আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘প্রাণের মানুষ’ শাহাবুদ্দিন আহমেদ

আমাদের দেশ আমাদের সম্পদ বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ৬৩তম জন্মদিন আগামীকাল, ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। ১৯৫০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালির জনজীবনের সঙ্গে প্রতীচ্যের চিত্র-ঐতিহ্য মিলিয়ে-মিশিয়ে চিত্রপটে তুলে ধরে তিনি তাঁর এক বিবিক্ত আসন তৈরি করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে ‘দেবে এবং নেবে’ আদান-প্রদানের যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন, শিল্পী শাহাবুদ্দিন তাঁর এক তিমিরবিদারী উদাহরণ। তাঁর চিত্রকর্মে ইউরোপীয় চিত্র-ঐতিহ্যের অনুরণন, শিল্পের মিথস্ক্রিয়তা ও অনুপ্রেরণা লক্ষণীয়।

কিন্তু মোটিভ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বদেশীয়। শিল্পী শাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালের আগে ছিলেন আর্ট কলেজের তরুণ ছাত্র। চোখেমুখে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন হওয়ার স্বপ্ন। ধানমন্ডির কলাবাগানের বাসার আশপাশে অনেক তরুণ-যুবা যখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, ব্যস্ত পরদিনের কোনো কর্মসূচি নিয়ে, তখনও তিনি এক মনে ছবি এঁকে চলেছেন। এমনকি পিতা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা হওয়ার সুবাদে নিজের বাড়িতে রাজনৈতিক কর্মকা- চললেও তা শাহাবুদ্দিন আহমেদকে খুব একটা স্পর্শ করত না।

তবে নিজ বাড়িতে উদাসীন হলেও আর্ট কলেজে গিয়ে ঠিকই রাজনীতির খোঁজ-খবর নিতেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর সেই শাহাবুদ্দিন তুলি-কালি ছেড়ে হাতে তুলে নিলেন অস্ত্র। ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। সহযোদ্ধা হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন-- ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং পপ গুরু আজম খান-কে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে দেশ থেকে বিতাড়নের পর সেই মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ আবারও ফিরে গেলেন নিজ ভুবনে।

শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- গতি, শক্তি, জীবন বাজি রেখে সম্মুখ রণাঙ্গনে অগ্রসর হবার কারণে তিনি তাঁর ছবিতে গতিকে প্রাধান্য দেন বেশি। এরপর শিল্পকলার তীর্থভূমি ফ্রান্সে গিয়ে শুরু করলেন ভিন্নরকম এক যুদ্ধ। বিশ্বের নামকরা চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে লড়াই করে নিজের স্থান করে নিলেন। শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশকেও পরিচিত করালেন শিল্পকলার বিশ্ব অঙ্গনে। তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ হয়ে গেলেন শুধুই শিল্পী শাহাবুদ্দিন, খ্যাতি যাঁর বিশ্বজোড়া।

মহৎ শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষ। মানুষের ফিগর। এই মানুষকে যতটা সময়, স্পেস ও মহাকালের পরিপ্রেক্ষিতে দৃষ্টিগ্রাহ্য করা যায়, তা ততটাই আমাদের কাছে শিল্প হয়ে ওঠে। এর জন্য দরকার পড়ে দৃষ্টিবৈভব। চারপাশের হাজারো মোটিভ, বস্তু, সম্ভাবনা থেকে সঠিক জিনিস শিল্পীকে নির্ণয় করতে হয়।

অতঃপর নির্ণয়কৃত উপলক্ষকে যথার্থভাবে দৃষ্টির গোচরীভূত করা। এ কৌশল যে যতটা রপ্ত করতে পারেন, তিনিই তত বড় শিল্পী হয়ে ওঠেন। আবার কিছু কিছু ঘটনা সাধনাকে হঠাৎ ত্বরান্বিত করে, শিল্পের জিয়নকাঠি সহজেই শিল্পীর হাতে তুলে দেয়। এমনই একটি ঘটনা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ আমাদের শিল্পের পরতে পরতে স্পর্শ করেছে, বাঙালি শিল্পীর অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছে।

