আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টাম ছায়া

তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয় ছুটির দিন। কিছুটা সময় হাতে আসে মাঝে মাঝে। তখন স্মৃতিরা আসে যায়, মন নিয়ে খেলা করে। উলটে-পালটে দেখি মানুষে মানুষে সম্পর্ক কত বিরক্তিকর হতে পারে, আবার কখনো কত অর্থহীন মিষ্টি। দু দিন আগে এস এম এস এসেছিল - ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে দেখা করব।

আজ বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা। উত্তরে বলেছিলাম - বন্ধুত্বের ঘোষণার প্রয়োজন আছে? এসো যে কোন দিন। আজ এসেছিল। - আমার শরীর খুব খারাপ ছিল কয়েকদিন। তুমি কোনো খোঁজ রাখ না।

- জানি। তোমার ফেসবুক দেখে সব খোঁজ পাই। স্টেটাসে অনেক চেঁচামেচি ছিল। আবার এক সপ্তাহ পরে সব ঠিক আগের মত। কি হয়েছিল? চুপ করে রইল কিছুক্ষণ।

তারপরে আস্তে বলল। - সব কথা বলা যাবে না তোমাকে। ও কথা বাদ। এক জনের কষ্ট আরেক জন বুঝবে কি করে? দুটো মানুষ আসলে সম্পূর্ণ আলাদা। এমন কি সিয়ামিজ টুইনরাও আলাদা মানুষ।

এই জন্য ঐ যে সেবার দুই ইরানী মেয়ে আলাদা হতে গেল বিরাট ঝুঁকি নিয়ে । দুজনই মারা গেল। ঐ ঘটনার সময় ও কত ছোট ছিল মনে করতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম। দুঃখের গল্প আমি ওকে বলি না। ওর মুখ থেকে শুনতেও চাই না।

কথা ঘোরালাম। - দুজন মানুষ যখন ইন্টারেক্ট করে, ওদের মনে কি একই ভাবনা কিছু আসে না? কিছু এম্প্যাথি? তুমি যখন সবার স্টেটাসে লাইক দাও, তখন কি একই চিন্তা করো না? - তুমি কখনো আমার স্টেটাসে লাইক দাও না। আমার ছবিতেও না। আমি কি খুব খারাপ দেখতে? বাকি সবাই দেয়। তোমার সাথে আমার কিসের এম্প্যাথি? এবার হাসলাম।

এই বালিকা জানে তার সম্মোহনী রূপের কথা। কিন্তু এম্প্যাথির সাথে রূপের কি সম্পর্ক? অবশ্য ওর স্টেটাসও অনেক সময় মজার হয়। আমি মন্তব্য করি, কিন্তু লাইক দিতে পারি না। আমার হাত আড়স্ট হয়ে যায়। মনে হয় সারা পৃথিবী দেখছে, আমি ওর কোন কিছু লাইক করছি, এটা গোপন কথাই থাক বাকি পৃথিবীর কাছে।

কথা ঘোরালাম, ওকে রাগাতে গেলাম। রাগলে আরো সুন্দর হয়। - জানো, তুমি আর আমি সংযুক্ত না হলেও আমরা এখন অনেক এটম শেয়ার করছি। আমার শরীরের প্রতিটি এটম এখন তোমারও, তেমনি তোমার শরীরের প্রতিটি ইলেক্ট্রন প্রোটন আমারও। চমকে উঠল।

- ছি ছি, কি বিশ্রী কথা। তুমি এতো ফাজিল হলে কবে? তার পরে ওর মনে হলো আমার কথায় প্যাঁচ থাকলেও কখনো অসত্য থাকে না। - কিভাবে? - কোয়ান্টাম উপরিপাতন। প্রত্যেকটা কণার ব্যাপ্তি মানে যাকে ওয়েভ ফাংশন বলে, আসলে অসীম, যদিও কোথাও কম, কোথাও বেশী। এক্সপোনেনশালী কমে যায় দূরত্বের সাথে, কিন্তু কোথাও শূন্য না।

সুতরাং তোমার সব এটম আর আমার সব এটমের মধ্যে একটা খুব ছোট্ট জড়াজড়ি আছে। এই মুহূর্তে তা তোমার স্বামীটির চাইতে বেশী। - আমি আর তোমার কাছে আসব না। তুমি আজকাল বাজে চিন্তা কর, বাজে কথা বলো। - রাগ করো না।

আমার চেয়ে তোমার ঐ চেয়ারের সাথে তোমার সম্পর্ক আরো বেশী। আর মানুষ তো শুধু তার শরীর নয়। মন বলেও তো একটা জিনিস আছে। - তুমি তো তা মানো না। সেখানেও তোমার এটম মলিকিউলের ব্যাখ্যা আছে।

এখন বলবে আমরা কাছাকাছি, তাই তোমার নিউরন আর আমার নিউরন জড়া - থেমে গেল। এই শব্দটা তার কাছে সমাজস্বীকৃত পবিত্র সম্পর্ক ঘিরেই শুধু চলতে পারে। প্রসঙ্গ আবার পালটালাম। - আণবিক শক্তি কমিশনের দেয়ালে কিসের ছবি দেখো? ও খুব সন্দিগ্ধভাবে তাকালো । আবার কোন "বাজে" কথার দিকে যাচ্ছি কি না, চিন্তা করে দেখল।

