আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিদ্রার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ !!! কেন এই অনিদ্রা !!! কিভাবে এর প্রতিকার !!!

একটা সময় ছিলো যখন মানুষ দিনে কাজ করত, আর রাতে ঘুমাত। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে, মানুষের ঘুমের অভ্যাসে ও এসেছে বিরাট পরিবর্তন। এখন মানুষ রাতে জেগে থাকে আর দিনে ঝিমায় !!! এই রাত জাগা ব্যক্তিদের সংখ্যা কেমন, তা জানার জন্য বর্তমানে আর কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না, রাতের বেলা ব্লগ ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলাতে একবার ঢু মারলে এদের সংখ্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। প্রথম প্রথম রাত জাগাটা বেশ একটা উত্তেজনার বিষয় হলেও, ধীরে ধীরে একসময় তা অভ্যাসে পরিণত হতে থাকে। অনেকেই এ সময় বিভিন্ন ঘুমের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই রাতজাগা থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করেন, ফলশ্রুতিতে যা হয়, সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়।

পরবর্তীতে রাতে ঘুম হয় না, এই চিন্তাতে ই সারারাত আর ঘুমের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে একসময় দেখা দেয় চরম অনিদ্রা (Insomnia)। আর দীর্ঘদিন এই অনিদ্রায় ভুগার ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। কেন এই অনিদ্রা? এর পিছনে প্রধানত দায়ী কে? আপনি নাকি আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা? অনিদ্রার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, এর পিছনে প্রধানত দায়ী হচ্ছে তিনটি বিষয়, “দুশ্চিন্তা, “বিষাদগ্রস্তটা” ও “স্ট্রেস”। অধিকাংশ মানুষ ই অনিদ্রায় ভুগেন মূলত এই তিনটি কারণে।

কিন্তু এছাড়াও আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে এই নিদ্রাহীনতার পিছনে। যেমন – খাদ্যাভ্যাসঃ ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল হচ্ছে ঘুমের প্রধান শত্রু। এরা হয়তো কিছুটা সময়ের জন্য আপনার আনন্দের খোরাক হবে, কিন্তু এদের ফলে ই আপনাকে জেগে থাকতে হবে সারা রাত। এছাড়া রাতে গুরুপাক খাদ্য খাওয়া এবং বেশি রাতে খাবার খাওয়া ও অনিদ্রার পিছনে অন্যতম কারণ। নৈশভোজে অতিরিক্ত খাওয়া ফলে বুকে-জ্বালা পোড়া (“Heartburn”, a backflow of acid and food from the stomach into the esophagus after eating) হতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসঃ মানুষ যেমন অভ্যাসের দাস, তেমনি মানুষের শরীরও অভ্যাসের দাস। আর যখন ই এই অভ্যাস ব্যাহত হয়, তখন মানুষের শরীর বিদ্রোহ করে বসে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে না ঘুমিয়ে এক এক দিন এক এক সময়ে ঘুমাতে গেলে ঘুমের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে পরে ঘুমানোর জন্য শত চেষ্টা করলেও শরীর না মেনে নিতে চায় না। ঘুমের পরিবেশঃ রাত্রিকালীন ঘুম অনেকটা ই রুমের পরিবেশের উপর নির্ভর করে।

অতিরিক্ত বেশি/কম তাপমাত্রা, উচ্চ আলো ও শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া ঘুমের পূর্বে অতিরিক্ত পরিশ্রম, টিভি/পিসি/ল্যাপটপ/মোবাইল ব্যবহার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে রাখে, যা ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্ট করে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ও অনেক সময় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। এদের মধ্যে রয়েছে কিছু হার্ট ও ব্লাড প্রেশারের ওষুধ, কিছু উদ্দীপক ওষুধ, ওজন কমাতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ, Antidepressants, Decongestants, Fluroquinolone antibiotic drugs ইত্যাদি। শারীরিক সমস্যাঃ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

