আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার পথে(পর্ব ২৫) -- কুয়াকাটা ভ্রমন (শেষ) সূর্যাস্ত ও কিছু প্রয়োজনীয় কথা

চক্ষু মেলিয়া তাকানোর পর থেকে খালি বাঁদরামি করি যাহা দেখি সবই নয়া লাগে , , পাখির মতো মন হলেও,কলিজা বাঘের মতো , মানুষের মতো খালি দেখতে তে তে তে আগের পর্ব গুলান বাংলার পথে(পর্ব ২২) -- কুয়াকাটা ভ্রমণ (১) কিভাবে যাবেন সাথে থাকা ও খাওয়া। বাংলার পথে(পর্ব ২৩) -- কুয়াকাটা ভ্রমণ (২) সূর্যোদয় , মিশ্রী পাড়া বৌদ্ধ মন্দির , রাখাইন পল্লী। বাংলার পথে(পর্ব ২৪) -- কুয়াকাটা ভ্রমণ(৩) বিখ্যাত কুয়া , সীমা মন্দির, ক্রাব আইল্যান্ড,শুটকি পল্লী ও বোনাস দিনের প্রায় শেষ , দুপুরে খেয়ে শরীর খানা এলিয়ে দিতেই ঘুমে চোখ গুলান জড়িয়ে গেল , , বিকাল ৫ টা প্রায় , মোবাইলের আওয়াজে যেন পিলে চমকে উঠল । পাইলট ভাইয়ের ফোন , " ভাই কই আপনে , যাবেন না " । খুবই বিরক্ত লাগছিল , এত আরামের ঘুম আহ ! ! ! বাইকে চড়ে বসলাম , , এবার সৈকতের পশ্চিমে ।

সূর্যাস্ত দেখতে যাচ্ছি । পূর্বের চেয়ে পশ্চিমের দিক একেবারেই ভিন্ন , এই দিকের তীর বাঁধানো , কংক্রিট দিয়ে , অনেকটা পতেঙ্গার মত । বেশ আরাম করেই যাচ্ছিলাম । বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে পাইলট বিমান চালাচ্ছে । হাতে ক্যামেরা , আর সামনে সূর্যাস্তের অস্থির দৃশ্য ।

তীরের বালু জমাট বেধে শক্ত হয়ে গেছে । বাইক বেশ ভালোই চলছে। কিছুক্ষন পরে আমরা একবারে পশ্চিম প্রান্তে । জোয়ারের সময় পানি এসে এই গুলো সব ভোরে যায় । যাওয়ার সময় এই জায়গা গুলোতে পানি ছিল না , তাই আমারে যেতে পারলেও আসার সময় বেশ ভালো বিপদেই পরেছিলাম , কারণ তখন পানি এসে বালি নরম হয়ে গেছে ।

আর বার বার আমাদের বিমান মানে বাইকটা বালিতে আটকে যাচ্ছিল । বেশ অনেক খানি রাস্তা হেঁটেই আসতে হয়েছিল । সূর্যাস্তের সময় বীচের একবারে শেষ প্রান্তে গেলে দেখতে পাবেন একটা ছোট বেড়ার দোকান আছে । এইখানে সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া তাৎক্ষণিক পছন্দ সাপেক্ষে ভেজে দেয় । তবে দাম অস্বাভাবিক বেশি ।

কাঁকড়া ছোট ১০০ , বড় ১৬০ - ১৮০ , রূপচাঁদা ৪০০ , ইলিশ ছোট ২০০ ঢাকার চেয়ে দাম বেশি , , তবে সমুদ্রের পাড়ে বসে খেলেন এই আর কি , , তবে সস খেতে সাবধান , প্রাণ এর ছোট মিনি প্যাক যেঁ গুলান ঢাকাতে ফ্রি দেয় , ১০ টাকা করিয়া , ফ্রি ভাবিয়া পানির মত খাইয়েন না , , থুক্কু এইখানে পানি ও মাপিয়া খাইবেন ৬০ টাকা ২ লিটার আর কতক্ষন লুল ফালাবো ভাবিয়া , আমরা ও দামের কথা না ভাবিয়া দিয়া দিলুম অর্ডার আর তৈরি হইতে থাকিলাম মাড়া খাওয়ার জন্য রূপচাঁদা ভাজা হইতেসে ১ টি রূপচাঁদা , ২ টি কাঁকড়া , সস, পানি আর পাইলট রে একটা সিরকেট খাওাইয়া বিল দিলুম ৮০০ টাকা । হা হা হা বড়ই আনন্দিত এই ভেবে ঢাকার মারমেইড দাম কম , , সেই কষ্ট লাঘব হল মাঝ খানে ক্যানেল , ওপারে ম্যানগ্রোভ বন শেষ হইল কুয়াকাটা সিরিজ পোস্ট , চেষ্টা করেছি যথা সম্ভব তথ্য দেয়ার । কোন কিছু জানার থাকে , কমেন্ট এ জিজ্ঞাসা করার অনুরোধ । পোস্টটি পড়ে কেও যদি কুয়াকাটা ঘুরে আসেন , তাহলেই এর সার্থকতা । গুরুচণ্ডালী ও বানান ভুল ক্ষমা করবেন ।

