আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন এবার দেখে নেই ইতিহাসকে রঙ্গিন করার কিছু প্রয়াস

আমাদের সবার মনেই কম বেশি প্রশ্ন জাগে,ইতিহাসকে কি রঙ্গিন করা যায় কিনা?অনেকে আবার এরকম প্রশ্ন শুনে পাগলও ভাবতে পারে যে,ইতিহাস তো ইতিহাসই,এটাকে আবার কিভাবে রঙ্গিন করা যাবে?আসলে ইতিহাসকে রঙ্গিন করা যায় না কিন্তু যে ছবিগুলো ইতিহাস হয়ে আছে,আধুনিক টেকনোলজি কিংবা ফটোশপ দিয়ে হয়তোবা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে যে,অনেকদিন আগের সেই সাদাকালো দিনগুলোকে রঙ্গিন করলে মুহূর্তগুলো কেমন হবে?একটিবার ভাবুন তো,আজকে হুমায়ুন স্যার মৃত কিন্তু উনার সৃষ্টিগুলো যেমন ধরেন কোথাও কেউ নেই এর বাকের ভাই কিংবা অয়ময় এর অত্যাচারী জমিদার এসব চরিত্রগুলো যদি অনেক সুন্দর প্রিন্টে আমাদের সামনে আসতো,তাহলে কত ভালই না হতো? যাই হোক,মূল কথায় আসি,আমার গত পর্বের মত এবারও ইতিহাস নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে তবে এবারেরে ইতিহাস আর সাদাকালো থাকছে না,এবার ইতিহাসকে দেখবো রঙ্গিন চোখে। এই ছবিটি ব্রিটিশ গুণী পরিচালক তথা প্রযোজক Alfred Hitchcock এর,যিনি কিনা বহু সফল ছবির স্রস্টা। কেউ কেউ উনাকে সাসপেন্সের জনকও বলে থাকেন। আপনারাই দেখে বলুন উনাকে রঙ্গিন দুনিয়াতে কেমন লাগছে। ১৯৫৭ সালে ৪০ জন কৃষ্ণাঙ্গ আবেদন করে শ্বেতাঙ্গদের স্কুলে ভর্তি হবার জন্য,তন্মদ্ধে মাত্র ৪ জন সুযোগ পায় Harry Harding High School এ ভর্তি হবার।

কিন্তু সুযোগ পাওয়াটাই শেষ কথা ছিল না, ছবির এই বালিকা Dorothy Counts স্কুলের প্রথম দিন থেকেই অসহনীয় বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন,ভালো করে লক্ষ করলে দেখবেন এই ছবিতেও কিছুটা বুঝা যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে মাত্র ৪ দিনের মাথায় Dorothy Counts এর বাবা-মা তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে নেন। বর্ণবাদের এই সাদাকালো মুহূর্তটিকেও একটু রঙ্গিন করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৪৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকগুলি নিউক্লীয় অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়,এই পরীক্ষাটির নাম ছিল ''Operation Crossroads''। সমুদ্রগামী জাহাজ তথা নৌ-বহরের উপর নিউক্লীয় অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্যই আবির্ভাব ঘটেছিল ''Operation Crossroads'' এর।

যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সাংবিধানিক সংকট থেকে যিনি উদ্ধার করেছিলেন তিনি হচ্ছেন আব্রাহাম লিঙ্কন। বলা বাহুল্য যে,আব্রাহাম লঙ্কন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ তম প্রেসিডেন্ট,উনার হাত ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এসেছিলো আধুনিকতার ছোঁয়া। Winston Churchill,ব্রিটিশ কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদ,উনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের নেতৃত্ব দেবার জন্য ইতিহাস সেরা হয়ে আছেন। উনার নেতৃত্বকে অনেকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচনা করেন। আমার আগের পোস্টেও এই ছবিটি দিয়েছিলাম,২য় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণীয় বিজয়ের মুহূর্তটিকে রঙ্গিন করতে ভুলেন নি ফটোগ্রাফার।

