আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামোফবিয়া বাঙালি প্রগতিশীলতার প্রতিক নহে

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র একটা নতুন ব্লগ চোখে পড়লো একটু আগে। ব্লগটার নাম নবযুগ ব্লগ। ব্যানারে লেখা দেখলাম 'বাঙালী প্রগতিশীলতার প্রতীক'। স্লোগানটা অনেকখানি খেলো মনে হলেও ডানদিকের রেজিস্ট্রেশন অপশনটা টানছিল, ব্লগ দেখলেই রেজিস্ট্রেশন করতে আমার হাত নিশপিশ করে, নিয়মিত না লিখলেও বেশিরভাগ ব্লগেই আমার আইডি আছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের লোভটাকে একটু পাশ কাটিয়ে যখন ব্লগের প্রথম পাতায় চোখ বুলালাম তখন রেজিস্ট্রেশনের ইচ্ছা মরে গেলো।

৮টা মাত্র পোস্ট, এর মধ্যে ছয়টাই ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসবাদী ধর্ম এবং মুসলমানদের মধ্যযুগীয় বর্বর হিসাবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লেখা। ইসলামী শরিয়াতে জিহাদের পক্ষে বক্তব্য আছে এটা সত্য, এর অনেক আইনকানুনই আমাদের বিবেচনায় মধ্যযুগীয় এবং কিছু ইসলাম প্রধান রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক চরিত্রও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু এইটা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিষয়ে একটা খন্ডিত সত্য মাত্র। সারা দুনিয়ার অগনিত মুসলমানের ছোট্ট একটা অংশই কট্টর মধ্যযুগীয় শরিয়াকেন্দ্রীক ইসলামের অনুসারি। আবার ইসলামএর কোন একক কেন্দ্রীয় রূপ বলেও আদতে কিছু নাই, এডাপ্টেশন ক্ষমতা বলে এবং মধ্যযুগীয় দুনিয়ার নানাবিধ আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে সারা দুনিয়ায় এই ধর্মটা নানান মাটিতে নানান রূপে এবং নানান ইন্টারপ্রিটেশনে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে।

বাঙলার সংস্কৃতিতেও ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে এর বাঙাল ইন্টারপ্রিটেশনে, ইরানে ইরানের মতো, তুরস্কে তুরস্কের মতো আর সৌদি আরবে সৌদিদের মতো। এসব ইন্টারপ্রিটেশনে যুক্তির কঠিন এবং বস্তুনিষ্ঠ তরিকা হয়তো নাই, কিন্তু এইসব ইন্টারপ্রিটেশন নিয়া বসবাসকারী জনগোষ্ঠির বড় অংশই সন্ত্রাসী না, মধ্যযুগীয় বর্বরও না। এরা আধুনিক পুজিতান্ত্রিক বাস্তবতার নানাবিধ অবক্ষয়ের মাঝে নিজেদের তাবৎ ত্রুটির ঝুলি কান্ধে নিয়া জীবন সংগ্রাম করে আর দশটা খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং নাস্তিকের মতোই। এরা আমাদের বাবা, চা, মা, খালা, বন্ধু, আত্মীয় এবং পাড়া প্রতিবেশী। এদের ত্রুটি এবং এদের আদর্শগত সমস্যা নিয়া আলাপ হইতে পারে, যেমন হইতে পারে একজন হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ এবং নাস্তিকের ত্রুটি ও আদর্শগত সমস্যা নিয়া।

কিন্তু ইসলামের একটা একক, বৈচিত্রহীণ, মধ্যযুগীয় এবং বর্বর চেহারাকেই এর একমাত্র চেহারা হিসাবে প্রচার করার কাজটা করে দুইটা মাত্র শ্রেণী। ১। কট্টর ইসলামপন্থী জঙ্গীরা। ২। জঙ্গী ইসলামএর দোহাই অবলম্বন করে আধিপত্ত্ব বিস্তারের চেষ্টায় থাকা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলা।

আর গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠিরেই নানাবিধ ডিসকোর্স তৈরির মাধ্যমে মধ্যযুগীয় বর্বর হিসাবে ইভিলাইজড করার কাজটা করে শুধুমাত্র ২ নম্বর শ্রেণীটাই। তবে উক্ত ব্লগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরাসরি সেইসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলার রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যে নিজের বাপ, মা, চাচা, চাচি, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সন্ত্রাসী ও মধ্যযুগীয় বর্বর হিসাবে প্রচার করতে চান না কি শ্রেফ সেইসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলার ইসলামোফোবিক ডিসকোর্সে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে এই প্রচার কর্মে লিপ্ত হইছেন সেটা আমার কাছে পরিস্কার না। ইসলামোফোবিক ডিসকোর্সে ব্রেইনওয়াশডদের এইটাও বুঝা দরকার যে ইসলামোফোবিয়া বাঙালি প্রগতিশীলতার প্রতিক নহে। একেবারে গ্রাম বাঙলার লালন থেকে শুরু করে শাহ আবদুল করিম বলেন অথবা শহুরে মধ্যবিত্ত্বের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নায়কদের থেকে শুরু করে আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ বা আরজ আলীর কথাই বলেন, কিংবা এই দুই প্রগতিশীলতার মাঝখানে সেতুবন্ধ হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকা কাজী নজরুল ইসলাম অথবা আহমদ ছফার কথাই বলেন, এরা কেউই ইসলামোফোবিক ছিলেন না। যখন যতটুকু দরকার সমালোচনা করেছেন মাত্র।

এবং সেইসাথে চেষ্টা করেছেন স্বজাতির মান উন্নয়নের, তাদেরকে সাব হিউম্যান বানানির মিশনে নামেন নাই। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.