আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরমকালেও গরম জুতা পড়ি কারণ আমি এআইইউবিতে পড়ি

https://www.facebook.com/tanvir.mh শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম সহ যেকোনো ভয়াবহ গরম কালেও বাটা,এপেক্স,রূপসা সহ কোন প্রকার চপ্পলই আমরা পড়তে পারিনা। কি এক ভয়াবহ নিয়ম(অনিয়ম) মেনে চলি আমরা ভার্সিটির। ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হালকা টিশার্ট পড়ে ঘুরে বেড়াই কিন্তু পায়ে থাকে একটা গরম জুতা। পাবলিক এমন ভাবে তাকায় যেন ভাবে এই আদম নিশ্চিত সুদান থেকে মাত্র আসছে। যাই হোক অনেক সেমিস্টার পার হয়ে গেলো সেই রকম ভাবে অনেক গুলী কেটসও পড়া হল।

কিছু হালকা চিনি যুক্ত মজার স্মৃতি আছে এই আমার জুতা সমগ্র নিয়ে। প্রথম দিকে বাটার নীল রঙের নর্থস্টার পরতাম। ছোটবেলায় দেখতাম বহুমুত্র রোগীরা এই জুতা পড়ে ব্যায়াম করতো কিন্তু হটাত এইটা কিভাবে হালের ফ্যাশানে ডুকে গেল বুঝতে পারলাম না। এত বুঝাবুঝির কি আছে? বেবাক পোলাপাইন পড়ে তাই আমিও পড়ি। একদিন বাসার বুয়াকে দিলাম ধুইতে।

বললাম ভাল ভাবে ধুবেন যাতে সুন্দর দেখা যায়। প্রথম সেমিস্টারে পড়ি সব কিছুতেই সৌন্দর্য বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। দেখলাম বুয়া ধুয়ে রোদে দিয়েছে এতটা খেয়াল করলাম না। পরেরদিন সময়মত পড়তে পারলেই হল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠছি।

১২.৩০ এ ক্লাস। ধানমন্ডিতে তখন থাকলেও আজ কিশোরগঞ্জ থেকে ক্লাস ধরবো। জুতার বক্সটার কাছে আসতেই মাথার চুল সব জেল ছাড়াই দাড়িয়ে গেল। জুতা একটার রং সাদা হয়ে গেছে। নীল জুতা জোড়া এখন একটা সাদা আরেকটা নীল।

বুয়াকে ধমক দিলাম এইটা কি করছেন? আপনিই তো কইছিলেন ঠিক মত ধুইতে? তো তোমারে কে কইছে রং তুইলা ফেলতে? আমি রং তুলি নাই। কালকা রৈদের তাপ বেশি আছিল। হের লাইগা হইবার পারে। বাটা কোম্পানির জুতার ব্যবসা বন্ধ কইরা রং এর ব্যবসা দেয়া উচিত। লজ্জা থাকা উচিত এই কোম্পানির।

সামান্য একটা বুয়ার কাছে নতুন জুতা নিহত হয়ে যায়। কি আর করা এভাবেই পড়ে বের হয়ে গেলাম ক্লাস ধরতে হবে। আর বুয়াকে কি বলবো। এই মহিলা এই ইদেও আমার নতুন শার্টের বোতাম ছিরে ফেলছে যত্ন করে ধুইতে গিয়ে। ক্লাসে ডুকে চুপচাপ বের হয়ে যাব ভয়ের কি আছে এই হলো প্ল্যান।

আর বাসে মানুষ দেখলে আর কি বলবে? গ্রামের মানুষ সাদা নীলের সংমিশ্রণ দেখে তাদের আছে আরও বাড়তি সুন্দর লাগবে। ক্লাস মাত্র একটা। লুঙ্গি পিছন দিয়ে ছিড়ে গেলেও এত ভয় নিয়ে ক্লাস করতাম না যতটা না এই জুতা নিয়ে ক্লাস করে যাচ্ছি। হটাত এক জনের চোখ পড়ে গেল। ব্রো ২টা ২ রকম কেন? আমি তরে কেমনে বুঝামু ২টা ২রকম হইবো না তো কি ২০ রকম হইবো? তুই ক্লাস কর নাইলে সুন্দর সুন্দর মেয়েছেলে দেখ আমার জুতার দিকে চোখ যায় কেন? সেদিনের মত বেচে যাই।

