আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের ইতিহাসের তের ভূইয়ার এক ভূইয়া, শ্রেষ্ট সম্পদশালী চাকুরীজিবী..।.।.।.।.।.।.।.।.।.। বাচতে হলে জানতে হবে

পার্ট-১ পুলিশের আলোচিত সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও মরক্কোর রাষ্ট্রদূত নুর মোহাম্মদের কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে নূর মোহাম্মদ পুলিশে চাকরিরত অবস্থায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এসব সম্পদের বৈধ উৎস জানতে গত ৮ আগস্ট মরক্কো সম্পদ বিবরণী সাত কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে নোটিশ পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন। মরক্কোয় নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি সোমবার সকালে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন দুদকের অনুসন্ধান টিম। রোববার তিনি দুদকের নোটিশ হাতে পেয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়।

৮ আগস্ট নূর মোহাম্মদকে দুদকের পাঠানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ``...আপনার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়ায় আপনি ও আপনার স্ত্রীসহ আপনার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী সাত কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হলো...``। দুদকের একটি টিম নূর মোহাম্মদের সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে তদন্ত করছে। এ টিমের প্রধান ও দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ সোমবার বাংলানিউকে বলেন, ``নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান করছে। ইতোমধ্যে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলের মাধ্যমে মরক্কোয় নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক। `` ``সম্পদ বিবরণী কি স্বশরীরে দুদকে এসে জমা দিতে হবে?`` এ প্রশ্নের উত্তরে অনুসন্ধান টিমের প্রধান বলেন, ``স্বশরীরে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

তিনি চাইলে ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলের মাধ্যমে জমা দিতে পারেন। `` অবাক দুদক! সাবেক আইজিপি ও বর্তমান রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদের সম্পদের তালিকা দেখে অবাক দুদক! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ``পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার এ পরিমাণ সম্পদের অভিযোগ আমরা পাইনি। বৈধ পন্থায় এ পরিমাণ সম্পদ কোনো পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়``। সূত্র জানায়, দুদক জানতে পেরেছে ২৮ বছরের চাকরি জীবনে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন নূর মোহাম্মদ। নূর মোহাম্মদ চাকরি জীবনের ২৮ বছরে কত টাকা আয় করেছেন তার তথ্য চেয়ে পুলিশ বাহিনীর কাছে চিঠি দিয়েছে দুদক।

এছাড়া অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নূর মোহাম্মদের আর্থিক ব্যাংক লেনদেনের বিষয়, ভূমি অফিসের কাছে জমিজমার বিষয় জানার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতেও চিঠি দেন। এর মধ্যে অনেক চিঠির জবাব এসেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া নূর মোহাম্মদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ জানার অংশ হিসেবে অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ভূমি অফিস ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুদক চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। , দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে- আইজিপি থাকা অবস্থায় সর্বশেষ এক বছরে কটিয়াদীতে ১৩ কোটি টাকায় জমি কিনেছেন ৪০০ বিঘা। বেইলি রোড ও মোহাম্মদপুরের পিসিকালচার হাউজিংয়ে ৯ কোটি টাকায় কিনেছেন ৫টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আইজিপি থাকাকালে ৬, মিন্টো রোডে সরকারি অনুমোদন ব্যতীত ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থানার চান্দপুর গ্রামের মীরেরপাড়ায় ২০ বিঘা জমির ওপর একটি রাজকীয় বাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে রেলওয়ের ৪ বিঘা জমি। যার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি টাকা।

বাড়ি থেকে ১ মাইল পূর্বে ৪০০ বিঘা জমির ওপর ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি মাছের প্রকল্প। বাড়ি থেকে প্রকল্প পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ২৫ ফুট প্রস্থের পাকা রাস্তা। খুলনায় ৩৫০ বিঘা জমির ওপর ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন চিংড়ি প্রকল্প। ২০০৮ সালে পূর্বাচলে র্যানরিকা নামক প্রকল্পের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে নিয়েছেন ১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।

