আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুতে এক গাধার এক বছর পূর্তি হল!

ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি এক দেশে ছিল এক গাধা। আজ থেকে চৌদ্দ মাস আগে একদিন তার হঠাত আউট সোর্সিং শেখার ইচ্ছে হল। সে এক বড় ভাইকে ব্যাপারটা জানাল। বড় ভাই তাকে গৌতম রায়ের জুমলার একটা টিউটোরিয়ালের লিঙ্ক দিয়ে দিলেন। ছেলেটি টিউটরিয়াল ঘাটতে ঘাটতে হঠাত করে ব্লগসাইটটির প্রথম পাতায় চলে গেল।

সেখানে অনেক অনেক লেখা! অদ্ভুত ধরনের ভাল লাগল তার। এমনিতেই গল্পের বই পড়ার অনেক আগ্রহ তার...তারউপর এত্ত এত্ত লেখা দেখা মন সাথে সাথেই লাফিয়ে উঠল। সেই গাধা ছেলেটি হলাম আমি!! এক বছর আগে ঠিক এই দিনে ক্লাস শেষে বাসায় এসে সামু খুলে বসলাম। মন প্রচন্ড খারাপ ছিল। হঠাত করে মনে হল ব্লগে লগিন করে ফেলি! যেই ভাবা সেই কাজ।

তখনই ব্লগে এই নিক নিয়ে একটা আইডি খুলে ফেললাম। শুরু হল ব্লগ পড়া! বলা বাহুল্য, নেশার মত ব্লগ পড়া। প্রথম পেজের সব লেখা পড়া, আগের মজার মজার লেখাগুলো পড়া এক কথায় নেশার উপরে নেশা। প্রতিদিন চারঘন্টা ব্লগ না পড়লে যেন টিকতেই পারতাম না। বলা বাহুল্য, জীবনের অনেক অনেক হতাশাগুলো কেটে যাচ্ছিল এই ব্লগ পড়ে।

রাজনীতি, রম্য, মুভিরিভিও, সমকালীন বিষয়াবলী এক কথায় অসাধারণ। যতই পড়ি ততই মুগ্ধতা বাড়ে। পড়তে পড়তে তাঁদের অসাধারণ লেখাগুলোতে কমেন্ট করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কমেন্ট করা আর হয়ে উঠে না, কারণ আমি তখন সেফই না! সাত দিন পার হলেও তাঁদের আর সাত দিন আর শেষ হয় না। সেফও হই না! মন অসম্ভব খারাপ।

ব্লগ প্রোফাইলে লেখা উঠে ভাল ভাল লেখা পোষ্ট করতে থাকুন। আরে আজীব, আমি কি লেখক নাকি লেখব??! অসাধারণ লেখাগুলোতে কমেন্ট করার জন্যই একটা আইডি আর কিছু না। কমেন্ট আর করা হয়ে উঠে না। এমনও দিন গেছে সারা দিন ব্লগ নিয়ে পড়ে আছি, সেই সকালে লগিন আর ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ব্লগ। যেন ব্লগই জীবন! পড়ার নেশা যে কি হতে পারে তা আমাকে না দেখলে হয়ত বোঝা যেত না! আই হোক, মাস দুয়েক যেতেই এই প্রবল ঘোর লাগা নেশা কমে গেল।

কমেন্ট না করতে পারার আক্ষেপে এক পর্যায়ে ব্লগে আসা কমিয়ে দিলাম। উল্লেখ্য, এই দুই মাসে আগের পাঁচ বছরের প্রায় সব পোষ্টই পড়া হয়ে গিয়েছিল। তো নভেম্বরের কোন এক দিন ব্লগে এসে হঠাত করে দেখি আমি জেনারেল। কিন্তু অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম ব্লগে একাউন্ট খোলার সময় যে আগ্রহ ছিল হঠাত করেই দেখি সে আগ্রহ আর নেই। যাই হোক, সেই পথচলা...মন খারাপ থাকলে ব্লগে আজাইড়া পোষ্ট দেওয়া... ব্লগ পড়ে সমসাময়িক প্রচুর বিষয়াদি যেমন জেনেছি তেমনি বিভিন্ন ব্লগারদের রাজনীতি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ আমাকে জানিয়েছি অতীতের অনেক ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, রাজাকারদের কুকীর্তি... মুক্তিযুদ্ধ দেখি নি, সামরিক কো-ও দেখি নি, এরশাদের স্বৈরশাষণ দেখি নি... লেখাগুলো পড়ে উপলব্ধি করেছি।

