আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলক না ফেলিতে হারাইয়া ফেলি চকিতে

সত্যবাদী রোজ সকালে মোবাইলের অ্যালার্মটা শুনে হড়মুড় করে উঠে পড়ি। আজও এর ব্যতিক্রম হল না। পার্থক্য শুধু, আজ এত সকালে উঠবার প্রয়োজন ছিল না। সুন্দর কি যেন একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। অনেক কষ্টার্জিত ছুটির শুরু আজ থেকেই, এবং ঘুম ছাড়া আর কোন কিছুই লিস্টে নেই।

প্রতি রাতের অভ্যাস মত অ্যালার্মটা গত রাতে সেট করাতেই এই বিপত্তি। একরাশ বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজেকে ছুড়ে ফেললাম নরম বালিশটার ওপর। আজ কোনভাবেই ১১ টার আগে চোখ মেলব না। পর্দার ফাঁক দিয়ে সকালের নরম রোদ ঘরে ঢুকে পড়েছে। মশারীর ছোট ছোট ছিদ্র গুলো সে আলোর কল্যাণে বেশ কিছু বাহারি নকশার জন্ম দিচ্ছে।

হুমায়ুন চাচা হলে লিখতেন, “জ্যোৎস্নার ফুল”; থুক্কু সূর্যের আলো তো জ্যোৎস্না নয়, “রবির ফুল” লিখতেন বোধ করি। চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে পরে থাকলাম, বৃথাই এপাশ ওপাশ করলাম কিছুক্ষণ। ঘুম বাবাজি অ্যালার্মের সাথে কাট মেরেছেন। কি আর করা, আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়লাম। আমার ১০ ফুট বাই ১০ ফুট রুম টার প্রতিটি ইঞ্চি আমার “গোছানো” স্বভাবের মূর্তিমান সাক্ষী হয়ে ভেংচি কাটছে।

প্রধান কারন, আমার বউ ঢাকায়। আমি নিজেকে একটা রুমে নির্বাসন দিয়ে রেখেছি গত সাতদিন হল। ঢুলতে ঢুলতে ল্যাপটপের বাটন টা অন করলাম। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে, “ঘুম ভাংসে...”; দেখি কয়টা লাইক আসে। ফেসবুকে লগইন করে ডান পাশের কলামটায় চোখ আঁটকে গেল... আজ মাহমুদ স্যারের জন্মদিন।

একটা ধাক্কা খেলাম, আমি যে স্যার কেই স্বপ্নে দেখছিলাম। হাসছিলেন তিনি, যেমন করে হাসতেন সবসময়। আমি স্বপ্নে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর বলছিলাম, আপনি ফিরে এসেছেন, খুব ভালো লাগছে...খুব ভালো লাগছে... মাহমুদুল হক...বিমান বাহিনী একাডেমীতে ফার্স্ট টার্ম হিসেবে যখন যোগ দিলাম, স্যার তখন ফাইনাল টার্ম। স্যারের ‘কভারঅল’ গায়ে চড়িয়ে প্রথম বারের মত বৈমানিক হবার স্বপ্ন দেখার শুরু। স্যার সেদিন একটা ছবি তুলে দিয়েছিলেন।

সেটাই সবাইকে দেখাতাম, একদিন এই জলপাই সবুজ বৈমানিকের পোশাকটি আমার নিজেরও হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। কঠিন প্রশিক্ষনে যখন হাঁপিয়ে উঠছিলাম, মাহমুদ স্যার ডেকে বললেন, “Have patience, within a blink of an eye you will be standing, where I am standing” । সত্যি বলেছিলেন স্যার। আপনার মত আমিও আমার ফার্স্ট টার্ম কে একই কথা বলেছিলাম।

সময় সত্যি অনেক দ্রুত গড়ায়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে অনেক চিঠি আসত স্যারের কাছে। দীর্ঘ দিনের প্রনয়, অতঃপর বিয়ে। চিটাগং এ স্যার আমাদের পাশের বিল্ডিঙটায় থাকতেন। কিছুদিনেই দুজন থেকে তিনজনে, ছোট্ট রাইয়ানের আবির্ভাব।

সুখ পাখিটার বসবাস বোধহয় এই সংসারটিতে ছিল। সে আলো ছড়াতও চারপাশে। স্মিত হাসির সুবাস স্পর্শ করত আশেপাশের সবাইকে। ছোট একটি চারাগাছ, হয়ত মহিরুহ হত। সব স্তব্ধ হল হটাত।

২০ ডিসেম্বর ২০১০। জলপাই সবুজ পোশাকেই সমাধি হল দুটি সম্ভাবনাময় জীবনের। মাহমুদ স্যার আর আশরাফ স্যার। যে বিমানটি দিয়ে শুরু করেছিলেন বৈমানিক জীবন, সেটিতেই সমাপ্তি ঘটলো পথ চলার। একটা সুন্দর গল্প লেখা হচ্ছিল, মাঝপথে লেখকের কালি ফুরল বোধ করি।

স্যারের ফেসবুক প্রোফাইলে মাঝে মাঝে ঢুঁ দেই। অনেক প্রিয়জন অনেক কিছু লিখে চলেছেন আজ অবধি। আমি ভাবি, কি আর লিখব, স্যার যা বলেছেন, সত্যি বলেছেন, “Have patience, within a blink of an eye……you will be standing, where I am standing” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।