যেমনঃ শ্বাসকষ্ট, শরীরের যেকোনো অংশে ব্যথা, বহুমূত্র, আথরাইটিস, গ্যাস্ট্রিক, পারকিনসন্স, অ্যালজাইমারস, স্ট্রোক,অ্যজমা Acid Reflux Diseases (GERD), Chronic Obstructive Pulmonary Diseases, Hyperthyroidism ইত্যাদি। অনিদ্রার ফলে কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে? অনিদ্রার ফলে শারীরিক ক্ষতি যতোটা ভয়ংকর, মানসিক ক্ষতি ও ঠিক ততোটা ই ভয়ংকর। আসুন একটু জানার চেষ্টা করি, অনিদ্রার ফলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে – ১. নিদ্রাহীনতার ফলে মানুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। সারাদিনের দেহের ক্ষয় পূরণ করার জন্য রাতের ঘুম খুবই জরুরী, আর যখন ই শরীর সেই ঘুমটা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে, তখন ই তার প্রভাব শরীরের উপর পরে। ২. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

৩. স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মাথা ব্যথা করে, মাথা ঝিম ঝিম করে। ৪. মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে, কাজে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। ৫. বিষণ্ণতা, অবসাদ, হতাশা বাড়তে থাকে। ৬. দীর্ঘদিন অনিদ্রার ফলে উচ্চ-রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। অনিদ্রাঃ কাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি? ছোট বড় সবাই ই এই অনিদ্রাতে আক্রান্ত হতে পারে।

তবে যাদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেশি থাকে তারা হলেন – ১. বয়স্ক ব্যক্তি ২. ধূমপায়ী ৩. তামাক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনকারী ৪. গর্ভবতী ৫. কিশোর বয়সী কখন বুঝবেন যে আপনি আসলেই অনিদ্রাতে আক্রান্ত? ১. রাতে ঘুম আসতে সমস্যা হলে ২. রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে গেলে ৩. ঘুম পরিপূর্ণ হবার আগে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ৪. সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর ও অবসন্ন বোধ করলে ৫. দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব হলে ৬. কাজে মননিবেশ করতে কষ্ট হলে ৭. কোনো কারণ ছাড়া মেজাজ খিটখিটে হতে থাকলে ৮. ঘুম অতিরিক্ত হালকা হয়ে গেলে ৯. একবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর আর ঘুম না আসলে অনিদ্রাঃ বাঁচার কি কোনো ই পথ নেই? অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তির সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, ঘুম না আসার চিন্তা। এভাবে যতোই দিন যেতে থাকে, ঘুমের জন্য হাহাকার ততই বাড়তে থাকে, আর আক্রান্ত ব্যক্তিটি আস্তে আস্তে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় জর্জরিত থাকেন। অনেকেই অনিদ্রা থেকে বাচার জন্য বিভিন্ন ঘুমের ওষুধ সেবন করতে শুরু করেন, ফলশ্রুতিতে অনিদ্রা ধীরে ধীরে আরো তীব্র হতে থাকে। তবে একটু সচেতনতা বাড়িয়ে, একটু অভ্যাসে পরিবর্তন এনে অনিদ্রা অনেকটা ই কাটানো সম্ভব। “দুশ্চিন্তা, “বিষাদগ্রস্তটা” ও “স্ট্রেস” কে আয়ত্তে আনতে হবেঃ আলোচনার প্রথমে ই বলা হয়েছে ঘুমের অন্যতম শত্রু হচ্ছে “দুশ্চিন্তা, “বিষাদগ্রস্তটা” ও “স্ট্রেস”।

তাই এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঘুমের পরিবেশ সৃষ্টিঃ অতিরিক্ত আলো ও শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাই ঘুমের জন্য আরামদায়ক ঠাণ্ডা এবং আলো ও শব্দহীন ঘর নির্বাচন করতে হবে। শুতে যাওয়ার পূর্বে হালকা গরম পানির মাধ্যমে গোসল করা ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। ঘুমের পূর্বে কিছুটা বই পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।

