আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার গর্ব বাংলার কবি কবির আদর্শ

আমিত্বকে ভালবাসি............. প্রিয় শিক্ষক খন্দকার মনসুর আহমদ এর লেখা প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ.............. কবি কোন মৌলিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে থাকলে আদর্শের শৃঙ্খল তাকে পদে পদে নিয়ন্ত্রিত করে। কাব্যিক আবেগে তিনি কখনোই যথেচ্ছাচার হতে পারেন না। যা খুশি তাই করতে পারেন না, বা যাচ্ছে তাই লিখতে পারেন না। আর প্রতিটি মেরুদণ্ডী মানুষের কোন মৌলিক আদর্শ থাকাই স্বাভাবিক। জীবনে বিবেক ও আদর্শকেই প্রাধান্য দিতে হবে, এতে বোধ করি কোন সুস্থ বিবেকের দ্বিমত নেই।

কিন্তু এ প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি খুব সহজ নয়। জীবনের নানা আবর্তন বিবর্তনের ধারায় নিজের মৌলিক আদর্শে স্থির থাকা বেশ কঠিন ব্যাপার। আদর্শিক চেতনা প্রবল না হলে এ ক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের প্রিয় কবি মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রদূত ফররূখ আহমদ এ ক্ষেত্রে বিরল সফলতার অধিকারী। আদর্শিক চেতনা প্রবল না হলে এটা সম্ভব হতো না।

আজীবন আদর্শের উপর অনড় ছিলেন এই দৃঢ়চেতা কবি। অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছেন জীবনে, তবুও আদর্শের গণ্ডি থেকে সামান্য সরে দাঁড়াতে রাজি হননি কখনো। ফররুখ আহমদ ছিলেন একজন প্রকৃত আদর্শবান মানুষ। তাই তার কাব্য কর্মে মানবতার প্রতিধ্বনি সর্বত্র। কবি জানতেন, যে ইসলাম শুধুমাত্র কিছু ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের নাম নয়।

বরং ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে ইসলামের অনুসরণই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন ও পরকালের অনন্ত জীবনে শান্তি বয়ে আনতে পারে। এ বিশ্বাস কবির হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত ছিল। অতি উদারতার নামে সর্বত্র তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর চরিত্রে ছিলো না। সর্বপ্রকার মুনাফেকি ও কৃত্রিমতাকে তিনি ঘৃণা করতেন।

তাই কবি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন ইসলামের রীতিনীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যদি কোন কিছু করা যায় তাহলে করবো। অন্যথায় উপোস করে মরে যেতে রাজি আছি, তবুও কোন গর-ইসলামী কাজ করবো না। একমাত্র আল্লাহর কাছেই হাত পাতবো, দুনিয়ার কোন মানুষের কাছে নয়। মুসলমান হয়ে আমি অপরের কাছে হাত পাততে পারি না। আমার মাথা একমাত্র আল্লাহর কাছেই নত করতে পারি।

কবির এ শপথ তাঁর জীবনে বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছিল। ইসলামী বিধি বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে চলেছেন সর্বদা। ঢাকায় একটি সুন্দর বাড়ির স্বপ্ন ছিল কবির। কিন্তু সামর্থের অভাবে জায়গা কিনতে পারেন নি। তবুও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কিনতে পারতেন।

কিন্তু ঋণ নিলে সুদ দিতে হবে, ইসলামে তো সুদ হারাম। তাই সে পথেও তিনি যান নি। ধর্মীয় বিধিবিধানের ব্যপারে কবি ফররুখ আহমদ কতটুকু সচেতন ছিলেন এ থেকেই তার অনেকটা অনুমান করা যায়। ফররুখ আহমদের সমসাময়িক বুদ্ধিজীবী ও লেখক সাহিত্যিকদের অনেকে ফররুখ আহমদকে গোঁড়া মনে করতেন। অবশ্য দেরিতে হলেও তাদের সে ভুল ভেঙেছিল।

আসলে আমরা যারা মানবিক আদর্শের নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত নই তাদের কাছে ফররুখ আহমদের মত মহান কবি পুরুষের কঠোর আদর্শানুশীলনকে গোঁড়ামি মনে হলেও তিনি মূলত গোঁড়া ছিলেন না। বরং আমরা কবিকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছি অথবা গোঁড়ামি ও উদারতার সংজ্ঞা নির্ণয়ে ভুল করেছি। কবি ছিলেন ইদার মানব দরদী মানুষ। তাই পাকিস্তান আন্দোলনের সময় যখন হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হল তখন সাংঘাতিক বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। স্বাধিনতা পত্রিকায় ১৯৪৬ সালের ২৭ শে অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নিজের রক্ত’ কবিতায় ঝরে পড়েছিল তাঁর আকুতি।

কলিকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে কবির কন্ঠেই প্রচারিত হয়েছিল কবিতাটি। যার কয়েকটি লাইন- ‘এবার দেখেছি নিজের রক্ত দেখছি আর রক্ত নেবার পাশবিক মত্ততা এবার শুনেছি কোটি ফরিয়াদ শুনেছি আর শত মুমূর্ষ কণ্ঠের আকুলতা। ’ আগস্টের দাঙ্গা দেখে লিখেছিলেন ‘বন্ধু’ নামের কবিতা। যা প্রকাশিত হয়েছিল স্বাধিনতা পত্রিকার ২৩নভেম্বর সংখ্যায়। যেসব কবিতায় কবির হৃদয়ের আকুতি আর মানুষের জন্য তাঁর দরদ ও ভালবাসা উপচে পড়েছে।

ফররুখ আহমদ নিজেই বলেছেন, আমাকে অনেকে গোঁড়া মনে করেন কিন্তু আমার বিছানার এক পাশে রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ থাকে এবং অন্য পাশে থাকে মাইকেলের ‘মেঘনাদবধ’। কবি সম্পর্কে সুধীজনদের বহু উদ্ধৃতি রযেছে যা বর্ণনা করা হলে কবিকে মূল্যায়ন করতে সহজ হবে। বিশিষ্ট চিন্তক ও লেখক জনাব শামসুল আলম বলেন, ‘কবি হিসেবে ফররুখের স্থান হয়তো মাপজোক করে আমরা ঠিক করতে পারবো। কিন্তু মানুষ ফররুখকে তা পারবো না। তিনি ছিলেন তাঁর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্টে অসাধারণ, সকল মাপজোকের বাইরে।

এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে দুর্লভ বললে খুব বেশি বলা হয়না। ফররুখ আহমদ ছিলেন বিশ্বাস প্রত্যয়ে রসূলের অনুসারী, বুকে বেয়নেট ঘাড়ে তলোয়ার স্থাপন করেও সাধ্য ছিলো না তিনি যা বলবেন তার বীপরিত অন্য কথা তাঁকে দিয়ে বলাতে। কবি হিসেবে ফররুখ যত বড় ছিলেন, মানুষ হিসেবে ছিলেন তার চে’ অনেক বড়। কিন্তু আমরা অমানুষ বলে শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানুষটি আমাদের চোখে পড়েনি। ফররুখ আহমদের ব্যক্তিত্ব ও আদর্শিক চেতনায় অভিভূত হয়ে তাঁর প্রশংসা করেছেন আরও অনেকেই।

তাঁর আদর্শের বিপরীত মেরুতে যাদের অবস্থান ছিল তারাও এ ধরনের মন্তব্য না করে পারেন নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা হল আমাদের জাতি এই মহান কবিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারে নি। মহান আল্লাহর কাছে যেন তিনি তার উত্তম প্রতিদান লাভ করেন, এটাই একান্ত কামনা...................। (সংক্ষেপিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.