশুপাখির সঙ্কট ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তবে অন্য একটি কারণও ছিল।

প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস মনে করেন ... গোবেকলি টেপের উপাসনালয়টি ওই অঞ্চলের বুনো উপাসক শিকারীরা এসে সমবেত হত। সেইসব আদিম উপাসনাকারীরা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি। এই কারণে আদিম উপাসকদের কেবলমাত্র শিকার করে খাবার যোগানো সম্ভবপর হয়নি। ‘সো আই থিঙ্ক ... ( ক্লাউস স্মিডস বলেন ) দে বিগান কালটিভেটিং দ্য ওয়াইল্ড গ্রাসেস অন দ্য হিলস। রিলিজিয়ান মোটিভেটেড পিপল টু টেক আপ ফার্মিং।

’ এ মন্তব্যটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা ওই প্রাগৈতিহাসিক যুগে তুরস্কের ওই অঞ্চলেই প্রথম কৃষিকাজের সূত্রপাত হয়েছিল। আজ প্রত্নতাত্ত্বিকগণ একমত যে ... সুপ্রাচীন তুরস্কই ছিল ‘ক্রাডল অভ এগ্রিকালচার’। বিশ্বের প্রথম শূকর পোষা হয় গোবেকলি টেপে-র ৬০ মাইল দূরে। গরু, ছাগল, ভেড়া-এসব গোবাদি পশু প্রথম পোষ মানানো হয়েছিল পূর্ব তুরস্কে।

বিশ্বব্যাপী যে গমের চাষ ছড়িয়ে গেল- তারও প্রথম চাষ হয়েছিল গোবেকলি টেপের কাছে। রাই এবং ওটস এর চাষও ওই অঞ্চলেরই শুরু হয়েছিল। জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস। ইনি গোবেকলি টেপে দেখে বলেছিলেন,'As soon as I got there and saw the stones, I knew that if I didn't walk away immediately I would be here for the rest of my life.' বর্তমানে গোবেকলি টেপে বিরান, উষর এবং পরিত্যক্ত একটি অঞ্চল । অবশ্য গোবেকলি টেপে উপাসনালয়ের টি-শেপড মেগালিথ-এর ওপর খোদাই করা ছবি দেখে পরিস্কার বোঝা যায় যে আজ থেকে ১২০০০ বছর আগে ওই অঞ্চলটি ছিল সবুজ বনভূমি ঘেরা উর্বর চারণভূমি ।

অরণ্যে বুনো পশুপাখি; নদীতে মাছ; সবুজ প্রান্তরে ফসল ও বন্য দ্রাক্ষাকুঞ্জ। কাজেই বলা যায় আজ থেকে ১০/১২ হাজার বছর আগে গোবেকলি টেপে ছিল ভূস্বর্গ। কিন্তুআদিম উপাসকদের খাবার যোগাতে কৃষিকাজ আরম্ভ হল। আগেকার সেই স্বর্গীয় পরিবেশ বদলে গেল। কৃষিকাজ আরম্ভ হওয়ার পর সবুজ চারণভূমি লাঞ্ছিত হল! সেইসঙ্গে বদলে গেল জলবায়ূ।

(এটা অবশ্য ২/১ বছরে হয়নি; শত শত বছর লেগেছে ) লাঙ্গলের ফলার দংশণে আর গাছ কেটে ফেলার ফলে ভূমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল। একদা স্বর্গরাজ্যে জমিন শূন্য উষর হইয়া উঠিল। একদা যা ছিল মরুদ্যান তা কৃষিকাজের জন্য হয়ে উঠল উষর, বিরান এবং পরিত্যক্ত। কাজেই স্বর্গদ্যান হারিয়ে গেল। শিকারী আদম স্বর্গচ্যূত হল।

সে দোষ চাপাল ইভের (নারী ) র ঘাড়ে। নারী কৃষিকাজ আবিস্কার করেছিল বলে? সে যাই হোক। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে ইডেন আসিরিয়া রাজ্যের পুবে। তার মানে তো গোবেকলি টেপে ... কুর্দি মেষপালক। ইনিই ১৯৯৪ সালে গোবেকলি টেপে তে একটি টি-শেপড মেগালিথ আবিস্কার করেন ।

স্টাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ান হোডডার যে আবিস্কার সর্ম্পকে বলেছেন, ‘চেঞ্জেস এভরিথিং। ’ কুর্দিরা আজও গোবেকলি টেপে-র পাহাড়টি পবিত্র মনে করে। হয়তে আদম- হাওয়ার স্মরণে। তবে এঁর এবং জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস স্মিডস এর মনের গড়নের পার্থক্যটিও লক্ষনীয়। উৎসর্গ: গোলাম দস্তগীর লিসানি ছবি।

ইন্টারনেট। তথ্যসূত্র: Click This Link http://gobeklitepe.info/ http://en.wikipedia.org/wiki/Göbekli_Tepe Click This Link http://www.earthfiles.com/news.php?ID=1984 Click This Link Click This Link Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।