আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রত্যাশা

আগ্রহ মোর অধীর অতি— কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা। আমার ছোট বোনটা হয়তো কোনদিনও আমার চোখে বড় হবে না। আমি যখন চোখ বন্ধ করি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে, গাল ফুলানো পুতুলের মতো একটা ফুট ফুটে মুখ। ও ছোট বেলায় সব সময় গোলাপি রঙের একটা জামা পরে থাকতো।

সেই সাদা কালো ছবি এখনও আমার চোখে রঙ্গিন হয়ে ফুটে ওঠে। মাঝে মাঝে হুট করে ওকে দেখে বুকের মাঝে ধক করে ওঠে। মনে হয় চিনতে পারছিনা। অচেনা কেউ একজন। আবার মাঝে মাঝে অবাকও হই।

যে বোনের ‘মামা-মামা, পাপা-পাপা’ বলা পুতুলের পেটের মাঝের যন্ত্রটা মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিলাম, সেই বোনটা আজ কতো বড় হয়েছে। । আফসোস, সে এখন আমাকেও লজ্জা করা শুরু করেছে। আমাদের পরিবারের এই একমাত্র বেক্তি, যে অভাব কি, তা জেনেছে, কিন্তু অনুভব করেনি কখনও। আব্বার যখন শহরে নতুন চাকরির বেতন বন্ধ হয়ে গেলো, কি অভাবেই না কাটল তিনটা বছর।

আমরা এক খাটে তিন ভাইবোন ঘুমাতাম। বৃষ্টি হলে আমাদের পুর ঘরে পানি পড়তো। আমি আর আপা গুটিসুটি মেরে জেগে থাকতাম। কিন্তু বোনটা আপার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাত। ইস, কি নির্মম ছিল রাতগুলো।

এই অবস্থার মাঝেও ওর আবদার আমরা সব সময় ই মেটানোর চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ঈদ এ। আমাদের যাই হোকনা কেন, বোনটার ভালো কিছু হওয়া চাই ই চাই। আমার, আপার, আম্মার ভাগ থেকে মিলিয়ে হলেও ওর ভালটার বেবস্থা আমরা করতাম ই করতাম। এখনও তাই করি।

একবার কোরবানি ঈদের তিনদিন আগে আমাদের বাসা চুরি যায়। সাথে সব টাকা পয়সাও। আমরা ঈদ এর ভাগটা পর্যন্ত ও দিতে পারিনি। সেই ঈদ এ আমার পুতুল বোনটার গায়ে একটা ও নতুন জামা ওঠেনি। ইস, কি কষ্টের, কি বেদনা ভরা স্মৃতি।

যা আমাকে এখনও তাড়া করে ফেরে। ভাবি, আমি কেন আর একটু বড় ছিলাম না। কারো কাছে হাত না পাতি, অন্তত দিন মজুরের কাজটা তো করতে পারতাম। তার পরওতো আমার ছোট্ট সোনার মুখটা হাসি মাখা থাকতো। তখন ওর বয়স কতই বা হবে??? তিন কিংবা চার!! বোনটা আমার একবার ও বলেনি- আম্মা, নতুন জামা নিবো।

ভাবতেই কষ্ট হয়, কি নির্মম আমার অতীত, কি বিভসস। । আচ্ছা, কেউ কি তার ছোট বোনকে আমার চাইতে এক বিন্দু ও কম ভালবাসে??? মহাখালি ফ্লাইওভার এর নিচে ছোট্ট একটা পরিবার থাকে। আমি বাসের জানালা দিয়ে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, বড় বোনটা ওর ছোট বনটাকে কি মতায় ই না কোলে নিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। ছোট বোনটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কি শান্তিতেই না আছে সে।

তাহলে?? সাথে সাথে বুকটা হু হু করে উঠলো। এই বোনটিও নিশ্চই আমার মতো দিন মজুরের কাজ করে হলে ও ওর ছোট্ট পুতুল সোনার গায়ে নতুন জামা তুলে দিবে। অথচ, আমাদের একটু সদয় অনুভুতি, একটু উদারতা এই রকম হাজার পুতুল সোনার গায়ে নতুন জামা তুলতে পারে। পাঁচ মাস ধরে লম্বা মতন একটা মাটির ব্যাংক এ টাকা জমাচ্ছি। Varsity – তে ইফতার মাহফিল এ না গিয়ে ১২০ টাকাও এতেই ফেলেছি।

আরতো বেশি দিন বাকি নাই। বাসায় গিয়ে বোনটাকে ব্যাংকটা দিয়ে বলবো- উপরে ছুড়ে মারত। আমি জানি, কয়েন এর ঝন-ঝনানি শব্দ আর ওর হাসি মিলিয়ে একটা মাতাল মোহো সৃষ্টি করবে সেই সময়। আমি এখনি সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছি। রাতে সেই শব্দ শুনতে শুনতে আমার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আসে।

কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি, বুঝতেই পারিনা। ঈদের দিনটার অপেক্ষায় আমি পাড়ি জমাই ঘুমের আন্ধকার রাজ্যে। প্রত্যাশা তো বেশি কিছু না! প্রত্যাশা শুধু ২০ অথবা ২১ তারিখের ঈদের। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।