আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সিংগাপুর ও মালেশিয়া ভ্রমন পর্ব(১)

........ আমরা ৩ জন যেতে চেয়েছিলাম ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ বালি আর মালেশিয়ায়। প্লেন ফেয়ার কমানোর জন্য, ইন্ডিয়া থেকে এয়ার এশিয়ায় মালেশিয়ায়, মালেশিয়ায় বিমান বদল করে বালি, বালিতে ৩/৪ দিন থেকে আবার সোজা মালেশিয়া । সেখানে ২/৩ দিন থেকে, ইন্ডিয়া হয়ে দেশে চলে আসবো, এরকম একটা ট্যুর প্ল্যান করলাম। প্ল্যান মত,ইন্টারনেট থেকে এয়ার এশিয়ার সস্তা টিকিট কাটা হলো । মালেশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার ভিসা নেওয়া হলো।

বাকি থাকলো ইন্ডিয়ার একটা ডবল জার্নি ভিসার। ইন্ডিয়ার ভিসা ব্যাপারে আমার এক্সপেরিয়েন্স মোটেও ভালো নয় ,তার উপর আবার ডবল জার্নি ভিসা। (গত বছর ভ্রমনের পরই ঠিক করেছি ব্যবসার কাজে ছাড়া আর কোনদিন ইন্ডিয়া যাবো না। ) কিন্তু সহযাত্রিদের সুবিধার কথা ভেবে নিমরাজি হলাম। যথারীতি বহুত ত্যানা প্যাচাপ্যাচির পর ,দু দুবার আবেদন করেও ডবল জার্নি ভিসা পাওয়া গেল না।

প্রথমে অতি বেয়াদপ মহিলাগুলা ,ভিসার ডকুমেন্ট গ্রহন করতেই রাজি হয় নাই। পরে ওদের এক বসের কাছে ক্লিয়ারেন্স নিয়া রিসিভ করেছে। তখনই ওরা বলল, "এজাতীয় ভিসা ঢাকা থেকে দেয়না। " তাহলে ওয়েবে এই অপশনটা রেখেছে কেন ? বাংলাদেশিদে জন্য ভিসা আইনে এই পয়েন্টগুলা মেনশন করতে পারতো। যতসব ফাউল কাজকাম।

অন্য তিন দেশের ভিসা জয়পুরহাটে একরকম ঘরে বসে পেয়েছি। কিন্তু দাদাদের ভিসা নেয়ার জন্য কাজকাম ফেলে দুই বার ঢাকা যেয়ে চার দিন থাকতে হলো। আর ফলাফল শুন্য। আসলে ইন্ডিয়া চায়না আমরা ওদের দেশে যাই। দাদাদের ভিসা না পেয়ে লস করে এয়ার এশিয়ার টিকিট ক্যানসিল করা হলো।

আবার প্লান করতে বসলাম ,কিভাবে সহজে এবং কম খরচে বালি আর মালেশিয়ায় ঘুরে আসা যায় । বালির কোন ডিরেক্ট ফ্লাইট না থাকায় মেইনলি ভেজাল টা লাগলো। কোনভাবে কিছুই মেলাতে পারছিলাম না । শেষে একটা সহজ উপায় বের হলো, সেটা হলো মালেশিয়ার একটা ডবল এন্ট্রি ভিসা নেয়া। তাহলে সস্তা এয়ার এশিয়া তে এই দুই দেশ আরামে ঘুরে আসা যায় ।

কিন্তু যেহেতু কিছুদিন আগেই মালেশিয়ার একটা ভ্যালিড ভিসা নেয়া হয়েছে, সেটা ক্যনসিল করে আবার ডবল এন্ট্রি ভিসার ঝামেলায় গেলাম না। তাই এই প্ল্যান বাতিল। আর একটা উপায় হলো, সিংগাপুর থেকে বালি, বালি থেকে মালেশিয়া , মালেশিয়া থেকে ঢাকা এইরকম একটা ট্রিপ প্ল্যান কর। কিন্তু এতে আবার খরচ বেশি হচ্ছে। ভেজালের শেষ নাই।

এই সব প্ল্যান করতে করতে ৩ মাস পার হয়ে গেল। এদিকে মালেশিয়া আর ইন্দোনেশিরার ভিসার ডেট শেষ হওয়ার পথে। এতসব ভেজাল দেখে আমাদের এক সহযাত্রি ট্যুর ইস্তেফা দিলো। বাকি থাকলাম আমি আর পিয়াস। শেষ মুহুর্তে আমি এক রকম ডেসপারেট হয়ে গেলাম, যে ভাবেই হোক, যেদিক দিয়েই হোক, সুজা হোক, আর বাকা হোক ,যেতেই হবে ।

কারন আমার সিংগাপুরের একটা ভিসা মিস আছে । এখন আবার পরপর এ দুটা দেশের ভিসা মিস হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। সিরিয়াল ৩ টা দেশে ভিসা নিয়া একটাতেও যাই নাই ব্যাপারটা এমন হয়ে যাচ্ছে। নেকষ্ট টাইম কোন এ্যামবাসিতে এটলিষ্ট ভিসার জন্য গেলে পিডাইতেও পারে। এ অবস্হায় ,আমি আর আমার বন্ধু পিয়াস ফাইনাল ডিসিশান নিয়ে নিলাম ।

