আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিঠাই( এক শিয়ালের জীবন কাহিনী )

বেশি কিছু চাই না, চাই শুধু মনের কথা বলতে [ঘোষনা : এই গল্পটি লাইলী আরজুমান খানম লায়লা রচিত দুই "শিয়ালের ঢাকা শহর দেখার কিচ্ছা" গল্প থেকে অনুপ্রানিত হয়ে লেখা(Click This Link)। গল্পটিতে চরিত্রদের নাম অপরবর্তীত রাখা হয়েছে এবং আগের গল্পের কিছু সংলাপ ও ব্যবহৃত হয়েছে ] ১ মনটা আজ ভেঙে গেল মিঠাইয়ের। সে স্বপ্নেও ভাবেনি তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি তাকে এই ভাবে ঠকাবে। অনেক আশা করে মিথানের হাত ধরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিল মিঠাই, ঢাকা শহর দেখবে বলে। কিন্তু তার সব আশা মাটি হয়ে গেল।

ঢাকায় আশার আগেই বিচ্ছেদ হয়ে গেল মিঠাই আর মিথানের। হক না তারা দুজনে শিয়াল, তা বলে কি তাদের মন নেই ? তা বলে কি তাদের ভালবাসতে নেই ? কিন্তু এটা কি করল মিথান, বিরহের বেদনায় মিঠাই যখন হন্নে হয়ে খুঁজছে মিথানকে, তখন সে নিশ্চিন্তে অন্য আরেক জনের সাথে পরম আনন্দে রাসলীলা চালাচ্ছে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছেলেমেয়েকে অন্যজনের সাথে প্রেম করতে দেখেছে মিঠাই কিন্তু তার আপন মিথানের রাসলীলার দেখার পর তার শরীরের ভীতর থেকে এক ধিক্কার বের হয়ে এল মিথানের জন্য। ভালবাসা জমে থাকা মনটা ক্রমেই ঘৃনা করতে শুরু করল মিথানকে। আর মিথান সে কি করল ? মিঠাই এর হাতে ধরা পরে গিয়ে , নিজেকে ভাল প্রমানিত কর বার জন্য সে মিঠাই কে ভোলাতে চাইল এই বলে,"আরে মিঠাই তুমি এখানে ? উফ আল্লার কি মেহেরবানী যে আবার তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।

" এই বলে মিথান মিঠাইয়ের কাছে ঘেসতে গেল, কিন্তু মিঠাই কোন উত্তর না দিয়ে একটু দূরে সরে দাড়াল। মিথান বুঝতে পারল মিঠাই অভিমান করেছে। তাই ডেমেজ কন্ট্রোল করবার জন্য মিষ্টি হেসে বলল, " মিঠাই তুমি জানো না আমি তোমায় কোথায় কোথায় খুঁজেছি , কিন্তু তোমায় কোথাও খুঁজে পাইনি। শেষে আমার এক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় ওর বাসায় এসে উঠি। তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমার যে কি কষ্ট হচ্ছিল...............", মিঠাই আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না; মিথানের এই মিথ্যা কথা গুলি তার গায়ে সুঁচের মত বিঁধতে থাকে , সে সেখান থেকে হাঁটা লাগায় ।

মিথান যখন বুঝতে পারে সে তার পিছনে দৌড়ায়, " এই মিঠাই ! দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছ ?" মিঠাই দাড়ায় না সমানে হাঁটতে থাকে । মিথান মিঠাইয়ের সাথে হাঁটতে হাটতে বলে ," মিঠাই ! আমরা বোটানীক্যাল গার্ডেনে যাব, কত কচি কচি মুরগী খাব। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাব। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখবো। " কিন্তু মিঠাই তার কোন কথায় কর্নপাত না করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

মিথান হঠাৎ দাড়িয়ে পরে বিহ্বল দৃষ্টিতে মিঠাইয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল , তারপর মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ২ বছর আগে জাহাঙ্গীর নগরে শুরু হওয়া দুই কুমার এবং কুমারী শিয়ালের ভালবাসা ঢাকায় এসে শেষ হল। ২ মিঠাইয়ের কাছে সম্পূর্ন অচেনা এই ঢাকা শহরটি। জাহাঙ্গীর নগরেই জন্ম মিঠাইয়ের, সেখানেই তার ছেলেবেলা কেটেছে, কেটেছে যৌবনের কয়েকটি বছর। ওখানে তার বাসায় আম্মু ও তার দুই ভাই থাকে, তাদের কে কিছু না জানিয়েই সে মিথানের হাত ধরে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে ঢাকা শহর দেখবার জন্য ।