এই সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে যেসব শিল্পীর উত্থান ঘটেছে তাঁদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্যতম। শাহাবুদ্দিন বড় ক্যানভাসে গতিশীল মানুষের ছবি আঁকেন। তাঁর পূর্বসূরি হিসেবে এরূপ একজন বাঙালি শিল্পীকেই আমরা পাই। তিনি হলেন এস এম সুলতান। শাহাবুদ্দিনের ছবির মুখ্য বিষয় : সমসাময়িক মানুষ ও সময়।

ছবিতে আশাবাদী মনোভঙ্গির প্রকাশে তিনি তাঁর নিখুঁতকর্ম প্রকাশ করেছেন। এই আশাবাদী মনোভঙ্গি সম্ভবত শিল্পী রপ্ত করেছেন যৌবনকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং চলমান জীবনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রমের অভিজ্ঞতা থেকে। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে সময় ও স্পেসের বাধাগুলো অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর ফিগরের ভীতিহীন উপস্থাপন এবং জীবনের কণ্টকতা উপড়ে ফেলার মধ্যেই ছবির ব্যাপ্তি লক্ষ্য করা যায়। তাঁর ব্রাশ ও তুলির স্পন্দন ও শক্তি তাই প্রমাণ করে।

উপরন্তু তাঁর কম্পোজিশন অবশ্যম্ভাবিরূপে সংগীতময় ও রিদমিক। শাহাবুদ্দিনের ফিগর মহারশ্মিক নৃত্যের সংবেদনা জাগ্রত করে এবং সময়কে মহাকালের সঙ্গে অন্তর্লীন করে দেয়। একজন সমাজসচেতন শিল্পী হিসেবে শাহাবুদ্দিন সাধারণ মানুষকে আঁকেন। তাদের সামাজিক অবস্থার বিভিন্ন মাত্রা তুলে ধরেন। তিনি গ্রাম ও শহুরে মানুষকে আঁকেন-- তুলেন ধরেন তাদের দুর্দশা, বেদনা, মুগ্ধতা, উচ্ছ্বাস।

তাঁর বিষয় সব সময় ও জীবনের মহত্ত্ব প্রচার করে। তিনি সব সময় বর্তমানের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর ফলে আমরা সহজেই শিল্পীর নিজস্বতা ও মানসিক অবস্থা বুঝতে পারি। শাহাবুদ্দিনের ছবিতে নারীর নতুন সম্ভাবনা আবিষ্কার করি। তাঁর নারী ফিগরগুলো বাঙালির পট কিংবা অজন্তা-ইলোরার মতো নয়।

যদিও কোমলতা ও দ্যুতিতে তাদের মতোই। তাঁর পুরুষ ফিগরগুলো যেখানে অতিমানবীয় মনে হয়, সেখানে নারী ফিগরগুলো কমনীয়। নারীর ফিগারে তিনি তাদের মনোভঙ্গির বৈচিত্র্য এবং চিরন্তন সৌন্দর্য প্রকাশ করেন। তিনি পরিপূর্ণ নারীর ন্যুড করেননি। নারীকে মিহি কাপড়ে আবৃত করে, অস্বচ্ছ ত্বকের আলো-আঁধারি খেলার স্টাডি করতে পছন্দ করেন।

নারীর শরীরী সৌন্দর্যের দ্যুতি বিচ্ছুরিত আলো এক ধরনের বাসনা তৈরি করে, যার প্রতিক্রিয়ায় কামের চেয়ে মুগ্ধতাই বেশি টানে। এ মুগ্ধতায় থাকে কোমলতা ও উষ্ণতা। যেন স্তব্ধতা ও গতি। কিংবা পাথর ও উল্কা। নারীর নান্দনিক সৌন্দর্যের মধ্যে পুরুষ ফিগারের অতিমানবিক গতির চেয়েও যেন আরো কিছু বেশি আছে।