নিশ্চিত হয়ে বলল। - হ্যাঁ, ওখানে আইনস্টাইনের E= mc^2 লেখা আছে। আর একটা এটমের ছবি আছে, একটা নিউক্লিয়াসের চারপাশে কয়েকটা ইলেক্ট্রন ঘুরছে। - হুম, কিন্তু ওটা এটমের পুরোনো বোর মডেল। বোরের তত্ত্বে ইলেক্ট্রনগুলো সৌর মন্ডলের মত বৃত্ত কক্ষে ঘুরছে।

ইলেক্ট্রন - প্রোটন বিপরীত চার্জের হলেও ইলেক্ট্রন আকৃষ্ট হয়ে নিউক্লিয়াসের ভেতরে চলে যাচ্ছে না কেন, বল তো? - ভেবেছ আমি ভুলে গেছি, না? গতির জন্য সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের জন্য সেগুলো ছিটকে বাইরে যেতে চায়, তাই ব্যালেন্স হয়ে যায়। - হুম, তুমি রসায়ন পড়লে ভালো করতে। কেমিস্টরা ঐভাবে চিন্তা করে - যে একটা বিন্দু কণা আসলে খুব জোরে ঘুরছে চারদিকে। এবার বলো s-stateএ, অর্থাৎ কোন কৌনিক ভরবেগ না থাকলে কক্ষ কেমন হবে? ও দু মিনিট চিন্তা করে হঠাৎ মুখ বিরক্ত করে বলল। - তুমি আমাকে ট্র্যাপ করার চেষ্টা করছ।

কৌণিক ভরবেগ না থাকলে তো গতিপথ সরল রেখা হবে, নিউক্লিয়াসের ভেতর দিয়ে। - কিন্তু যে সব কেমিস্ট ইলেক্ট্রনকে বিন্দু কণা হিসেবে না দেখিয়ে অবস্থানের কোয়ান্টাম সম্ভাবনার ছবি আঁকে, এই সরল রেখার বদলে তারা-ও দেখবে একদম গোল ছবি দিয়েছে ইলেক্ট্রনের অবস্থানের। - আমি এসব খেয়াল করি নি কেমিস্ট্রি ক্লাসে বা বইয়ে। আসলে কি বলার মতলব তোমার? -ভয় নেই, আর কোন বিব্রতকর কথা বলছি না তোমার জন্য। যদিও কেমিস্টদের এ বিষয়ে আরো পরিষ্কার লেখা উচিত।

ইলেক্ট্রন মেঘ s-অবস্থায় একেবারেই ঘুরছে না নিউক্লিয়াসের চারপাশে। তবে এই মেঘ নিউক্লিয়াসের ভেতর দিয়ে উলটে যাচ্ছে দ্রুত, বাইরে থেকে ভেতরে বা ভেতর থেকে বাইরে, অনেকটা পেন্ডুলামের মত। তাই গতি শক্তি ঠিকই আছে। আর মেঘটা আসলেই গোল আর এর ব্যাপ্তি অসীম। এটাই ইলেক্ট্রনের কোয়ান্টাম চেহারা, কোন বিন্দুকণা নয় যতক্ষণ এভাবে চলবে।

কেমিস্টরা কিছুতেই বিন্দুর ছবিটা মন থেকে বাদ দিতে পারে না; বিন্দুটাই কখনো ডাইনে কখনো বাঁয়ে গিয়ে গড় অবস্থানের এই গোল ছবি তৈরী করেছে এটা ভাবতে ভালোবাসে। ও একটা হাই তুলল। এসব জ্ঞান আমাকে দিচ্ছ কেন? আমাকে জীবনে আর কেমিস্ট্রি পড়তে হবে না। আর তুমি এই বয়সে এখন এসব কলেজ-ফ্রেশম্যান ধারণা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছ কেন? - এই যে একই জিনিস অসীম বিস্তৃতি নিয়ে আছে, আবার যন্ত্রে ধরা পড়লে বিন্দুকণা হয়ে যায়, এই রহস্যের যে কোনো মীমাংসা হয় নি। দেখি অন্যভাবে চিন্তা করে হদিশ পাই কি না।

মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় স্থান-কাল বলে আসলে কিছু নেই, হয়তো কণাদের নানারকম ইন্টার-একশনের ফলে তাদের এই মেঘের মতো বিস্তৃতি, অর্থাৎ আপাত স্থান -কালের জন্ম হয়েছে। - ভালো বলেছ। আমাকে এখন বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুরশাশুড়ীর সাথে বরকে নিয়ে জটিল ইন্টার-একশনের জন্য ভোলা যেতে হবে। তুমি কোথাও যাচ্ছ না? উঠে দাঁড়ালো। - তুমি আজকাল অনেক হিন্দী স্টেটাস দাও।

আমারটাও শুনে যাও - "তু জাহাঁ জাহাঁ চলেগি, মেরা সায়া সাথ হোগা", লতার বিখ্যাত গান । গীতিকার নিশ্চয়ই কোয়ান্টাম মেকানিক্স জানতেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।