আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একপৃষ্ঠার গল্প: গুটি

শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি ঘুটে যেখানেই যায় গোবরের গন্ধ তার সঙ্গেই যায়, বুঝলা মিয়া? তুমি তারে যতটা সভ্য মনে করতাছ, ততটা সভ্য সে না। চামড়া সাদা হইলেই যে তার ভিতর পরিষ্কার হইবো তাও মনে কইরো না! আকমল হোসেন অকস্মাৎ ক্ষেপে উঠলে বিব্রত হয়ে ইসমাইল বলে উঠলো, স্যার, স্যার, শান্ত হন প্লিজ! এমডি সাহেব শুনে ফেলতে পারেন। ইসমাইলের কথায় যেন তিনি আরো ক্ষেপে উঠলেন। আরে মিয়া সবার লগে হাইসা হাইসা মিঠা কথা কয় দেইখ্যা মাথায় তুইল্যা রাখছো? কথায় আছে, সোন্দর গাধা হারামজাদা! তোমাগো উনি হইলেন তেমন। পুরাটা অফিসে তার নিজের চ্যালাগোরে আইন্যা ঢুকাইছে।

এক শিয়াল হুক্কা করলে বাকি শিয়ালগুলাও হুয়া হুয়া করে। ভালো-মন্দ বইল্যা কি জগতে কিছু নাই? তাই বইল্যা একটা দুই নাম্বাররে গ্রুপিঙের জোরে নেতা বানাইয়া দিবা, অন্য নিরীহ মানুষগুলার কী হইবো একবার ভাইব্যা দেখবা না? -স্যার, স্যার, আপনার পা দুইটা ধরি, এবার থামেন! -এখন না হয় আমার মুখ বন্ধ করাইলা, তাই বইল্যা কি সত্য গোপন থাকবে? -স্যার, আপনি এ ভাবে রাগারাগি করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। -ঠিক আছে, রাগারাগি করলাম না। কিন্তু কথাগুলা তোমাদের জানার দরকার আছে কি না কও? -তা তো আছেই। -তাইলে হিস্ট্রি শোনো! সরকারি চাকরি ছাইড়া প্রথম সানোয়ার নিটিঙে যখন এই নুরুদ্দিন ঢুকছিলো, সেইখানেও তার নিজের ডিষ্টিকের লোকগুলারে তলে তলে ব্যবস্থা করাইয়া নিয়া আসছিলো।

ব্যাপারটা যতদিন গোপন ছিলো, ততদিন কেউ বুঝতে পারে নাই। সবাই ভাবতো আসলেও খুব জনপ্রিয় লোক তানি। আসলে তার চাইরো দিকের সব যে পোষা দালাল সেইটা তো আর কেউ তলাইয়া দেখে নাই। ডিজিএম সাব তার কথাতেই অনেক রাম ছাগলরে ভালো ভালো পোস্ট দিয়া দিলো। ব্যাপারটা ধরা পড়তো না, যদি না টি-বয় বাবলুরে স্টোর-কিপার না বানাইতো।

বাবলু আছিলো ফাইভ পাশ। একদিন ডিজিএম নিজেই ব্যাপারটা ধইরা ফালাইলেন। আর সেদিনই নুরুদ্দিন ঝগড়া কইরা সানোয়ার নিটিং ছাইড়া দিলো। এমন কইরা চাইরটা ফ্যাক্টরি বদলাইয়া এখানে আইসা উঠছেন। কিন্তু বগলে ইটা রাখনের স্বভাব ছাড়তে পারলেন না।

ব্যাপারটা এখনও সবাই পুরা বুঝতে পারে নাই, তাও কারো কারো চোখে ধরা পইড়া গেছে। কিছুটা উপরের পোস্টের পাবলিক সারভেন্টগুলা বহুত ঘাঘু হয়। এই নুরুদ্দিনও তেমন ঘাঘু, দড়ি লাগাইতে পারবা না। আবার দিন-রাইত নাকও চাইপ্যা ধইরা রাখতে পারবা না। যাইবা কোনদিকে? কথা শেষ করেই মিটি মিটি হাসতে হাসতে আকমল হোসেন পকেট থেকে ছোট আকৃতির পানের বাক্স বের করে আনলেন।

তারপর একটি খিলি বের করে মুখে পুরতে পুরতে বললেন, যাও এখন। সময় মতো আমারে ডাইকো। কিন্তু ইসমাইল ডাকতে আসার আগেই দরজায় দেখা যায় নুরুদ্দিনকে। একবার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে তিনি আকমল হোসেনের উদ্দেশ্যে বললেন, সাহেব আপনার লেকচার পুরাটাই শুনলাম। ভিতরে আসবো? -স্যার আপনি আসলেন কেন? আমারে খবর দিলেই তো যাইতাম! ---------- -থাক, আমিই এসে পড়লাম।

নুরুদ্দিন টেবিলের সামনে এলে আকমল হোসেন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, বসেন না স্যার, বসেন! -শোনেন আকমল সাব, আপনার সব কথাই শুনেছি। কথা মিথ্যা নয় একটিও। তবে, আমি যে কতটা ঘাঘু তা কিন্তু অনুমান করা আপনার পক্ষে কঠিন। -তা জানি স্যার। তবে এইটাও জাইন্যেন যে, বগলে বেশিক্ষণ ইটা রাখা সম্ভব না।

-সেটা জানি, তার আগেই আমার গুটি সব ফিট করে ফেলবো। তখন আপনার জাগা হবে ফুটপাতে। -সেইটাও জানি। আর জানি বইল্যাই আপনার শিয়ালগুলার গর্তে মরিচের ধূমা দিয়া ধরার ব্যবস্থা হইছে। দেখতে চান নমুনা? -কী নমুনা দেখাবেন? -পিছনে তাকাইয়া দেখেন।

নুরুদ্দিন পেছন ফিরলে দেখতে পান এমডি এনায়েত সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। খানিকটা হতবাক নুরুদ্দিন বলে উঠলেন, স্যার আপনি? -হুম, এখন বলেন, রিজাইন দেবেন নাকি টার্মিনেট করবো? -প্রমান থাকলে করবেন! -আসুন কনফারেন্স রুমে। আপনার সবগুটি সেখানে আছে। নুরুদ্দিনের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে আকমল হোসেনের মুখও বেশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.