আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যা ঘটেছিল ( কোন পত্রিকায় এটা প্রকাশিত হবে না, কারন হাম্বাদিকরা এটা প্রকাশ করতে দিবে না)

আমি বাঙ্গালী ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যা ঘটেছিল ২০ তারিখ সকাল ৬ টার ট্রেনে আমার ঈশ্বরদী যাওয়ার কথা ছিল। তাই ১৯ তারিখ রাতে আমি আর ইচিপ এর রুমে যাইনি। ফলে টিভিও দেখা হয়নি। রাত ৯ টার দিকে ফেসবুকে দেখলাম বাংলানিউজে একটা খবর এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। শিরোনাম হল-“বেয়াদব, লাথথি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেবো।

” এর মাঝেই একজন ফোন দিয়ে জানালো সব টিভি চ্যানেলে শহীদ স্যার, সুরজিৎ দা দেরকে নিয়ে খবর দেখাচ্ছে। নিচে নেমে দেখলাম ঘটনা সত্যি। এর মাঝেই রাত ১১টা ২০ নাগাদ মারা গেলেন হুমায়ূন আহমেদ। ফলে মিডিয়ার সমস্ত মনোযোগ চলে গেল ঐ খবরটাতে। ডাক্তারদের প্রসঙ্গটা মোটামুটি চাপা পড়ে গেল।

মিডিয়া যেভাবে পুরো বিষয়টা প্রচার করেছে তাতে মনে হতেই পারে সমস্ত দোষ ডাক্তারদের। কিন্তু আসলেই কি তাই? কী ঘটেছিল সেদিন ২১৪ নম্বর ওয়ার্ডে? আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এতদিন এই ব্যাপারটা নিয়ে কারো সাথে ধীরস্থির ভাবে কথা বলতে পারিনি। আজ সকালে যখন একটু ফুরসৎ পেলাম তখন ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে যা শুনলাম তাতে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে জেজুনাল এবং মেসেণ্টেরিক পারফোরেশন নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী ওরফে রিপন প্রথমে ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ।

রোগীটিকে যখন এখানে আনা হয় ততক্ষণে হেমোপেরিটোনিয়াম হয়ে সে শকে চলে গেছে। তাকে একদিন রিসাসসিটেট করে পরদিন ল্যাপারোটমি করা হয়। করেন আমাদের আর এস (জেনারেল সার্জারি) স্যার। রোগী খুব দ্রুতই রিকভারি করে। এইসব অপারেশনের পর ইনফেকশন হওয়াটা যে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না, এটা এই বিষয়ে যাদের নূন্যতম জ্ঞান আছে তারাই বুঝবেন।

আমাদের এই রোগীটিরও ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়। এরপরই শুরু হয় গণ্ডগোল। একজন ইণ্টার্নি ডাক্তার ক্ষতস্থান ড্রেসিং করতে যায়। সকালে রাউণ্ডের সময় হয়ে যাওয়ার কারণে ডাক্তার তাকে বলেন একটু তাড়াতাড়ি উঠে বসতে। এ সময় রোগী তাকে বেয়াদব সহ আরো কিছু বাজে কথা বলে বলে, “ আপনি আমাকে ড্রেসিং করাইতে আসছেন কোন সাহসে? ইণ্টার্নিরা হল হাসপাতালের সবচেয়ে ছোট ডাক্তার।

আপনি জানেন আমি কে ? আমি একজন উঁচু স্তরের মানুষ। ” তারপর সে আর তার স্ত্রী মিলে তাদের ক্ষমতার ফিরিস্তি দেয়া শুরু করে। বিটিভির কোন কর্তাব্যক্তি তার কী হয়, ঠিকাদার সমিতির নেতারা তার কেমন আপনজন, লালবাগের কোন নেতার সাথে তার খাতির আছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। যাই হোক, তখন ঐ ওয়ার্ডের সি.এ. তাকে ধমক দিয়ে বলেন, সে যদি ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ করে তাহলে তাকে ডিসচার্জ দিয়ে দেয়া হবে। তখন ঐ রোগী বেড থেকে উঠে সিস্টারের টেবিলে ফাইল ছুড়ে মেরে ‘থাকলাম না আপনাদের হাসপাতালে,আমার জন্য বহু হাসপাতাল আছে’ -বলে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে চলে যায়।

