আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায় চিনি!

বসে আছি পথ চেয়ে.... ছোট ছোট সাদা সাদা দানার মিষ্টি এক জিনিস হচ্ছে চিনি। এর ইংরেজি নাম সুগার। তবে বাংলায় চিনি শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহার হয়। বিশেষ্য হিসেবে ‘চিনি’ বলতে বোঝায় ‘সুগার’; আবার ক্রিয়া হিসেবে ‘চিনি’ বলতে কাউকে চেনা (know)-বোঝায়। শিশু শিক্ষার্থীদের চিনি শব্দটি নিয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হয়।

এক শিক্ষার্থী ‘আমি তাকে চিনি’ এই বাক্যটির ইংরেজি লিখতে গিয়ে লিখেছিল, ‘আই সুগার হিম!’ চিনি শব্দটির মানে নিয়েই যে কেবল বিপত্তি ঘটে তাই নয়, চিনি খাওয়া নিয়েও অনেক বিপত্তি দেখা দেয়। চিনির তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্য পছন্দ করেন না, এমন মানুষ বড় বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না; কিন্তু সবাই সব সময় সমানভাবে মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেতে পারেন না। অনেকের রক্তে সুগার বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তখন চিনি বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য তার জন্য বিষ বা হারাম হিসেবে বিবেচিত হয়। যারা রক্তে চিনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন তাদের আমরা ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে চিহ্নিত করি।

সাধারণভাবে বড়লোকদের মধ্যেই রক্তে এই ‘চিনি সমস্যা’ বেশি দেখা যায়। তাদের মন চাইলেও শরীর চিনিকে গ্রহণ করতে পারে না। অথচ যারা ভাতের মত কেজি কেজি চিনি খেতে পারে সেই গরিব মানুষের কপালে এক চিমটি চিনিও জুটছে না। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবন চিনি ছাড়া চলে না। বাচ্চাদের খাদ্যের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে চিনি।

চা-কফিতে চিনি। সেমাই-সুজি-হালুয়ায় চিনি। আরও বিচিত্রসব আইটেম তৈরি করা হয় চিনি দিয়ে। বাদ্য ছাড়া গান আর চিনি ছাড়া খানা উভয়ই বাঙালির কাছে অপাঙ্ক্তেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান চিনি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক হাহাকার।

রমজানকে উপলক্ষ্য করে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬০ টাকা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বর্তমানের এই গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এটা ভাবা যায়? দিনবদলের কী নমুনারে রে বাবা! দিনবদলের এই ধারাবাহিকতায় ঘরে ঘরে সৃষ্টি হয়েছে সঙ্কট। চিনির কথা বললেই গৃহিণীরা তেড়ে উঠছেন, নো চিনি! চিনি সংক্রান্ত কোন আলোচনা, দাবি-আবদার, এমনকি এ সংক্রান্ত গানও নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটু ভাবুক প্রকৃতির উদাস স্বভাবের কিশোর পুত্র মনের আনন্দে গান ধরেছে, আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী... এই গান শুনে উৎসাহ দেবার পরিবের্তে উল্টো মা গর্জে উঠছেন, বন্ধ কর এ গান, চিনি নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না, নো চিনি এট অল।

নেভার চিনি। পিঁপড়াও আর চিনি খুঁজে পাচ্ছে না। চিনির পাত্র পাখিহীন খাঁচার মতো অনাদরে পড়ে আছে। মধ্যবিত্ত ঘরের ছোট্ট শিশুকে দুধভর্তি ফিডার মুখে দিলে সে এক চুমুক দিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় শিশুর দুধেও চিনির পরিমাণ কমে গেছে।

অভ্যস্ত শিশু এখন আর পানসে দুধ খেয়ে মজা পাচ্ছে না। ফলে তার কান্না ও অস্থিরতাও থামছে না। মিষ্টি জাতের খাবার সেমাই, সুজি, হালুয়া তো দূরে থাক চা-কফিও হয়ে গেছে ‘সুগার ফ্রি’-ডায়াবেটিস রোগীর খাবার। চায়ে যতটা কম পারা যায় চিনি দেয়া হচ্ছে। ঘরে চায়ে চিনির পরিমাণ নিয়ে ঝগড়া-কলহ তো হচ্ছেই, দোকানে পর্যন্ত চা-বিক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে।

চিনি কম দিয়ে, পারলে না দিয়ে কীভাবে চা বানানো যায় ঘরে ঘরে এবং দোকানে দোকানে এখন চলছে সেই কসরৎ। যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা পড়েছেন মহাফাঁপরে। সুস্থ মিষ্টিপ্রিয় মানুষের পক্ষে রোগীর পথ্য আর কাহাতক সহ্য হয়! চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র, সবখানে। মিষ্টি এখন উচ্চবিত্তের শৌখিন খাবার (যদিও তারা ডায়াবিটিসের ভয়ে তা খেতে পারেন না)! আনন্দ আর খুশির খবরেও এখন আর মিষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, মিষ্টিমুখ করা হচ্ছে না। যাদের হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আছে, এখন তারাই কেবল মিষ্টির স্বাদ উপভোগ করছেন।

দুশ’, আড়াইশ’, আবার কোন কোন মিষ্টি তিনশ’ টাকা কেজি। মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরলে শিশুর কপালে জুটছে মার। মিষ্টির স্বাদবঞ্চিত গৃহিণীরা সারাক্ষণ তিরিক্ষে মেজাজে থাকছেন। এর ঝাপটা এসে লাগছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি কথাও হারিয়ে যাচ্ছে।

সবাই কেমন যেন তিতা তিতা কথা বলছেন। বিরোধী দলের নেতাদের মুখে, সংসদে তার আলামত দেখা যাচ্ছে। পান থেকে চুন খসলেই মেজাজ, রাগারাগি ও বাড়াবাড়ি। পুরো দেশটাই যেন কুরুক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে। ঘরে কুরুক্ষেত্র তো আগেই ছিল, এখন বাইরেও তা শুরু হয়েছে।

চিনির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপে ব্যর্থ হয়ে সরকার ক্রমেই গালাগালের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এই চিনি শেষ পর্যন্ত সরকারকে, সর্বোপরি দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, আরও কত বিপত্তি ঘটায় কে জানে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।