আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন পবনের নাও।

মানবদেহ বায়ু, দম তথা শ্বাস-প্রশ্বাস নির্ভর চৈতন্যের আধার। এইজন্যেই দেহের রূপক নাম 'মন পবনের নাও'। ছোটবেলায় যাত্রাপালায় গান শুনতাম, 'হাওয়ার গাড়ি চইলা গেলরে আমার বন্ধু আইল না....' তখন ভাবতাম বিমান, এখন বুঝি মানুষের শরীরটাই হাওয়ার গাড়ি, বন্ধুর বিরহে কাতর। নদ-নদীর এই বাংলাদেশে হাওয়া, গাড়ির চেয়ে অবশ্য নৌকা আর পালের বাতাসই বেশি জুতসই। তাই বাংলার বাউল-ভাটিয়ালী গানে বারবার নাও ভাসানোর কথা এসেছে।

আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না.....(লালন) কোন মেস্তরি নাও বানাইল, কেমন দেখা যায়....মদনমাঝি বড় পাজী কত নাও ডোবায়.... তুমি সুজন কান্ডারী নৌকার সাবধানে চালাও, মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপঙ্খী নাও। হাওয়ায় দৌড়েরে আমার ময়ুর-পঙ্খী নাও, মাসুকপুরে যাবে নৌকা বাওরে সিদো বাও... (শাহ আব্দুল করিম) গণি সরকারের গানে এসেছে আধুনিক সাইকেলের রূপক, 'হাওয়ার উপর চলে গাড়ি, লাগে না পেট্রল ডিজেল' যুগযুগ ধরে বাউল-ফকির, দরবেশ এরা মানুষের শরীরকে 'হাওয়ার গাড়ি' বা মেশিন হিসেবে দেখেছেন। এ দম বা বায়ু নিয়ন্ত্রণ করাটাই সাধকের মূল লক্ষ্য, যেমন, আলী দম্‌ দম, প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে আলীর নাম নেয়াটাই সাধনা। শাস্ত্রে এ বায়ুরও প্রকারভেদ আছে যেমন, প্রাণ,অপান,সমান,ব্যান, উদান। বায়ু চিনে প্রাণবায়ুকে সাথে নিয়ে সাধকের পথচলা।

বায়ু নিয়ন্ত্রণ করেই পওহারী বাবা বেঁচে ছিলেন, তিনি নাকি শুধু পবন আহার করতেন সেখান থেকেই নাম হয়েছে পওহারী। বাংলাসাহিত্যের আদিম ও মধ্যপর্বে কবি সাহিত্যিকদের রচিত, দোঁহা, পালা, কবিতায় বায়ুসাধনের নিরন্তর উদাহরণ। বায়ুতে করহ নর আয়ুর উদ্দেশ। -- সৈয়দ সুলতান মন থির তো ,বচন থির, পবন থির তো বিন্দু থির বিন্দু থির তও কন্ধ থির, বলে গোরখদেব সকল থির। --- সৈয়দ সুলতান তনের গুরু মন, মনের গুরু পবন পবনের গুরু শূন্য, শূন্যের গুরু নির্গুণ।

----- শেখচান্দ বাউল সাধনায় দমের গুরুত্ব এতবেশি হওয়ায় অনেকে মনে করেন বাউল শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বায়ু থেকে (বায়ু + উল)। ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে অর্থাৎ চোখ বন্ধ করে অন্তরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে 'দুনিয়া আন্ধার,' বায়ু ছাড়া আর কিছুই থাকে না। মরমী সাধক মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি তাই বলেন, আমি হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, মুসলিম, ইহুদী কিছুই নই, আমি শুধুই বাতাস। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।