আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাহ্ মিথ্যা বলতে খারাপ লাগে না আর।

বেকার আব্বা ৩০০০ টাকা দিয়ে বলল,নে ধর,তোর ঈদের বাজেট। জুতা,টি শাট,প্যান্ট কিনবি। আমি বললাম,এই টাকা দিয়ে ত একটা প্যান্ট পামু,জুতা,টি শাট কেমনে কিনমু? আব্বা কইল,এটাই বাজেট,কিনলে কিন,না কিনলে ফালায় দিস। কি আর করা??তো গত দুইদিন ধরে ভাবতেছি কি কেনা যায়?মামাত ভাইকে ফোন দিলাম,তারও একই অবস্থা। ৩৫০০ টাকা বাজেট।

আমার আর মামাত ভাই এর দৌড় সব ঈদেই বড়জোর বন্গোবাজার পযন্ত। কিন্ত প্রত্যকবার বড়লোক ফুফাত,খালাত ভাইবোনদের বেইলি স্টার,বসুন্ধরা শপিং মল এর বাজেট বিহীন দামি দামি জামাকাপড় দেখে খায়েশ জাগল এবার যেভাবেই হোক বেইলি স্টার,বসুন্ধরা শপিং মল থেকে টি শাট,প্যান্ট কিনব। আজ আমি আর আমার মামাত ভাই বের হলাম। আম্মা আরও ৫০০ টাকা দিলেন বের হবার সময়। প্রথমে আমরা দুইজন গেলাম বেইলি স্টারে।

ঢুকতেই দেখি মাম্মি ড্যাডিদের ছেলেমেয়ে দিয়ে বেইলি স্টার ভরা। হাটা যায় না। মেয়েদের পোশাক আশাক মাশাল্লাহ অধিকাংশ কাপল। হাত ধরাধরি করে হাটছে,পারলে গায়ে পড়ে যায়। কোন কিছুই কেনা যায় না,এত দাম।

তো এগুলো দেখতে দেখতে দুইজন ঢুকলাম একটা দোকানে। প্যান্ট দেখতে দেখতে আমার একটা প্যান্ট ভাল লাগল,দাম ফিক্সড ছিল না। ৩৭০০ টাকা দাম। অনেকক্ষণ দামাদামি করলাম,২০০০ লাস্ট দাম বললাম,দোকানি প্রায় দিয়ে দিবে ভাব। এর উপরে যাব না।

তখন হটাৎ কোথা হতে এক মেয়ে আমার পছন্দ করা প্যান্ট হাতে নিয়ে মেয়েটার পাশে থাকা ছেলেটাকে বলল জানু,এই প্যান্টটা সুন্দর,এটা কিনো। ছেলেটা দরদাম শুরু করল,কত দাম?ছেলেটা বলল,না আমি ৩৬৫০ টাকা দিব, দোকানি দিয়ে দিল,অথচ প্যান্টটার দাম কোনমতেই ২০০০ টাকার বেশি যায় না। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। মেয়েটাকে কিছু বলতে গেলাম,মামাত ভাই টেনে নিয়ে যাওয়াতে বলতে পারলাম না। গেলাম অন্য দোকানে।

দেখি এক মেয়ে এক দোকানে দোকানিকে বলছে ভাই আমি কটা জামা নিলাম,বলে বো্তল থেকে পানি খেল অথচ ইফতারের আরো ২ ঘন্টা বাকি,তারমানে মেয়েটা রোজা নেই। দোকানি বলল আপা ৫টা নিছেন। আরো ২টা নেবো,মা টাকা নিয়ে আসছে। আর আমরা একটাই কিনতে পারলাম না। ৩ তালায় গেলাম,মামাত ভাই একটা টি শাট পছন্দ করল,১৫০০ টাকা,কিন্তু দামে মিলে না।

কেনা হল না। পাশে তাকিয়ে দেখি এক লোক আমাদের বয়সী তার ছেলেকে বলছে,বেবি তোমার যেটা পছন্দ ওটাই কিনো,বলতে না বলতেই চোখের পলকে ৬ টা কিনে নিল ৮,৫০০ টাকায়। বুঝলাম বেইলি স্টার আমাদের মধ্যবিওের না। বিধ্ধস্ত অবস্থায় দুজন বের হয়ে আসলাম বেইলি স্টার থেকে। বের হয়ে দেখি নটরডেম কলেজের কিছু ছাএ টাকা কালেকশন করছে গরীব শিশুদের ঈদের কাপড় কিনে দেয়ার জন্য।

আমি আর আমার মামাত ভাই ৫০ ৫০ টাকা করে দিলাম। আরো দেখি এক মা তার ৬ মাসের শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছে শুধু ঈদের দিন কিছু ভাল খাবারের জন্য। এক হাত পা বিহীন লোক কি কষ্ট করে উপুড় হয়ে শুয়ে ভিক্ষা করছে। একটা যুবক ছেলে তার মার জন্য টাকা সংগ্রহ করছে,কারন তার মার একটা ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। সবাই এত টাকার বাজার করছে,অথচ যুবক ছেলেটির মাকে দেবার একটা টাকাও নেই কারো কাছে।

কিছু ছোট ছোট ছেলে মেয়ে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকটি টাকা ও খাবারের জন্য। নাহ ওদের কেউ নেই। ইচ্ছা করল নিজের সব টাকা ওদের দিয়ে বলি,নে তোরা কিছু কিনে নিস,ভাই তোমার মায়ের জন্য আমার সামথ্য মত কিছু দিলাম। কিন্তু আমার নিজেকে হিরো বানানোর সাহস নেই। কিছুই দেইনি ওদের কাউকেও।

না,কারো উপর আমার রাগ নেই,অনেকের কালো টাকার দাপটে হারিয়ে যায় মধ্যবিও ও গরীবের ঈদ। অনেকে টাকার অভাবে তো কাপড়ই কিনতে পারে না ঈদে,আামার কাছে তো তাও ৩৫০০ টাকা আছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মতিঝিল বনানী ৬ নাম্বার বাসে করে ঝুলতে ঝুলতে রওনা দিলাম বন্গোবাজারের উদ্দেশ্য,কারণ ওটাই আমার কেনাকাটার আসল জায়গা। এবারও ফুফাত আর খালাত ভাইবোনদের বলতে হবে বসুন্ধরা শপিং মল থেকে টি শাট,প্যান্ট কিনেছি। নাহ্ মিথ্যা বলতে খারাপ লাগে না আর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.