কিন্তু মিথান তাকে ধোকা দিয়েছে । মিঠাই আর কোন মুখ নিয়ে ফিরে যাবে তার বাসায় তার মা ভাইয়ের কাছে। তার থেকেও বড় কথা হল কি ভাবে ফিরবে সে, ফিরে যাওয়ার পথ তো সে চেনেনা , কোন পথ দিয়ে ঢাকায় এসেছিল তাও মনে নেই, কারন মনে রাখার প্রয়োজন ছিল না। এই অচেনা, অজানা, ইট, কাঠ, পাথরে ভর্তি শহরে দম বন্ধ হযে আসার যোগার মিঠাইয়ের। দিনের আলোয় এখনকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ নয়, কারন সে তার দলের অন্য সখি শিয়ালদের কাছ থেকে সে শুনেছে মানুষরা শিয়াল দেখলেই নাকি মারতে আসে।

তাই যথা সম্ভব নিজেকে লোক চক্ষুর আড়ালে রেখে চলেছে মিঠাই। কিন্তু পেট যে বড় বালাই , সেই কখন একটা তাজা মুরগী খেয়েছিল তারপর আর কিছুই খাওয়া হয়নি, মিথানের দেওয়া কষ্টে তার পেট এতটাই ভরে গেছিল যে খাবার কথা আর মনে আসেনি, দুচোখ ভর্তি জল নিয়ে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে অজনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছিল মিঠাই। হঠাৎই তার কানে ভেসে আসল, ৪-৫ জন উত্তেজিত জনতার কন্ঠস্বর। তারপর সে দেখল একটি শিয়াল মুখে দুটো কচি কচি মুরগী নিয়ে ছুঁটে আসছে আর তার পিছনে কয়েকটি বাচ্চা ছেলে ও ১ - ২ জন যুবক ছেলে তারা করেছে। শিয়ালটা ছুট্টে এসে মিঠাইকে বলল,"আমাকে এই মানুষ গুলোর হাত থেকে বাঁচাও ভাই।

আমাকে একা পেয়ে আমার পিছনে ধাওয়া করেছে মারবে বলে, তুমি আমায় বাঁচাও । " মিঠাই এবার খেয়াল করল লোকগুলো তাদের অনেক কাছে চলে এসেছে। কোথ্থেকে জানি মিঠাইয়ের সারা শরীরের রক্ত টকবক করে ফুটতে শুরুকরেছে, তার গায়ের পশম গুলি রাগের বসে খাড়া হয়ে উঠেছে , ক্ষুধার্থ বাঘিনীর মতো সে এক লাফে লোক গুলির সামনে এসে দাড়িয়ে গগন ভেদি এক গর্জন করে উঠল। মিঠাইয়ের সেই ভয়ঙ্কর রনচন্ডী মূর্তী দেখে লোকগুলোর তো পায়খানা-বাথরুম পেয়ে গেল, হাতের অস্ত্র সেখানে ফেলেদিয়েই যে যেখানে পারল, ছুটে পালিয়ে নিজের প্রান বাঁচল। অনেক্ষন ওই রনচন্ডী মূর্তী নিয়ে দাড়িয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হল মিঠাই।

সাহায্য চাইতে আসা শিয়ালটিও থ মেরে দাঁড়িয়েছিল এতক্ষন, ঘোর কাটার পর সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মিঠাইয়ের দিকে, দেখল মিঠাই সমানে কেঁদেচলেছে। এই একটু আগে যে বাঘের মতো গর্জন করে মানুষের পিলে চমকে দিল, তার চোখে জল কেন ? সে প্রশ্ন করে - " কি হল বোন তুমি কাঁন্দো কেন ?" মিঠাই কোন জবাব না দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। সে আবারো জিড্গাসা করে ," দেখ তুমি যদি আমারে না কও তুমি কাঁদতাস কেন, তাহলে আমি কিন্তু ভিষন গোঁসা করুম"। - "সে অনেক ঘটনা দিদি, বলতে শুরু করলে অনেক টাইম লাগবো" - "লাগুগ সময় আমি শুনুম। কিন্তু আগে তুই কান্না থামাতো"।

মিঠাই তার কান্না থামিয়ে জল ভর্তি চোখদুটোকে মুছে নেয়, আবার সেই সাহায্য চাইতে আসা শিয়ালটি তাকে বলে, " শুন বন এই কাছেই আমার বাসা, সেখানে আমি আর আমার মেয়ে থাকি; তুইও চল আমার সাথে, ওখানে গিয়ে নয় সব কথা শোনা যাবে। মিঠাই প্রথমে আপত্তি করেছিল কিন্তু সাহায্য চাইতে আসা শিয়ালটির জেদের কাছে তার আপত্তি হার মানল। মিঠাই সেই সাহায্য চাইতে আসা শিয়ালটির বাসার দিকে পা বাড়াল........... ( বিঃদ্রঃ :- গল্পটি এখন শেষ হয়নি, গল্পের তৃতীয় এবং অন্তিমভাগ শীঘ্রই আপনাদের কাছে আনবো, তার আগে এই গল্পটি সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।