আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান সরকার খোড়া অজুহাতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে বরং নিজেরা নিজেদের কবরই খুড়ছে

বছরের শুরু ১লা বৈশাখে ভালো ভালো খাবার খেলে নাকি সারা বছরই ভালো খাবার জোটে- এটা আমাদের দেশের একটি অতি প্রচলিত ধারনা । আমাদের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শুরুর প্রথম মাসেই পিলখানায় নারকীয় ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল বলেই সরকারের পুরা মেয়াদেই সেই মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে । মৃত্যুর প্রক্রিয়া ভিন্নতর হলেও কখনও সংখ্যায় বেশী মরেছে, আবার কখনও সংখ্যায় কম মরেছে- এ ই যা পার্থক্য । জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব যেহেতু সরকারের, সেহেতু যেকোন মৃত্যুর দায়ই সরকারের উপরই বর্তায় । তাই যেদলই ক্ষমতায় থাকুক, তার মেয়াদকালে সংঘটিত মৃত্যুর জন্য সেই দলটিকে মূল্য দিতে হয় ।

বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সারা বছর যে হারে মানুষ মরেছে সরকারের মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে, সেই হারটা অনেক বেড়ে গিয়েছে । গার্মেন্টসএ অগ্নিকান্ডের পাশাপশি ভবন ধস ও রাজনৈতিক কারনে গুম,অপহরনের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে এখন সরাসরি গুলি চালিয়ে মানুষ মারার নূতন মাত্রা যোগ হওয়ায়, মানুষ মৃত্যুর হার অনেক বেশী বেড়ে গিয়েছে । বিভিন্ন দূর্ঘটনায় যেমন- গার্মেন্টসএ অগ্নিকান্ডে, সড়ক দূর্ঘটনায়, ভবন ধসে মানুষের মৃত্যুকেই যেখানে সহজভাবে মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন,সেইখানে যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত যাদের উপর জনগনের জানমাল হেফাজতের দায়িত্ব, তাদেরই সরাসরি ইন্ধনে নিরস্র-নিরীহ মানুষদেরকে লঘু অপরাধে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়, তবে জনগনের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্ব প্রাপ্তদের প্রতি মানুষের চরম জিঘাংসা তৈরী হওয়ার সুযোগ তৈরী হচ্ছে না ? এই জিঘাংসা তৈরীর মাধ্যমে প্রকারান্তরে নিজদলের নেতাকর্মিদের জন্য ভবিষ্যতে অনুরুপ ঘটনার স্বীকার হওয়ার পথ তৈরী করা হচ্ছে না ? কারন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা না থাকলেও খারাপ কাজে কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে, সেই ব্যাপারে কেহই কারোর চেয়ে কম যায় না । যেমন ধরুন-বিএনপি সর্বশেষ সরকারে থাকাকালে তারা যে পরিমান দূর্নীতি করেছিল, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কয়দিন লেগেছে বিএনপির সেই দূর্নীতির রেকর্ড ভংগ করতে ? শুধু কি তাই ,তারা দূর্নীতির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করতেও সক্ষম হয়েছে । তারপর দেখুন হত্যাকান্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে, বিএনপির আমলে সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ডটি ছিল আওয়ামীলীগের অফিসের সামনের গ্রেনেড হামলায় ২২জনের নিহতের ঘটনা, যা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার একমাসের মাথায়ই বিএনপি আমলের ২২জন হত্যাকান্ডের রেকর্ডটিকে অতিক্রম করে গিয়েছিল ।

পিলখানার সেই বিডিআর হত্যাকান্ডে আটান্নজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাসহ প্রায় সত্তরজন লোক নিহত হয়েছিল । বিএনপির সময়ের আহসানউল্লাহ মাষ্টার ও এস,এম কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিপরীতে বর্তমান সরকারের সময়ে গুম হয়েছে বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার চৌধূরী আলম ও ইলিয়াস আলীসহ আরো অনেক ছোট খাটো নেতা,কর্মী,সমর্থক । তারপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রায় দুই শতাধিক নিরীহ নিরাপরাধ লোক নিহত হয়েছে, যদিও তাদের কেউই মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিলনা । সাগর-রুনী ও বিশ্বজিত হত্যাকান্ড এই সরকারের আমলে আরো দুইটি আলোচিত হত্যাকান্ড । তারপর সর্বশেষ যোগ হলো সাভারের রানা প্লাজার ঘটনা, যেখানে ইতিমধ্যেই প্রায় সাত শতাধিক লোক নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে, যার জন্য সরকারের প্রভাবশালী মহলই দায়ী বলে সর্বজন স্বীকৃত ।

সাভার ঘটনার উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার আগেই, হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে আবার বড় ধরনের হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো, যা এই সরকারের সময়ে হত্যাকান্ডের তালিকাটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে বলেই বিজ্ঞজনদের মত । সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে এই য়ে হত্যাকান্ড গুলি ঘটল, তাতে প্রকৃতপক্ষে সরকারের কি লাভ হলো ? বিএনপির লোক মরল, জামায়াতে ইসলামীর লোক মরল, সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের লোক মরল,এমনকি অনেক জায়গায় সরকারীদলেরও অনেক লোক মারা গিয়েছে । তাতে কি সরকারের সাথে এই দলগুলির সাথে কোনরুপ সমজোতা ও সুসম্পর্ক তৈরী হওয়ার সুযোগ রইল ? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির একটি বড় অলংকার হইল প্রতিহিংসা, যা একটা দেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি । কারন, একটা দেশে নানা মতের, নানা পথের, নানা ধর্মের ও নানা বর্নের মানুষ বাস করে । সম্পদের দিক দিয়ে দেশের অবস্থা যা ই হোক না কেন, যদি দেশের সকল শ্রেনীপেশার,সকল ধর্মের ও সকল বর্নের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও সহাবস্থান বজায় থাকে, তবে সেই দেশের মানুষের চেয়ে সুখী দেশ আর কোনটি হতে পারে ? কিন্ত এই সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এই প্রতিহিংসাপরায়নতা ।