অনেক প্রিয় সাহিত্যিকদের উপর গঠনমূলক আলোচনা- সমালোচনা পড়েছি। অসাধারণ লেখাগুলো পড়ে শিউরে উঠেছি অনেক, অতীতের না জানা ঘটনা জেনেছি... এ তো গেল আমার জানার ঘটনা, ব্লগাররা যেভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, যেভাবে অনেক অন্যায়ের প্রতিরোধ করেছেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে এমন সব ইস্যু যেখানে মূল মাধ্যমগুলো(টিভি, পত্রিকা) সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে তা ব্লগাররা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। পারসোনা ইস্যু কিংবা ভিকারুন্নিসার জঘন্য কুকীর্তি যখন সব পত্রিকা-টিভি এড়িয়ে গিয়েছিল, এগিয়ে এসেছিলেন এই ব্লগাররাই। কিংবা ইউল্যাবের ঘটনা সামু ব্লগের মাধ্যমেই সমগ্র বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল।

এবার আসি কিছু সমালোচনায়! সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকে নিয়ে সমালোচনা করাই যায়! ব্লগ পড়ে যখন এক সময় ভেবেছিলাম এ দেশের ঘুণেধরা রাজনীতির পরিবর্তন হবে, তরুণরাই দেশকে জাগিয়ে তোলবে, পত্রিকা খুললে আর খুন-ধর্ষণ বা হত্যার কথা কোনদিনই আসবে না, সত্যিই বদলে যাবে এই সোনার বাংলাদেশ-ঠিক তখনি অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ করলাম ব্লগে দলাদলি হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের চারপাশের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নোংরা পলিটিক্সের চেয়ে কোন অংশে কম নয়! মাল্টি নিকের ছড়াছড়ি, অন্যকে ব্যাক্তি আক্রমণ করা, গালিগালাজ করা সব মিলিয়ে যেন “ব্লগীয় পলিটিক্স”। অনেক ভাল ব্লগারকে যেমন ব্লগ ছাড়তে দেখেছি তেমনি খুব সহজে ব্লগে সিন্ডিকেটিং করে “পপুলার” হওয়ার মহড়া দেখেছি। “ইভ টিজিং” যেমন রাস্তা ঘাটে বের হলে দেখা যায়, অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ করেছি ব্লগে ইভ টিজিং- এর ঘটনা! রাস্তা ঘাটে ইভ-টিজিং তাও এক কথা কিন্তু ব্লগের “শিক্ষিত” ব্লগাররা কেন একাজ করেছেন অথবা করছেন তা আজও আমার বোঝা হয় নি!! নারী ব্লগারদের ব্যক্তি আক্র-মণ করা হচ্ছে! আরও অবাককর বিষয় হল মাল্টি নিক গুলো দু-একদিনে সেফ হয়ে যায় আর অনেক ওয়াচে থাকা ব্লগাররা সেফের জন্য আকুতি করেও কিছু করতে পারেন না! যাই হোক, এবার আসি কিছু ব্লগার প্রসঙ্গে। যাদের লেখা মুগ্ধ চোখে বারবার পড়েই যাই। নাফিস ইফতেখারঃ সামুর সর্বাধিক হিট খাওয়া ব্লগার।

