আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহারানী ভিক্টোরিয়া

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস ১২শ’ বছরের। মহারানী ভিক্টোরিয়া আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। রাজা তৃতীয় জর্জ তার পিতামহ। ১৮৪০ সালে চাচাতো ভাই প্রিন্স আলবার্টের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ভিক্টোরিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮১৯ সালে।

চাচা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডের রানী হন। মহারানী ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা কিন্তু ইংরেজি ছিল না। তার মা ছিলেন একজন জার্মান ডিউকের কন্যা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের আভিজাত্য ও রাজকীয় রীতিনীতি মেনে চলেছেন এই মহারানী। ভিক্টোরিয়া তখন বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগণের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন।

১৮৯৭ সালের ২২ জুন মহারানী ভিক্টোরিয়া শোভাযাত্রা সহকারে লন্ডন ঘুরেছিলেন। রানী ভিক্টোরিয়া সেইন্ট পল গির্জা থেকে বাকিংহাম প্যালেসে গিয়েছিলেন। সে সময় আমেরিকান লেখক মার্ক টোয়েনসহ হাজার হাজার লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্টোরিয়াকে অভিনন্দন জানান। ১৮৯৭ সালে ঔপনিবেশিক দেশগুলোর জন্য তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ চেম্বারলেন মহারানী ভিক্টোরিয়াকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরামর্শ দেন। সে সময় ভিক্টোরিয়া একইসঙ্গে তার রাজত্বের ৬০ বছর পূর্তি ও বৃটিশ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্বের উৎসব উদযাপন করেন।

১৮৯৭ সালের ২২ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে প্রতিনিধিরা বাকিংহাম প্যালেসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ভারতীয় বল্লমধারী অশ্বারোহী দল মাথায় পাগড়ি পরা ছিল। নিউজিল্যান্ড থেকে সেনা এবং জ্যামাইকা থেকে গোলন্দাজ বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। এমনকি প্যালেসের সামনে উটের শোভাযাত্রার আয়োজনও করা হয়েছিল।

মহারানী ভিক্টোরিয়ার যুগের অবসান হয়েছে। আজ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের যুগ। ১৯ শতকে রানী ভিক্টোরিয়া ছাড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোন রাজা বা রানীই টানা বা ছাড়া ছাড়া ৬০ বছর সিংহাসনে বসেননি। তিনি ১ মে ১৮৭৬ সালে ভারত সম্রাজ্ঞী উপাধি ধারন করেন। রানী এলিজাবেথ দু’বার ঢাকায় এসেছেন।

প্রথমবার এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আমলে। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১ সালে রানীর বিমান নেমেছিল পুরনো বিমানবন্দরে। রমনা পার্কের সামনে একটি পুরনো বাড়ি সাজানো হয়েছে রানীর জন্য। সেই বাড়িটি আজকের বঙ্গভবন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রানী বের হয়েছিলেন স্টিমারে বুড়িগঙ্গা ভ্রমণে।

ভ্রমণ শেষে তিনি পরিদর্শন করেন আদমজী জুট মিল। দ্বিতীয়বার ঢাকা এসেছিলেন তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর, ১৯৮৩ সালের নবেম্বরে। দু’বারই তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ। দ্বিতীয়বার ঢাকা ভ্রমণে তিনি উঠেছিলেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। দ্বিতীয় সফরে তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শন করেন।

মুগ্ধ হন ঢেঁকিতে ধান ভানা, মুড়ি ভাজা, মুরগি পালনসহ গ্রামের মানুষের জীবনধারা দেখে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে গাজীপুরে তাঁর যাবার জন্য আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ ট্রেনের। সেই ট্রেনটিকে নীল রঙ করা হয়। সেই থেকে আমাদের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর রঙ নীল। গ্রান্ডমাদার বলতে আমরা বুঝি দাদী বা নানি, যে ব্যক্তিবিশেষের।

কিন্তু একটি পুরো মহাদেশের গ্রান্ডমাদার? কিভাবে সম্ভব? আর কেইবা সে গ্রান্ডমাদার? ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা গ্রান্ডমাদার অব ইউরোপ হিসেবে দু’জনের নাম পাই এবং দু’জনই সমসাময়িক। একজন হলেন ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়া, আরেকজন ডেনমার্কের রানী লুইস । তাদের ঘরে ৯ সন্তান জন্ম নেয়। রানী ভিক্টোরিয়ার ৩৪ জন নাতি-নাতনি ছিল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল বা ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত রানি ভিক্টোরিয়ার একটি স্মৃতিসৌধ।

উল্লেখ্য, ভিক্টোরিয়া ভারতসম্রাজ্ঞী উপাধির অধিকারী ছিলেন। বর্তমানে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ একটি জাদুঘর এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। সৌধটির উদ্বোধন হয় ১৯২১ সালে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত। এটি কুমিল্লার সবচেয়ে পুরাতন এবং বিখ্যাত কলেজ।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে কচুয়া থানা দাউদকান্দি থানার অর্ন্তভূক্ত ছিল। মহারানী ভিক্টোরিয়া রাজত্বকালে কচুয়া থানা ছিল হাজীগঞ্জের অন্তভূর্ক্ত। চিত্রা নদীন তীরে নারিকেল, সুপারি, বনবৃক্ষ রাজির এক মনলোভা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশাল জমিদারীর প্রশস্ত জমিতে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রাচীনতম এই নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজটি অবস্থিত।

বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা কলেজ, দ্বিতীয় রাজশাহী কলেজ এবং তৃতীয় নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ। জমিদার রতন বাবু ১৮৫৭ সালে সর্বপ্রথম নড়াইল কলেজিয়েট স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজ সমর্থিত জমিদারগণ ইংরেজ প্রভুদের তুষ্ঠ করার জন্য তৎকালিন ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘ভিক্টোরিয়া কলেজ’। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।