আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Child Sex Abuse(শিশু যৌন নির্যাতন)ও প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, এর থেকে শিশুকে বাঁচানোর উপায়।(যাদের শিশু সন্তান কিংবা ছোট ভাইবোন আছে তাদের জন্য )

" বনেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে " আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আমরা সবাই এটা বিশ্বাস করি। এই সদ্য পুষ্ফুটিত কলিটি একদিন হবে ফলদায়ী বৃক্ষ। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ । কিন্তু আপনার শিশুটি কি সেই নিরাপদ পরিবেশ পাচ্ছে??? একটু ভেবে দেখুন । ।

সে যাদের সাথে খেলছে, সে যাদের কাছ থেকে আদর পাচ্ছে (বিশেষত আপনার আত্মীয়স্বজন), আপনার পাড়াপ্রতিবেশি, যেখানে বেশিক্ষন সময় থাকছে, যারা আপনার বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে……… এই সব কিছুই তার জন্য নিরপদ কিনা? ভেবেছেন ……তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এবার আসুন একটা ঘটনা শুনি… ছোট দশ বছরের সোনামনি শশী। নিজের ছোটজগতে যে ছিল রাজকন্যা। সারাদিন বাড়ি মাতিয়ে রাখত, সাথে সাথে সবাইকে। কিন্তু হঠাৎ করে সে নিজেকে গুটিয়ে নিল।

কারো সাথে তেমন কথা বলে না, স্কুলে যেতে চায় না। সারাদিন জানালায় দাড়িয়ে আকাশ দেখে কিংবা সবার অগোচরে কাদে। । কি হল এক ছোট পরীটির?? বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারল না…… সেই ছোট শশী এখন আর ছোটটি নেই। এখন সে BBA পড়ছে।

তার সাথে আমার সম্পর্ক সেই ছোটবেলা থেকে। সম্পর্কে ফুফাত বোন। তবে আমি ওকে কখন ঘাটতাম না। তবে বেশ কয়েক মাস আগ থেকে তার সাথে আমার ভালো একটা বন্ধুত্তপূর্ণ সম্পর্ক তৈ্রী হয়েছে। আমার সাথে সব কিছু শেয়ার করে।

একদিন এসে আমাকে বলে তোকে একটা কথা। ও তার ছোট বেলার সেই নিজের বদলে যাওয়ার কারনটা বলে শুনালো, তার নিজের ভাষায়, “একদিন আমি সোফায় বসে টিভিতে কার্টুন দেখতেছি। বাসায় কেউ ছিল না শুধু কাজের মেয়ে বাদে, আব্বু-আম্মু দুজনে চাকরিতে গেছেন আর আমার স্কুল বন্ধ। তখন আমার এক বড় চাচ্চু(দুরসম্পর্কের) বাসায় আসেন। ওনার বয়স তখন ৪০ এর আশেপাশে হবে।

আমার ভালই লাগছিল ওনাকে দেখে। কারন ওনি অনেক মজার মানুষ, খালি হাসাতে পারেন। আমাকে দেখে বলল কি করছ তুমি?? আমি বল্লাম…কাটুন দেখি। তারপর আমারে বলল, তোমার রুমে যাই। তোমাকে আজ অনেক মজার মজার গল্প শোনাব।

আমি রাজি হয়ে রুমে গেলাম। ওনি গল্প বলা শুরু করলেন আমারে কোলে নিয়ে। গল্প বলে চলেছেন, মাঝে মাঝে আমাকে হাতটা আমার উরুতে দিচ্ছেন আর আমাকে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন গল্পটা কেমন লাগছ। আমি বলতাম ভাল। তখনো ওনার ব্যাবহার অন্য রকম কিছু লাগে নি।

কিন্তু কিছুক্ষন পর ওনি আমার দুপায়ের মাঝে হাত দেয়া শুরু করেছেন। আমার অসস্থি লাগতেছিল। কিছুক্ষন পর ওনি গল্প বলা বন্ধ করে আরো বেশি শুরু করলেন। আমি ওনারে বললাম চাচ্চু এসব কি করেন। ওনি আমারে ধমক দিয়ে চুপ করতে বললেন।

তারপর আমার মুখ চিপে যা যা করলেন আমি আর বলতে পারব না”। এই বলে শশী দুকড়ে কেদে উঠল। আমি কি বলব ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। শুধু চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। এই ঘটনা শুনার পর থেকে মনে হচ্ছিল ব্লগে সবাইরে এই বিষয়ে সতর্ক করা দরকার তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য কিংবা ছোট ভাই বোনের জন্য।

