আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিকিতা আর ছেলেটি..........

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নিকিতা মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার রেখে দিল । নিজের কাছে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । একবার মনে হচ্ছে ফোন করি আর একবার মনে হচ্ছে কেন ফোন করবে ? আর ছেলেটা যদি ওর সাথে ফান করে ? দেখা গেল নিজের নাম করে অন্য কারো কার্ড ধরিয়ে দিল । আর নিকিতা ঐ নম্বরে ফোন করে ধরা খেল । নিকিতা ফোন না করার সিদ্ধান্ত নিল ।

কোথাকার কোন পিচ্চি এক ছোড়া সে নাকি আবার ডিবিবিএলের এসিস্টেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ! হতেই পারে না ! ঐ টুকু একটা ছেলে কোন দিন এসিস্টেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হতেই পারে না । খুব বেশি হলে কলেজ পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে , চাকরী তাও আবার এসিস্টেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ! হতেই পারে না ! কিন্তু ছেলেটা যেরকম আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের কার্ডটা দিল তাতে তো মনে হচ্ছে সত্যিই ছেলেটা ডিবিবিএলের এসিস্টেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার । নিকিতা আরো একবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিজিটিং কার্ডটা দেখল । আবীর আহমেদ । এসিস্টেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ডাস বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ।

পান্থপথ শাখা । তারপর বেশ কিছু ফোন নম্বর দেওয়া নিকিতা কেন জানি মনে ভিতর শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই । আর ঐ দিনকার ঘটনাও ভুলতে পারছে না । পারছে না ছেলেটাকে একটুও ভুলতে । গত শক্রবারের কথা ।

নিকিতা ওর কয়েকটা বান্ধবীর সাথে বসে আড্ডা মারছিল বসুন্ধরার লেভেল এইট এ । আড্ডা মারার এক পর্যায়ে নিকিতার এক বন্ধু রুহী ওদের থেকে কয়েক টেবিল দুরে বসা ছেলেটাকে দেখালো । বলল -তুই যদি ঐ ছেলেটার কাছ থেকে একটা হ্যাম বার্গার খেতে পারিস তাহলে তোকে পাঁচশ টাকা দেবো । পারবি ? নিকিতা খানিকটা ভাবল । তারপর বলল -পারবো ! রুহী আবার বলল -আমার মনে হয় পারবি না ! খামোখা যাস না ! -পারলেই তো হল ? -যদি না পরিস? -না পরলে আমি দেব টাকা ।

ঠি আছে ? নিকিতা নিজের ব্যাপারে বেশ । এদের মধ্যে প্রায়ই এমন বাজি ধরা হয় । নিকিতা আস্তে আস্তে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল । ছেলেটা একমনে তখন কি যেন ভাবছে । -এক্সকিউজ মি ! ছেলেটা মুখ তুলে তাকাল ।

নিকিতা এমন একটা ভাব করল যেন খুব বিব্রত বোধ করছে ! -কয়টা কথা বলব ? ছেলেটা খানিকটা সময় নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইল । বলল -বল । নিকিতা খানিকটা অবাক হল । ছেলেটা ওকে তুমি করে বলছে । আচ্ছা পাজি ছোকরা তো ।

দেখতে মনে হয় এতো টুকু একটা ছেলে আবার তুমি করে বলছে । যাহোক ! অন্য সময় হলে নিকিতা রাগ করতো কিন্তু এখন এসব কিছু করা যাবে না । তাহলে বাজির পাঁচশ টাকা মিস হয়ে যাবে । নিকিতা খানিকটা হেসে বলল -বসে বলি ? -বস । বসে বল ।

আবার তুমি ! নিকিতা ভাবল তুমি যখন আমাকে তুমি বলছ আমি তোমাকে তুমি করে বলব । -আসলে তোমাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে খানিকটা কনফিউশন শুরু হয়ে । ছেলেটা এবার খানিকটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে নিকিতার দিকে তাকাল । খানিকটা হেসে বলল -তা কি কনফিউশন ? ছেলেটার হাসির মধ্যে কি যেন একটা ছিল । কেমন একটা বিষন্ব ভাব ! নিকিতা কিছুক্সন কোন কথা্য বলতে পারলো না ! কিছুটা সময় যেন কোথায় হারিয়ে ।

ছেলেটা বলল -বললে না কি কনফিউশন ? নিকিতা বাস্তবে ফিরে এল । নিকিতা যে কথা ভেবে এসেছিল তা সব ভুলে গেল । ছেলেটা বলল -কি ভুলে গেছ ? নিকিতা এবারও কিছু না বলে কেবল তাকিয়ে থাকল । -কি নাম তোমার ? -হুম ? -নাম ! নাম কি ? -নিকি । নিকিতা ।

-নিকিতা । নাইস নেম । খানিকটা জাপানিজ ভাব আছে । এখন বল কি কনফিউশন ? নিকিতা আর কিছু মনে না পড়ায় বলল -আসলে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল যে তুমি কলেজে পড় নাকি ভার্সিটিতে ? ছেলেটা হেসে উঠল । বেশ জোরেই হেসে উঠল ।

