আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে কত কিছু করতে হয় !! আর একটু হলে তো মাইরই খেতে হত !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! হাত জোড় করে নিশির সামনে তৃতীয় বার যখন দাড়ালাম ,নিশির চেহারাটা দেখে এমন মনে হল যে পারলে ও আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিশি বলল -তুমি আবার আমার সামনে এসেছ ? -বাবু আমি কার সামনে যাবো বল ? খুব নিরীহ কন্ঠে বললাম । -তুমি ছাড়া আর আমার কে বল ? অন্য সময় হলে হযতো এই কথাতে কাজ হত কিন্তু আজ হল না । নিশির মুখের কাঠিন্য বিন্দু মাত্র কমলো না । -শোন, তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগছে না ।

-আচ্ছা ঠিক আছে আমার কথা শুনতে হবে না । আমি আর একটা কথাও বলব না । তোমার পাশে একটু বসে থাকি ? -না । নিশি বেশ জোরেই চিত্‍কার করে উঠল । এতো জোরে যে আশেপাশের বেশ কয়েকজন ফিরে তাকালো ।

কেউ কেউ আবার দাঁত বের করে হাসল । আমার করুন অবস্থা দেখে যেন খুব মজা পাচ্ছে । আমার জায়গায় পড়তে তাহলে বুঝতে । নিশি বলল -তুমি আমার পাশে বসবে না । তোমার গায়ের গন্ধে আমার বমি চলে আসছে ।

তুমি দুর হও । আমি নিজের শরীরের কাছে নাকটা এনে গন্ধ শুকার চেষ্টা করলাম । সকালবেলা পানির অভাবে গোছল করে বের হতে পারিনি । সত্যি কি গন্ধ বের হচ্ছে ? দুতিনবার শুকে দেখলাম । কই না তো ।

বলল -কই বাবু, এমন কোন গন্ধতো বের হচ্ছে না যে বমি চলে আসবে । আর সেদিন যে বডি স্প্রেটা কিনে দিলে না সেটাইতো দিয়ে এসেছি । শুকে দেখো ! এই বলে আমি নিশির দিকে এগিয়ে গেলাম । নিশি আবার চিত্‍কার করে উঠল । -তুমি আমার সাথে ঢং করছো ? -না বাবু ঢং কেন করবো ? তুমি বললে যে .... -চুপ ! একদম চুপ ।

তুমি আমার দুচোক্ষের সামনে থেকে দুর হবা । এখনই দুর হবা । আমি কোন কথা শুনতে চাই না । নিশির চেহারা দেখে আসলেই মনে হল ও খুব রেখে গেছে । এখন ওর সামনে থেকে চলে যাওয়াই ভাল ।

কিন্তু এখন যদি নিশির সামনে থেকে চলে যাই হয়তো ওর রাগ আর ভাঙ্গাতেই পারবো না । আসলে নিশি আমার উপর খুব একটা বেশি রাগ করে না । অন্যান্য বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডরা তাদের কে যেমন করে জ্বালায় কথায় কথায় উঠবস করায় নিশি সেই তুলনায় অনেক ভাল । কিন্তু নিশি মিথ্যা কথা বলাটা একদম পছন্দ করে না । আর আমি ঠিক এই অপরাধ করেছি ।

ঘটনা এমন কিছু না । গতকাল সকালবেলা নিশি ফোন করে বলল -বিকেলবেলা আমাকে একটু সময় দিতে হবে । আমি বললাম -না মানে ....। -কি মানে ? সপ্তাহে ছুটির দিন একটা । তাও তোমার সময় হবে না আমার জন্য ? -না বাবু ঐসময়ে একটা জরুরী কাজ আছে ! -কি জরুরী কাজ ? এখন নিশিকে কিভাবে বলি যে নোভার সাথে ডেট ফিক্স করা আছে ।

এই কথাতো আর বলা যায় না । আমি বললাম -বাবু আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে । ওনাকে দেখতে যেতে হবে । -যেতেই হবে ? -হুম । -আমিও যাই তোমার সাথে ? -কি বল ? আম্মুকেও নিয়ে যেতে হবে যে বাবু ! -ও ! আচ্ছা আর কি করা!! আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ।

একটা মিথ্যা কথা বললে কত গুলো মিথ্যা বলতে হয় । আমি ভেবেছিলাম মিথ্যা বলেই আমি পার পেয়ে যাবো ! কিন্তু হায় ! আমি যদি জানতাম তাহলে .... নোভার ট্রিট ছিল বসুন্ধরায় । বিকেল বেলা গেলাম । নোভার সাথে আড্ডার পর খানা দানা চলে এল । কেবল মাত্র চিকেনের পিচটা মুখে নিয়েছি দেখি নিশি সামনে দাড়িয়ে ।

আমার মনেই ছিল না যে ছুটির দিনে নিশি প্রায়ই বসুন্ধরায় আসে । মনে থাকলে এখানে আসতামই না । তারপর থেকে নিশির মোবাইল বন্ধ । আজ আমার বন্ধু ফোন করে বলল যে নিশি এখানে আছে । তাই দৌড়ে চলে এসেছি ।

আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিশি নিজেই উঠে দাড়াল । -বাবু শোন প্লিজ । তুমি জানো নোভা আমার ফ্রেন্ড । ও আমাকে অনেক আগে থেকেই বলে রেখেছিল । আমার কথা শুনে নিশি ঘুরে দাড়াল ।