হুমায়ুন আহমেদ যেমন বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য পাঠক সৃষ্টি করেছেন বলা যায় নাফিস মিয়াও ব্লগে অসংখ্য পাঠক সৃষ্টি করেছেন। আমি উনার রম্য আর বিখ্যাত নাফিসীয় গোবেষণার বিশাল পাঙ্খা। উল্লখ্য, উনার পুষ্ট থেকে বোঝাই যায় প্রেম ভালবাসা, আর রিলেশন সম্পর্কে উনার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বিশাল। কারও কিছু দরকার পড়লে উনার কাছ থেকে কিছু টিপস নিয়ে নিয়েন। আলিম-আল-রাজিঃ অসাধারণ একজন লেখক।

চরম রম্য লেখেন। তবে ইদানিং ব্লগে কম সময় দিয়ে প্রথম আলোর রসালোতেই বেশি সময় দিচ্ছেন। চেয়ারম্যান ০০৭: এই ব্যাটা গম-চোর গম চুরী বাদ দিয়ে ব্লগে এসে ব্লগ কাঁপায়ে ফেলেছে। অসাধারন রম্য আর লুল রচনায় ব্লগকে মাতিয়ে তুলেছেন তিনি। রস-কষহীন সামুতে বর্তমানে তিনি রসের যোগান দিচ্ছেন এবং পাশাপাশি নিজেকে “লুল সম্রাট” প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

দূর্যোধনঃ একজন আদর্শ রিভিওকার। অসাধারণের উপর অসাধারণ রিভিও লিখেন। অনন্ত ভাইয়ার আপকামিং “মোস্ট ওয়েলকাম” এর রিভিওর অপেক্ষায় আছি। শায়মাঃ মায়শা আপু থুক্কু শায়মা আপ্পি ব্লগের সবচেয়ে মিশুক ব্লগার। যতদূর জানি পিচ্চি পোলাপান পড়ান তিনি, মানে মাষ্টার আর কি! ম্যাডামের জন্য রইল সালাম।

উনার লেখা লইয়া আর কিছু বললাম না! রেজোওয়ানাঃ রেজুপু অসাধারণ লিখেন। গোবেষণা ধর্মী অনেক পোষ্টে নগদে প্লাস ছাড়া আর কিছু দেওয়ার থাকে না। আশকারী রহমানঃ একজন পিচ্চি ব্লগার। ছাইয়া পিটাইতে অল টাইম বিজি থাকে। দুয়া থাকল তার প্রতি সে যেন ব্লগে লুলশ্রেষ্ঠ হতে পারে।

রেজওয়ান তানিমঃ অসাধারণ কবি। প্রায়ই সুরের ঝঙ্কার তোলেন। অসাধারণ প্রাণ-প্রাচুর্যে পূর্ণ এই কবির জন্য রইল শুভকামনা। মাহী ফ্লোরাঃ কবি ব্লগার। প্রায়ই অসাধারণ কবিতা লিখেন।

শুভকামনা উনার জন্য। ইশতিয়াক আহমেদ চয়নঃ ব্লগের অন্যতম সেরা রম্যকার। উনার রম্য মানেই বিশেষ কিছু। আমি তানভীরঃ অসাধারণ রম্যকার। শুভকামনা।

ঈষামঃ চরম গল্প লেখে ছেলেটি। ভর্তি পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত। শুভকামনা ওর জন্য! নোমান নমিঃ অসাধারণ রম্যকার এবং ছোট-গল্পকার। লুল লেখক হিসেবে সমাধিক স্বীকৃত! অণুজীবঃ একজন বিশিষ্ট টেকি যিনি বর্তমানে ব্লগে অনিয়মিত। নাহিয়ান বিন হোসেনঃ অসাধারণ লেখক।

