আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফোটোগ্রাফী -৮

১৯১১ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী বড় ছেলে সুকুমারকে বিলাতে পাঠান ফোটোগ্রাফী ও মুদ্রণ সম্বন্ধে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্যে। সুকুমার রায়ের পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। সুকুমার বিলেতে আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশের ‘রিকশা’ নিয়ে একজন জাপানি ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ওকিনাওয়া থেকে হোক্কাইডো প্রায় ৬ মাসের একটি লম্বা ট্যুরে সারা জাপান নিজ পায়ে প্যাডেল চালিয়ে ঘুরছেন। মাসাসি মিৎসুই। বয়স ৩৫।

জন্ম কিত্ততো-তে। কোবে ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন এবং পরবর্তীতে একটি মেশিন ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০০১ সালে একটি দীর্ঘ সফরে দেশের বাইরে গেলে ফটোগ্রাফিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং দেশে ফিরে চাকরি ছেড়ে ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হিসেবে নতুন পেশায় নিয়োজিত হন। নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে এ রকম অনিশ্চিত পেশায় চড়াই-উতরাই থাকলেও মনের জোর আর ছবি তোলার নেশা তাকে আটকাতে পারেনি। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ পরিভ্রমণে অভিজ্ঞ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশে একাধিকবার সফর করেন।

এশিয়ার দেশগুলোতে তার তোলা অসংখ্য ছবির প্রদর্শনী হয়েছে জাপানে বহুবার। বই বেরিয়েছে বেশ কয়েকটা। NHK সহ জাপানের সব দাপুটে মিডিয়ায় তার ছবি, তার রিপোর্টিং বেরিয়েছে অসংখ্যবার। বাংলাদেশেও তিনি একাধিকবার সফর করেন অসংখ্য ছবি তোলে। তার ছবির বিষয়বস্তু ‘Simle’ ‘হাসি’।

তার প্রতিটি ছবিতেই হাসির ঝলক থাকবে। পরিশ্রমী শ্রমিক কিন্তু মুখজুড়ে স্নিগ্ধ হাসি, শিশুদের সারল্যমুখ, গৃহবধূদের বিনম্র হাসি। মাসাসি জানান, ‘মানুষের হৃদয়ের ভেতর লুকোনো হাসি মুখে এসে ভিড় জমায়, সেই হাসিটাকেই আমি ক্যামেরাবন্দী করতে চাই। ’ মাসাসি বলেন, রিকশা দেখতে চমৎকার, রিকশায় রঙ ব্যবহারটাও সুন্দর। চড়তে ও চালাতেও আনন্দ।

ঢাকায় একটা রিকশা কিনে ফেলি এবং শিপে করে তা জাপানে নিয়ে আসি। যেখানেই যাই এই রিকশা দেখতে সবাই ভিড় করে, চড়তে চায়। আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকমানের একজন আলোকচিত্রী, চলচ্চিত্র ভিডিওগ্রাফার। বর্তমানে প্যারিসপ্রবাসি। এই আলোকচিত্রী হাসতে হাসতেই বললেন-বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট-প্রকৃতি আর ওপরে সুপারম্যান উড়ে যাচ্ছে বা টারজান এসে হাজির হচ্ছে..এইসব ছিল আমার ছবির বিষয়বস্তু৷ এই নিয়ে শিক্ষকরা বেশ হাসাহাসি করতেন৷ আমার কাছে তখন কিন্তু বাংলার আকাশে টারজান বা সুপারম্যানকে অসম্ভব বা অদ্ভূত লাগেনি৷ বরং এরকমটা ভাবতে ভালোই লাগতো৷১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র দুই ডলার (সমমান ৩০ টাকা) দিয়ে কেনা প্রথম ক্যামেরা দিয়ে তাঁর আলোকচিত্রী জীবনের শুরু।

প্রথম সাত বছর ধার করা ক্যামেরা আর চলচ্চিত্রের ধার করা ফিল্ম দিয়ে তিনি কাজ চালান। ঐ ফিল্মগুলো ছিলো সাদাকালো। তিনি ৩৬ টাকা ব্যয়ে রঙিন ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তি ২০ বছর আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। ১৮৮৮ সালের দিকে কাউকে ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখলে ইট মেরে তা ভেঙে ফেলা হতো।

এমনটি ঘটেছিল কোডাক প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ইস্টম্যানের বেলায়। নিউইয়র্কের রাস্তায় কেউ মানুষের ওপর গোপনে গোয়েন্দাগিরি করছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বা কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করতে ওত্ পেতে রয়েছে—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ইট মেরে ক্যামেরা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শহরবাসী। বর্তমানে পৃথিবীতে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে ডিজিটাল ক্যামেরা পৌঁছে গেছে। প্রতি দুই মিনিটে যে পরিমাণ ছবি তোলা হচ্ছে, তার সংখ্যা ১৮০০ সালে সবাই মিলে যে ছবি তুলেছিল তার চেয়েও বেশি। এ ক্ষেত্রে আরেকটি মাত্রা যুক্ত করেছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক।

এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন ৩০ কোটি ছবি আপলোড করা হয়। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড ম্যাককোলাফ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘পাহাড়ে ওঠার অর্থ হলো তুমি যাতে পৃথিবীটাকে দেখতে পারো। এর অর্থ এই নয় যে পৃথিবী তোমায় দেখবে। ’ অর্থাত্ অযথা ক্যামেরা ক্লিক না করে বিষয়বস্তুর সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করারই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলা হয়, একটি ছবি হাজার শব্দের সমান।

তাহলে হাজার হাজার ছবির অর্থ কী দাঁড়ায়? এ প্রসঙ্গে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী মার্টিন হ্যান্ড জানিয়েছেন, ‘আমরা অভূতপূর্ব দৃশ্যমানতার সময়টিতে বাস করছি। ’ হ্যান্ড তাঁর লেখা ইউবিকুইটাস ফটোগ্রাফি বইয়ে লিখেছেন, ‘পরিহাসের বিষয় হলো একটি ছবি তোলার অর্থ এমন নয় যে তোমাকে আর আর তা স্মরণ করতে হবে না। ’ সবাই আলোকচিত্রী হয়ে ছবি তুলতে শুরু করলে, দেখবে কে?’ তাই আগে চোখ মেলা প্রয়োজন—তারপর ক্যামেরায় চোখ রাখা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।