আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রসিকালী দাদা'

We have a best in our self and I have unlashed mine. YEAH, I FEEL COOL!!! বাগানের ঠিক মাঝখানে একটা টেবিল এবং দুইটা চেয়ার। ল্যাপটপের বাম পাশে খালি চা’র কাপ। বাতাসে অভিধানের পাতা উড়ছে। ল্যাপটপের পর্দায় লেখা, ‘ছড়ারা আজ কাল সোনাচড়াই হয়েছে। তাল ছন্দ মাত্রা এবং ভাব রস ঠিক রাখতে হলে অনেক খোঁজাখোঁজি করতে হয়।

কোনো কোনো দিন তো বিহানে শুরু করলে রাত নিশা হয়ে যায় তবুও মনোমত শব্দে মনের ভাব প্রকাশ হয় না। ’ লীলাচঞ্চল বাতাসে বনফুলের সুবাস। মহুয়া ডালে বসে একটা পাপিয়া গা ঢাকা দিতে চাইছে। দেখতে বহুদর্শী প্রবিণ লোক বাগানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। কিশোর-কিশোরী উনাকে রসিকালী দাদা ডাকে।

ছড়া লিখার জন্য জুতসই শব্দ খোঁজে না পেয়ে ফুল কলি আর ভ্রমরীর সাথে গল্পগুজব করছিলেন। স্কুল ছুটি হলে টোনি টুনি বাগানে এসে দেখে দাদা ব্যস্ত। উনাকে বিরক্ত না করে ওরা পা গোল করে টেবিলের পাশে বসলে পাপিয়া ডাকতে শুরু করল এবং শব্দরা ছট-ফট বন্ধ করে ফটাফট ধরা দিতে লাগল। দাদা তড়বড় করে হেঁটে এসে চেয়ার টেনে বসে পলকে ছড়া একটা লিখে টোনা আর টুনিকে শুনাতে লাগলেন। এমন সময় টুনির এক বান্ধবী বাগানে উঁকি দিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ‘এই সই, দাদা কোথায়? দাদী রেগেমেগে ভাণ্ডার ভেঙ্গে ফেলছেন।

নুন মরিচ নাকি ফুরিয়েছে। ’ টুনি দাঁড়িয়ে টুনটুন করে বলল, ‘দাদাজান, বাজারে যেতে হবে। হাড়িঠেলার মশলা নেই। রাতে কি খাবো?’ ‘ওরে বাসরে! তুই তো ষোলআনা সংসারী হয়ে গেছিস। তোর দাদীকে এই ক্ষণে বলতে হবে।

’ বলে দাদা ল্যাপটপ টুনির হাতে দিয়ে টোনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু দিয়ে ইশার করে বললেন, ‘আমার সাথে বাজারে যাবি?’ ‘আমি আপনার বেগার নাকি যে ব্যাগ বওয়ার জন্য পিছে পিছে যাবো?’ বলে টোনা ল্যাপটপের দিকে তাকাল। টুনি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, ‘দাদার ছড়া পড়ার বয়স এখনো তোমার হয়নি। যাও, আরো কয়েক হায়ন দাদার বেগারি করো যেয়ে। ’ ‘এই টুনি! আজ তুই বেশি টুন টুন করছিস। আমার বাড়ি বুঝি যেতে হবে না?’ টোনা চোখ পাকিয়ে বলল।

টুনি আবার মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, ‘তোমার বাড়ি আমি যাব কেন? আমার দাদার বেগার হওয়ার জন্য কত জন আমাকে দৈনিক মিনতি করে। কাজ নেই বলে আমি তাদেরকে বিদায় করি। তোমার মত গবেটের সাথে কথা বলতেও মন চায় না। যাও! দাদাজানের সাথে বাজারে যাও নতুবা হিতে বিপরীত হবে। ’ দাদা মুচকি হেসে হাঁটতে শুরু করে বললেন, ‘এই টোনা আমার সাথে আয়।

টুনি, নতুন ছড়া গুলো পড়ে দেখ তো ছন্দ মাত্রা ঠিকঠাক আছে কি না?’ ‘জি আচ্ছা দাদাজান। দাদাজান, আমার আলতা কুমকুম ফুরিয়েছে। থোড়া আনা যাবে?’ ‘আর কিছু লাগবে?’ ‘দাদীজানের জন্য মালিশ লাগবে। ’ ‘ঠিক আছে তোর বান্ধবীকে আসতে বল। পলাশগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে।

’ বলে দাদা দ্রুত পাকঘরে এসে ইলাহি কাণ্ড দেখে ব্যস্তসুরে বললেন, ‘টোনার নানি কি হয়েছে, তাড়ু দিয়ে হাড়ি বাজাচ্ছো কেন?’ ‘হাড়ি ঠেলার মশলা নেই তাই আমি তুড়ি বাজাচ্ছি। ’ ‘তুড়ির অর্থ তো চুটকি। ’ দাদা অবাক হয়ে বললেন। ‘স্ফূর্তির বশে হঠাৎ-তিড়িং লাফ দেওয়াকেও তুড়ি বলে। ’ ‘তা তো জানি।