দুই কী আড়াই ঘণ্টা পর আবার সে ফিরে আসে। তার ধৃষ্টতা এখানেই শেষ হয় নি। সে বিছানায় শুয়ে ইণ্টার্নিদের বিদ্রুপ করে বলত, “কী রে বেয়াদবরা ড্রেসিং করবি না?” যাই হোক, ১৯ তারিখ সকালে আমাদের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শহীদ স্যার রাউণ্ডে এসে ঐ রোগীকে উঠে বসতে বলেন। স্যারকে যারা চিনেন, তারা জানেন স্যার কাউকেই ‘তুই’ সম্বোধন ছাড়া কথা বলেন না। স্যার ঐ রোগীকে বলেন, ইণ্টার্নি ডাক্তারের কাছে ক্ষমা চাইতে।

” যাই হোক রাউণ্ড শেষ হওয়ার পর রোগী ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসে। এসে সে খুব অসুস্থ এমন একটা ভাব করে লুঙ্গিটা হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে শুয়ে থেকে। এমন সময় আট-নয়জন লোক ওয়ার্ডে ঢোকে। এদের মাঝে একজন হাতে গ্লাভস পড়ে রোগীর ক্ষতস্থান থেকে ব্যাণ্ডেজটা খুলে ফেলে। তারপর ঢাকা মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের একাংশের নেতা হান্নান কয়েকজন সাংবাদিক এবং ক্যামেরাম্যান সহ ওয়ার্ডে প্রবেশ করে।

রোগী এবং রোগীর লোকজন চিকিৎসকরা রোগীকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করতে থাকে। এই পর্যায়ে একুশে টিভির এক সাংবাদিক ওয়ার্ডের সি.এ. সুরজিৎ দা’র কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, “ এই যে রোগী নির্যাতনকারী চিকিৎসক, এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী? ” সুরজিৎ দা তখন ঐ ছেলেকে চার্জ করেন এবং জানতে পারেন, ঐ ছেলে একটি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে কী একটা ট্রেনিং এর পার্ট হিসেবে কিছুদিনের জন্য একুশে টিভিতে জয়েন করেছে। উনি তখন সংবাদিকদের জিজ্ঞেস করেন, তারা কার অনুমতি নিয়ে ওয়ার্ডে প্রবেশ করেছে ? উনি তখন সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। সবাই চলেও যায়। কিছুক্ষণ পর ডিরেক্টর স্যার ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন, সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে এবং ডাক্তারদের কোন কথা শোনার আগেই হাত জোড় করে সাংবাদিকদের বলেন, “উই আর এক্সট্রিমলি স্যরি।

” কর্মরত সি.এ. তখন বলেন, “স্যার আপনি ওদের কাছে স্যরি বলছেন কেন? আগে কী ঘটেছে আপনি শুনে নেন। ” সব কিছু শোনার পরও ডিরেক্টর কোন শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। পরবর্তী তিন ঘণ্টা ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালায় সাংবাদিকরা। রোগীদের বেডে গিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘চিকিৎসায় কোন অবহেলা হচ্ছে কিনা, ডাক্তাররা খারাপ আচরণ করছে কিনা’ এবং তারপর মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে।

এই হল ১৯ তারিখের আসল কাহিনী। কোন প্রচলিত গণমাধ্যম এই কথাগুলো ছাপানোর বা প্রকাশ করবার সৎসাহস কোনদিনই দেখাবে না সেটা আমরা ভালো করেই জানি। কিন্তু এখন দিন বদল গেছে। আমরা জানি ফেসবুক সহ অন্যান্য বিকল্প মিডিয়ার মাধ্যমে এই কথাগুলো ঠিকই পৌঁছে যাবে দেশের মানুষের কাছে। শক থেকে বাঁচিয়ে তুলে একটা রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার পর, সেই রোগীর ব্যাপারে যখন সাংবাদিকরা চিকিৎসায় অবহেলার প্রশ্ন তোলেন; তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে অপদস্থ করেন আমাদের শিক্ষক,সিনিয়র ভাই এবং সহকর্মীদের; তখন প্রতিবাদ করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের আন্দোলনের সূচনা।

অমানুষ বলবেন, কসাই বলবেন, রোগী নির্যাতনকারী বলবেন এবং অবলীলায় পার পেয়ে যাবেন এখন থেকে আর তা হবে না! - By Pritam Dey ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।