আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূনের কোনো বইয়ে ‘মরদেহ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশী শব্দ ‘লাশ’..।

সেই হুমায়ূন ছিলেন বিজয়ী নায়ক। কিন্তু আমরা আমাদের নায়ককে সামনে নিয়েও ভারতীয় বাংলা ভাষার কাছে পরাজিত হলাম। হুমায়ূনের কোনো বইয়ে ‘মরদেহ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশী শব্দ ‘লাশ’। কিন্তু ভারতীয় বাংলা শব্দ মরদেহের কাছে বাংলাদেশী বাংলা শব্দ লাশ হেরে গেল আমাদের সচেতনাহীন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন চ্যানেলের বদৌলতে।

তারা ৭ দিন ধরে হুমায়ূনের লাশকে মরদেহ বানিয়ে কবরস্থ করলো নুহাশ পল্লীতে। লাশ এবং মরদেহ দুটোই নিষ্পাপ শব্দ। বাংলা অভিধানে দুটোর অর্থই এক। দুটোই বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত। তারপরও পার্থক্য আছে।

এই পার্থক্য কোনো সাম্প্রদায়িক পার্থক্য নয়। হিন্দু-মুসলমানের কোনো সমস্যাও নয়। এই পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে যে পার্থক্য, বীরভূম এবং বরিশালের মধ্যে যে পার্থক্য, দুলাভাই এবং জামাইবাবুর মধ্যে যে পার্থক্য, মাসি এবং খালার মধ্যে যে পার্থক্য, উত্পল দত্ত এবং খলিলের মধ্যে যে পার্থক্য, নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে হর্ষ দত্তের যে পার্থক্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার যে পার্থক্য, অজয় নদীর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার যে পার্থক্য—এ হলো সেই পার্থক্য। এই পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা হুমায়ূনের ছিল।

তাই তিনি বড় হতে পেরেছিলেন। অন্যদের এই বোধশক্তি নেই। তাই তারা ‘বনসাই’ হয়েই জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন ভারত ও ভারতীয় বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলে গেছেন, ‘... ভারতের প্রতি আমার কোনো মমতা নেই। কারণ ভারত আমাদের দীর্ঘ সময় শোষণ করেছে। এখনও করছে।

আমাদের সাহিত্যকেও ঠিকমত মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়নি। কাজেই এদের প্রতি কোনো মোহ থাকার কারণ নেই। ... তবে তাদের দিন শেষ। বর্তমান ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের। বাংলা সাহিত্যে ভবিষ্যতে কোনো মহত্ সৃষ্টি এদেশের লেখকদের দ্বারাই কেবল সম্ভব এবং তারা সেই দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

বাংলা ভাষাকে এদেশের লেখকরাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মহত্ সাহিত্য সৃষ্টি হওয়ার মতো উপকরণ এদেশে আছে। ওয়ার অ্যান্ড পিস লেখা হয়েছে নেপোলিয়ন যখন রাশিয়া আক্রমণ করলেন তারপর। এ দেশের মানুষ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। মুখের ভাষা ফিরিয়ে এনেছে।

স্বৈরাচার হটিয়েছে। কাজেই মহত্ সাহিত্য সৃষ্টি হবে এদেশে, না কি কলকাতায়? যেখানে হিন্দু আগ্রাসনের কাছে সমস্ত মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেয়া হয়েছে?’ [ঘরে বাইরে হুমায়ূন আহমেদ : হাজার প্রশ্ন, মাহফুজ আহমদ, পৃষ্ঠা-৬৬]। সূত্র: দৈনিক আমার দেশ, ২৯ জুলাই, ২০১২। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.