প্রয়োজনীয় কিছু কথা : *বাস ফেরিতে উঠা ও নামার সময় বাস থেকে নেমে যাওয়াই ভালো , কারণ অনেক সময় বাস স্লিপ করে। *সমুদ্রের কাছাকাছি হোটেলে উঠার চেষ্টা করবেন । *ঐ খানের স্থানীয় একটি জোট আছে , তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা বাইকাররা নীল ও ফটোগ্রাফাররা হলুদ জ্যাকেট পড়া থাকে। *হোটেলে বা পশ্চিমে গিয়ে মাছ ভাজি খাওয়ার সময় অবশ্য দরদাম করে নিবেন , চক্ষু লজ্জা ত্যাগ করে । তারা কিন্তু পুরা হারামি , এমন কি ভাত খাওয়ার ভাল হোটেলেগুলোও এক একজনের থেকে এক এক দাম রাখে।

*বাইক ভাড়া করার সময় পরিষ্কার করে নিবেন , সে কতক্ষন থাকবে ও কোন কোন জায়গায় আপনাকে নিয়ে যাবে। *দেখার মতো যে জায়গা গুলো আছে তা বাইকে করে দেখতে বেশি সময় লাগে না । তাই বাইক ভাড়া করবেন একসাথে যেন সকাল বেলা ঘুরা শেষ হলে , বিকেলের দিকে আপনাকে এবার পশ্চিমে সূর্যাস্ত দেখাতে নিয়ে যায়। ২ বেলা মিলেই ভাড়া ৫০০ টাকা। *ছবি তোলার আগে ক্যামেরা ম্যান কে বলে দিবেন কয়টি ছবি তুলবেন এবং কঠোর ভাবে বলে দিবেন এর বেশি যেন না তুলে।

তারা কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে ওস্তাদ। *বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানি আছে , যারা ট্রলারে করে দিনে-দিনে কুয়াকাটা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসার প্যাকেজ পরিচালনা করে। * কুয়াকাটা দেশি বিদেশি ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত। হোটেল রুম ছাড়া অন্য কোন দোকান বা জায়গায় বসে খাবেন না। তাহলেই বাটপারের খপ্পরে পড়বেন।

দোকান ছাড়া অন্য রাস্তার পাড় বা কোন ব্যাক্তির কাছে থেকে কিনবেন না । *সৈকত খালিই হয়ে যায় একটু রাত হলেই , তাই ১০ টার পর সৈকতে না যাওয়াই ভালো , , তাছাড়া স্থানীয় পোলাপান মদ গাঁজা খেয়ে . *কক্স বাজারের মতো লাইফ গার্ডের ব্যাবস্থা নেই , , পানিতে নামবেন নিজের রিস্কে। *কুয়াকাটার সাপ্লাইয়ের পানি কিন্তু হলুদ। অর্থাৎ কল দিয়ে দেখবেন হলুদ পানি আসে। হোটেলের কলের পানি খেতে পারেন।

সব ডিপ টিউবওয়েলের , , , শীতকালে যে জন্য যাবেন না : >কুয়াকাটা যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল , সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা । শীতকালে গেলে কুয়াশার জন্য তা পণ্ড হইতে পারে । আর তাহা যদি হয় তবে আপনার আফসুসের আর শেষ থাকব না । > শুটকি পল্লী খালি শুনবেন , দেখবার পারবেন না , , কারণ রইদ তো নাই , শুটকি তখন শুকায় না > সাগর থাকিবে উত্তাল , , সাগরে নেমে মজা পাবেন না > ইলিশ মাছ ধরা তো দেখতে পারবেন না । > ফাতরার বন , সোনার চর , সুন্দর বনে ট্রলারে যাইতে পারবেন না ।

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.