-তোমায় মনে হচ্ছে যে আমি কলেজে পড়ি ? -হুম । ছেলেটা আবার হেসে উঠল । -আসল ঘটনা বল ? -মানে ? -বললাম সত্যি কথা বল । নিকিতার মনে হল ছেলেটা যেন ধরে ফেলেছে ব্যাপারটা । ছেলেটার চোখ বলছে ! কি অদ্ভুদ সেই চোখের চাওনি ! যেন মনের সব কথা বুঝে ফেলছে ! ছেলেটা বলল -কত টাকা বাজি ধরেছ ? নিকিতা বুঝে ফেলল যে ছেলেটা বুঝে ফেলেছে ।

-কত টাকা বাজি ধরেছ ? -পাঁচশ ! -আর কি নিয়ে বাজি ধরেছো ? -তোমার কাছ থেকে হ্যামবার্গার খেতে হবে । ছেলেটা খুব হাসলো ! বলল -এখন কি হবে ! নিকি সত্যি জানে না এখন কি হবে ! টাকাটা ব্যাপার না । কিন্তু রুহীর কাছে নাক কাটা যাবে ! এর আগে যতবার বাজি ধরেছে ততবারই নিকি জিতেছে ! আজ কি হবে কে জানে? ছেলেটা কি যেন ভাবল । তারপর বলল -আচ্ছা আমি রাজি । আমি তোমাকে হ্যামবার্গার খাওয়াবো কিন্তু একটা শর্ত আছে ।

-কি শর্ত ? পাঁচশ টাকার অর্ধেক আমার । আর .. -আর ? হ্যাম বার্গারের টাকা তোমার কাছ থেকে যাবে । -কি ? -লাভ কিন্তু তোমারই হবে । আড়াইশ টাকা । হ্যামবার্গারের দেরশ টাকা গেলে একশ টাকা ।

আর বান্ধবীদেয় কাছে তোমার রেপুটেশন ! ভেবে দেখো । নিকিতা ভেবে দেখলো যে ছেলেটার কথা ঠিক আছে ! নিকিতা রাজি হয়ে গেল । ছেলেটা হ্যামবার্গারের অর্দার দিল । -তোমার টাকা কখন দিবো ? -এখন তো আর দিতে পারবা না , তোমার বান্ধবীরা দেখে ফেলবে । -তাহলে ? ছেলেটা মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল এখানে পৌছে দিও ।

নিকিতা কার্ডটা রেখে দিল । -আমি যদি টাকা না নিয়ে আসি ? ছেলেটা আবার হাসল । বলল -তুমি আসবে । আমি জানি তুমি আসবে । ছেলেটা এতো জোর দিয়ে বলল কিভাবে ? বাসায় এসে ও অনেকক্ষন ভাবল ।

কেবল ছেলেটার কথাই ভাবল । একবার ভাবল যে যাবে না কিন্তু শেষে যাবে বলে মনস্থির করল । করতে বাধ্য হল বলা চলে । কি একটা আকর্ষন ছেলেটার দিকে নিকিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ! নিকিতা কিছুই বুঝতে পারছে না । সব সমস্যা শুরু হয়েছে ছেলেটার হাসি দেখার পর ! নিকিতা কলেজ ফাঁকি দিয়ে পরদিন ডিবিবিএলের পান্থপথ শাখায় হাজির হল ।

রিসিপ্টশনে গিয়ে কার্ডটা দিয়ে বলল -আমি ইনার সাথে একটু দেখা করতে চাই ! সম্ভব হবে ! রিসিপ্টশনের মেয়েটা নিকিকে কিছুক্ষন দেখলো । বলল -আপনার পরিচিত ? -জি ! জি বলতে গিয়ে খানিকটা শংকিত বিধ করলো । যদি ছেলেটা মিথ্যা কার্ড দিয়ে থাকে ! অথবা অন্য কারো কার্ড ! যদি অন্য কেউ আসে ! তখন নিকি কি করবে ? নিকি ভেবেছিল মেয়েটা আরো কিছু প্রশ্ন করবে কিন্তু করলো না । কার্ড নিয়ে চলে গেল ! ফিরে এল কিছুক্ষন পরেই ! বলল -আমার সাথে এসো নিকি চুপচাপ মেয়েটার পিছু নিলো । ভিতরের এক ওয়েটিং রুমে নিকিকে বসিয়ে রেখে মেয়েটা চলে গেল ।

কিছুক্ষন পর নস্তা এসে হাজির । মেয়েটা বলল -আপনি নাস্তা করুন । স্যার একটু বিজি আছে ! -আমি কি তাহলে পরে আসবো ! -না না ! স্যার আপনাকে যেতে মানা করেছে ! আপনি আরাম করে বসুন ! কিছু দরকার হলেই আমাকে বলবেন । মেয়েটা একটা বেল দেখিয়ে বলল -এই যে কলিংবেল বাজালেই লোক হাজির হবে । টিভি দেখুন ! স্যার চলে আসবে ! মেয়েটা চলে গেল ।

