আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থমকে আছে হুমায়ূনের ‘স্বপ্ন’

চিকিত্সার জন্য  আমেরিকা যাওয়ার পর ২০১১ সালেই ‘নো ফ্রি লাঞ্চ’ শিরোণামের একটি লেখায় ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছিলেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ওই লেখায় হুমায়ূন বলেন, সর্বাধুনিক, বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার  হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র কি বাংলাদেশে হওয়া সম্ভব না? অতি বিত্তবান মানুষের অভাব তো বাংলাদেশে নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেন স্লোয়ান বা কেটারিং হবেন না?
‘আমি কেন জানি আমেরিকায় আসার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, হতদরিদ্র বাংলাদেশ হবে এশিয়ায় ক্যান্সার  চিকিৎসার পীঠস্থান। ’
লেখাটি ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ বইয়ে সংকলিত হয়।
একই বইয়ের ‘কচ্ছপকাহিনী’ নামে অন্য একটি লেখায় তিনি বলেন, বৃদ্ধ কচ্ছপ এইবার ‘ক্যান্সার  রিসার্চ সেন্টার’ কামড়ে ধরেছে।

কচ্ছপের কামড় বলে কথা। বেঁচে থাকলে কচ্ছপ যে ক্যান্সার  রিসার্চ সেন্টার করে যাবে, তা নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায়।
‘আমার পরিকল্পনা হলো, তিনজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে প্রথম ক্যান্সার  রিসার্চ সেন্টারের জন্য অর্থ ভিক্ষা নেওয়া হবে। এদের ছবি তুলবেন নাসির আলী মামুন। স্কেচ করবেন ও ইন্টারভিউ নেবেন মাসুক হেলাল।

তারপর আমরা যাব বাংলাদেশের তিন শীর্ষ ধনী মানুষের কাছে। ভিক্ষুকেরা দান করেছে শুনে তাঁরা লজ্জায় পড়ে কী করেন, আমার দেখার ইচ্ছা। ’
২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সারের কাছে হার মেনে চলে যাওয়ার পর তার সেই স্বপ্ন অনেকটাই যেন ঢাকা পড়ে গেছে।
এ বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ বলেন, “তার পর আর কে করবে? ওর মৃত্যুর পর এই কাজ আর আগায়নি। ”
“ওর স্বপ্ন ছিলো, এদেশের কেউ আর ক্যান্সারের চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাবে না।

আমেরিকা থেকে ফিরে এই কাজ শুরু করার কথা ছিলো। কিন্তু কিছুই আর করা হয়নি। পারিবারিকভাবেও আর কোন উদ্যোগের কথা আমি জানি না। পরে যদি কেউ করে....।
হুমায়ূনের শেষ জীবনের ঘনিষ্ঠজন মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটাতো অনেক বড় কাজ।

ওনার মৃত্যুর পর বিষয়টি থমকে গেছে। নতুন আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ”
পরের বছর প্রকাশিত ‘সুপার হিরো’ শিরোণামের একটি লেখায় হুমায়ূন লিখেছিলেন, ক্যান্সার  হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্রের জন্যে আমরা অর্থ সংগ্রহে নামতে যাচ্ছি। আমাদের গুরু অবশ্যই টেরি ফক্স। অর্থ সংগ্রহে সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে সুপার হিরোতে তিনি লিখেছিলেন, ‘অভিনেতা রহমত (নয় নম্বর বিপদ সংকেত) আমাকে জানিয়েছেন রাজশাহীতে তাঁর পাঁচ বিঘা জমি দিতে চান।

যদি ক্যান্সার  ইনস্টিটিউট ঢাকায় হয় তাহলে তিনি তাঁর সঞ্চিত পাঁচ লাখ টাকা দিতে চান। এর বেশি তাঁর আর নেই। থাকলে তাও দিতেন।
‘নিউইয়র্কের বাঙালি ডাক্তার নাহরিন মামুন জানিয়েছেন ঢাকায় তাঁর জমি আছে। পুরোটাই তিনি ক্যান্সার  ইনস্টিটিউটকে দিয়ে দিতে চান।

আমি যখন বলব তখন।
‘জেনেভা থেকে আনজু ফেরদৌসী জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সঞ্চয় ১০ হাজার ডলার শুরুতে দিতে চান। এক্ষুনি দিতে চান। পরে যদি কিছু খরচ হয়ে যায়। ’
আমেরিকার প্রধান প্রধান হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি ডাক্তারদের ‘রাজত্বের’ কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, পৃথিবীর সেরা অনকোলজিস্টের অনেকেই বাংলাদেশি।

একজন অনকোলজিস্ট রথীন্দ্রনাথ বসু ওভারিয়ান ক্যানসারে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। এঁরা সবাই বাংলাদেশের ক্যান্সার  ইনস্টিটিউটের জন্যে যা করণীয় তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
‘অনলাইনে দেখলাম, ২৫০ জন নিজেদের ভিক্ষুক ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা অর্থ সংগ্রহের জন্যে ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে বের হবেন। আর হিমুর দল তো হলুদ পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়েই আছে। তারা নাচুনি বুড়ি।

ঢোলের বাদ্যের অপেক্ষা। ’
‘কনফুসিয়াসের বিখ্যাত বাণী সবাইকে মনে করিয়ে দেই। ‘আ জার্নি অব আ থাউজ্যান্ড মাইলস বিগিনস উইথ আ সিংগল স্টেপ’। আমরা কিন্তু প্রথম ‘স্টেপ’ নিয়ে নিয়েছি। ’
২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এই লেখাটিই ছিল হুমায়ূন আহমেদের শেষ লেখা, যেখানে তিনি ক্যান্সার  হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেছেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।