এগুলো ঘুমের পূর্বে স্নায়ু রিলাক্স করতে বেশ সহায়তা করে। ঘুমের পূর্বে কোনো অবস্থাতেই ভারী কোনো কাজ করা উচিত না। ঘুমের পূর্বে টিভি/ল্যাপটপ/ পিসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সঠিক সময়ে ঘুমের অভ্যাস তৈরি করতে হবেঃ অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস অনিদ্রার জন্য বহুলাংশে দায়ী। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে হবে।

দুপুর ও সন্ধ্যাবেলা কোনো অবস্থাতে ই ঘুমানো যাবে না। আর দুপুরে যদি একান্ত ই ঘুমানোর দরকার হয়, তা হলে অবশ্যই দুপুর ৩ টার আগে সর্বচ্চ ৩০ মিনিটের একটা ছোট্ট “ন্যাপ” দেয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমও অনিদ্রার কারণ, তাই যতটুকু প্রয়োজন, তার থেকে বেশি ঘুমানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সঠিক খাদ্যাভাসঃ অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালের নাস্তা দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তাই সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টিমানের নাস্তা অপরিহার্য।

বিকালের পর কোনো অবস্থাতেই ভারী খাওয়া খাওয়া যাবে না। রাতে বেলা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে। সারাদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা খুবই জরুরী, তবে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পানি পান না করা ই উত্তম। তবে হালকা গরম দুধ ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক। ক্যাফেইন ও নেশাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবেঃ ঘুমের অন্যতম শত্রু হচ্ছে ক্যাফেইন।

ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে রাখে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই দুপুরের পর ই যেকোনো ধরণের ক্যাফেইন যুক্ত খাবার (চা, কফি, কোলা) খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপানসহ যেকোনো ধরণের নেশাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিত শরীর চর্চাঃ নিয়মিত শরীর চর্চা ঘুমের জন্য সহায়ক। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই শরীর চর্চা সব থেকে উপকারী।

সন্ধ্যা বেলা হালকা হাহাহাটি ঘুমের জন্য সহায়ক। তবে ঘুমের পূর্বে অতিরিক্ত স্ট্রেসফুল শরীর চর্চা না করা ই উত্তম। মেডিটেশন ও ইয়োগাঃ মেডিটেশন ও ইয়োগা ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। মেডিটেশন ও ইয়োগার আলাদা সুযোগ না থাকলে খুব সহজে ই কিছু সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে তা করা যায়। চোখের পাতা বন্ধ করে বড় করে ধীরে ধীরে ১০ মিনিট দম নিলে শরীরের স্নায়ুগুলো শিথিল হয়।

বিছানায় শোয়ার পর ঘুম না আসলে কি করবেন? অনেকেই আছেন বিছানায় শুয়ার সাথে সাথে ই ঘুমের জন্য ভেড়া গুণা শুরু করেন, বা উলটা দিক থেকে সংখ্যা গুণার চেষ্টা করে নিজের স্নায়ুকে আরো বেশি উত্তেজিত করে ফেলেন। শোয়ার পর ঘুম না আসলে কোনো অবস্থাতেই জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করা যাবে না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ না করে একটু অন্য রুমে ঘুরে আসুন, বই পড়ুন, গান শুনুন, তারপর ঘুমের আমেজ অনুভব করলে শুতে আসুন। তবে ঘুম না আসলে কোনো অবস্থাতেই টিভি দেখা বা পিসি/ল্যাপটপ/মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে স্নায়ুর উপর চাপ পরে, যা নিদ্রাহীনতার কারণ হয়ে দারায়।

সম্ভব হলে ঘরের থেকে ঘড়ি সরিয়া ফেলুন, অনিদ্রার সময় বার বার ঘড়ির দিকে তাকানো ঘুমের জন্য নিতান্তই বিপদজনক। নিজের ঐকান্তিক ইচ্ছা অধিকাংশ সময় ই মানুষকে অনিদ্রার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে যদি সব কিছুর পরও ঘুমের সমস্যা হতে থাকে, তা হলে অবশ্যই অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তথ্য কণিকাঃ ১. What is Insomnia? What Causes Insomnia? ২. Insomnia ৩. Can’t Sleep? ৪. How to Fall Asleep ৫. Sleep Disorders Health Center ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।