কোমল নারীর মধ্যে অসীম ও অতিলৌকিক শক্তিই যেন বিচ্ছুরিত হয়। দেশ-বিদেশের অনেক গ্যালারিতে তাঁর একক ও যৌথভাবে চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়েছে। একক প্রদর্শনীর মধ্যে উল্লেখ্য : ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্তদেরকে অর্থ সাহায্যের জন্য ঢাকায় চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে চিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়া হল্যান্ড, পোল্যান্ড, সেনেগাল, বেলজিয়াম এবং ভারত-সহ সুইজারল্যান্ডের লুসানে অবস্থিত অলিম্পিক মিউজিয়াম এবং ফ্রান্সের বোর্গ-এন ব্রেজ মিউজিয়ামেও বৈশ্বিকভাবে প্রদর্শন অন্যতম। যৌথ প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে-- সেঁজুতির প্রথম চিত্রকলা প্রদর্শনী ও ভাষা আন্দোলন উপলক্ষ্যে চিত্র প্রদর্শনী, ঢাকা, বাংলাদেশ; প্যারিসে অধ্যয়নরত শিল্পীদের আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী, প্যারিস, ফ্রান্স; প্যারিসে ইউনেস্কো আয়োজিত আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী, প্যারিস, ফ্রান্স; বাংলাদেশের সমকালীন শিল্পকলা প্রদর্শনী, চীন; গ্যালারি কনট্রাস্টে চিত্র প্রদর্শনী ব্রাসেলস, বেলজিয়াম; ‘দি হারমোনী শো’, মুম্বাই, ভারত; ইতালি ও কিউবাতে চিত্র প্রদর্শনী এবং ‘সিগার দ্য লা হাভানা আ হরিজন ২০০০’ চিত্র প্রদর্শনী, প্যারিস, ফ্রান্স অন্যতম।

শাহাবুদ্দিন আহমেদের বিভিন্ন চিত্রকর্ম বাংলাদেশ-সহ বুলগেরিয়া, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রখ্যাত গ্যালারি, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে ৷ চারু ও কারুকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখ্য-- রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক (১৯৬৮); প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক (১৯৭৩); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৪); প্যারিসে অধ্যয়নরত শিল্পীদের আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী পুরস্কার (১ম পুরস্কার, ১৯৭৫); প্যারিসে আয়োজিত ৩১টি দেশের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী পুরস্কার (১ম পুরস্কার, ১৯৭৯); ইউনেস্কো আয়োজিত আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী পুরস্কার (১ম পুরস্কার, ১৯৮০); বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, ১৯৮২) এবং চারুকলা ক্ষেত্রে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (২০০০)। এ ছাড়া ১৯৯২ সালে মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারি আর্টসের পঞ্চাশ জনের একজন হিসেবে তিনি বার্সেলানায় অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকে ভূষিত হন। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের পৈত্রিক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আলগী গ্রাম। বাবা তায়েবউদ্দীন প্রধান ও মা নাম সাইফুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি।

তাঁর স্ত্রী আনা এবং দুই মেয়ে চিত্র সিঁথি ও চর্যাপদ। তিনি ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশ করেন ফরিদউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টসে পড়াশোনা করে বিএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঐ বছরই ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স সরকার থেকে চারুকলায় বৃত্তি লাভ করে ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইকোল দে বোজার্ট চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অদ্যাবধি প্যারিসে কর্মরত আছেন।

৬০তম জন্মদিনে শিল্পী এসেছিলেন ঢাকায়। বেঙ্গল শিল্পালয়ে আয়োজিত নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানমালায় কথা বলতে গিয়ে প্রকাশ করেন গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি : ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, আমি জয়নুল আবেদিন হবো। কিন্তু একাত্তরে যখন ভারতের মেলাঘরে যুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছিলাম, তখন মনে হতো আর বোধহয় আমি শিল্পী হতে পারলাম না। এটা ভেবে মনটা খুব খারাপ হতো। পরে দেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন অস্ত্র ছেড়ে আবারও রং-তুলি তুলে নিলাম।

...পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর প্যারিসে গেলাম। কিন্তু কিছুদিন পর বুঝলাম, এই আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, পতাকা উড়িয়েছি, তাহলে কেন দেশকে বিশ্বের বুকে গর্বভরে তুলে ধরতে পারবো না? এখন আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশকে নিয়ে বড় কিছু করতে চাই। ’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি বাঙালি এ আমার অহঙ্কার, বাংলাদেশ আমার দেশ-- এ অহঙ্কার তো চির ভাস্বর। আর জাতির বিভক্তি তাড়াতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।

’ শিল্পী শাহাবুদ্দিন আমাদের প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একজন স্বপ্নচারী শিল্পী। বাঙালির সংগ্রাম ও অর্জনকে তিনি মহাকালিক স্পেসে প্রতিস্থাপন করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বৈশ্বিক মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণারূপে অভিষিক্ত করেছেন। শিল্পী এস এম সুলতান কর্মিষ্ঠ বলশালী মানুষের ফিগর করেছেন, আর শিল্পী শাহাবুদ্দিন গতিময় শক্তিশালী মানুষের ফিগর এঁকেছেন। আজকের বাঙালির দরকার এই দুই চেতনার সমন্বয়, তবেই উদ্বোধন ঘটবে নদ-নদী আর কৃষাণ-কৃষাণীর সোনার বাংলাদেশের।

গুণীজনের মূল্যায়ন : তাঁর সম্পর্কে শিল্পী আমিনুল ইসলামের মূল্যায়ন : ‘শাহাবুদ্দিন ছোট থেকেই আবেগপ্রবণ। সেই আবেগ এই বয়সেও ধরে রেখেছে, ওর ছবির দিকে তাকালেই তা বোঝা যাবে। এটাই ওর সবচেয়ে বড় গুণ। আমাদের দেশের একজন শিল্পী এত দিন ধরে প্রতিযোগিতার মধ্যে প্যারিসে ছবি বিক্রি করে টিকে রয়েছে, এটা এক কঠিন ব্যাপার। ওর ছবিতে যুদ্ধ আর সাধারণ মানুষই বেশি।

আর আছে কিছু পোর্ট্রেট। এগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য আছে। ’ কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭১ সালে তুলি ফেলে দিয়ে শাহাবুদ্দিন হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা শিল্পীসমাজ গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ও আবার তুলি তুলে নেয় হাতে এবং আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য পরিচিতি এনে দেয়।

ওর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ জন্য গর্ব অনুভব করি। ’ সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের ভাবনায় : ‘এত দিন ধরে প্যারিসে আছেন শাহাবুদ্দিন। গুণী বলেই থাকতে পারছেন। নিজের গুণেই তিনি দর্শক, ক্রেতা, শিল্পানুরাগীদের কাছে সমাদৃত হন।

রঙের ব্যবহারে তাঁর ছবিতে বক্তব্যের বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ’ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘চিত্রশিল্পী হিসেবে শাহাবুদ্দিন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন এবং অনেক সম্মান তাঁকে শিকড় থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে তিনি হৃদয় দিয়ে ধারণ করে আছেন। তাঁর জীবন ও চিত্রকর্মে এই প্রকাশ দেখে আমরা গভীর তৃপ্তি লাভ করি।

’ কথাশিল্পী ও সাংবাদিক রাহাত খান বলেন, ‘ভেতরে ভেতরে শাহাবুদ্দিন একজন প্রচ- সৃষ্টিশীল ও বিপ্লবী মানুষ। আমাদের অনেকের মতো ভণিতা জানেন না। দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। ’ জন্মদিনে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র : খ্যাতিমান এই চিত্রশিল্পীর জীবন ও কর্ম নিয়ে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রাণের মানুষ’ প্রচারিত হবে আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাভিশনে। এ অনুষ্ঠানে শাহাবুদ্দিন আহমেদ বর্তমান সময়ে তাঁর কাজ ও চিত্র ভাবনা নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় চিত্রশিল্প চর্চার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। দেওয়ান শামসুর রকিবের গ্রন্থনা ও মামুন খানের প্রযোজনায় বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রাণের মানুষ’ প্রচারিত হবে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।