কিন্তু হাড়ি বাজাচ্ছো কেন?’ ‘আমি তুড়ি বাজাতে পারি না তাই অবাধে জয়ী হওয়ার জন্য হাড়ি বাজাচ্ছি। বাজারে কখন যাবেন? খাবার পানীয় খেয়ে আর যেন কোনো কাম কাজ নেই। দিন রাত অভিধান দেখে ল্যাপটপে টিপা-টেপা আর টিপ-টিপানি। ’ বলে দাদী দাঁত কটমট করে কপালে আঘাতে করলেন। ‘তোমার বিধূবদন দেখলে বুকে টিপ টিপ করে গো মনে ছট-ফটানি।

গোপন চিমটির অর্থ টিপুনি গো বউ তুমি উরে আসলে হয় মোর অন্তরটিপুনি। ’ বলে দাদা শরীল কাঁপিয়ে হাসলেন। টোনা দরজার আড়ালে ছিল। দাদার ছড়া শোনে টিপ্পনী দিয়ে বলল, ‘হায় রে টিমটিমানা! টিপিটিপ করে টিফিন ফুরিয়েছে রাই জিরা আর কাবাবচিনি। ’ দাদা চমকে উঠে পিছন ফিরে কপাল কুঁচকে বললেন, ‘তুই কবে ছন্দের রাজা হলে?’ ‘আপনার আদরের নাতনি টুনি একটা পাকা রাঁধুনি।

তাই আমিও কড়াইশুঁটি চাষ করব কামিনী। ’ বলে টোনা মাথা দোলাল। দাদা কপাল কুঁচকে অনুপল চিন্তা করে বললেন, ‘মানলাম গোলাপসরুতে ছন্দ মিলত না, কিন্তু দাদখানি অথবা চামরমণি না বলে কামিনী বললে কেন?’ ‘গোপন চিমটির অর্থ টিপুনি হলে অন্তরটিপুনি হয় কেমন করে?’ বলে টোনা মাথা দিয়ে ইশারা করল। ‘এই বিষয়ে আমার যথেষ্ট জ্ঞান নেই রে ভাই। তোর নানিকে জিজ্ঞেস কর।

হায় রে হায় সবটার বড়টায় আজ আমাকে জেঁতেছে রে। ’ বলে দাদা দু হাতে মাথা ধরে নাড়লেন। দাদী মুখের ভাব বদলালে টোনা মাথা নেড়ে বলল, ‘এই সব শব্দের অর্থ নানিজানকে জিজ্ঞেস করা যাবে না। ’ ‘ঠিক আছে টুনিকে ডাকছি। আনন্দময়ী! এদিকে আয় তো।

ও টোনা মাথা ঘুরিয়ে দেখ, তোকে আচ্ছাসে ঠ্যাঙাবার জন্য ঠ্যাঙা নিয়ে আসছে টুনি। ’ ‘আপনি এদেরকে টোনা টুনি ডাকেন কেন? আর ওর নাম তো সুহাসিনী। ’ দাদী কপাল কুঁচকে বললেন। দাদা চিন্তিত হয়ে বললেন, ‘টুনির নাম তো আনন্দময়ী রেখেছিলাম। সুহাসিনী কে রেখেছে?’ ‘নানাজান! টুনিকে থামালে ভালো হবে, নতুবা বন্ধ করবে আমার ধুকপুকানি।

’ টোনা ব্যস্ত সুরে বলল। ‘ডর ভয়ে বুকের ভেতর ধক ধক ধুকুৎ করে কান পাতলে শোনি, জবরজং ধুকপুকানির অর্থ আমি তো না জানি?’ বলে দাদা মাথা নাড়লেন। ‘আমাকে বাঁচাও গো নানি!’ বলে টোনা নানির পিছনে লুকাল। ‘নানির বগলে লুকালে ধুকপুকানি বন্ধ হবে না। আমার সাথে আয়, মজা করতে পারবি।

’ বলে দাদা বিদ্রুপ হাসলেন। টোনা কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘এই বয়সে ব্যাগ বওয়া শুরু করলে জীবনভর বেগারি করতে হবে তো। ’ ‘অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিনা বেতনে কাজ করার অর্থ বেগার্ত। চল!’ বলে দাদা হাসতে হাসতে হাঁটতে শুরু করলেন। টোনা দৌড়ে দাদার পাশে এসে বলল, ‘বেগার্ত বললেন কেন?’ ‘বেকারির জ্বালা ভালো লাগে না তাই বেগার্ত বলেছি।

তোর সমস্যা হচ্ছে নাকি?’ ‘বেকারত্ব না বলে বেগার্ত কেন বললেন?’ ‘একটু অপেক্ষা কর সব বুঝতে পারবি। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.