আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোহাই বুবুজান, দয়া করে পবিত্র রমজান মাসে একটু দয়া করেন।

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (আমি নগণ্য। এর পরেও আত্মিক টান অনুভব করে তাকে বুবু বলে ডাকি। যারা জানে, তারা জানে যে, ভাবির চেয়ে বুবুর স্নেহ এবং আন্তরিকতা অনেক বেশি। এই জন্যই বুবু ডাকি । একদিন তো বুবুর হাতের রান্না খাওয়ারও সৌভাগ্য হয়েছিল।

) রাত দশটার দিকে, এক মহল্লা ধরে হাটছি। হঠাৎ লোডশেডিং এর কবলে রাস্তা হারালাম। আশে পাশের ঘর বাড়ি অন্তত অর্ধেক জনশুন্য। পুরুষরা সবাই তারাবিতে ব্যাস্ত। অন্যদিকে সারাদিনের পরিশ্রমের পর মহিলারাও ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন।

এজন্যই আধো আলো আধারিতে মহল্লাটায় একটা আধা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আসলে ঢাকার এদিকটায় খুব কমই এসেছি। আজকেও আসতাম না। এক কলিগ অনেক বয়ে কয়ে ইফতারি খাওয়াতে এনেছিল। কিন্ত বিধি বাম ! হঠাৎ তার শশুড় অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে বাড়ির সবাই সেদিকে ব্যাস্ত।

আমিও বসে থেকে কি করবো? মুখে বলেই বিদায় নিয়ে এসেছি। মনে মনে ভয় আছে। তেনাদের না। উনাদের। যারা এই রকম আধারেই হঠাৎ উদয় হয়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।

আর উনাদের মনে বেশি ফুর্তি থাকলেও, খুন করে ফেলে। না, টাকা পয়সার হারানোর চিন্তা নেই। মানে আমার গাট মানেই ফাকা মাঠ। থাকার মধ্যে খালি একটা কম দামি ঘড়ি আর একটা চাইনিজ মোবাইল। তাও এত কম দামি যে রিক্সাওয়ালারাও সে রকম ফোন ব্যাবহার করবে না।

আমি কেন কোন টাকা পয়সা নিয়ে বের হয়নি, এই অজুহাতেই যদি তিনারা আমার কম্ম সাবাড় করে দেয়, তাহলে তো গেছি ! সাত পাচ ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে হাটছি। এমন সময় দূরে যেন একটা জটলা। ভালো রকমেরই ভয় পেলাম। এই আলোহীন রাতে এইভাবে জটলা। মানে তিনারাই হবেন।

সামনে গলি পড়ালে মোচড় নিয়ে সেখানেই ঢুকে গেলাম। কিছুদুর সামনে গিয়েই দেখলাম একটা দোতলা বাড়ি। গেটে পাহারা টাহারা কিছু নেই। পানি চাইবার উছিলায় কিছুক্ষনের আশ্রয় চাইবো কি চাইবো না ভাবতে ভাবতে একদম সিড়ি বেয়ে দো তলায়। এমন সময় মেয়েলি কন্ঠের কান্না কানে এলো।

সাংবাদিকতা করলে সাধারণের চেয়ে বেশি নাক গলানোর অভ্যাস থাকা চাই। তা সেটা যতই সভ্যতার অপলাপ হোক না কেন। ব্যাস ! কান্নার উৎসমুখে উকি দিলাম। যা দেখলাম তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম ! একটা পুরুষ মানুষ, একটা মহিলার পায়ে পড়ে হাপুশ হুপুস কাদছে। কান্নার সময় পুরুষ মানুষের গলা দিয়ে নারী কন্ঠ বের হয়, সেই প্রথম দেখলাম।

হাসি পাচ্ছিল। কিন্ত অন্যের দুঃখে হাসাটা কি ঠিক হবে? আহা রে বেচারি ! নিশ্চই কোন দারোগা টাইপের বউ এর পাল্লায় পড়ে এমন হাল ! নইলে বৌ পরকিয়া প্রেমিকের জন্য স্বামি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই দুঃখে স্বামি বেচারা হাতে পায়ে ধরছে। কি দিন কাল এলো, চারিদিকে এই কান্ড। কোন সময় স্বামি পালায় কোন সময় বউ ! বিয়ে বছরও যায়না, ব্যাস মিটে গেলো বিয়ের শখ।