প্রায়ই যুক্তিদিয়ে অনেক বিতর্কিত ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। চশোমখোরঃ ভালই লিখতেন। ছমাস হল ব্লগ ছেড়ে ফেবুর ভালুভাসার পেজগুলোতে রুমান্টিক গফ লিখছেন! শুভকামনা উনার জন্য। তেরোঃ উনার নাম তেরো কেন তা জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন! অনেক দিন তাকে ভাইয়া বলেই জানতাম পরে জানলাম তিনি আপু। অসাধারণ ছোট গল্প লিখেন।

হাসান মাহবুবঃ ব্লগের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার। শুভকামনা উনার জন্য। মাইনাচঃ অসাধারণ লিখেন। উনার সঙ্কলন পোষ্ট অসাধারণ ছিল। শুভকামনা! নেক্সাসঃ অসাধারণ লিখেন।

শুভকামনা উনার জন্য। রাতুল_শাহঃ চমতকার মানুষ। কমেন্ট-প্রিয় ব্লগার। শুভকামনা উনার জন্য। সাবরিনা সিরাজী তিতিরঃ সুন্দর কবিতা লিখেন।

শুভকামনা এই কবি আপুর জন্য। মাহমুদা সোনিয়াঃ অসাধারণ লিখেন। শুভকামনা রইল। নীল-দর্পণঃ রেসিপি আপু। ভাবছি উনার রেসিপি দেখে একদিন নিজেই রান্না করব! শুভকামনা আপুর জন্য।

সাকিন উল আলম ইভানঃ ব্লগে ছাক্কু বলে সমাধিক খ্যাত। অসাধরণ লিখেন। শুভকামনা। নাফিজ মুনতাসীরঃ একজন আদর্শ সিনেমাখোড়। এই লোক মনে হয় সারা দিনই মুভি দেখেন।

ভাবছি উনার সাথে যদি কোন দিন দেখা হয় উনার হার্ডডিস্কটাই নিয়ে আসব! শুভকামনা। আকাশটালালঃ বিখ্যাত লুল ব্লগার। শুভকামনা উনার জন্য। ইনিকগনিটোঃ অসাধারণ গল্পকার এবং ডাক্তার। শুভকামনা উনার জন্য।

রাহিঃ নিজেকে লুল বলে পরিচয় দিতে আগ্রহী তবে বারবারই চেয়ারম্যানের কাছে পরাজিত। শুভকামনা এই কমেন্টপ্রিয় ভাইয়াটির জন্য। লিনকিন পার্কঃ উনার নিক দেখলেই আমার লিন্‌কিন পার্কের গানের লিরিক্সগুলো মাথায় ঘুরঘুর করে! শুভকামনা ভাইয়ার জন্য। টুকিঝাঃ অসাধারণ গল্পকার। শুভকামনা।

ফারজুল আরেফিনঃ অসাধারণ লেখক। উনার ব্লগীয় সংগ্রহশালা সত্যিই অনেক সুন্দর। শুভকামনা। আরও অনেক প্রিয় ব্লগারের নাম দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু দিতে পারছি না বলে সত্যিই দুঃখিত। কারণ একটু পরে ইফতারীর টাইম হয়ে যাচ্ছে আর এক যায়গায় দাওয়াত আছে কি-না! আর আমি বিখ্যাত হাওয়াই স্পিডের জিপি নেট ব্যবহার করি তো তাই ব্লগারদের লেখার লিঙ্ক দিতে পারছি না।

যাই হোক, শুভকামনা প্রত্যেকের জন্য। জীবনের প্রত্যেকটি দিন হোক আরও বেশি আনন্দময়। হ্যাপি ব্লগিং... একজন সাধারণ পাঠক হসেবে পোষ্টটি উৎসর্গ করলাম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ব্লগের গৌরব সাঃ উঃ জাঃ মোহাম্মদ মোর্শেদুল কুতুব চৌধুরী মজনু স্যারকে যিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, কথাশিল্পী, প্রচ্ছদশিল্পী, কন্ঠশিল্পী, ভাস্কর্যশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, থিয়েটার অভিনেতা, মডেল ও মিউজিক ভিডিও নির্মার্তা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।