আচ্ছা এমন কি হতে পারে যে ছঅন্য একটা লোক এসে হাজির হল । ওকে খুব ধমক দিতে লাগলো । অচেনা একজনের নাম নিয়ে চলে আসার জন্য বকা বকি করতে লাগলো ! লোকটা নিশ্চই ব্যস্ত মানুষ । সময়ের দাম আছে ! নস্ট করলে তো রাগ করতেই পারে । নিকিতার খানিকটা অস্বস্তি লাগছিল কিন্তু তবুও অপেক্ষা করতেই থাকলো ।

কারন আজ যদি নিকিতা চলে যায় তাহলে রাতে ও কিছুতেই ঘুমাতে পারবে না শান্তি মত ! যখন নিকির মনে হল যে ছেলেটা হয়তো আর আসবে না, ঠিক তখনই আবীর ঢুকল ! নিকি প্রথমেতো চিনতেই পারে নি । সেদিন একটা জিন্স আর টিশার্ট পরেছিল কেমন একটা ছেলে মানুষী ভাব ছিল ! আর আজ ফরমাল ড্রেসে কি রকম কর্পোটেট ম্যানের মত লাগছে ! ছেলেটা তাহলে সত্যি সত্যি চাকরী করে । আর ও কি না ছেলেটাকে তুমি করে বলেছে ! কি লজ্জার ব্যাপর !! আবীর বলল -খুব বেশিক্ষন অপেক্ষা করিয়েছি না? -না ঠিক আছে ! নিকিতা আসলেই বেশ সংকচ বোধ করছিল ! -এই নিন আপনার টাকা ! আবীর কিছুটা সময় চুপ করে থাকলো ! তারপর বলল - তুমি কেবল টাকা দিতে এসেছ ? নিকি কি বলবে ঠিক ভেবে পেল না । ও তো টাকা দিতে আসে নি । আবীর আবার বলল -আর তুমি সেদিন আমাকে তুমি করে বলছিলে ! -আমি তো বুঝতে পারি নি যে আপনি চাকরী করেন ! আমি ভেবেছিলাম.....।

-কি ভেবেছিলে? -যে আপনি আমার মতই কলেজে পড়েন ! আমি সরি !! আপনার টাকাটা নিন ! আবীর আবারও কিছুক্ষন চুপ করে থাকো । তারপর বলল তুমি কলেজ ফাকি দিয়ে এসেছ ? -হুম ! -কেন? টাকা দেওয়াটা তো এমন কোন জরুরী কিছু ছিল না । আর আমার যতদুর মনে হচ্ছে তোমার বান্ধবীরা এখনও তোমাকে টাকা দেয় নি । নিকিতা চোখতুলে আবীরের দিকে তাকালো । ছেলেটা কেমন করে সব বুঝে যায় ! আবীর আবার বলল -মানুষের মন বড় অদ্ভুদ হয় নিকি ! কখন কি হয় কখন কি করে বিঝা বড় মুসকিল ! যা হোক দেখি তোমার মোবাইলটা......।

নিকি চুপচাপ মোবাইল দিয়ে দিল । আবীর কিছুক্ষন মোবাইল টেপাটিপি করে বলল -এটা আমার নাম্বার ! আজ রাতে অবশ্যই আমার কাছে ফোন দিবা ! আজ আমি খুব ব্যস্ত তা না হলে তোমাকে যেতে দিতাম না ! আর টাকাটা রেখেই দাও ! তোমার কাছে পাওনা রইল !! আবীর ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিটে এল । যাবার একটু আগে আবীর নিকির হাতটা একটু স্পর্শ করে বলল -ফোন দিবা কিন্তু ! আবীরের অফিসের কাজ শেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল । অফিসে খুব ব্যস্ততা থকলেও মনের ভিতর কেমন একটা আনন্দ ছিল সারাটা সময় । নিকিতা এসেছে আজ ! ওকে যেতে দিতে মন চাইছিল না কিন্তু খুব জরুরী মিটিং ছিল ।

মিস করার কোন উপায় ছিল না । সমস্যা নাই ! এরপর থেকে সব হবে ! ঠিক এমন সময় আবীরের ফোন বেজে উঠল !! -হ্যালো ! -তোমার কাজ শেষ? নিকি?? -এইতো !!মোটামুটি ! -তোমার অফিসের সামনে যে কফি হাউজটা আছে আছ না ? -হুম !! -তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ১১ কাপ কফি শষ করেছি ! আর খেতে ভাল লাগছে না ! তুমি কি আসবে? -মানে?? আবীর বিশ্বাসই করতে পারছে না ! মানুষের মন আসলেই কতই না অদ্ভুদ হয় । কত পাগলামী না মানুষ করে !! কোন মতে কোর্ট টা হাতে নিয়ে দৌড় দিল দরজার দিকে । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।