আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আ স্ট্রেনজার ইন মাই ওন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১ মেজর জেনারেল (অবঃ) খাদিম হুসেইন রাজা - ১ম পর্ব

১. ঘনিয়ে আসা ঝড় ১৯৬৭ সালের শেষ দিকের কথা। জেনারেল হেডকোয়ার্টারস আমাকে ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া আর্মি ওয়্যার কোর্সে যোগ দেয়ার বিশেষ নির্দেশ পাঠাল। পূর্ববর্তী বেশ কিছু বছর ধরে এই কোর্সটি কোয়েটায় অবস্থিত আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এই বিশেষ প্রশিক্ষণটির উদ্দেশ্য ছিল উচ্চতর পর্যায়ের যুদ্ধ পরিচালনা এবং সেই সময়ে অনুষঙ্গিক দায়িত্ব পালনের কলাকৌশলের সাথে পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনী থেকেও একজন করে প্রতিনিধি এই প্রশিক্ষণে যোগ দিত।

প্রথম ক’বছরেই মধ্যেই কোর্সটি কুখ্যাত হয়ে ওঠে। মূলত যেসব অফিসারকে যথাযথ কাজে নিযুক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠতো না, তাদেরকেই এই কোর্সে অন্তর্ভূক্ত করা হত। ফলে, অচিরেই কোর্সটির ব্যাঙ্গাত্মক নাম হল অবসরে যাবার প্রশিক্ষণ। গুটিতক দু একজন যাদেরকে সম্মান দেখানো হয়েছে তারা ছাড়া এই কোর্স সমাপ্তকারী কেউই দায়িত্বের উর্চ্চ পর্যায়ে পদোন্নতি পায়নি। এই পরিস্থিতিতে কোর্সটির সুনাম ফেরাতে চিফ অব জেনারেল স্টাফ স্বয়ং উদ্যোগী হন।

তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালের আর্মি ওয়্যার কোর্সের জন্য অফিসার বাছাই করেন। এবং কোর্সটি শেষ করার পর আমাদের অর্ধেককেই জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। বলতে দ্বিধা নেই কোর্সটি করার জন্য নির্বাচিত হয়ে হতাশ হলেও পরবর্তীতে এটিই আমার জন্য একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। ১৯৬৬ এর শুরুতে মুলতানে হেড কোয়ার্টারস ৪ কোর গঠিত হয়। নতুন এই কোরের কমান্ডার নিযুক্ত হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম. আত্তিকুর রাহমান।

তিনি আমাকে তার চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেন। বেশ কয়েক বছর আগেই এইচকিউ, ১ কোর নামে নতুন কোরের সমপর্যায়ের আরেকটি কোর গঠিত হয়েছিল। আর তাই পুরোনো কোরকে টেক্কা দিয়ে নতুন সাজে নবগঠিত এই কোর পরিচালনা করাটা আমাদের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। যা হোক আমাদের সব শক্তি উজোড় করে দিয়ে আমরা কাজ শুরু করলাম। খুব দ্রুতই আমরা নিজেদেরকে একটা কার্যকরি টিমে পরিণত করতে সক্ষম হলাম।

যার ফলে বছর শেষ হবার আগেই আমাদের কোর মাঠে অনুশীলন শুরু করল। নিজস্ব কমান্ডের অধীনে কোরের অধিনস্থ সবগুলো ইউনিট আস্তে আস্তে নিঁখুত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে লাগল। সম পর্যায়ের দক্ষতা বজায় রেখে আমরা যুদ্ধের বিভিন্ন কলাকৌশলের সফল মহড়া চালালাম। যা আমাদেরকে গর্বিত করে তুলল। ১৯৬৭ সালের কয়েস মাস জুড়ে কোর কমান্ডার পুঙ্খাঁনুপুঙ্খভাবে আমাদের পরীক্ষা নিলেন।

পরিশেষে তিনি ঘোষণা দিলেন যে আমাদের কোর সুশৃঙ্খলভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি তৈরি। কমান্ডারের চিফ অব স্টাফ হিসেবে সদ্যগঠিত কোরের এমন ত্বরিত সফলতার যাবতীয় কৃতিত্ব আমাকেই দেয়া হল। এই ঘটনা দ্বারা হয়ত পাঠকরা বুঝতে পারবেন কেন ওয়্যার কোর্সটির জন্য নির্বাচিত হয়েও আমি খুশি ছিলাম না। ওই কোর্সটি যা আমাকে শেখাতে পারতো তার সবকিছুই আমি এইচ কিউ ৪ কোর গঠনের সময় হাতে কলমে শিখেছিলাম বলে কোর্সটির করার প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিল না। তারপরও, যেহেতু জেনারেল হেড কোয়ার্টারের অনেক দূর্বোধ্য সিদ্ধান্তের পেছনেই চমক জাগানো কিছু থাকে, তাই ১৯৬৮ সালের শুরুতে কোর্সে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি আমার ব্যাগ গুছিয়ে কোয়েটার দিকে রওনা হলাম।

(চলবে) ১/০৮/২০১২ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।