পল্লবীতে ৯ কোটি টাকায় বানিয়েছেন জমির প্রকল্প। তার স্ত্রী পনম সমিতির চেয়ারম্যান থাকাকালে ২ কোটি টাকা আৎসাতের অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুরের মাওয়ায় ২০ কোটি টাকায় কিনেছেন ৩০ বিঘা জমি। স্কাইওয়েজ কোম্পানির মালিক মানিক মিয়ার (বাড়ি ৩৯৬, রোড ৬, বারিধারা, ডিওএইচএস) সঙ্গে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করেছেন। দুবাইয়ে মানিক মিয়ার সঙ্গে (দুবাই অফিস-ফ্লোরিডা হোটেল, ১ম তলা, ১০২ নম্বর কক্ষ, পোস্ট বক্স-১১৩৮১) ২৫ কোটি টাকা পুঁজির মাধ্যমে যৌথ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে-বেনামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রয়েছে বলে দুদক মনে করছে। দুদকে আসা এক অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা লতিফের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার ভাগ্নে মুর্শেদ আলীর মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির কথা বলে বিভিন্ন কায়দায় ৩০ বিঘা জমি, ১টি দোকান ও ৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। মুর্শেদের নামে তিনি ১৪০ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। মানিকখালী বাজারে রেলওয়ের জমির ওপর মুর্শেদের নামে ১টি মিনি মার্কেট তৈরি করে দিয়েছেন। এর মূল্য ১৮ কোটি টাকা।

মুর্শেদের কাছ থেকে কিছু জমি নূর মোহাম্মদ নিজ নামে রেজিস্ট্রি করছেন। তার নামে জনতা ব্যাংক মানিকখালী বাজার শাখায় মোটা অংকের টাকা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দাখিলকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী ভাগ্নে শাওন ও মনকে ব্যবসার জন্য তিনি দিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। তার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন কটিয়াদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিলন। দীর্ঘদিন আগে বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তার ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

সম্প্রতি কটিয়াদীর চাতল হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছেন দারোগা মজিবুরের কাছে। কম দামে দলিল করে এখানে কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, তার আত্মীয় সামছুদ্দিনকে ৩০ লাখ টাকা পুঁজি ও ১০ কাঠা জমি কিনে ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেন। মিশনে লোক পাঠানোর সময় ৫৬০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে সঠিকভাবে পাঠানো হয়। বাকি ৪৬০ জনের কাছ থেকে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়।

বিশ্বাস বিল্ডার্স নামে এক কোম্পানির সঙ্গে ১০ কোটি টাকায় যৌথ ব্যবসা রয়েছে নূর মোহাম্মদের। একটি সূত্র জানায় দুদকের কাছে থাকা এসব সম্পদের বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নূর মোহাম্মদ। এর আগে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগের বিষয়ে নূর মোহাম্মদ দেশে অবস্থানকালীন গণমাধ্যমের কাছে চ্যালেঞ্জ দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি যা করেছেন বৈধ উপায়ে। বৈধ আয়ে অর্জিত সম্পদ ব্যতীত আর কোন সম্পদের সন্ধান পেলে সেই সম্পদ তিনি রাষ্ট্রকে দিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন পুনঃশ্চঃ নূর মোহাম্মদ। বাংলাদেশের মইন-ফকরুদ্দিনের জরুরী সরকারের জমানায় সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের অন্যতম ব্যক্তি।

উনি যেদিন সুশীল সার্টিফিকেট নিয়ে পুলিশের আইজি হলেন। মানে উনি দুর্নীতি-টুর্নীতির ধারের কাছেও নেই! আইজিপি হয়েই ঘোষণা দিলেন সব দুর্নীতিবাজ ধরা হবে। কথা বলতেন সুশীল ধারায়, মনে হয় ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানেন না। চেহেরায়, কাপড়ে বেশ ফিটফাট, সুশীল বাবু!! শরু হলো ইসলামপন্থি ও জাতীয়তাবাদি নেতা-কর্মীদের পাকড়। তার বন্ধু মহল থেকে জানা যায়, এই সুশীল আইজি ছাত্র জীবনে সমাজতন্ত্রী জাসদের ছাত্র সংঠন জাসদ ছাত্রলীগের (বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী) নেতা ছিলেন।

