আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্‌ফুসি!

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র টাইটেলএর লাইনটা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামএর 'আমার কৈফিয়ত' নামক কবিতা থেকে নেয়া। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার এই লাইনগুলার মাধ্যমে তারে বিভিন্ন মহলের নাস্তিক, জঙ্গি মুসলমান, ছুপা হিন্দু ইত্যাদি ট্যাগিংএর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ করেছিলেন। কবিতাটার কিছু লাইনে আফসোস করে লিখেছিলেন - মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘ মোল্‌-লা’রা ক’ন হাত নেড়ে’, ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে! ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও, যদিও শহীদ হইতে রাজী ও! ‘আমপারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে! হিন্দুরা ভাবে,‘ পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা’ত-নেড়ে!’ এই কবিতাটার কথা মনে হইলো আজকে ব্লগে বিভিন্ন পোস্টে কোথাও হুমায়ূন আহমেদরে কারো নাস্তিক আবার কারো কারো ইসলাম বিশারদ বলে ট্যাগ দেওনের লড়াই দেখে। কেউ বলে এই ব্যাটা মরার পরে মাটি হয়া যাবে বলছে তো এই নাস্তিকের জানাযা দেওনের দরকার কি? কেউ আবার কয়- না, উনার সর্বশেষ ভিডিওতে উনি কোরআনের আয়াত উল্লেখ করেছেন, উনি তো সাচ্চা মুসলমান। নজরুল বিগত হইছেন অনেকদিন হয়, এই কবিতা যখন তিনি লিখেছেন তখনো বাংলাদেশ হয়নাই, উনি এই দেশের জাতীয় কবিও ছিলেন না।

এখন দুইটাই হইছে, কিন্তু সেই গোড়া ট্যাগবাজদের ট্যাগবাজি সেইরকমই আছে। আরে বাবা, মরার পরে মাটি হইতে হবে এটাতো এই বাঙলায় কম লোকে কয়নাই। প্রাচীন বাঙলায় মিননাথ, গোরক্ষনাথ, অতীশ দিপঙ্কররাতো পরকালে বিশ্বাস রাখতোনা, এতে সমস্যা কি? এই তো শাহ আবদুল করিম সেদিন মরার আগেও বলে গেছেন ‘পরকাল সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। মাটি মাটিতে মিশে যাবে…। ’ আবার এও কইছেন যে ' তারা যাই বলেন, আমি কিন্তু নাস্তিক নই'।

লালন সেই কবে কইছেন, ' মরিলে সব হবে মাটি ত্বরা এই ভেদ লও জেনে'। নজরুল আল্লার আরশ ফুইরা ফেলতে চাইছিলেন, আবার মসজিদের পাশে নিজের কবর দেওয়া হউক সেই আশাও করছিলেন। এখন এদের সবাইরেকি হয় সাচ্চা মুসলমান অথবা নাস্তিক বানাইতে হইবে? বাঙালির আত্মা কি এতই ছোট আর সংকির্ণ। যেই বাঙালির আত্মা মোহাম্মদ আর গৌতম বুদ্ধরে একদেহে ধারণ করতে পারে সেই বাঙালিরে এইরকম ট্যাগ দিয়া আটকায়া ফেলা কি এতই সোজা? অথচ স্কুলে থাকতেই আমরা শেখ ফজলুল করিম'এর কবিতা পড়ছি- কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর! রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়, আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়। প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরষ্পরে, স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।

কি শিখছি পইড়া? এই যে শেখ ফজলুল করিম কইয়া গেলো, স্বর্গ নরকতো এই ইহকালেই আছে। মানব প্রেম থাকলেই হয়, কুড়ে ঘরে স্বর্গ তৈরি হয় তখন। আর লালন তো সেই কবেই কইয়া গেছেন, ' ভজো মানুষের চরণ দুটি নিত্যবস্তু হবে খাঁটি, মরিলে সব হবে মাটি ত্বরা এই ভেদ লও জেনে'। তো এইসব আকামের ট্যাগবাজি ছাইড়া মানুষের চরন ভজতে শিখেন। মরার পরে মাটিই হন অথবা হাসরের ময়দানেই আবার উইঠা দাঁড়ান না কেনো, একমাত্র মানুষের চরন ভজলেই মুক্তি পাইবেন।

এইসব আকামের ট্যাগবাজি করলে পাইবেন না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।