আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মলদ্বারে গণ্ডগোল

............ পাইলস, রোগটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় Hemorrhoids,সর্ব সাধারণের কাছে “অর্শ রোগ” নামে পরিচিত। এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি মলত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে মাঝে মধ্যে রক্ত যায়। কখনো কখনো মলদ্বার ফুলে ওঠে, মলদ্বার হতে মাংস পিন্ড ঝুলে পড়ে যা “চাপ” তুলে নিলে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় কিংবা চাপ দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়। কেন এই পাইলস রোগ? সাধারণত আমাদের মলদ্বার ঘিরে অনেক রক্তনালী থাকে। যখন আমরা মলত্যাগের জন্য চাপ দেই তখন রক্তনালীগুলো স্ফীত ও প্রসারিত হয়ে উঠে এবং সেইসাথে অর্শ রোগাক্রান্ত রক্তনালীটিও স্ফীত হয়।

মুলত যে সব কারনে হয়ে থাকে???  দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যতা  দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডায়রিয়া  পায়ু পথ দিয়ে যৌন সঙ্গম  স্থূল শারীরিক কাঠামো  সব সময় ভারী জিনিসপত্র তোলা  পায়খানার সময় বলপূর্বক চাপ দেওয়া  দীর্ঘ সময়ের জন্য টয়লেটের উপর বসা  অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করা।  আঁশবিহীন খাবার কম খাওয়া  সঠিক নিয়মে ব্যায়াম না করা  গর্ভাবস্থা কখন বুঝবেন আপনি পাইলস রোগে আক্রান্ত??? নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো হতে পারেঃ  মলত্যাগের সময় চাপ দিলে রোগী মলদ্বারের কাছাকাছি একটি শক্ত পিণ্ড অনুভব করবে। যা অনেকসময় রক্ত জমাট বদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। রোগী মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করবে।  রোগীর সবসময় “পায়খানার বেগ পাচ্ছে কিংবা পড়ে যাচ্ছে”এরকম একটা অনুভূতি কাজ করবে।

 পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত পড়বে কিংবা রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হবে।  মলদ্বার ও তার আশেপাশে প্রচুর চুলকানি হবে।  পায়ু এলাকা লাল এবং কালশিটে হতে পারে  অন্ত্র খালি অবস্থায় অনেকসময় পায়খানার রাস্তা দিয়ে শ্লেষ্মা(mucus) বের হতে পারে।  মল ত্যাগের সময় প্রচুর চাপ প্রয়োগ করতে হতে পারে।  শরীরের ওজন হ্রাস পাবে।

পাইলসের প্রকারভেদঃ আমাদের দুই ধরনের পাইলস হতে পারে। ১। Internal hemorrhoids ২। External hemorrhoids Internal hemorrhoids: গ্রেড ১- ছোট এবং মলদ্বার আস্তরণের ভিতর inflammations, আছে. তারা দৃশ্যমান নয়। গ্রেড ২- মলদ্বারের ভেতরে এবং গ্রেড ১ হতে অধিক বড়।

মল ত্যাগের সময় inflamed অংশ বের হতে চাবে এবং শীঘ্রই আবার ভেতরে প্রবেশ করবে। গ্রেড ৩- Inflamed অংশটি মলদ্বারের বাইরে প্রদর্শিত হবে। রোগী তাদের ঝুলন্ত দেখতে পাবে। রোগী তার আঙ্গুল দিয়ে চেপে ভিতরে প্রবেশ করাতে পারে। গ্রেড ৪- মলদ্বারের বাইরে inflamed অংশটি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে এবং রোগী কোনোভাবেই ভিতরে প্রবেশ করাতে পারবে না।

External hemorrhoids: ছোট একটি পিন্ডের মতো যা মলদ্বারের বাইরের দিকে অবস্থিত থাকবে। আক্রান্ত জায়গাটি চুলকাবে এবং প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হবে। চিকিৎসা:  অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রেড ১ ও ২ পাইলস কোন চিকিৎসা ছাড়াই নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীর অস্বস্তি, চুলকানি, ব্যাথার জন্য কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং প্রতিকারের জন্য জীবনযাত্রায়ও কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। যেমনঃ  কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য আঁশ জাতীয় খাবার, শাক সবজি, ফল ও প্রচুর পানি পান করা।

 ক্যাফেইন জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা।  প্রতিদিন মলত্যাগ করা।  শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো।  দীর্ঘ সময় টয়লেটে অবস্থান না করা।  পায়খানার রাস্তা পরিছন্ন ও শুষ্ক রাখা।

 দীর্ঘ সময় ধরে ভারী জিনিস না তোলা। এছাড়াও যারা অল্প বিস্তর পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই ওষুধ গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। Anustat কিংবা Erian ointment (প্রয়োগ বিধি জানার জন্য প্যাকেটের ভিতরে থাকা নিয়মাবলী অনুসরণ করুন। ) এছাড়া যাদের পায়খানা অনিয়মিত তারা প্রতিদিন দুই চামচ করে একবার Syrup Avolac কিংবা Milk of Magnesium সাত দিন খেতে পারেন। তবে যারা গ্রেড ২, ৩ ও ৪ এ কিংবা External Hemorrhoids এ আক্রান্ত তারা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের কোলোরেক্টাল বিভাগে কিংবা একজন অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।

বর্তমানে পাইলসের সার্জারি চিকিৎসার জন্য রিংলাইগেশন কিংবা লংগো অপারেশন সমগ্র পৃথিবীতে খুবই প্রচলিত ও জনপ্রিয়। এই ধরনের অপারেশনের সুবিধা হল রোগীর মলদ্বারে কোনো কাটা ছেড়া ছাড়াই ৯০-৯৫% রোগীর পাইলস সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং রোগী অপারেশনের দিনেই বাসায় যেতে পারেন এবং সর্বোচ্চ সাতদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম। সুতরাং এই ধরনের রোগ লোকে কি বলবে চিন্তা না করে আর বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় হাতুড়ে ডাক্তারদের চটকদার বিজ্ঞাপন কিংবা হেকিম কবিরাজের দ্বারা ভুল চিকিৎসা গ্রহন না করে সচেতন হন, নিজের শরীরকে বাঁচান কেননা দীর্ঘদিন পাইলসের চিকিৎসা না করালে অ্যানিমিয়া কিংবা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। (যদিও মেডিক্যালের অনেক টার্মের বাংলা অর্থ করা যায় না আবার অনেক বাংলা শব্দ সাধারনের বোধগম্য নয় তবুও এখানে আমি সংক্ষিপ্তাকারে পাইলস সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যদি কেউ এই সম্পর্কে আরও তথ্য জানেন কিংবা জানতে চান তবে পোস্টে শেয়ার করবেন।

এই লেখার জন্যে স্পেশাল thanks ডাঃ আহমেদ হোসেন সনেটকে। আর যদি এসংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকে তবে মেইল করতে পারেন এই অ্যাড্রেসে ধন্যবাদ। ) কোষ্ঠকাঠিন্যতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত View this link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.