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে অংশও নিয়েছিলেন। বিগত মইন সরকারের ইসলাম ও জাতীয়তবাদ বিরোধী এজেন্ডার বাস্তবায়ন হিসেবেই নূর মোহাম্মদকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার দীর্ঘ দাপটের আমলে ইসলামপন্থি ও জাতীয়তাবাদি নেতা-কর্মীদের উপর নেমে আসে দুর্দিন। সেই সুশীল নুর মোহাম্মদকে নিয়ে একটি চমকপ্রদ রিপোর্ট করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৭ ডিসেম্বর ২০১০। পড়ুন এই সুশীল আইজি সম্পর্কে এখানে, মাস পাঁচেক আগের কথা।

পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়েছিলাম পেশাগত কাজে। কাজ শেষে জ্যেষ্ঠ এক সাংবাদিকের আগ্রহে দেখা করলাম আইজিপি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। হাল ফ্যাশনের জিন্স (রিপঅফ) পরিহিত স্মার্ট এক পুরুষ। চমৎকার গুছিয়ে কথা বলেন। আমার আগ্রহ আইজিপির ছেঁড়া জিন্সের প্রতি।

রাখঢাক না রেখে জিজ্ঞেস করি, ছেঁড়া জিন্স পড়ার রহস্য কী? মুচকি হাসেন। সন্তুষ্ট হতে পারি না। হাস্যচ্ছলে বলি, আসলে আইজিপি সাহেব গরিব মানুষ! সঙ্গী এক বন্ধু রীতিমতো আঁতকে ওঠেন, না না, ভাই (আইজিপি) কেন গরিব হতে যাবেন। চমৎকার বাড়ি করেছেন গ্রামে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। দুপুর গড়ায়।

ওই দিনের সাক্ষাৎপর্ব তাই তাড়াহুড়ো করে শেষ হয়। কিন্তু মাথায় ঘুরতে থাকে নূর মোহাম্মদের গ্রামের চমৎকার বাড়ির কথা। নূর মোহাম্মদ ভালো মানুষ। অনেকের মুখে এ কথা শুনেছি। এও শুনেছি, নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান এই মানুষটার সহনশীলতার তুলনা নেই।

দুষ্কৃতকারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাবা লুন্দর আলীকে কটিয়াদীতে গণপিটুনির পর যখন জনতা তাঁর শরীরটা ছিন্নভিন্ন করেছে, তখন মাথা ঠান্ডা রেখেছেন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ। ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, তিনি প্রতিশোধ নেবেন না। নূর মোহাম্মদের এই মহানুভবতার কথা শুনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে তখন। কিন্তু আড়ালে-আবডালে অন্য কথা শুনে মন খারাপও হয়। কেউ কেউ বলতেন, ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য নূর মোহাম্মদ।

যিনি নীরবে-নিভৃতে অনেক সম্পদের মালিক। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার অধিবাসী ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে যেমন অনেক কথা শুনেছি, তেমনি শুনেছি নামে-বেনামে ঢাকায় বাড়ি আর প্লট থাকার কথা। ওয়ারীতে কয়েক বিঘার ওপরে একটি প্লট দখল নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁকে নিয়ে নানা কথা চালু আছে। এসবের পাশাপাশি গ্রামে চমৎকার বাড়ি, আর তাঁর রাজনীতি করার আগ্রহের কথা শুনে নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে খোঁজখবর করতে থাকি। কী আশ্চর্য! অনুসন্ধানের শুরুতেই 'ভালো মানুষ' নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে যে তথ্য-প্রমাণ হাতে পাই, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।

