আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটাকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করুন !

uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায় আমি ঘরবন্দী মানুষ,সারাদিন ঘরেই আটকে থাকি । পৃথিবী যেমন কখনই তার কক্ষচ্যুত হয় না আমিও তেমনি নিজের কক্ষপথ থেকে সরে যাই না । চা পানের উদ্দেশ্যে আসরের নামাযের পর একটু বাইরে বের হলাম কাপের চা পেটে পড়ার আগেই বুঝতে পারলাম দেশ ও জাতি নিয়ে সাধারন মানুষের মর্মবেদনা । ইদানিং নয়া পল্টন,মানিক মিয়া এভিনিউ এমনকি সংসদ ভবনে যতটা না রাজনৈতিক আলাপ হয় তার চেয়ে বেশী রাজনীতি হয় চায়ের দোকন গুলোতে !তার উপর আবার নতুন করে ঘাড়ে উঠেছে ধর্মচর্চা । চায়ের দোকানের রাজনীতি সাধারত এড়িয়ে চলি ।

এদের বেশীরভাগই তালগাছবাদী চেতনার । যে যার মতামতকেই ওহী হিসাবে জাহির করে যা কখনই আর পাল্টানো সম্ভব না । যাই হোক মাগরিবের আযান হলো । ৫০/৬০ বছরের এক বৃদ্ধকে দেখরাম টুপি পাঞ্জাবী পড়ে হন্তদন্ত হয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছেন । মাগরিবের আযান হতে জামাতের সময় বেশী পাওয়া যায় না ।

আমিও উঠে দাড়ালাম । হটাত দেখি সেই বৃদ্ধ চায়ের দোকানের মজমায় মিলে গেলেন । আমি হাটতে শুরু করলাম হটাত করে শুনলাম কেউ একজন বলল,জানেন মসজিদের মাইক থেকে এখন আর আযান দেয়া যাবে না হাসিনা মানা কইরা দিসে !আতকে উঠে পিছন ফিরে তাকালাম দেখি সেই বৃদ্ধ । উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হায় হায় পড়ে গেল । স্বাভাবিক ,এটাতো ভয়াবহ খবর ।

মসজিদের মাইকে আযান দেয়া যাবে না ,মানে কি ?মগের মুল্লুক নাকি । নামাযের সময় বেশী বাকী নেই । তারপরও কাছে আসলাম,বৃদ্ধকে প্রশ্ন করলাম : চাচা, মসজিদের মাইকে আযান দেয়া যাবে না এটা কোথায় শুনলেন, কে বলল আপনাকে ? : তাইত শুনলাম । রিকসা স্টান্ডে লোকজন আলাপ করতাছে । : এইটা পুরোপুরি মিথ্যা কথা ।

এমন কোন আইন কিংবা ফতোয়া কেউ কোথাও দেয় নি । আর আম্লিগ কেন আম্লিগের বাপেরও সাধ্য নাই এমন ঘোষনা দেবার । : ধুর বাবা তুমি ছোড মানুষ এইগুলা বুজবা না । সব শেখের বেটির দেশটারে হিন্দু বানানোর চাইল ! : আচ্ছা ঠিক তাইলে আমারে সেইখানে নিয়া চলেন । দেখি তারা কি কয় ।

: এখন সময় নাই,নামাযের টাইম । বলেই সামনের দিকে হাটা দিলেন । উপস্থিত লোকজন ততক্ষনে আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করেছে । ভয় পাচ্ছিলাম সামান্য এই কথার জন্য না আবার নাস্তিক বলে হামলে পড়ে । তারপরও চাচারে ডাক দিলাম ।

: চাচা আপনারে যেটা বলা হইছে সেটা ভুল । আমি বলি কি শোনেন । গত কিছুদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদের মাইক থেকে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করা হচ্ছে । মানুষ মারা হচ্ছে । কদিন আগে রংপুরে এক মসজিদ থেকে প্রচার করা হলো পুলিশ নাকি মসজিদে হামলা করেছে ।

সাধারন ভাবেই এই প্রচারে যে কোন মানুষই পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ হবে । তারপর শুরু হলো সেই বিভস নারকীয় হত্যাকান্ড । চারজন পুলিশকে কুপিয়ে চোখ উপড়ে পিটিয়ে হত্যা করা হল । পরে দেখা গেল মসজিদ থেকে প্রচার করা তথ্যটি ছিল ভুল । এমন কোন ঘটনাই পুলিশ সেদিন ঘটায়নি ।

তারপর দেখেন সেদিন ফটিক ছড়িতে মসজিদ থেকে ঘোষনা করা হল আওয়ামীলীগের লোকজন মাদ্রাসার ইমামকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে । ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই মিছিলের উপর হামলা করেছে । সেদিন ৮ জন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে । শতশত গাড়ী ঘোড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে । পরে আসল ঘটনায় দেখা গেল ।

মাদ্রাসার ইমাম সাহেব দিব্বি ভালো ভাবেই বেচে আছেন,সুস্থ আছেন । মসজিদের মাইক থেকে সেদিন মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল । তাই হয়ত সরকারী ভাবে বলা হতে পারে মসজিদের মাইকের সঠিক ব্যাবহার যেন হয় । কোন নাশকতার কাজে যেন এটি ব্যাবহার না হয় । তাও এমন কিছু যে বলা হয়েছে তাও সঠিক না ।

পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন “ধুর ভাই ফাউল কতা কইয়েন না তো । ইমাম সাহেবরে সত্যিই মাইরা ফালানো হইছে । টিভিতে দেখাইছে আপনি জানেন না । প্রশ্ন করলাম : আচ্ছা বলেন তো ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে ? : কেন বাগেরহাটে । : কোথায় খুলনার বাগেরহাট আর কোথায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ।

আপনি তো কিছুই জানেন না । আর যেহেতু জানেন না সেহেতু এই ধরনের ফালতু কথা ছড়াবেন না । আজকে হয়ত আপনি নিরাপদে আছে কিন্তু কাল তো আপনি কিংবা আপনার পরিজনও এই কুতসিত তথ্য সন্ত্রাস দ্বারা শারীরীক ভাবে আক্রান্ত হতে পারেন । সেদিন কার কাছে বিচার চাইবেন ? জটলা হালকা হলো । যে যার পথ ধরলো ।

লোকজনের হাবভাবে বুঝলাম কেউ আমার কথা তেমন গায়ে মাখলো বলে মনে হলো না । তারা তাদের বিশ্বাসেই অটল রইল । তারা জোর করে এটা বিশ্বাস করতে চায় যে মসজিদের মাইক থেকে আযান দেয়া সরকার নিষিদ্ধ করছে । এই সরকার ভালো না । এই সরকার নাস্তিক সরকার ।

এই সরকার আল্লাহর দুষমন । এরা দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিনত করতে চায় । এদের খতম করা জায়েজ,হত্যা করা ইবাদত ! আজ খুলনায় হয়ে গেল হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ । হরতাল অবরোধ কিংবা সরকার কতৃক কোন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়নি কোথাও । অবধারিত ভাবেই লক্ষ মানুষের জমায়েত হলো ।

হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য সমাবেশের মতোই এই সমাবেশের চিত্রও অভিন্ন । শত শত মানুষ পানি,শুকনা খাবার,স্যালাইন,ট্যাং, বিভিন্ন ফলফলাদি নিয়ে দুর দুরান্ত থেকে আসা মানুষকে আপয়্যান করেছে । সিটি কর্পোরেশন থেকে খাবার পানির ব্যাবস্থা করা হয়েছে । অতিরিক্ত পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়েছে । মোটামুটি শান্তিপুর্ন ভাবেই চলছিল সমাবেশ ।

হটাত কোথা থেকে যেন উড়ো খবর এল সরকার পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে । কোথাও পানি পাওয়া যাচ্ছে না । বিষয়টা নিসন্দেহে আতংকজনক । সরকার কেন পানি বন্ধ করবে । বরং সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্যংকির পর ট্যাংকি ভর্তি করে পানি দেয়া হচ্ছে ।

মুহুর্তেই শান্তিপুর্ন সমাবেশে উত্তেজনার সৃষ্টি হল । লক্ষাধিক মুসল্লি ভায়োলেট হয়ে গেলে সামন্য সংখক পুলিশ কেবল দাড়িয়ে মার খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না । ভাগ্য ভালো উপস্থিক কিছু নেতৃত্বগোছের মানুষের জন্য উত্তেজনা প্রশমন করা গেল । পরে খোজ নিয়ে জানা গেল পানির ট্যাংকির মুখে যে জালি থাকে সেখানে ময়লা জমে পানির রাস্তা সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছিল । কিছুক্ষন পরই তা ঠিক হয়ে গেছে ।

ভাগ্য ভাল ঘটনাটা বেশী দুর গড়ায় নি । কিন্তু সামান্য এই ভুল বোঝাবুঝির কারনে কিছু হয়ে যেত !উত্তেজিত হয়ে মুসল্রিরা ভাংচুর শুরু করতো । পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের উপর হামলা হতো হয়ত কয়েকজন পুলিশকে মেরেও ফেলা হত । পুলিশ তখন গুলি ছুড়ত । কিছু সাধারন মানুষ মারা পড়ত ।

কারো বাবা,কারো ভাই,কারো স্বামী ততক্ষনে মরে শেষ । দেশে পুনরায় অস্থিরতা শুরু হতো । যখন সন্ধার পর দেখা যত বিষয়টি ছিল মিথ্যা তখন কি পারতাম মৃত মানুষগুলোকে ফিরিয়ে আনতে । পারতাম না । সেই ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেন নাই ।

যারা এই প্যানিক সৃষ্টি করে,যারা এই আতংক সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন । সাধারন মানুষগুলোর ধংসাত্বক এই মানসিকতা তৈরির জন্য কে দায়ী ? জামায়াত শিবির তথা হেফাজতে ইসলামের ধর্মীয় মিথ্যা প্রপাগান্ডা ? আপনার আমার নিস্ক্রিয়তা ? সুশীল সমাজের নিরপেক্ষতা ? যার যার অবস্থান থেকে এই তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলন । আজ যে ছেলেটি মরল পাশের বাড়ীর বলে হয় গায়ে মাখলেন না যেদিন আপনি নিজের সন্তান আক্রান্ত হবে সেদিন কেবল “আমার সন্তান খুব শান্ত,জীবনে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না “ বলে মনকে সায় দিতে পারবেন না । আল্লাহর ওয়াস্তে বিভক্তির হাত থেকে বাংলাদেশকে বাচান । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.