প্রেম ভালোবাসা জানালা দিয়ে যে গতিতে পালায়, সেটা মাপার ফর্মুলা বের করা স্বয়ং আইনিস্টাইনের পক্ষ্যেও সম্ভব না। "আরে কান্দে না। আরে পাগল ! কী শুরু করছিস ! বলছি তো, সব ঠিক হয়ে যাবে। " আরে ! মহিলা কন্ঠ তো আমার অনেক চেনা। এতক্ষন অর্ধেক চোখ আর পুরো কান দিয়ে দৃশ্যটা দেখছিলাম।

পরিচিত কন্ঠ দেখে পুরো চোখ ভেতরে দিতেই চোখ ছানাবড়া। একি? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ! আরে এতো বুবুজান। আর তার পায়ের কাছে বসে কাদছে কে? পেছনটা তো বেশ চেনা চেনা লাগছে ! আমার ঔৎসুক্য পুরনের জন্যই কি না জানি না। বুবুর পা থেকে মাথা তুলে মুখ বের করতেই আমি আরেক দফা ধাক্কা খেলাম। এ যে বহুল আলোচিত আবুল ভাই।

ইয়া মাবুদ ! ছিচকের হাত থেকে বাচতে গিয়ে দেখি ডাকাতের পাল্লায় পড়লাম। এই বাড়িটি মনে হয় বড় মানুষদের কোন গোপণ আড্ডাস্থল। ঢাকা শহরে এমন অনেক আড্ডাস্থাল আছে। ধরা পড়ার টেনশনে বুক ধুকপুক শুরু করে দিয়েছিল। কিন্ত যা হবার হবে বলে শেষ তক কি ঘটে দেখে ছাড়ার পণ করলাম।

পকেট থেকে রুপাল বের করে নাক মুখ মুছতে মুছতে আবুল ভাই বললেন, "নেত্রি, কি ঠিক হবে? কেমনে ঠিক হবে? আপনার হুকুমের গোলাম হতে গিয়া তো আমার বৌ তালাকের অবস্থা হইছে। " " কেন? তোর বউ কি জানে না, তুই যাই ই করেছিস সব আমার হুকুমেই !" "জানবে না কেন? ভালোই জানে। কিন্তু শালির বেটি কয়, তুমি যেই রকম চোর তাতে নেত্রির ভাগ থেইকাও চুরি করছো। চুরি করছো ভালোই করছো। মাগার আমারে পুরা ট্যাকা আইনা দিলা না ক্যান? শালিরে যতই বুঝাই, ততই বিগড়ায়।

আমারে কয় বিশ্ব ব্যাংকের ওই রিপোর্ট আইনা দিতে। নাইলে নাকি বিশ্বাস করবো না। এত দিন রোজার উছিলায় দিনে না খাওয়া রাখতো। অহন দিন রাত দুই বেলায় রোজা রাখায় আমারে দিয়া। " বলেই আবুল ভাই আরো উচ্চস্বরে কান্না জুড়ে দিলো।

"আহা ! কান্দিস না কান্দিস না। ঐ বেডিরে এই জন্য আমি দ্যাখতে পারি না। একটা। কথা ক তো। তুই আমার কাছ থেইকাও চুরি করছোস নাকি?" "নেত্রি এইটা কি শুনাইলেন? হায় আল্লাহ।

আমি আপনের মরা বাপের কসম খাইয়া কই...। " "ওই চোপ ! আমার বাপের নামে কসম খাইলে তোর খবরই আছে। " "থুক্কু থুক্কু ! মানে আমি আপনের মরহুম সোয়ামির কসম খাইয়া কই, আমি আপনের থেইকা এক টাকাও মারি না। দরকার পড়লে আপনের মাইয়া আর মাইয়া জামাইরে জিগান। " "থাউক ! এমনেতেই ওগো নাম বাতাসে ভাসতাছে, ওগো নাম নিয়া আর দরকার নাই।