কে জানত ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পূর্ব) থাকাকালে বিদেশে টাকা পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন নূর মোহাম্মদ! বিদেশে টাকা পাচারকারী হিসেবে বাংলাদেশে গিরিধারী লাল মোদী রীতিমতো ব্রান্ড নেম। সেই মোদীকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়েছিলেন সাবেক আইজিপি! কিন্তু কীভাবে? সিঙ্গাপুরে ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে গিরিধারী লাল মোদীসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে ২০০১ সালের ২৪ জুন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব এম এম রেজাকে চিঠি (স্মারক : ১৩৫৪) লিখেছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শামসুদ্দিন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, মুদ্রা পাচাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার নূর মোহাম্মদ এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। আর এ অপরাধে নূর মোহাম্মদসহ অন্য কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তখনকার স্বরাষ্ট্রসচিব ড. সা'দত হুসাইনকে চিঠি দিয়েছিলেন পুলিশের ওই সময়ের বিশেষ বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল। নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে পরে আইজিপি হয়ে আনোয়ারুল ইকবাল ব্যবস্থা নিয়েছেন, এমনটি জানা যায় না।

বরং এটা সবারই জানা, বিগত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবালের প্রিয়পাত্র ছিলেন নূর মোহাম্মদ। কীভাবে উপদেষ্টাকে সেই সময়ের আইজিপি বশ করেছিলেন, এ নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে। তবে ঘটনা যা-ই হোক না কেন, এ যুগলবন্দীর কারণে পুলিশ প্রশাসনে অনেক যোগ্য কর্মকর্তার ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সামনের কাতারে চলে এসেছেন সুবিধাবাদীরা। আইজিপির জন্য বরাদ্দ বাড়ি ছেড়ে নূর মোহাম্মদ গুলশানে ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন।

শুনেছি প্রায় লাখ টাকা ভাড়া। বেইলি রোডে তাঁর ফ্ল্যাট আছে। সেখানে কেন ওঠেননি এ নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠরাও নানা আলোচনা করেন। মিরপুর ১৪ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকল্যাণ সদস্য হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন নূর মোহাম্মদ। কিন্তু এ তথ্য গোপন করে পূর্বাচলে দেওয়া রাজউকের ১০ কাঠার প্লট নেওয়ার পক্ষে সাবেক আইজিপির কী যুক্তি, এ নিয়ে ঘনিষ্ঠদেরও নাকি সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

আবার তাড়াহুড়া করে এই প্লট বিক্রি করে দেওয়ার রহস্য নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। সাংবাদিক বন্ধুদের অনেককে ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শুনেছি, বাংলা ভাইকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর সাবেক পুলিশ সুপার মাসুদ মিয়া চাকরি হারালে নূর মোহাম্মদ বাদ যান কী করে। তাঁদের বক্তব্য, ২০০৪ সালে বাংলা ভাই যখন রাজশাহী, নওগাঁ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তখন রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে নূর মোহাম্মদ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। ওই সময় রাজশাহীতে জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধানের কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে যখন দু-একজন সাংবাদিককে বলার চেষ্টা করেছি, ক্ষমতাসীনরা না চাইলে ডিআইজি কী-ই বা করতে পারেন, খেপে গিয়ে এক সাংবাদিক-বন্ধু বলেছিলেন, নূর মোহাম্মদকে চেনেন না। তিনি একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি সব সরকারের আমলে ভালো পোস্টিংয়ে থেকেছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যেমন দাপট, বিএনপির সময়ও তেমনই। কারণ তিনি সবাইকে 'ম্যানেজ' করতে পারেন। আর এ জন্যই বাংলা ভাইয়ের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কৌশলে সমর্থন দিয়েছেন। আর বলির পাঁঠা বানিয়েছেন রাজশাহীর তৎকালীন পুলিশ সুপারকে। বিএনপিকে সহযোগিতার পুরস্কারস্বরূপ ওই আমলে তিনি অতিরিক্ত আইজিপির দায়িত্ব পান।

নূর মোহাম্মদকে ভালো করে জানেন এমন সাংবাদিক আর তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই মূল্যায়ন কতটা যথার্থ জানি না। তবে ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়ে গেছি, সাবেক এই আইজিপি নিজেকে যতটা স্বচ্ছ দেখানোর চেষ্টা করেছেন, আসলে তিনি ততটা নন। আইজিপি পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও যিনি ব্যবস্থা নেননি, মিথ্যা হলফনামা দিয়ে যিনি সরকারের একাধিক প্লট নিয়েছেন, তাঁর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তো তোলা যেতেই পারে। আর এমন একজন কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা কি রাষ্ট্রের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.