আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকতার বাবুদের কাছে হুমায়ূন আহমেদের চেয়ে ইলিশই বড় !

চলতি রমজান মাসে ইলিশসহ সবধরনের (চিংড়ী বাদে) মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই খবরে কলকাতার রীতিমত হাহাকার অবস্থা। গত দুই দিন ধরে কলকাতার সব পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হচ্ছে সে খবর। অথচ কয়েকদিন আগেইবাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার খবরটি প্রকাশ করতে তারা হীন মন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। খবরটি প্রকাশ করলেও তা পত্রিকার তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি কলকতার বাবুরা।

যদিও তারা সবসময়ই জোরেসোরেই বাঙ্গালী দাবি করে থাকে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরে কলকাতার পত্রিকারগুলোর ছোট মানসিকতার বিষয়টি বাংলাদেশি এমনকি ভারতীয় হুমায়ূন প্রেমীদের মনকে ব্যথীত করে। যাহোক এ ঘটনা ঘটার পক্ষকাল পার না হতেই ইলিশের বিষয়টি যেভাবে তাদের পত্রিকায় কাভারেজ পাচ্ছে তাতে বাবুদের স্বার্থপরতাই বহি:প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের মাছের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশের চাহিদা প্রচুর। ওই রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও পূজা-পার্বণে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে জানা গেছে।

তবে জামাইষষ্টি অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি পদ্মার ইলিশের চাহিদা বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গ (কলকাতা) সহ ভারতের সর্বত্রই একই অবস্থা। প্রায় পদ্মার ইলিশের কদর বেশি। এটা দোষের কিছু নয়। এতে ভারতও তাদের চাহিদা মিটছে বাংলাদেশও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।

হচ্ছে অজস্র বাংলাদেশির কর্মসংস্থান। তবে এদেশ থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাশ্ববর্তীদেশে রফতানি হয়ে যাওয়ায় এদেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রুপালী ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আমিষ থেকে। কারণ মাছ রফতানি হয়ে যাওয়ার মাছের দাম হয়ে উঠছে আকাশচুম্বি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কোন কোন ক্ষেত্রে মাছ চলে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যাই হোক মাছ রফতানি বন্ধ করেছে সরকার কিন্তু তার পরও অবৈধ পথে ইলিশ মাছ যাবে।

এক্ষেত্রে আমাদের দেশের অনেক ব্যবসায়ী দেশপ্রেমের পরিচয় না দিয়ে এ কাজ করবেন। অথচ কলকতার ওই হীন মানসিকতার বাবুদের চিত্র পুরোই আমাদের থেকে ভিন্ন। ইলিশ মাছ রফতানি বিষয়ে প্রাবন্ধিক রইচউদ্দিন আরিফ এক লেখায় দেখেছিলাম। আশির দশকের আগে ভারতীয় কাপড়ে বাংলাদেশ ছেঁয়ে গিয়েছিল। ওইসময় সাধারণভাবে ভারতের বাজারে তখন বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ও কাঁচা পাট ছাড়া আর কিছু রফতানি হতো না।

এরপর আশির দশকের প্রথম দিকে একবার কিছুদিনের জন্য ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে ভারতের, বিশেষকরে পশ্চিমবাংলার (কলকাতার) বাবুরা যখন পদ্মার ইলিশে রসনা তৃপ্ত করার জন্য পাগলপ্রায়, তখন ভারতে ইলিশ রফতানি নিশ্চিত করার জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারই নয়, দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারও ঢাকার সরকারের সাথে দেনদরবার শুরু করে। আর সেসময়ই ঘটে এক চমকপ্রদ ঘটনা। বাংলাদেশ যখন শর্ত আরোপ করে যে, ভারতকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানির সঙ্গে সমপরিমাণ মূল্যের জামদানি শাড়িও আমদানি করতে হবে, তখন আমাদের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রটি বেঁকে বসে। এমনকি ওই সময় বাংলাদেশের শর্ত মেনে ভারত সরকার যাতে বাংলাদেশ থেকে জামদানি শাড়ি আমদানি না করে তার জন্য ভারতের, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের বস্ত্রকলগুলোর মালিকেরা কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করেন। তারা একথাও ঘোষণা দেন যে, ঢাকা এমন শর্ত আরোপ করলে প্রয়োজনে তারা ইলিশ মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেবেন, তবুও নিজ দেশের কাপড় কলগুলোর স্বার্থে তারা বাংলাদেশের কাপড় আমদানি করবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো, এর জন্য কি ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে দোষ দেওয়া যায়? না মোটেও না। বরং আমি বলবো, এটা হলো তাদের গভীর দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। আজ বৃহস্পতিবার “পদ্মার ইলিশ হয়তো মিলবেই না এবার” শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলা হয়, মরসুমের সব চেয়ে বেশি বাংলাদেশি ইলিশ বুধবার ঢুকেছে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। কিন্তু এটাই মরসুমের শেষ চালান কি না, সেই প্রশ্নও উঠে গেল এদিনই। কারণ মঙ্গলবারই নির্দেশ জারি করে চিংড়ি ছাড়া সব ধরনের মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।

নির্দেশে যদিও বলা হয়েছে, রমজান মাসে দেশীয় বাজারে বাড়তি চাহিদা মেটাতে এই নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু তার পরেও রফতানি শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান এ দেশের মাছ ব্যবসায়ীরা। আনন্দবাজার লিখেছে, রমজান মাস চলবে আরও দিন কুড়ি। যেটুকু ইলিশ বাংলাদেশের মোহানাগুলিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে, তার পরে আর তা মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ভারতের ইলিশ আমদানিকারীরা। তা ছাড়া, কয়েক বছর আগেও এক বার ইলিশ রফতানিতে ‘সাময়িক’ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা উঠতে বছর ঘুরে গিয়েছিল।

তাই এই মরসুমে হয়তো এ পারের বাঙালির পাতে আর বাংলাদেশি ইলিশ পড়ছে না, এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কলকাতার অন্যান্য দৈনিকও এই নিয়ে প্রতিবেদন ফলাও করে ছাপা হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।