-ভাল কথা সময় দিয়ে রেখেছিল । তুমি আমার কাছে মিথ্যা কথা কেন বললা ? তুমি জানো আমি মিথ্যা কি পরিমান ঘৃণা করি । -বাবু আমি বুঝতে পারি নি । প্লিজ এই বারের মত ক্ষমা করে দাও । নিশি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল ।

হাত দিয়ে কি যেন বলতে গেল । তার পর ঘুরে হাটা দিল । আমি আবার পিছু নিলাম । -শোন....... শোন......... প্লিজ শোন । বাবু শোন ।

নিশি আবার ঘুরে দাড়াল । আঙ্গুল তুলে বলল -তোমাকে বলছি না পেছন পেছন আসবে না । ভাল হবে না । নিশি আবার হাটা দিল ঘুরে । যদিও বলল যে পিছনে না আসতে কিন্তু ধা গেলে কি হয় ? -শোন প্লিজ .. আমি নিশির পিছন পিছন দৌড় দিলাম ।

ঠিক তখন কোথা থেকে মস্তান গোছের কয়েকটা ছেলে আমাকে ঘিরে ধরল । আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন আমার কলার চেপে ধরে বলল -দিনে দুপুরে ইভটিজিং করিস । -এই কি করছেন ? আমি কিছু বলার চেষ্টা করলাম আর একজন আমাকে ধাক্কা দিল ডান দিক দিয়ে । কোন মতে তাল সামলে পড়ার হাত থেকে বাঁচলাম । -আমাদের এলাকায় মেয়েদের টিজ করিস ! -দেখুন , আপনারা যা ভাবছেন তেমন .... আমার কথা শেষ করতে পারলাম না ।

ছেলে গুলো আবার আমার দিকে এগিয়ে এল । কি করবো ? ছেলেগুলো দেখে খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না । এরা প্যাদানী দেবার মনভাব নিয়েই এসেছে । আর পাকলিকও সাপোর্ট দিবে ওদের । অনেকেই আমাকে নিশির পিছনে দৌড়াতে দেখেছে ! খানিকটা ইভটিজিংয়ের মতই মনে করবে ! এখন কি করবো ? দৌড় দিবো ? কিন্তু এদের সাথে দৌড়েও তো পারবো না ।

তখন তো আরো বেশি প্যাদানী দিবে । ছেলেগুলো যখন খুব কাছে চলে আমি মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম তখন .... -আপনারা কি করছেন ? কন্ঠটা নিশির । ছেলেগুলো একটু যেন থামল । -আপনাকে ও টিজ করছিল একটা ছেলে বলল । -সেটা আমায় বিষয় ।

এই বলে নিশি ছেলে গুলোর মাঝ থেকে আমাকে হাত ধরে নিয়ে হাটা দিল । একটা ছেলে বলে উঠল -আজ কাল তো ভালর জামানাই নেই ! নিশি বলল -আপনাদের বোঝা উচিত্‍ যে টিজ করছে আর কে করছে না । ছেলে গুলোর কাছ থেকে একটু গিয়ে নিশিকে বললাম -যাক!! অবশেষে আসলে তুমি ! আজতো গেছিলাম ! -আকাম কুকাম করলে তো যাবাই । -আরে কুকাম করলাম কোথায় ? তোমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলাম । এটা কি আকাম বল ? -হয়েছে ।

এবার চুপ থাকো । যাক নিশির রাগটাতো খানিকটা শান্ত হয়েছে । বললাম -ছেলেগুলো এসে কিন্তু একটু ভালই হল । -কি ? তোমার রাগটাতো একটু কমেছে । -ও তাই না ? যাও .... নিশি আরো কিছু বলতে গেল , আমি বলল -প্লিজ শোনা পাখি আর রাগ করে থেকো না ।

আমি আর কোন দিন তোমার কাছে মিথ্যা বলব না । প্লিজ । নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু হাসল । -আর কখনও মিথ্যা বলবা না তো ? -কখনও না বাবু । কোন দিনও না ।

যাক নিশিকে শান্ত করা গেল । আসলেই সিনেমা জীবনে ভিলেন দের ভূমিকা ব্যাপক ! নায়িকাদের সিমপ্যাথি পাওয়া যায় কত সহজে.। সত্যি বলতে গেলে ছেলেগুলোর জন্য নিশির রাগ পড়ে গেল । তা না হল কি করে ভাঙ্গাতাম ওর রাগ কে জানে !! নিশি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকল । ওকে রিক্সায় তুলে দিয়ে যখন ফেরার পথ ধরলাম ।

তখনই বিকেল বেলার ঐ ছেলেগুলো আমার পথ আগলে ধরল । এগোতে লাগলো আমার দিকে । যে ছেলেটা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল সে এবার সবার সামনে । নিশির জন্য তখন আমাকে ঠিক মত প্যাদানী দিতে পারে নি এখন তো নিশি নেই আর সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে এখন নিশ্চই প্যাদানী দেবে । ছেলেগুলো একদম আমার কাছে এসে দাড়াল ।

যে ছেলেটা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল সে আমার সামনে এসে বলল -অপু ভাই বেশি জোড়ে ধাক্কা মারি নি তো ? -আরে না না । সমস্যা নাই । -না ভেবেছিলাম একটু জোরেই বোধহয় ধাক্কা মেরে দিলাম । আসলে, ক্যারেট্টারে চলে ঢুকে পরেছিলাম তো, তাই । আমি হেসে বললাম -না না কোন সমস্যা নাই ।

তোমাদের জন্যই তো ওর রাগটা পানি করতে পারলাম । পকেট থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিলাম । -মিষ্টি খেও । এই বলে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম । গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে কত কিছু করতে হয় !! ফেবু লিংক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.