আমাদের দেশের মানুষ অত্যন্ত সহজ-সরল ও নরম প্রকৃতির হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র রাজনৈতিকদলগুলির প্রতিহিংসা পরায়নতার কারনে দেশে সবসময় অত্যন্ত ছোট-খাটো ঘটনাকে অজুহাত দেখিয়ে একদল আরেক দলের সাথে নানাভাবে ঘাত-প্রতিঘাতে লিপ্ত থাকে । এমনকি তারা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভংগ করতেও কার্পণ্য করেনা । আমাদের দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব দুইজন নারী হওয়া সত্বেও, তারা নিজেদের সম্মানটুকু রাখার নিমিত্তেও, একে অপরকে সম্মান করে কথাটা পর্যন্ত বলতে পারেনা, যা জাতি হিসাবে আমাদেরকে খুবই মর্মাহত করে । কিন্ত তারপরও আমরা তা কপালের লিখন বলে মেনে নেই । তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো যে, সরকারে থাকাকালে তারা কোন ধরনের কাজ করলে বিরোধীদলে গেলেও নিরাপদে ও সম্মানজনক ভাবে থাকতে পারবে, তা একদমই বুঝতে পারে না ।

এমনকি সরকারে থাকাকালে তাদের কাজ-কর্ম দেখে মনে হয় যে, তারা আর কোনদিনও বিরোধীদলে যাবে না, যদিও বাংলাদেশের ইতিহাস বলে যে, সবদল নিষিদ্ধ করেও কেউ তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে পারে নাই । আর বর্তমানে তো এই ধরনের চিন্তা করাও আহাম্মকি ছাড়া কিছুই হবে না । তারপরও এই সকল রাজনীতিবিদেরা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকটা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতো সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি করে । বর্তমানে এই তিক্ততা সৃষ্টির মাত্রা এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে, বিশেষ করে যারা সরকারে আছে, তারা বিরোধী পক্ষকে দমানোর জন্য মানুষ খেকো বাঘকে যেভাবে এলো পাথারী গুলি করে হত্যা করা হয়, ঠিক সেইভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করতে কার্পণ্য করছে না । শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা, হত্যাকে যুক্তিক প্রমানে নানাভাবে তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ।

কিন্ত এর পরিনতি যে কি ভয়াবহ হবে, তা তারা বুঝারও চেষ্টা করছে বলে মনে হয় না । তাদের এই কর্মকান্ডের ফল যখন বুমেরাং হতে শুরু করবে, তখন কিন্ত শুধু দলের শীর্ষনেতৃত্বই সাফার করবে না, সেই সাথে তাদের দলের অনেক নিরীহ সমর্থকদেরকেও অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে । একটা জিনিস সবারই মনে রাখা উচিত যে, ইট মারলে যেমন পাটকেল খেতে হয় ,তেমনি গুলির বিনিময়ে আপনি গুলিই প্রাপ্য , লাশের বিনিময়ে লাশ । আরকটি কথা না বললেই নয় যে, জোর করে যেমন ভালবাসা আদায় করা যায় না, তেমনি জোড়-ধবস্তি,জেল-জুলুম ও বন্দুকের নলের ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগনের অধিকার চাওয়ার আকাংখাকে স্তব্ধ করা যায়না । আপনি নিজে শান্তিতে থাকতে চাইলে, অন্যকেও শান্তিতে থাকার সুযোগ করে দিতে হবে ।

রাজনীতি করতে হলে আপনাকে জনগনের পালস বুঝার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে । কারন, অবশেষে আপনাকে আবার জনগনের কাছে এসেই ভোট ভিক্ষা চাইতে হবে রাজনীতির ময়দানে বিচরনের জন্য । ক্ষমতার দাম্ভিকতায় নয়, ভালবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে সকলদল,মত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষের সাথে সোহার্দপূর্ণ ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে হবে । মনে রাখবেন যে, আদর করে,হাত বুলিয়ে কিন্ত বিষাক্ত সাপকেও বস মানানো যায় । সরকারে থাকলে রাজার মতো চলে বিরোধীদলে গিয়ে বাবর-গাবরদের মতো লাঞ্চনা-গন্জনার জীবনের কি মূল্য আছে ? কি মূল্য আছে দোর্দোন্ড প্রতাপশালী শামীম ওসমান আর হারিস চৌধূরীর মতো পলায়নপর জীবনের ? সরকারে থেকে কেন ভবিষ্যতের জন্য হুমকি তৈরী করবেন নিজের জন্য ও নিজদলের অন্যান্যদের জন্য ? কেন জনগনের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশা নিয়ে রাজনীতি করতে এসে নিজের কবর নিজেই খোরার ব্যবস্থা করবেন ? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.