আগে সিংগাপুর যাবো তারপর অবস্হা বুঝে ব্যবস্হা নেব। সিংগাপুর এমনিতেই ডবল এন্ট্রি ভিসা দেয়। যেটা আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট। খুজে খুজে আবার সস্তা এয়ারওয়েজ টাইগার বের করলাম। ওদেরকে দিয়েই ভিসা করালাম ।

ভিসা হাতে পেয়ে অবাক হলাম, এবার সিংগেল এন্ট্রি ভিসা দিসে। তাই টাইগারের রিটার্ন টিকেট আবার ক্যানসিল করলাম। এবার অবশ্য ডোনেশান দিতে হয়নি। কোথা থেকে কোথা যাবো তার ঠিক নাই। বাট শেষে মালেশি্যা থেকে দেশে আসবো, তাই ইউনাইটেড এয়ারের রিটার্ন কর্নফাম টিকিট কাটলাম।

টিকিট ক্যানসেল বা ডেট বদল করা যাবেনা ,এই শর্তে একটু কম টাকা লাগলো টিকেটে । হায়রে সস্তা ! সস্তা খুজতে খুজতে ঘাড়ে আর একটা দেশ এসে পরলো। আর সস্তার যে ত্রিশ অবস্হা হয় সেটা টাইগারে উঠে বুঝতে পারলাম। ওটা একটা নাইটমেয়ার ছিলো। যাউক গা, এতকিছু করে অবশেষে ২৩ জুন ভোর ৫ টায় সিংগাপুরের মাটিতে পা রাখলাম।

সিংগাপুর এয়ারপোর্টে টাইগার এয়ারওয়েজ আমাদেরকে বাজেট টার্মিনালে নামিয়ে দিল । বাজেট টার্মিনাল ডমেস্টিক এয়ার আর টাইগারের মত বাজে প্লেন গুলার জন্য বরাদ্দ। চাংগি এয়ার পোর্টের বাজেট টার্মিনাল দেখে নিজের দেশের এয়ারপোর্টের দীন্যতা আর অব্যবস্থাপনার কথা মনে করে খুব খারাপ লাগলো। ইমিগ্রেশান এর ভেতরে নোংরা টয়লেট ব্যাবহার করতে বমি এসে গিয়েছিলো । ইমিগ্রেশানে পুলিশ হুদাই সময় নষ্ট করলো।

আমার ৮ বছরের পুরানো হাতে লিখা পাসপোর্টের ছবি পুরাতন হয়ে গিয়েছে। এখন একটু মোটাসোটা হয়ে গেছি। এই নিয়ে গ্যাজানো । অনেক সময় নিয়ে আমাকে ঝামেলায় ফ্যালানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে শেষে ডিপার্টাচার সিল মেরে দিলো । সিংগাপুরের ইমিগ্রেশানে অফিসার এক ঝুরি চকলেট নিয়া বসে আছে।

মাত্র দুটা প্রশ্নের জবার দিতে হয়েছে। তারপর ইমিগ্রেশানের অফিসার হাসি মুখে ওয়েলকাম টু সিংগাপুর বলে পাসপোর্টে এরাইভাল সিল মেরে দিলো। সেখানেই ঠিক করলাম বালি মালিতে গিয়ে আর কাজ নাই। সিংগাপুরেই ট্যুরের অর্ধের সময় কাটিয়ে মালেশিয়া চলে যাবো। এয়ারপোর্ট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড (এম আর টি) ট্রেনে লিটিল ইন্ডিয়া চলে এলাম।

সেখানে হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করলাম। ( উইকি ট্রাভেল আর গুগুল ম্যাপ এর কল্যানে ডেস্টিনেশান গুলা পানির মত সোজা হয়ে গেছে কোন ঝামেলা হলো না। ) তারপর ছুটলাম http://www.sentosa.com.sg/en/' target='_blank' >সেনটোসা আইল্যন্ডের দিকে। শুরু হলো আমাদের ঝটিকা সিংগাপুর এক্সপ্লোরিং । সেনটোসা তে ছোট ছোট সুন্দর কিছু বিচ আছে ।

বিখ্যাত http://www.underwaterworld.com.sg/' target='_blank' >আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড , ইউনিভারসেল স্টুডিও ক্যাসিনো ছাড়াও অনেক কিছুই আছে সেনটোসাতে । আর আছে সেরকম সেরকম কাপরচোপর পরা মানুষজন । এ ব্যাপারে একটা কথা না বললেই নয়, সেটা হলো সেনটোসায় ঘুরতে ঘুরতে চোখে পরলো বিকিনি পড়া কিছু মেয়ে স্টেজে র্যাম্প করছে। ওটা একটা ইভেন্ট ছিলো যা রেগুলার হয় না । মিস সিংগাপুরিয়ান বিউটি কনটেস্ট চলছিলো মনেহয় সেখানে অনেক ভীর ছিলো।

সবাই ছবি তুলছে মডেলদের। চামেচামে আমিও কিছু তুলছি। পরে জনপ্রতি ৫০ ডলার দিয়ে আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড এ ঢুকেছিলাম। শার্ক ধন্যবাদ আজ এ পর্যন্তই। পরের পর্বে সিংগাপুর মেরিনা বে আর রিভার সাইড এর ছবি এবং বর্ননা থাকবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।