আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ (একটি গবেষণামূলক পোস্ট!)

তুমি হয়ত সবকিছুতে ভালো নও, কিন্তু তোমার উচিৎ সবকিছুতেই তোমার নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়া! মার্কেটিং! শব্দটা শুনলেই অনেকের বুকে রক্ত ছলকে উঠে, আবার অনেকের মনে বিরক্তির উদ্রেগ হয়...আমি অবশ্য প্রথম দলের! বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশী। এই বিশাল বাজারকে ধরার জন্য দেশি বিদেশি নানা কোম্পানি সবধরনের প্রোডাক্ট নিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পন্যের প্রসারের জন্য মার্কেটিং একটি অবশ্যপালনীয় বিষয়। FMCG (Fast Moving Consumer Goods) প্রোডাক্টের জন্য যেমন সঠিক মার্কেটিং প্রয়োজন, তেমন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্টের (ঔষধ) জন্যও সঠিক মার্কেটিং প্রয়োজন। ঠিকভাবে যদি সেটা করা যায় তাহলে তুলনামূলক inferior প্রোডাক্টকেও বাজারে সফল করে তোলা সম্ভব! FMCG প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে তেমন কোন Restriction নেই (আমার জানামতে), তবে ঔষধের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের দেশে বেশ কড়া নিয়মকানুন রয়েছে।

আপনারা কখনও টিভিতে অথবা সংবাদপত্রে অথবা রাস্তার বিলবোর্ডে কোন ঔষধের অ্যাড দেখবেন না, কারন আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে ঔষধের অ্যাড দেয়া নিষেধ (কিছু exception অবশ্য আছে, যেমন জন্মবিরতিকরন পিল)। আমাদের পাশের দেশ ভারতে কিছু সিলেকটিভ OTC (Over the Counter) ঔষধের অ্যাড দেয়া হয়, যেমন Crocin (Paracetamol)। কিন্তু আমাদের দেশে সেটাও নিষেধ! বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেট প্রায় ৯০০০ কোটি টাকার, এবং এর প্রবৃদ্ধিও অনেক বেশী। এরকম একটা আকর্ষণীও বাজারকে দখল করার জন্য ঔষধ কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে যাচ্ছে আর নতুন নতুন উপায়ে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। যেহেতু ঔষধ কোম্পানিগুলো প্রচলিত FMCG প্রোডাক্টের মত Mass Media কে ব্যাবহার করতে পারে না, তাই তাদের মার্কেটিং Strategy কিছুটা ভিন্ন।

বাংলাদেশের প্রায় সব ঔষধ কোম্পানিই DTC (Direct to Consumer) পদ্ধতি ব্যাবহার করে। অর্থাৎ এইখানে Selling টা হয় Person to Person। খুব সহজ করে বলতে গেলে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির একটা Strategic Marketing Department বা Product Management Department থাকে, যাদের কাজ হচ্ছে নতুন নতুন প্রোডাক্ট Launch করা আর সেগুলোর মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করা। কোম্পানির Existing প্রোডাক্টগুলোর সেলস মনিটর করা এবং মার্কেটিং প্ল্যানের Implementation নিশ্চিত করাও এ ডিপার্টমেন্টের কাজ। এছাড়া কোম্পানির একটা শক্ত সেলস টীম থাকতে হয় যেটা শুরু হয় Medical Representative (MR)/ Medical Information Officer (MIO)/ Medical Promotion Officer (MPO) দিয়ে এবং একেবারে শেষ মাথায় সেলস জিএম বা ডিরেক্টরও থাকতে পারে।

এই রুট লেভেল এর সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা ডাক্তারদের কাছে তাঁর নিজ নিজ কোম্পানির প্রোডাক্টের প্রমোশন করেন, কারন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হচ্ছে একটা কোম্পানির সফলতার সবচেয়ে বড় উপায়। এক্ষেত্রে প্রমোশনাল টুলস হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করেন ফ্রি স্যাম্পল, লিটারেচার, প্যাড, জার্নাল পেপার, বিভিন্ন গিফট আইটেম ইত্যাদি। অনেকের ধারণা যে এসব দেয়া হয়তো আইন বহির্ভূত, কিন্তু আসলে এটা একটা কমন প্র্যাকটিস যেটা পৃথিবীর সব দেশেই ব্যবহার করা হয়। (তবে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট অথবা অন্যান্য দামী গিফট দেয়া এবং নেয়া কিন্তু অপরাধ!) এর বাইরেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আরও কিছু মার্কেটিং টুলস আছে, যেমন CRM (Customer Relationship Management), KOL (Key Opinion Leader) Management ইত্যাদি। কিছু কিছু কোম্পানি কেমিস্ট শপের মালিকদের নানান সুবিধা প্রদান করে কিছু Pushing Sell আদায় করে নেয়।

কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও উঠেছে যে, তাঁরা নির্দিষ্ট ডাক্তারকে কিছু নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের নির্দিষ্ট পরিমান প্রেসক্রিপশন এর জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন, এটা অবশ্যই একটা unethical practice. যেহেতু সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা মেডিক্যাল লাইন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ থাকেন, তাই তাঁদেরকে Proper ট্রেনিং দেয়া হয়। প্রত্যেকটা কোম্পানিরই একটা ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট জাতীয় কিছু আছে, যেটি এই সব সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভদের ঔষধ এবং এর বিপনন সম্পর্কে হাতেকলমে ট্রেনিং প্রদান করেন। আমরা সবাই লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশে বর্তমানে ঔষধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ অনেক বেড়ে গেছে, এর কারন হচ্ছে যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তাররা সামনে কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ না থাকলে ওই কোম্পানির ঔষধ প্রেস্ক্রাইব করেন না! তাই ডাক্তারদের পাহারা দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে কোম্পানিগুলো তাদের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বাড়াচ্ছে। এর ফলে হয়তো কিছু প্রেসক্রিপশন বাড়ছে, কিন্তু এতে Unethical প্র্যাকটিস ও বেড়ে যাচ্ছে। এমন অনেক ঔষধ হয়তো প্রেস্ক্রাইব করা হচ্ছে যেটার হয়তো প্রয়োজনই নেই! বাংলাদেশ হচ্ছে এমন একটা দেশ যেই দেশে ওষুধের সঠিক ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই বেশী হয়।

সাধারণ জ্বরেও আমরা বিশেষজ্ঞ খুঁজি, আবার অনেক কড়া Antibiotic ঔষধও নিজে নিজেই কিনে খেয়ে নেই। এর ফলে কিন্তু আমরা না বুঝেই নিজেরা নিজেদের বিরাট ক্ষতি করে ফেলছি, এছাড়া আমাদের দেশে ৬ মাস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করলে বা ৬ মাস ফার্মেসিতে বসলেই নিজেকে ডাক্তার বলে জাহির করারও একটা আজব প্রবনতা আছে! এসবই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, অন্তত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেও আমাদের ঔষধ সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়ানো উচিৎ এবং ঔষধ কোম্পানি এবং ডাক্তারদেরও আরও একটু সচেতন হওয়া উচিৎ মার্কেটিং বা প্রেস্ক্রাইব করার সময়। **তাড়াহুড়া করে লেখা, খুব গুছিয়ে লিখতে পারিনি, আপনাদের মতামত পেলে ভালো লাগবে!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।