" "আমার জন্য ভাবি না নেত্রি। চিন্তা আপনের জন্য। জানেনই তো, আমগো বড় বড় কথা শুইনা আমেরিকা চেতছে। কখন কুন সময় কি বাইর কইরা ফালায় ! দিনকাইল তো ভালা না। " "কথাটা খারাপ কস না রে আবুইলা।

আচ্ছা শোন। কয়দিন চুপ চাপ থাক। তোরে তো থুক্কু মুক্কু সরাইছি মন্ত্রিত্ব থেইকা। অবস্থা ঠান্ডা হইলে আবার বানাইয়া দিমু। এইটা কুন ব্যাপার? দেখোছ না চুরাঞ্জিতরে সরাইয়া আবার বহাইছি! "তা না হয় গেল।

কিন্তু পদত্যাগ করনে, আমার গায়ে তো চোরের তকমা লাইগা গেলো। হেইটার কি হইবো? তাছাড়া দিন রাইত রুজা রাইখা আমার তো জান যায় যায় !" "চিন্তা করিছ না। ওই সেলিম ! এই বার ঈদে আবুইলার বউ এর জন্য সব ডবল তিন ডবল ঈদের বাজার করার ব্যাবস্থা কইরা দিবি। " "ঈদের উপহারে কাম হইবো?" "ধুর আবুইলা। আরে বৌ গো কাছে এই মার্কেটিং ই আসল।

মন ভইরা মার্কেট করতে পারলে, ওরা জামাই গো সব দোষ মাফ কইরা দেয়। " এর ক্ষণ পর আবুলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। চিরচারিত দন্তরাজি বিকশিত করে তার হাসি ফুটে এলো। " হে হে হে ... কিন্ত চোরের তকমাটা?" " ওইটাও ব্যাপার না। তোরে খোদ আমি সৎ মানুষের সাট্টিফিকেট দিমু।

কোন হালার সাহস হইবো এর পর তোরে চোর কইতে?" এই সময় হঠাৎ কারেন্ট চলে এলো। জানালার পাশে আমি ধরা পড়ে গেলাম। সেই ঘর থেকেই চোর চোর শোর উঠলো। আমি কি আর দেরি করি। পড়িমরি করে বাইরে দৌড় লাগালাম।

আর ধরা যাতে না পড়ি, এই জন্য নিজেই চোর চোর বলে চিতকার করতে লাগলাম। চোর চোর ধবনিতে আমার চারিপাশ ধবনিত হতে থাকলো। "কই কই চোর কই? চোর চোর চোর..." এ কি ! এদেখি বাবার গলা। এখানে বাবা এলেন কি করে? "কি রে বাচ্চু, কই চোর? কোন দিকে গেছে?" চোর? কিসের চোর? রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। এর ফাকে তন্দ্রায় কোথায় চলে গিয়েছিলাম।

ভীষন লজ্জা লাগলো। মুখে বললাম ইয়ে না মানে আব্বা আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছিলাম। আশে পাশের লোকজনও নিশ্চই জুটেছিল। বাবা বিরক্ত মুখে বললেন, যাও হাত মুখ ধুয়ে নাও। সেহেরির বেশি দেরি নেই।

আর মা কে বললেন, "কতদিন মানা করেছি, এই রোজা রমজানের দিন ছেলেকে এই সব বিরিয়ানি টিরিয়ানি জাতিয় খাবার বেশি খাইয়েও না। এই সব খেয়ে মাথায় বায়ু চড়ে আর স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে লোকজনের শান্তি নস্ট করে। কাকতলিয় কিনা জানি না। কালই তো দেখলাম। লন্ডনে গিয়ে বুবুজান আবুলকে খাটি দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

* সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম এই রমজানে রাজনৈতিক লেখা লিখবো না। কিন্ত বিধি বাম। বুব্র কাজ কারবারে রোজার দিনটিও শান্তিমত চুপচাপ বসে থাকার সৌভাগ্য হলো না। * ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.