পরবর্তীতে কাল রং এর একটা কনভারস(কেটসই আর কি) কিনি। ঐটাও তখন ব্লকবাস্টার ছিল। অনেকেই কিনতেছে,আমার রুমমেটও দেখি আমার দেখাদেখি হুবুহু একটা কিনলো। তবে আমার থেকে তারটা দুই সাইজ ছোট। আমি এইটা বেশি পরিনা কমন পড়ে যাওয়ার কারনে।

অন্য একটা পড়ি। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করলাম আজ কমন টাই পড়ি। যেটা পরতেছি খুব ময়লা হয়ে আছে। কিন্তু কমন জুতাটাও তো অনেক মাস হল যত্নের বাইরে। শিওর অনেক ভয়াবহ বালুর স্তূপ পড়ে আছে।

ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে খুলতে কমন জুতার দিকে চোখ যেতেই দেখি একদম ফ্রেশ ফকফকা হয়ে আছে একদম। অসম্ভব। কিন্তু সাইজ দেখে শিওর হলাম । এটা আমারই। যাক আজ ফ্রেশ জুতা পড়ে ভার্সিটি যাবো।

ভাবতেই খুশিতে মুখ দিয়ে “তু চিজ বারি হে মাস্তে মাস্ত” চলে আসলো। কিন্তু মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে যখন আবার জুতার দিকে চোখ গেল দেখি বালু মাখনো এবং খুব ময়লা। কিছুই বুঝলাম না কি হল। আমার চোখে বালু লেগে গেল নাকি? এই রকম তো হওয়ার কথা না। নাকি সাইকোলজিক্যাল সমস্যা? রুমমেটের দেখি আবার মন খারাপ।

বললাম কিরে কি হইছে? পড়ে সে জানালো আসল ঘটনা। “রুমমেট আজ ডেটিং এ যাবে। গতকাল খুব ভালভাবে সব জামা ঠিক করেছে সাথে জুতাও। কিন্তু সকালে জুতা পড়তে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি। ভুলে আমার জুতা ধুয়ে ফেলেছে এবং এটা জানাজানি হওয়ার আগেই পুনরায় বালু মেখে ময়লা করে দিয়েছে সে”।

এভাবেই ঘটনা ঘটে যাচ্ছিলো। পরবর্তী জুতা পেলাম গিফট। মিশন থেকে ফেরার পথে একদম আফ্রিকা থেকে ভাইয়া নিয়ে আসছিলো। এলিফেন্ট রোড থেকে সোজা আফ্রিকা। কয়েকদিন আগে একটা কিনলাম রঙ্গিন দেখে কিন্তু ক্যাম্পাসে সেটা তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল লাল ফিতার কারনে।

জুতা ঠিকই ছিল। সব এঙ্গেল থেকে জুম করেও দেখলাম দেখতে ভালই কিন্তু সবাই খুবই বাজে মন্তব্য শুরু করলো। দোস্ত শারমিন বললো এই জুতা চেঞ্জ কর নাইলে তোর প্রেম হবেনা আর মেয়েরা প্রথমের ছেলেদের জুতা দেখে। লাইব্রেরীতে এক মেয়েকে ভাল লেগেছিল। ভাবলাম গিয়ে বলি।

শারমিন বললো “থাক এই জুতা পড়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া লাগবেনা,প্রেম করার শখ ফুলের টবে নিয়া বসে থাক”। সর্বশেষ সেমিস্টারের জন্য কালকে আখেরি বারের মত কেটস কিনতে যাবো। জানিনা কি ঘটনা নাকি অঘটনা ঘটবে আমার পরবর্তী জুতাজোড়া নিয়ে। তবে সত্যি কথা কি এখন জিন্সের সাথে আর কোন প্রকারের স্যান্ডেলই ভাল লাগেনা আর গরমতো লাগেইনা মনে হয় পায়ের ফিলিংসই নষ্ট হয়ে গেছে। তানভীর মাহমুদুল হাসান ৯/৯/২০১২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.