আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে গল্পের নাম হয় না

হাবিব ভাই টেবিলের উপর সিগারেটটা রাখতে রাখতে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, -মিয়া সিগারেট খাইস কখনো? -জ্বী না ভাই । -গুড,ভালো, আমিও খাই নাই । দেখি, কলমটা দেও দেখি । আমি কলমটা এগিয়ে দিলাম । তিনি সাদা সিগারেটের উপর লম্বালম্বি ভাবে একটা নাম লিখলেন ।

ম্যাচের তিনটা কাঠি নষ্ট করে শেষে একটা দিরে ধরিয়ে এক টান দিয়ে খক খক করে কাশতে শুরু করলেন । -শফিক, সিগারেটের বডিতে কি লিখসি দেখসো? আমি বললাম -"KAMRUNNAHAR" মনে হইসে । -হুম ঠিক । এইটা হইলো ওই কুত্তির নাম । আজকে দুপুরে বিয়ে হইসে আর আমারে কিসু বলে নাই ।

গতরাতে ফোন দিয়া খালি নাকি কান্না । ভাব ধরসিলো, বুঝলা ছোট ভাই ,ভাব । আমি যাতে মনে করি তার অমতে বিয়া হইসে । আরে এইটাও কি সম্ভব, এইটা তো সিনেমা না, তাই না? তুমিই কও আমার জীবনটা কি সিনেমা? এইটুক বলে আবার সিগারেট ফুঁকতে শুরু করলেন । আমি বললাম, ভাই শান্ত হন , কি হইসে ডিটেল বলেন? পরে ব্যাবস্থা নেই ।

ট্রেন সুরঙ্গের এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে চলে যায়, আমার কথাও হাবিব ভাই এর এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে গেল । উনি আমাকে বললেন, -আচ্ছা শফিক, সিগারেট মানুষ ক্যান খায়? -জানি না ভাই, আমি তো খাই নাই । তবে মনে হয় দুঃখ কষ্ট ভুলে যাবার জন্যে । -হুম, কিন্তু এই সিগারেটে তো কাজ হইতেসে না । কি বলবো কিছুই না বুঝে আমতা আমতা করছিলাম ।

কিছুক্ষন পর দেখি সিগারেটটা হাবিব ভাই এর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে নিচে পরে গেল । উনার হাত কাঁপছে । একটা সিগারেট ধরে রাখার মত শক্তিও তার কাছে নেই । হঠাত্‍ ঠাস করে বিছানায় মাথা ছেড়ে দিলেন । কিছুক্ষন এইভাবে থুম মেরে থাকার পর বললেন -শফিক, ভাই, দেখতো নামটা কতটুক পুড়ছে? আমি দেখলাম এখনো KAMR অংশটুকু বাকি আছে ।

হাবিব ভাই কেমন অদ্ভুত একটা কন্ঠে বললেন -আমি সবটা পুড়ায়ে ফেলতে চাই শফিক, সবটা, সিগারেটটা দেও । -ভাই বাদ দেন, কি শুরু করছেন এইগুলা, লাভ কি? -শফিক সিগারেটটা দেও । উনি আমার দেওয়ার অপেক্ষা না করেই হাত থেকে টান দিয়ে সিগারেটটা নিয়ে উঠে বসে ফুঁকতে শুরু করলেন । একদম শেষ দিকে এসে যখন মাত্র K অক্ষরটাতে আগুন ধরেছে তখন নিস্তেজ স্বরে হাবিব ভাই বললেন -নামটা অনেক বড়, তাই না শফিক? আমি মনে মনে বললাম, আপনে মিয়া জীবনে কখনো সিগারেট খান নাই, আপনার কাছে সিগারেটটাই বড়, নামটা না । হঠাত্‍ কি হলো, শেষ টান দেবার জন্য যেই ঠোঁটের কাছে নিয়েছেন তখনি মাথা ঘুরে মেঝেতে পরে গেলেন ।

তবুও সিগারেটটা ছাড়লেন না । আমি তাকে ধরে উঠাতে যাব তখনি হাবিব ভাই হাটু গেড়ে বসে অড়হড় ঘরঘর আওয়াজ তুলে বমি করতে শুরু করলেন । বমির গন্ধে ঘর ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা । সামান্য সিগারেটে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে,তা আমার কল্পনাতেও ছিলো না। সকলবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি হাবিব ভাই রুমে নেই ।

হাবিব ভাই এর ফোনে ফোন দেই, রিং হয়, রিসিভ হয়,কিন্তু কেউ কথা বলে না, কি সমস্যা! কিছুক্ষন পর আমার পড়ার টেবিলে দেখি একটা চিঠি, যার সারকথা হচ্ছে হাবিব ভাই এর কথা যেন কাওকে কিছু না বলি, উনাকে খোঁজার চেষ্টা করার দরকার নেই এবং তার সকল জিনিসপত্র নিয়ে আমি যা খুশি করতে পারি । যখন খেয়াল হল এই "জিনিসপত্র"এর মাঝে একটা ডেল কম্পানির ল্যাপটপ আর একটা রেন্জার ম্যাক্সের বাইসাইকেল আছে তখন নিজেকে হঠাত্‍ কোন এক বাংলা চ্যানেলের সাপ্তাহিক নাটকের একটি চরিত্র হিসেবে মনে হতে লাগল । আমি তো আর মহাপুরুষ না । এই ঘটনার তিন সাড়ে তিন বছর পরের এক সকালবেলা । আমি একটা ব্যাংকে জব করি ।

কারলোন নিতে যে ভদ্রলোক আমার সামনের চেয়ারে বসে আছেন তাকে দেখে আমি চমকে উঠলাম । হাবিব ভাই! আমি হাবিব ভাই বলে জড়িয়ে ধরতে যাব তখন তিনি পিছিয়ে গিয়ে বলে উঠলেন, এক্সকিউজ মি, আমি কাওসার আকন্দ, অপনি ভুল করছেন । আমি হতভম্ব হয়ে মৃদু স্বরে বললাম -ওহ্,আই এম সো সরি, আমি দুঃখিত । " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।