আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানসা মুসা: অজানা ইতিহাসের বিখ্যাত সম্রাট

♥♥♥♥♥♥♥♥ "মানসা মুসা" মালি সম্রাজ্যের (১২৩০খ্রিঃ-১৬০০খ্রিঃ) দশম "মানসা" ছিলেন। মালি সম্রাজ্যে "মানসা" বলতে "রাজাধিরাজ" বোঝানো হত। তিনি মালি সম্রাজ্যের গোড়পত্তন কারী "সুন্দিয়াতা কেটা " (Sundiata Keita)র নাতি ছিলেন। তার নাম মুসা হলেও তাকে প্রথম মুসা, মালির আমির, ওয়াংগারা খনির সম্রাট, কনকান মুসা/কানকো মুসা, মালির সিংহ, গঙ্গা মুসা নামে ডাকা হয়। তিনি মালি সম্রাজ্যের এবং আফ্রিকার সবচেয়ে সফল সম্রাট/শাসনকর্তা ছিলেন।

তিনি ছিলেন তার সময়ের সবচেয়ে সম্পদশালী সম্রাট এবং সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি। মুসা ছিলেন একাধারে দক্ষ শাসন কর্তা, ইসলাম প্রচারক, শিক্ষা ও বিজ্ঞান অনুরাগী এবং দানশীল। প্রাচীন পৃথিবীর মানচিত্রঃ প্রাচীন আফ্রিকার মানচিত্রঃ জন্মঃ "মানসা মুসা" আনুমানিক ১২৮০ খ্রিঃ জন্ম গ্রহন করেন। মানসা মুসার ফ্যামিলি ট্রিঃ শাসন কালঃ মুসা ৩২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং সুদীর্ঘ ২৫ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শাসন করেন। সম্রাজ্যঃ মুসার সম্রাজ্য অনেক বিস্তৃত ছিল।

তার সময়ে মালি সম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার করে। ইতিহাসবিদদের মতে তার সম্রাজ্যের আয়তন ছিল প্রায় ১২,৯৪,৯৯৪ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমান সময়ের মালি, আইভরি কোষ্ট, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, নাইজার, গাম্বিয়া, বুর্কিনা ফাসো, গিনি, গিনি বিসাউ দেশ সমুহ নিয়ে তার বিশাল সম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। মুসার হজ্বঃ ১৩২৪ খ্রিঃ মুসা পবিত্র হজ্ব পালন করেন। "মানসা মুসা"র এই হজ্ব ইতিহাসের অবিস্বরনীয় এক হজ্ব বলে পরিচিতি পায়।

এই হজ্বে প্রায় ৬০,০০০ মানুষ তার সফর সঙ্গী হয়। যার ভেতর প্রায় ১২,০০০ ক্রীতদাস এই সফরের দলে ছিল। মুসা সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য-শস্য ও প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন। তার সফরে খাদ্যশস্য ছাড়াও সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছিল। মুসার সফরে তার প্রথম স্ত্রী সঙ্গী হন।

মুসার স্ত্রীর সেবায় ৫০০ দাসী নিযুক্ত ছিল। এই কাফেলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারী কর্মকর্তা ও সঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন। তার সফরের অগ্রদূতেরা সুসজ্জিত ঘোড়া, রেশমের কাপড়ে সজ্জিত হয়ে এবং ব্যাগ ভর্তি সোনা নিয়ে সফরের প্রথমাংশে থাকেন। তার কাফেলায় ১০০+ উট ছিল শুধুমাত্র সোনা বহন করার জন্য। এই ১০০+ উটের প্রত্যেকটিই প্রায় ৩০০ পাউন্ড এর মতো সোনা বহন করে।

তার ৫০০+ ক্রীতদাস শুধুমাত্র স্বর্ণ মূদ্রা, স্বর্ণ খন্ড, খনিজ লবন সহ মূল্যবান রত্ন পাথর বহনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। সফরে কাফেলার পথে নাইজার নদী পড়ে এবং তারা নৌকা যোগে নদী পার হন। নদীর পড়েই পথে সুবিশাল সাহারা মরুভুমি পড়ে। এই মরুভুমি পার হতে এই কাফেলার ৬০ দিনের মত লাগে। তখন বসন্তের শেষ সময় হওয়ায় দিনের বেলায় গরম কম ছিল এবং রাত্রেও শীতের প্রকোপ তেমন ছিল না।

সাহার মরুভুমি পার হবার পড়েই তাদের সামনে নীল নদ পড়ে। নীল নদের অপর পারে মিশরের কায়রোতে তখন মুসার সুবিশাল সম্পদের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই সুযোগে বণিকেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। ফলে কায়রোতে এসে মুসা একটু তাজ্জব হয়ে যান। যদিও তার সম্পদের পাহাড় তখনো কমে নি।