প্রসঙ্গত,যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ার থেকে অক্টোবর ১৫,১৯৪৫ সালে এই ছবিটি তোলা হয়। জাপানিজদের আত্মসমর্পণ করার কথা পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ আনন্দে রাস্তায় নেমে এসেছিলো। আনন্দের আতিশয্যে এই সৈন্য একজন নার্সকে ধরে চুমু খাচ্ছে,রসিক ফটোগ্রাফার সেই দৃশ্যই ধারণ করেছেন। এই ছবিটিও ছিল আগের পোস্টে । তারপরেও ইতিহাসটা আবার বলছি,অভাবের তাড়নায় মানুষের হতাশার দৃশ্য ফুটে উঠেছে Dorothea Lange র তোলা এই ছবিতে,এখানে দেখা যাচ্ছে ৩২ বছর বয়সী ৭ সন্তানের জননী Florence Owens Thompson কে যিনি কিনা নিজের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে থাকা তাঁবুখানিও বিক্রি করে দিয়েছেন সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য।

এই ছবিটি সুইডিশ নাট্যকার,ঔপন্যাসিক তথা কবি August Strindberg এর,চার দশকেরও বেশি সময় ধরে উনি ৬০ টির মতো নাটক লিখেছিলেন। উনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হচ্ছে The Red Room ,Inferno,To Damacus,Miss Julie. নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নরওয়ের বিজ্ঞানী এবং কূটনীতিক Fridtjof Nansen,উনি একজন এক্সপ্লোরারও ,নর্থ পোল এক্সপেডিশনে উনি রেকর্ড করেছিলেন। এই ছবিটির সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত,পদার্থ বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো ১৯২১ সালের নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী তথা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী Albert Einstein যার আবিষ্কৃত সুত্র E = mc2 কে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সমীকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধরা হয়। এই ছবিটা আপলোড দেবার সময় নিজেকে কেমন জানি বান্দর বান্দর মনে হইতেছিল,ইদানিং আমার ছোটো ভাগ্নির বাঁদরামি দেখলে আমার নিজেরও মনে হয় উনি ঠিক বলছিলেন । Charles Darwin,১৮৫৯ সালে প্রকাশিত On the Origin of Species বইয়ে উনি বিবর্তনবাদকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং স্থান করে নিয়েছিলেন ইতিহাসে।

রিপাবলিকান নেতা আমেরিকার ২৬ তম প্রেসিডেন্ট Theodore Roosevelt,যিনি Progressive Movement এরও অন্যতম নেতা ছিলেন। মাত্র ৪২ বছর বয়সে আমেরিকার নেতৃত্ব ভার গ্রহন করা এই রাজনীতিবিদ হচ্ছেন আমেরিকার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট,উনি নোবেলও জিতেছিলেন ১৯০৬ সালে। উনার কলে এইটা উনার নাতি কিনা আমি ঐটা বের করতে পারি নাই ২য় বিশ্বযুদ্ধের লন্ডন বোমা হামলার পর এই ছেলেটিকে এভাবেই পাওয়া গিয়েছিল। জুন ১১,১৯৬৩ সালে কম্বডিয়ান এম্বাসির সামনে Quang Duc নামের এই বৌদ্ধ ভিক্ষু নিজের গাঁয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। দক্ষিণ ভিয়েতনামের শাসক গোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরনের প্রতিবাদে এভাবেই নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন Quang Duc,ছবিটির রঙ্গিন সংস্করণে মনে হচ্ছে যেন আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে এই ঐতিহাসিক আত্মাহুতি।

Anne Frank,নিজের ডায়েরিতে হলোকস্ট এর কিছু বর্ণনা লিখে গিয়েছিলেন,তার ডায়েরির ভেতর এই ছবিটি পাওয়া যায়। পোস্টের শেষে সেই রঙ্গিন পরশ বুলানো ব্যাক্তির পরিচয় দেব বলে ঠিক করেছিলাম। আজ্ঞে সবাই ঠিক ঠিক ধরতে পারছেন,আমি, হ্যাঁ আমিই ছবিগুলো রঙ্গিন করছি । অনেক কষ্ট হইসে কিন্তু রোজার মাসে আপনাদেরকে নির্মল বিনোদন দেবার জন্য আমি এই ত্যাগটুকু স্বীকার করেছি । বি; দ্র; Sanna Dullaway নামের একজন ফটোগ্রাফার এই সাদাকালো ইতিহাসগুলোকে রঙ্গিন করার চেষ্টা করেছেন, ইতিহাসকে এই রঙ্গিন করার প্রয়াস কতখানি সফল হয়েছে সেটা বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম আপনাদের উপর।

[ চলবে] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.