শিশু যৌন নির্যাতন কি?? আমাদের ছোট ছোট সোনামনি যাদের বয়স ০-১৪ তারা যদি শারীরিক কিংবা অন্য ভাবে কোন খারাপ দৃশ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌনভাবে কোন কিছুর শিকারকে শিশু যৌন নির্যাতন বলা হয়ে থাকে। এটার মধ্যে পড়ে ১। শিশু ধর্ষন ২। শিশুর সংবেদনশীল স্থানে হাত দেয়া ৩। গোপন স্থান দেখার জন্য শিশুকে তার কাপড় খুলতে বাধ্য করা ৪।

শিশুর অশ্লীল ছবি তুলতে বাধ্য করা ৫। শিশুকে জোরপুর্বক খারাপভাবে চুমু খাওয়া ৬। শিশুকে অশ্লীল ছবি দেখানো। বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে শিশু যৌন নির্যাতন শারীরিক ভাবে অক্ষম শিশুদের(children’s with disabilities) যৌন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে বাংলাদেশ প্রতিবাদী ফাউন্ডেশন ও & সুইডেন &ডেনমার্কের Save the Children যৌথ সমীক্ষা চালায়। কারা যৌন হয়রানির শিকার সমীক্ষায় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা,খুলনা,বরিশাল,সিলেট এই ছয়টি বিভাগীয় শহরে জরিপ চালায়।

এতে ২১৬ জন অক্ষম শিশু এবং ৫৩৫ জন এডাল্ট মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এরা সবাই যৌন স্পর্শ ও যৌন নির্যাতন এই বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়। এ থেকে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা আমার কল্পনার মধ্যে ছিল না। দেশের ৫০% শিশু এই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তার মানে প্রতি দু’জন শিশুর মাঝে একজন এই বিষের ছোবলে পড়ছে। একটু ভাবুন তো আপনার ছোট শিশুটি নিরাপদ??? এর পরের তথ্যটি শুনলে আপ্নাদের গা শিউরে উঠবে।

এদের মধ্যে ৯১% শিশু সাধারণত মামা, চাচা ও পরিচিত আত্মীয় স্বজন কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আদরের ছলে বিভিন্ন ধরনের অশোভন আচরণ, যৌন ইঙ্গিত ও স্পর্শ থেকে আরম্ভ করে ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন সহিংসতা এই খুব নিকট আত্মীয় স্বজন কর্তৃক ঘটে থাকে। আমরা অনেকেই মনে করি মেয়ে শিশুরাই যৌন নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়। কিন্তু ছেলে শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার। সেই সমীক্ষায় দেখা যায় যে সব শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয় তাদের ৫২ ভাগ মেয়ে আর ৪৮ ভাগ ছেলে।

ছেলের % টা একটু বেশি লাগছে তাই না, আসলে মেয়েদের ঘটনাগুলো বেশি ফ্লাশ হয় বলে আমরা যৌন নির্যাতন বলতে শুধু মেয়েদের ঘটনা বুঝে থাকি। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু শিশু যৌন নির্যাতনের কাহিনী এখানে বেশির ভাগ ঘটনা বাহিরের লোকজন দ্বারা সংঘটিত কারন আত্মীয় স্বজন কর্তৃক সংঘটিত ঘটনা বেশির ভাগ ফ্লাশ হয় না। ১। মহেশখালীতে ৬ বছরের শিশু ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার ২। চাটমোহরে শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন ৩।

চতুর্থ শ্রেণীর শিশু, ধর্ষণের শিকার এবং ওপারে যাত্রা, আর আমরা? ৪। ছেলে শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৫। পঞ্চাশ শিশুকে যৌন নির্যাতন ৬। ১২ বছরের শিশুরও রক্ষা হল না যৌন নির্যাতনের হাত থেকে ৭। পথশিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকা হচ্ছে... এখানে অল্পকিছু বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিদিন এইরকম অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ঘটছে। কারা নির্যাতনকারীঃ আমি আগেই বলেছে নিকট আত্মীয় স্বজন কর্তৃক বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। নিকট আত্মীয় বলতে চাচা,মামা,খালু এমনকি বাবা। দুরসম্পর্কের নানা,দাদা,ভাই,এর দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে। এছাড়া প্রতিবেশি, বাবা মার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব,স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক(এর দ্বারা এসব বেশি ঘটে), যারা বাড়িতে বেশি আসা-যাওয়া করে এবং শিশু যাদের বাড়িতে বেশি যাওয়া আসা করে।

