আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল জাজিরার রিপোর্টে বাংলাদেশের গুম র‌্যাব : এলিট ফোর্সের অপব্যবহার বন্ধ করুন

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ নামের এক অনুষ্ঠানে আলজাজিরার বাংলাদেশবিষয়ক অনুসন্ধানী রিপোর্ট আলোড়ন তুলেছে। দীর্ঘ এ রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের ঘটনা বেড়েছে ‘ভয়ানক’ হারে। এসব গুমের শিকার প্রধানত হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।

ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম এবং গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামসহ ১৭০ জন গুম হয়েছেন উল্লেখ করে কাতারভিত্তিক আলজাজিরা জানিয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম রাজনৈতিক গুমের সবচেয়ে বড় ঘটনা। গুম হওয়ার আগে ইলিয়াস আলী যে বেশ কয়েকটি বড় সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন—এ তথ্যটি উল্লেখের মধ্য দিয়ে আলজাজিরা প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছে, বিরোধী দলের আন্দোলন চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়ার কৌশল হিসেবেই সরকার গুমকে একটি পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। গুম করাও হচ্ছে বেছে বেছে, যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষমতা রাখেন। খুবই তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, আলজাজিরার রিপোর্টেও গুমের ক্ষেত্রে র্যাবের ভূমিকা এসেছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুমের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, এসবের সঙ্গে প্রশিক্ষিত লোকজন জড়িত।

র্যাবের জড়িত থাকার ব্যাপারে তারা নিজেরাও অনুসন্ধান করতে গিয়ে গুমের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুলতানা কামাল। গুমের শিকার নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদকও আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শুধু গুমের সঙ্গে জড়িত নয়, এসব বাহিনীকে হত্যা ও গুমের অধিকারও দেয়া হয়েছে। আলজাজিরা বলেছে, কোনো গুমেরই বিচার হয়নি এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। আমরা মনে করি, অন্য কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টের মতো আলজাজিরা টিভি চ্যানেলের এ রিপোর্টটিকে এক কথায় প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই।

কারণ, রীতিমত গবেষণার পন্থা অনুসরণ করেছেন রিপোর্টাররা। তারা শুধু গণমাধ্যম থেকেই তথ্য-পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেননি, মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের পাশাপাশি রাজনীতিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মতবিনিময় করার মাধ্যমে সব তথ্য ও অভিযোগ যাচাই করেছেন। সুতরাং রিপোর্টটিকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো অজুহাতই থাকতে পারে না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, আলজাজিরার রিপোর্টে কিন্তু এমন একটিও তথ্য বা বিষয় নেই, বিভিন্ন সময়ে আমরা যা না বলেছি।

বস্তুত বহুদিন ধরে আমাদের বহুবার বলা কথাগুলোকেই আল জাজিরা নতুন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করেছে। রিপোর্টটিকে সরকারের উচিত নিজেদের জন্য ওয়েক আপ কলের গুরুত্ব দেয়া। কারণ, এর মধ্য দিয়ে এ সত্যই আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের গুম আসলেও যথেষ্ট গুরুত্ব ও উদ্বেগের সঙ্গেই আলোচিত হচ্ছে। এজন্যই ক্ষমতাসীনদের উচিত রিপোর্টের মূল কথা অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়া। আমরা বিশেষ করে র্যাবের প্রসঙ্গে পুনরাবৃত্তি করে হলেও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, র্যাব পরিকল্পিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এলিট ফোর্স হিসেবে, যার উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভেতরে সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড নির্মূল এবং শত্রু বা অন্য রাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রম প্রতিহত করা।

শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গিদের গ্রেফতার করাসহ অনেক কর্মকাণ্ডেই র্যাব অসাধারণ বীরত্ব, নৈপুণ্য ও সফলতা দেখিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, জাতীয় স্বার্থে তথা রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহার করার পরিবর্তে সে র্যাবকেই বর্তমান সরকার সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, সব গুম ও গুপ্তহত্যার সঙ্গেই র্যাব জড়িত রয়েছে। ক্রসফায়ারের মতো ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডেও র্যাবের নামই আসছে প্রতিটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রিপোর্টে। ফলে নিন্দিত হচ্ছে অত্যন্ত সফল একটি এলিট ফোর্স।

উল্লেখ্য, আল জাজিরার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও র্যাব এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এসব বাহিনীকে সরকার যে নগ্নভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে সে কথাটাও সব রিপোর্টে বিশেষভাবেই এসেছে। ক্ষমতাসীনরা অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করলেও প্রতিটি বিষয়ে সাক্ষ্যও দিয়েছে দেশের মানুষই। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন অবস্থা কোনো রাষ্ট্র ও তার সরকারের ভবিষ্যতের জন্য শুভ হওয়ার নয়। সুতরাং সরকারের উচিত গুম ও গুপ্তহত্যার ভয়ঙ্কর পথ থেকে সরে আসা।

র্যাব ও পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে কাল বিলম্ব না করে। (সূত্রঃ আমারদেশ ১২/০৮/২০১২) Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।