কিন্তু, কায়রোতে সোনার দাম প্রতিনিয়তই কমতে থাকে, যা ঐ এলাকায় পরবর্তী ২০ বছরের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছিল। মুসা অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তিনি তার কাফেলার পথে যত গরিব ও দরিদ্রের দেখা পেয়েছেন, সবাইকে অর্থ-সম্পদ, খাদ্য-বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন। কথিত আছে, প্রতি জুম্মা বারে মুসা একটি মসজিদ তৈরী করতেন। মক্কায় পৌছে মুসা হজ্ব করেন।

হজ্বের পর মক্কার জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভিভুত হয়ে পড়েন। তিনি মক্কা থেকে উট বোঝাই করে চিকিৎসা, জোতির্বিদ্যা, দর্শন, ভুগোল, ইতিহাস, গনিত শাস্ত্র এবং আইনের উপর প্রচুর বই নিয়ে আসেন। এবং মক্কা থেকে মেধাবী এবং সেরা গনিতবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আর্কিটেক্টদের আমন্ত্রন করে নিয়ে আসেন। গেমস এর চরিত্রে মুসাঃ পুনর্গঠনঃ বলা হয়ে থাকে মুসা এই ঐতিহাসিক হজ্বে ১,৫০,০০০পাউন্ড স্বর্ণ ব্যয় করেছিলেন। তিনি মক্কায় থাকতেই গাও (Gao) বিজয়ের সংবাদ পান।

তিনি মক্কা থেকে অনেক বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীকে সাথে করে নিয়ে আসেন এবং তার উট বোঝাই করে প্রচুর বই-পুস্তক নিয়ে আসেন। গাও বিজয়ের পরে তিনি গাও সম্রাটের দুই পুত্রকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেন এবং রাজধানী নিয়ানি (Niani)তে নিয়ে আসেন। এবং এই দুই ভাইকে নিজ সন্তানের মত করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তিনি এই সময়টায় (১৩২৫খ্রিঃ-১৩৩৭খ্রিঃ) তার রাজত্বে প্রচুর উন্নয়ন করেন। মক্কায় থাকার সময় গাও (Gao) এবং টিমবুকটু (Timbuktu ) তার সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

তিনি মালি সম্রাজ্যের প্রায় ৪০০টি শহরকে আধুনিক করে গড়ে তোলেন। তার তৈরী কৃত স্থাপত্য সমূহের মধ্যে শংকর মাদ্রাসা বা ইউনিভার্সিটি অফ শংকর , হল অডিয়েন্স, গ্রান্ড প্যালেস উল্লেখযোগ্য। সম্রাট "মানসা মুসা"র সাম্রাজ্যঃ টিম্বুকটুঃ মুসার সাম্রাজ্যের সকল শহরের ভেতর টিমবুকটুকে বেশি উন্নত করে গড়ে তোলা হয়। গাও, ডিজেন, সেগু, নিয়ানি সহ অধিকাংশ শহরে তিনি মার্কেট, মাদ্রাসা, মসজিদ, গ্রন্থাগার, ইউনিভার্সিটি নির্মান করেন। টিম্বুকটুতে মুসা তার প্রধান প্রাসাদ এবং জিনগুয়ের্বার ( Djinguereber ) মসজিদ নির্মান করেন।

এইজন্য আন্দালুসিয়া , স্পেন এবং কায়রো থেকে তিনি স্থাপত্যবিদদের আমন্ত্রন জানান। তার নির্মিত ইউনিভার্সিটি অফ সংকর/সংকর মাদ্রাসায় দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীরা বিনামুল্যে অধ্যয়নের সুযোগ পেত। ধীরে ধীরে টিমবুকটু শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, এবং ব্যবসায়ের প্রানকেন্দ্র হয়ে ওঠে। তখন এশিয়া, ইউরোপ, এবং আফ্রিকায় স্বর্ণ এবং খনিজ লবন রপ্তানী এবং ক্রয়-বিক্রয় বানিজ্যে টিমবুকটু প্রধান কেন্দ্র বলে বিবেচিত হয়। উত্তর ইউরোপে (ভেনিস, জেনোয়া, গ্রানাডা) টিমবুকটু বানিজ্য বিস্তার করে, এবং ৩ মহাদেশে (এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ) স্বর্ণ এবং লবন সরবরাহের কেন্দ্র হয়ে উঠে।

মৃত্যুঃ ১৩৩৭ খ্রিঃ "মানসা মুসা" মৃত্যুবরন করেন। মানসা মুসা ছিলেন মালি সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সফল শাসক। তার সময়েই মালি সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে, এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে, ব্যবসা-বানিজ্যে স্বর্গভুমি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। তিনি প্রায় চারশো শহর এবং ডজনখানেক রাষ্ট্রের একাধিপতি ছিলেন। এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করতেন।

আফ্রিকা এখন দারিদ্র এবং ক্ষুধার জন্য পরিচিত হলেও আমরা অনেকেই জানিনা, এই আফ্রিকাতেই ছিলেন জগদ্বিখ্যাত সম্রাট, ধন-সম্পদে কিংবা জ্ঞান বিজ্ঞানে তার সম্রাজ্যের কোন বিকল্প ছিল না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.