এছাড়া বাহিরের অপরিচিত লোকজন তো আছে। এই নির্যাতন একবার কিংবা ক্রমাগত ঘটে যেতে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় বাচ্চারা তাদের অভিভাবকে এই বিষয় সম্পর্কে অবগত করে না। তার কারন __অপরাধবোধ ও ভয়(বেশিরভাগে মনে করে বাবা মা এসব শুনলে কি বলবে, আমার সম্পর্কে কি মনে করবে। এর পিছনে যে বিষয়টি কাজ করে তা হল বাবা মায়ের সাথে সন্তানের একটা দুরত্বপুর্ন সম্পর্ক।

) - লজ্জাবোধ থেকে কিছু বলতে পারে -বাবা মায়ের প্রতি অতটা নির্ভর করতে পারে না। তারা তার কথা বিশ্বাস করবে না এই রকম একটা ধারনা তার মধ্যে তৈরি হয় বলে -আরেকটি কারন আছে, যারা নির্যাতিত হয় তাদের ৩৮% জানেই না যে তাদের সাথে কি হচ্ছে, তাদের সে সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। সে জন্য এই ৩৮% যৌন নির্যাতনের শিকার শিশু তারা বাবা মাকে কি বলবে তাই বুঝতে পারে না। তারা যদি বলেও ফেলে ওনি আমার সাথে এই রকম করেছে, আমার এখানে হাত দিয়েছে, তাহলেও বাবা মায়েরা তাদের বলে তারা ফাজলামি করেছে বা অন্য কিছু বলে বসে তখন আর শিশুটির কিছুই করার থাকে না। তাহলে আমরা কি করতে পারি??? ১।

সন্তান্দের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা যেন তারা আপানাকে সব বিষয়ে ভরসা করে। যে কোন কথা আপ্নার কাছে বলতে দ্বিধাবোধ না করে। সব সমস্যার কথা আপ্নাকে বলতে পারে। ২। সন্তানদের গল্পের ছলে ছলে ঘটনা বলে বলে যৌনশিক্ষা দিতে হবে।

তাকে এতটুকু বিশ্বাস করাতে হবে আপ্নি যা বলছেন সব সত্য। এসব তার জীবনেও ঘটতে পারে। ৩। তাকে তার শরীরের সংবেদনশীল স্থানগুলো সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। পশ্চাতদেশ, বুক কিংবা দুই পায়ের মাঝে কেউ যেন হাত না দেয়।

বাবা-মা দাদা-দাদি(তাও প্রয়োজনে) কিংবা ডাক্তার বাদে কেউ যেন হাত না দেয়। দিলে ওখান থেকে চিৎকার দিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। এগুলো কিভাবে আপনার শিশুটিকে বলবেন তা নিচের ভিডিও এর শেষের অংশে আছে। দেখে নিতে পারেন Satyamev Jayate - Child Sexual Abuse ভিডিও সবিশেষে বলতে চাই,নির্যাতন প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ বিষয়টি শনাক্তকরণ। নির্যাতনের লক্ষণ স্পষ্ট হলে পিতামাতার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত।

নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণ প্রয়োজন। নিরাপত্তার কারণে মারাত্মক পরিস্থিতিতে পিতামাতা কিংবা আত্মীয়স্বজন থেকে শিশুকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিশু ও পরিবারকে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সামাজিক সহায়তা দিতে হবে। শিশু লালনপালনে পরিবারের অস্বাভাবিক ধ্যানধারণা পরিবর্তনের সহায়তা করা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, জেনারেল ফিজিসিয়ান, শিশুরোগ ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা, পুলিশ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সঙ্গে জড়িত।

নির্যাতিত শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির যথাযথ প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। শিশুরা ভবিষ্যতের কর্ণধার। সুন্দর ও সুখী ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক শিশু প্রতিপালন। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন সবার নৈতিক দায়িত্ব। সহযোগিতাঃ ১।

Child sexual abuse ২। Bangladesh Protibondhi Foundation (BPF) and Save the Children Sweden-Denmark ৩। Is home the safest place for girls? ৪। Bangladesh disabled children sexually abused ৫। প্রতিরোধ করতে হবে শিশু নির্যাতন সবাই ভালো থাকবেন।

নিজেদের সন্তানকে নিরাপদে রাখবেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।